ভূমিকা :
পার্থিব জীবনে বান্দার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হ’ল আল্লাহর ইবাদত করা। দুনিয়ার সকল কাজের উপরে ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী। ইবাদতকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য এতে আত্মিক ও দৈহিকভাবে নিবিষ্ট হওয়ার বিকল্প নেই। সেজন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন এবং হাদীছে কুদসীতে তাঁর ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একজন কর্মজীবী মানুষ জীবনের নির্দিষ্ট পর্যায়ে এসে অবসরে যান। কিন্তু আল্লাহর ইবাদত থেকে অবসর হওয়ার কোন সুযোগ নেই; বরং আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য দুনিয়াবী কাজ-কর্ম থেকে অবসর হ’তে হয় এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত অব্যাহত রাখতে হয়।
ইবাদতের জন্য অবসর :
অবসরের আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে التَّفَرُّغُ। যার অর্থ- تَخَلَّى من الشُّغْلِ، ‘ব্যস্ততা থেকে খালি হওয়া’।[1] যেমন আল্লাহ হাদীছে কুদসীতে বলেছেন, يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও’।[2] অত্র হাদীছের অর্থ হ’ল- ‘তুমি তোমার অন্তরকে খালি করে একমাত্র আমার অভিমুখী কর। তবে তুমি সকল অবস্থায় তোমার প্রভুর দিকে মনোযোগ দিতে পারবে, তাঁর সামনে থাকার অনুভূতি নিয়ে তাঁর ভয়ে ভীত হ’তে পারবে এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য আমল সম্পাদন করতে পারবে। আর এটাই হ’ল রাববুল আলামীনের ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার মর্ম’।[3] মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, ‘ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার অর্থ হ’ল আল্লাহর দাসত্বের জন্য অন্তরকে পরিপূর্ণভাবে খালি করে নেওয়া’।[4]
শায়েখ মুহাম্মাদ ইসমাঈল মুক্বাদ্দাম বলেন, ‘আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য অবসর হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আয়-উপার্জন পরিত্যাগ করে রাত-দিন মসজিদে পড়ে থাকতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে অন্তরে সবসময় ইবাদতের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা। কেননা মুমিন তো জানে না- তার সময়গুলো কার জন্য ব্যয় হবে- তার রবের জন্য? শয়তানের জন্য? নাকি স্বীয় নফসের জন্য? কারণ এমন অনেক মানুষ আছে- যারা মসজিদে ছালাত আদায় করে। আবার মসজিদ থেকে বের হয়েই আল্লাহর নাফরমানী ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। প্রকৃত মুমিনের অবস্থা কখনো এমন হয় না; বরং তার হৃদয় সর্বদা আল্লাহমুখী হয়ে থাকে। দুনিয়াবী কাজ করলেও সেটা আখেরাতের জন্য করে। ফলে তার হৃদয় কখনো আনুগত্য থেকে খালি থাকে না। বরং হৃদয়টা সর্বদা ইবাদতের জন্য অবসর যাপন করে। যেমন জনৈক সালাফকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- ‘মানুষের অন্তর কি সিজদা করে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই! মুমিনের অন্তর সিজদা করে। তার বাহ্যিক মাথা সিজদা করলে পুনরায় মাথা উত্তোলন করে; কিন্তু তার হৃদয় নিরবধি সিজদায় লুটিয়ে থাকে। অর্থাৎ তার হৃদয় যখন তওবা করে এবং আল্লাহমুখী হয়, তখন সর্বদা আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এভাবেই তার হৃদয় সর্বদা সিজদারত থাকে’।[5]
আবূ সুলায়মান আদ-দারানী (রহঃ) বলেন,الدنيا كلّ ما يشغلك عن الله تعالى، فكان الزهد عنده التفرغ لله تعالى، وإنما الزاهد من تخلى عن الدنيا واشتغل بالعبادة والاجتهاد، ‘যে বিষয়গুলো আল্লাহ থেকে তোমাকে বিমুখ রাখে সেটাই হ’ল দুনিয়া। সুতরাং দুনিয়া বিমুখতা হ’ল আল্লাহর জন্য অবসর হ’তে পারা। যাহেদ বা দুনিয়া বিমুখ সেই ব্যক্তি যে দুনিয়াবী স্বার্থ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের পরিশ্রমে ব্যস্ত হ’তে পারে’।[6]
সুতরাং ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার অর্থ হ’ল- আখেরাতের জীবনকে সামনে রেখে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী সার্বিক জীবন পরিচালনা করা। যখন বান্দা অহি-র বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপনের জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হবে, তখন তার সময়গুলো ইবাদতে অতিবাহিত হবে। এমনকি তার দুনিয়াবী কাজ-কর্মও ইবাদতে রূপান্তরিত হবে।
গুরুত্ব ও ফযীলত
মহান আল্লাহ হাদীছে কুদসীতে তাঁর ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন,يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ، وَإِلَّا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَيْكَ شُغْلًا وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ، ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। আমি তোমার বক্ষকে অভাবমুক্ত করে দিব এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করে দিব। আর যদি সেটা না কর (অর্থাৎ আমার ইবাদতের জন্য অবসর না হও), তবে তোমার দু’হাতকে ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব-অনটনের পথ কখনো বন্ধ করব না’।[7] অপর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ বলেন,يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ قَلْبَكَ غِنًى وَأَمْلَأْ يَدَيْكَ رِزْقًا، يَا ابْنَ آدَمَ لَا تَبَاعَدْ مِنِّي فَأَمْلَأْ قَلْبَكَ فَقْرًا وَأَمْلَأْ يَدَيْكَ شُغْلًا، ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। তাহ’লে আমি তোমার হৃদয়কে ধনী করে দিব এবং তোমার দুই হাতকে রিযিক দিয়ে পূর্ণ করে দিব। হে আদম সন্তান! আমার (ইবাদত) থেকে দূরে সরে যেও না! তবে আমি তোমার হৃদয়কে দারিদ্র্য দিয়ে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার দু’হাতকে ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিব’।[8]
উক্ত হাদীছে ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার পার্থিব উপকারিতা এবং অবসর না হওয়ার দুনিয়াবী পরিণাম বিধৃত হয়েছে। যারা আল্লাহর আনুগত্য এবং ইবাদতের জন্য সময় ব্যয় করবে- দুনিয়াবী জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। তিনি তাদের ঈমান-ইলম, ইবাদত-বন্দেগী, আয়-রোযগার, টাকা-পয়সা, জমা-জমি, ক্ষেত-খামার, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্ত্রী-পরিবার, সন্তান-সন্ততি, গাড়ি-বাড়ি সহ জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুতে অপরিমেয় বরকত দান করবেন। তাদের হৃদয় থেকে অভাব-অনটন ও দরিদ্রতা দূর করে দিবেন। তিনি বান্দার মনের মধ্যে এমন এক শক্তিশালী অনুভূতি দান করবেন যে, সে অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। অল্প সম্পদকেই অধিক মনে করবে। তার মন ও ঘর ভরা প্রশান্তি থাকবে। সবার থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে সে কেবল আল্লাহর মুখাপেক্ষী থাকবে। ইবাদতের জন্য অবসর যাপনকারী বান্দার জন্য মহান আল্লাহ এসবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উপরন্তু যারা আল্লাহর ঘরে সমবেত হয় এবং দ্বীন শেখা বা শিক্ষা দেওয়ার জন্য সময় ব্যয় করে ও অবসর হয়, আল্লাহ তাদের হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি নাযিল করেন। তাদের যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূরীভূত করে দেন।[9] এগুলো তো বান্দার জন্য দুনিয়াবী পুরস্কার, পরকালের পুরস্কার তো আছেই।
অপরদিকে যারা আল্লাহর ইবাদতের জন্য অবসর হ’তে পারে না, শয়তানের খপ্পরে পড়ে ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে আল্লাহর আনুগত্য, দাওয়াত-তাবলীগ, ইলম অর্জন প্রভৃতি থেকে গাফেল থাকে- অপমান, দুর্দশা, অশান্তি ও লাঞ্ছনার ঘোর অন্ধকার তাদের জীবনকে ঢেকে ফেলে, তাদের জীবন থেকে বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ফলে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটে না। অভাব দূর হয় না। মহান আল্লাহ তাদের জীবনকে সংকুচিত করে দেন। মূলতঃ এগুলো হ’ল ইবাদতের জন্য অবসর না হওয়ার পার্থিব শাস্তি। আর পরকালীন শাস্তি তো আছেই।
এজন্য প্রকৃত মুসলিম কখনো দুনিয়ার মোহে পড়ে ইবাদত থেকে গাফেল থাকতে পারে না। জনৈক ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি যে মুসলিম তার নিদর্শন কী? জবাবে তিনি বলেন, أَنْ تَقُولَ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَى اللهِ، وَتَخَلَّيْتُ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، ‘তুমি বলবে, আমি আমার মুখমন্ডলকে আল্লাহর দিকে সমর্পণ করলাম এবং (তাঁর অনুগত্যের জন্য) অবসর হয়ে গেলাম। তারপর তুমি ছালাত আদায় করবে এবং যাকাত প্রদান করবে’।[10]
মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ، وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ، ‘অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও এবং তোমার প্রভুর দিকে রুজূ হও’ (শারহ ৯৪/৭-৮)। অত্র আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, إِذَا فَرغت مِنْ أُمُورِ الدُّنْيَا وَأَشْغَالِهَا وَقَطَعْتَ عَلَائِقَهَا، فَانْصَبْ فِي الْعِبَادَةِ، وَقُمْ إِلَيْهَا نَشِيطًا فَارِغَ الْبَالِ، وَأَخْلِصْ لِرَبِّكَ النِّيَّةَ وَالرَّغْبَةَ، ‘যখন তুমি দুনিয়ার কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা থেকে অবসর হবে এবং দুনিয়ার যাবতীয় সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হবে, তখন ইবাদতে আত্মনিয়োগ কর এবং অন্তরকে খালি করে সক্রিয়ভাবে ইবাদত সম্পাদন কর। আর নিয়ত ও আগ্রহকে একমাত্র তোমার রবের জন্য খালেছ কর’।[11]
আবূ ছা‘লাবা (রাঃ) বলেন, مَا مِنْ عَبْدٍ تَفَرَّغَ لِعِبَادَةِ اللهِ، إِلَاّ كَفَاهُ اللهُ مَؤُوْنَةَ الدُّنْيَا، ‘কোন বান্দা যখন ইবাদতের জন্য সময় বের করে নেয়, তখন আল্লাহ তার পার্থিব ভোগ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান’।[12] ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) বলেন,الْإِنْسَانُ مَخْلُوقٌ لِخِدْمَةِ الله تَعَالَى وَعُبُودِيَّتِهِ، فَإِذَا تَمَرَّدَ عَنْ طَاعَةِ الله تَعَالَى عُوقِبَ بِضَرْبِ الرِّقِّ عَلَيْهِ، فَإِذَا أُزِيلَ الرِّقُّ عَنْهُ تَفَرَّغَ لِعِبَادَةِ الله تَعَالَى، فَكَانَ ذَلِكَ عِبَادَةً مُسْتَحْسَنَةً، ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর খেদমত ও ইবাদত করার জন্য। কিন্তু যখন সে আল্লাহর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তার উপর অন্যের দাসত্ব চাপিয়ে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। আর যখন তার থেকে অন্যের দাসত্ব সরিয়ে নেওয়া হয়, সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য অবসর হয়ে যায়। আর তখন সেটা উত্তম ইবাদত হিসাবে পরিগণিত হয়’।[13]
ইবাদতের জন্য অবসরের প্রকারভেদ :
ইবাদতের জন্য অবসর মূলত তিন ভাগে বিভক্ত : (১) মনের অবসর, (২) শরীরের অবসর এবং (৩) সময়ের অবসর। এই তিনটি অবসর একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত এবং একে অপরের পরিপূরক।
(১) মনের অবসর : একাগ্রতার সাথে গভীর মনোযোগী হয়ে ইবাদত করা, অন্তরকে রিয়ামুক্ত করে খুলূছিয়াত বজায় রাখা, নিয়ত পরিশুদ্ধ করা, ইবাদতের সময় পার্থিব চিন্তা দূর করা, মন থেকে কৃপণতার ময়লা ছাফ করে দান-ছাদাক্বাহ করা, আমল সম্পাদনের সময় অন্তরে ঈমান ও তাক্বওয়ার ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রাখা, আল্লাহর সৃষ্টিরাজি ও নে‘মত সম্ভার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, কুরআন অনুধাবন করা ইত্যাদি হ’ল মনের অবসর।
(২) শরীরের অবসর : শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত করা এবং পাপাচার থেকে বিরত রাখা, জিহবাকে যিকরে ব্যস্ত রাখা, সত্য কথা বলা, ন্যায়ের আদেশ-অন্যায়ের নিষেধ করা, চোখ-কান-যবান ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা, হালাল উপার্জনের জন্য কায়িক পরিশ্রম করা, পেটকে হারাম খাদ্য থেকে রিরত রাখা, জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা ইত্যাদি। মূলতঃ দুনিয়াবী কাজ থেকে ফারেগ হয়ে দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করাই হ’ল ইবাদতের জন্য শরীরের অবসর। তবে শরীরের অবসর মনের অবসরের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়তের পরিশুদ্ধি ছাড়া শুধু দৈহিক ইবাদতের কোন মূল্য নেই।
(৩) সময়ের অবসর : একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখা, যে সময়টা শুধু ইবাদতের জন্যই নির্দিষ্ট থাকবে। যেমন- প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের জন্য সময় বরাদ্দ রাখা, নফল ছালাত আদায়ে সময় খরচ করা, রাতে ঘুম থেকে অবসর হয়ে তাহাজ্জুদের জন্য সময় বের করে নেওয়া, প্রতিদিন ঘুমের আগে বা সকাল বেলা কুরআন তেলাওয়াত ও অনুধাবনের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা, রামাযান মাসের শেষ দশকে পরিবার ও দুনিয়াবী কাজ থেকে অবসর হয়ে ই‘তিকাফে বসা, দাওয়াত-তাবলীগ ও ইলম অর্জনের জন্য সময় ব্যয় করা, তা‘লীমী বৈঠকে অংশগ্রহণ করা প্রভৃতি। এগুলো হ’ল ইবাদতের জন্য সময়ের অবসর।
ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার স্বরূপ ও শর্ত
আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য শুধু সময়-শ্রম ব্যয় করলেই সফল হওয়া যায় না; বরং সেই ইবাদতকে স্বার্থক ও সাফল্যমন্ডিত করার জন্য কিছু স্বরূপ ও শর্ত রয়েছে, যা না থাকলে ইবাদতের জন্য অবসর হওয়া পূর্ণাঙ্গ হয় না। এক্ষণে আমরা ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার কয়েকটি স্বরূপ ও শর্ত আলোকপাত করব।
(১) পৃথিবীর সকল কাজের উপর আল্লাহর ইবাদতকে প্রাধান্য দেওয়া :
ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার জন্য প্রথম করণীয় ও শর্ত হ’ল দুনিয়ার সকল কাজের উপর আল্লাহর আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়ে ইবাদতে রত হওয়া। কেননা পৃথিবীতে মানুষের প্রধান দায়িত্ব হ’ল আল্লাহর ইবাদত করা এবং এজন্য তাকে দুনিয়াতে সৃষ্টি করা হয়েছে (যারিয়াত ৫১/৫৬)। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, আয়-উপার্জন প্রভৃতির উপরে যদি ইবাদত অগ্রাধিকার না পায়, তাহ’লে অবসরের ইবাদত পূর্ণাঙ্গ হয় না। সালাফদের যুগে একজন কাঠুরিয়া ছিল। তিনি ছালাতের ব্যাপারে এতটাই কঠোর ছিলেন যে, যখন তিনি কাঠ কাটার জন্য কুঠার উপরে উঠাতেন, আর সে সময় যদি আযান শুনতে পেতেন, তাহ’লে সেই কুঠার আর চালাতেন না; বরং সেখানেই কাজ বন্ধ করে ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওনা হ’তেন। অপরদিকে আমাদের অবস্থা ভিন্ন রকম। আযান শোনার পরেও আমরা মসজিদে যাওয়ার প্রস্ত্ততি শুরু করি না। একদম জামা‘আত শুরু হওয়ার আগে আগে কোনমতে মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে শামিল হই, অথবা দুই/তিন রাক‘আত শেষ হওয়ার পরে মসজিদে প্রবেশ করি। যারা ছালাত সম্পর্কে সচেতন তাদের অবস্থা এমন। আর যারা উদাসীন, তারা তো এক ওয়াক্তের ছালাত আরেক ওয়াক্তে গিয়ে পড়েন অথবা একেবারে শেষ ওয়াক্তে গিয়ে কোনমতে ছালাতটা আদায় করে নেন। এরকম ছালাত আদায় করলে কিছু সময় ইবাদতে ব্যয় হয় বটে; কিন্তু ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না এবং ইবাদতের প্রভাবও হৃদয়ে অনুভূত হয় না। সালাফগণ মনে করতেন- আযান হয়ে যাওয়ার পরে যত ভালো কাজই করা হোক না কেন, সে কাজে কখনো বরকত হয় না। কারণ ছালাতের সময় হয়ে গেলে- আল্লাহর ইবাদতের জন্য অবসরে যেতে হয়। প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহঃ) বলেন,مَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ مُنْذُ ثلَاثِينَ سَنَةً إِلَّا وَأَنَا فِي الْمَسْجِدِ، ‘ত্রিশ বছর আমার এমনভাবে কেটেছে যে, মুওয়াযযিন আযান দেওয়ার সময় আমি মসজিদে উপস্থিত ছিলাম’।[14]
মাসিক বেতন থেকে টাকা কাটার ভয়ে আমরা অফিসে সময়মত যাই; অথচ মসজিদে দেরীতে যেতে এতটুকুও কুণ্ঠিত হই না। কোন যরূরী ফ্লাইট বা কাজ থাকলে কয়েকটা এলার্ম দিয়ে হ’লেও শেষ রাতে উঠে পড়ি, অলসতা পরিহার করি; কিন্তু ইবাদতের জন্য আমাদের ঘুম ভাংতেই চায় না। রাত জেগে জেগে আমরা মোবাইলের স্ক্রীনে বা টিভির পর্দায় খেলা দেখি, মুভি দেখি, গল্পগুজব করি, ফেইসবুক চালাই; কিন্তু ত্রিশ মিনিট সময় ব্যয় করে তাহাজ্জুদ পড়তে বা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারি না। রোগ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে হালাল খাবার আমরা পরিত্যাগ করতে পারি, কিন্তু আল্লাহর নাফরমানির ভয়ে হারাম খাদ্য পরিহার করতে পারি না। এর অর্থ হচ্ছে আমরা ইবাদতকে দুনিয়ার কাজের উপরে প্রাধান্য দিতে পারিনি।
শুধু ছালাত নয়, যে কোন ইবাদতের জন্য পূর্ণ অবসর না হ’লে সেই ইবাদতের হক আদায় হয় না। যেমন- শারঈ জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয।[15] মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে তাওহীদের জ্ঞান হাছিল করার নির্দেশ দিয়েছেন (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। এই ইবাদত সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য পূর্ণ অবসরের কোন বিকল্প নেই। তালেবুল ইলম ও ওলামায়ে কেরাম জানেন যে, ইলম অর্জনের জন্য কত নিরবচ্ছিন্ন সাধনা করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এই মহান ইলম হাছিলের জন্য হেরা গুহায় অবসর নিতে হয়েছিল।[16] এমনকি মূসা (আঃ) যখন ইলমী সফরে খিযির (আঃ)-এর কাছে গমন করেছিলেন তখন খিযির (আঃ) বলেছিলেন,يَا مُوسَى! تَفَرَّغْ لِلْعِلْمِ إِنْ كُنْتَ تُرِيدُهُ؛ فَإِنَّمَا الْعِلْمُ لِمَنْ تَفَرَّغَ لَهُ، ‘হে মূসা! তুমি যদি ইলম হাছিল করতে চাও, তবে ইলমের জন্য অবসর হও, কেননা ইলম তার হাতেই ধরা দেয়, যে এর জন্য অবসর হয়’।[17] ছান‘আনী বলেন,المراد من التفرغ للعبادة إيثارها على حظوظ الدنيا والإتيان بما أمر به منها فلا تلهيه عن ذكر الله لأنه لا يفعل إلا العبادة، ‘ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার অর্থ হচ্ছে দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ডের উপরে ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এরপর শরী‘আত নির্দেশিত পন্থায় পার্থিব কাজ-কর্ম করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে- যেন দুনিয়ার কাজ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করতে না পারে। কেননা মুমিন বান্দা ইবাদতের উদ্দেশ্যেই পার্থিব কাজ-কর্ম করে থাকে’।[18]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,أركان الكفر أربعةٌ: الكبرُ، والحسد، والغضب، والشهوة؛ فالكبر يمنعه الانقيادَ، والحسد يمنعه قبولَ النصيحة وبذلها، والغضبُ يمنعه العدلَ، والشهوة تمنعه التفرُّغَ للعبادة، ‘কুফরির ভিত্তি চারটি : অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ এবং প্রবৃত্তিপরায়ণতা। অহংকার বান্দাকে আল্লাহর অনুগত হ’তে বাধা দেয়। হিংসা তাকে নছীহত গ্রহণ ও প্রদান করা থেকে বিরত রাখে। রাগ তাকে ন্যায়বিচার করতে বাধা দেয়। আর প্রবৃত্তিপরায়ণতা তাকে ইবাদতের জন্য অবসর হ’তে বাধা দেয়’।[19]
সুতরাং ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার প্রথম শর্ত হ’ল পৃথিবীর সকল কাজের উপর আল্লাহর দাসত্বকে প্রাধান্য দেওয়া এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতি অনুসারে সেই ইবাদত একনিষ্ঠভাবে সম্পাদন করা।
(২) উপস্থিত হৃদয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করা :
দুনিয়ার সাথে মনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গভীর মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করাই শরী‘আতের নির্দেশ। গাফেল ও অনুপস্থিত হৃদয়ে ইবাদত করলে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার আরেকটি শর্ত হ’ল ইবাদতে গভীর মনোযোগী হওয়া। যেমন আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ، وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ، ‘অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও এবং তোমার প্রভুর দিকে রুজূ হও’ (শারহ ৯৪/৭-৮)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,إِذَا فَرَغْتَ مِنْ مَهَامِّكَ فَانْصَبْ فِي طَاعَتِهِ وعبَادَته، لِتَكُونَ فَارِغَ الْبَالِ، ‘তুমি পার্থিব কাজ-কর্ম থেকে যখন অবসর হবে, তখন আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে আত্মনিয়োগ কর। আর তখন তোমার অন্তর যেন (শুধু ইবাদতের জন্যই) খালি থাকে’।[20] আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন,إذا تفرغت من أشغالك، ولم يبق في قلبك ما يعوقه، فاجتهد في العبادة والدعاء، أعظم الرغبة في إجابة دعائك وقبول عباداتك، ‘যখন তুমি ব্যস্ততা থেকে অবসর পাবে এবং তোমার হৃদয়ে বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী কোন অনুভূতি থাকবে না, তখন তুমি ইবাদত ও দো‘আ করতে সচেষ্ট হও এবং সেই ইবাদত ও দো‘আ কবুলের প্রতি প্রবলভাবে আগ্রহী হও’।[21] অতএব ইবাদত সম্পাদনে শুধু শারীরিক সম্পৃক্ততাই যথেষ্ট নয়; মনের পরিপূর্ণ উপস্থিতি সমানভাবে যরূরী। অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগীর জন্য মনকে যদি অবসরে না আনা যায়, তবে শুধু দৈহিক অবসর ফলপ্রসু হয় না। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাবার সামনে রেখে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন এবং খাবার খেয়ে তারপর ছালাত আদায় করতে বলেছেন, যেন ক্ষুধার জন্য ছালাতে মনোযোগ বিঘ্ন না হয় এবং ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়াটা যেন পরিপূর্ণ হয়।[22]
তাছাড়া আল্লাহর ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়ার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, حضور القلب وخشوعه وخضوعه لله عز وجل أثناء العبادة، ‘ইবাদত সম্পাদনকালে উপস্থিত হৃদয়ে আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়া ও তাঁর প্রতি বিনীত হওয়া’।[23] অর্থাৎ খূশূ-খুযূ নিয়ে ইহসানের সাথে ইবাদত করা। যেমন শায়খ ইসমাঈল মুক্বাদ্দাম (রহঃ) বলেন,فمعنى التفرغ لطاعة الله سبحانه وتعالى: أن يعبد الله كأنه يراه، فإن لم يكن يراه فإن الله عز وجل يراه، ‘মহান আল্লাহর আনুগত্যের জন্য অবসর হওয়ার অর্থ হচ্ছে বান্দা এমনভাবে ইবাদত করবে যেন সে আল্লাহকে দেখছে। যদি সে আল্লাহকে দেখার অনুভূতি নিয়ে ইবাদত না করতে পারে, তবে যেন মনে করে- আল্লাহ তাকে দেখছেন’।[24] কারণ অমনোযোগী হয়ে কোন ইবাদত করলে তার কোন মূল্য থাকে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,اعْلَمُوا أَنَّ اللهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ، ‘জেনে রাখ! আল্লাহ গাফেল ও অমনোযোগী মনের দো‘আ কবুল করেন না’।[25] আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, رَكْعَتَانِ مُقْتَصِدَتَانِ فِي تَفَكُّرٍ، خَيْرٌ مِّنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ وَالْقَلْبُ سَاهٍ، ‘উদাসীন হৃদয় নিয়ে সারা রাত ক্বিয়ামুল লাইল আদায় করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনাসহ দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা উত্তম’।[26]
হাদীছে নববীতে ফরয ছালাতের পরে রাতের তাহজ্জুদকে সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।[27] এই ফযীলতের অন্যতম কারণ হচ্ছে- রাতের ছালাত যত একনিষ্ঠভাবে করা যায় অন্য সময় সেটা সম্ভব হয় না। আর রাতের বেলা মনোযোগ নষ্টকারী ও আকর্ষণকারী উপলক্ষ কম থাকে।[28] সেজন্য ইবাদতের অবসরে মনকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে একমাত্র আল্লাহর অভিমুখী করাই হ’ল ঈমানের দাবী। যার মাধ্যমে ইবাদতের আসল উদ্দেশ্য ও নেকী অর্জিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوُضُوءَ، ثُمَّ يَقُومُ فِي صَلَاتِهِ فَيَعْلَمُ مَا يَقُولُ إِلَّا انْفَتَلَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنَ الْخَطَايَا لَيْسَ عَلَيْهِ ذَنْبٌ، ‘কোন মুসলিম যখন পূর্ণরূপে ওযূ করে। তারপর ছালাতে দাঁড়িয়ে যায় এবং (ছালাতে পঠিত ক্বিরাআত ও দো‘আ) জেনে-বুঝে পড়ে। তবে সে ঐদিনের মতো (নিষ্পাপ) হয়ে ছালাত শেষ করে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল এবং তার কোন পাপ ছিল না’।[29] সুবহানাল্লহ! বুঝে-শুনে গভীর মনযোগী হয়ে ছালাত আদায় করার করণে এর ফযীলত কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে! এই হাদীছই প্রমাণ করে ইবাদতের অবসরে মন ও মনযোগের উপস্থিতি কত যরূরী ও তাৎপর্যপূর্ণ।
(৩) ইবাদতে প্রবল আগ্রহ থাকা :
আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইবাদতের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা দুনিয়াপাগল, তারা দুনিয়ার প্রতি বেশী আগ্রহী থাকে। আর যারা আখেরাতের জন্য পাগলপারা, ইবাদতের প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহ থাকে। ক্বিয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন, তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল,رَجُلٌ كَانَ قَلْبُهُ مُعَلَّقًا بِالـمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُودَ إِلَيْهِ، ‘এমন ব্যক্তি যে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরে পুনরায় সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তার অন্তরটা মসজিদের সাথে লটকানো থাকে’।[30] অর্থাৎ ইবাদতের প্রতি তার এত বেশী আগ্রহ ও ভালোবাসা থাকে যে, সে দুনিয়াবী কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়লেও হৃদয়টা সর্বদা মসজিদমুখী হয়ে থাকে এবং ইবাদতের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকে। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুমিন বান্দার উদাহরণ দিতে গিয়ে ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, لأن المؤمن في المسجد كالسمك في الماء، والمنافق في المسجد كالطير في القفص، ‘মসজিদের মধ্যে মুমিনের অবস্থান হচ্ছে পানির মধ্যে মাছের অবস্থানের মতো। আর মসজিদে মুনাফিক্বের অবস্থান হচ্ছে খাঁচায় আবদ্ধ পাখির মতো’।[31]
ছাহবায়ে কেরাম ইবাদতের জন্য প্রবল আগ্রহী ছিলেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে ছিয়াম রেখেছে? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করেছে? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ মিসকীনকে আহার করিয়েছে? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ রোগীকে দেখতে গিয়েছে? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ، ‘যার মাঝে এ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[32] লক্ষ্য করুন! আবুবকর (রাঃ) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যাপারে কতটা সচেষ্ট ছিলেন, যখনই কোন ইবাদতের সুযোগ পেয়েছেন তখন সেটাই লুফে নিয়েছেন। কোন ইবাদতের সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি।
ওহোদ যুদ্ধে মুজাহিদ বাছাইয়ের সময় বয়স কম হওয়ার কারণে বাদ পড়া তরুণ ছাহাবীদের আকুতি এবং ১৫ বছর বয়স না হওয়া সত্ত্বেও রাফে‘ বিন খাদীজ ও সমুরা বিন জুনদুবকে নেওয়ার কাহিনী আজও মুমিনের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। সেই সাথে তাবুকের যুদ্ধে বাহনের অভাবে যেতে না পারা ছাহাবীগণ, যারা ইতিহাসে ‘ক্রন্দনকারীগণ’ নামে খ্যাত, জিহাদের প্রতি তাদের আগ্রহ এবং আকুলিভরা কাহিনী যুগযুগান্তরে আল্লাহভীরু মুমিনদের পাথেয় হয়ে আছে।
সুতরাং জান্নাতে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার প্রচেষ্টা যদি না থাকে, তবে ইবাদতের জন্য হৃদয়ে আগ্রহ তৈরী হয় না। আর যখন আগ্রহ থাকে না তখন ইবাদতের জন্য অবসর হওয়াও সম্ভব হয় না। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, ‘নেকী ও জান্নাত লাভের আকাঙক্ষা এবং ইলম অর্জনের মাধ্যমে ইবাদতে আগ্রহ তৈরী হয়। এই আগ্রহ ইবাদতে পরিশ্রমী হ’তে উদ্বুদ্ধ করে এবং অলসতা পরিহার করতে অনুপ্রাণিত করে।[33]
(৪) ইবাদতে বিরক্ত না হওয়া :
ইবাদতে বিরক্ত না হওয়ার অর্থ হচ্ছে ইবাদতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। কারণ সামর্থ্যের অতিরিক্ত আমল করা শুরু করলে কয়েকদিন পরে সেটাতে বিরক্তি চলে আসবে। তাই ইবাদতে মধ্যপন্থা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ، خُذُوا مِنَ الأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ، فَإِنَّ اللهَ لاَ يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَإِنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ مَا دَامَ وَإِنْ قَلَّ، ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করতে থাক। কারণ আল্লাহ (ছওয়াব দানে) ক্লান্তিবোধ করেন না, যতক্ষণ না তোমরা (আমল সম্পাদনে) ক্লান্ত হয়ে পড়। আর আল্লাহর নিকট ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা অল্প হ’লেও নিয়মিত করা হয়’।[34] বায়যাভী বলেন, ‘ইবাদতের বিরক্তি হওয়ার অর্থ হচ্ছে আমল সম্পাদনে শৈথিল্য অনুভূত হওয়া। সামর্থ্যের অধিক অনুশীলনের কারণে এটা ঘটে, যা
ইবাদতে ক্লান্তি সৃষ্টি করে এবং তা থেকে দূরে রাখে’।[35]
কেউ যদি ইবাদতে অবসর হওয়ার জন্য তাহাজ্জুদ শুরু করতে চায় এবং প্রথম পর্যায়েই দুই-তিন ঘণ্টার ক্বিয়ামুল লাইলে কঠোরভাবে আত্মনিয়োগ করে। তবে দেখা যাবে যে, কয়েক দিন পর তার উদ্যোমে ভাটা পড়বে এবং সে তাহাজ্জুদ ছেড়ে দিবে। সেজন্য মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সমার্থ্য অনুযায়ী ইবাদতে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত। যেন সেটা নিয়মিত সম্পাদন করা যায়, বিরক্তি না আসে এবং আগ্রহে ভাটা না পড়ে।
উল্লেখ্য, অনেক সময় পাপের কারণে ইবাদতে বিরক্তি চলে আসে। সেজন্য ইবাদতে বিরক্তি আসার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ঈমানী শক্তি ও শারীরিক সক্ষমতার মধ্যে সমম্বয় সাধন করতে হবে। কারো জন্য হয়ত তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া সহজ, আবার কারো জন্য ছিয়াম পালন করা সহজ। কেউ অর্থনৈতিক ইবাদতে বেশী পারদর্শি, আবার কেউ দৈহিক ইবাদতে অধিক পারঙ্গম। আবার কেউ সবক্ষেত্রেই সমানভাবে ইবাদত করতে সক্ষম। যেমন আবুবকর (রাঃ) সব ইবাদতেই সমানভাবে তৎপর ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) শারীরিক দুর্বলতার কারণে ছিয়াম কম রেখে তাহাজ্জুদ ও কুরআন তেলাওয়াতে বেশী সময় ব্যয় করতেন।
কিন্তু কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত সহ ফরয ইবাদতগুলোতে বিরক্তি অনুভব করে, কুরআন তেলাওয়াতে ক্লান্তিবোধ করে, তবে বুঝে নিতে হবে- অধিক পাপের কারণে তার হৃদয় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার আশু চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর অন্তরের রোগ-ব্যাধির প্রধান প্রতিষেধক হ’ল তওবা-ইস্তিগফার ও কুরআন অনুধাবন। আল্লাহ বলেন, وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ- ‘আর আমরা কুরআন নাযিল করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত স্বরূপ’ (ইসরা ১৭/৮২)। সুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ (রহঃ) বলেন,لو تفرغتم لكتاب الله عز وجل لوجدتم فيه شفاء لما تريدون، ‘যদি তোমরা আল্লাহর কিতাবের জন্য অবসর হও, তবে তোমাদের চাহিদা অনুযায়ী (দৈহিক ও মানসিক সব রোগের) আরোগ্য সেখানে পেয়ে যাবে’।[36]
(৫) ইবাদতের মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভূত হওয়া :
ইবাদতের প্রশান্তি অর্জিত না হ’লে দুনিয়ার প্রকৃত সুখ কিছুতেই লাভ করা সম্ভব হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের প্রশান্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম ছিল আল্লাহর ইবাদত। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,حُبِّبَ إِلَيَّ الطِّيبُ وَالنِّسَاءُ وَجُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ، ‘সুগন্ধি ও নারীকে আমার কাছে অতি প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে ছালাতের মধ্যে’।[37] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের সময় হ’লে বেলাল (রাঃ)-কে বলতেন, قُمْ يَا بِلَالُ فَأَرِحْنَا بِالصَّلَاةِ، ‘হে বিলাল! আযান দাও, আমাদেরকে ছালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভের ব্যবস্থা করো’।[38] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, أرحنا بها، فإن فيها الراحة والطمأنينة والسكينة، ‘ছালাতের মাধ্যমে আমাদের প্রশান্তি দাও- এই কথা বলেছেন এজন্য যে, ছালাতে রয়েছে আত্মিক সুখ, মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি’।[39]
ইবাদতের অবসর নেককার সালাফদের আনন্দ দিত। লুবাবা (রহঃ) বলেন, ‘আমি যখন ইবাদত-বন্দেগীতে পরিশ্রম করি, তখন এর মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভব করি। মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাতে যখন আমি পরিশ্রান্ত হয়ে যাই, তখন আল্লাহর যিকর আমাকে সঙ্গ দেয়। আর সৃষ্টিকূল যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলে, তখন আমার হৃদয়জুড়ে প্রশান্তি এনে দেয় আল্লাহর ইবাদতের অবসর এবং তাঁর খেদমতে দন্ডায়মান হওয়া’।[40]
অপরদিকে আমরা ইবাদতে আনন্দ পাই না। বরং মজাদার খাবার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, নাটক, সিনেমা, মুভি, আড্ডাবাজি, গাল-গল্প, খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি প্রভৃতি আমাদের আনন্দ দেয়। মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটালে তাতে বিরক্ত লাগে না, বরং ভালো লাগে। কিন্তু কুরআন তেলাওয়াতে বসলে, তা‘লীমী বৈঠকে বসলে- দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠি। রাত জেগে জেগে মুভি বা খেলা দেখতে আমাদের মজা লাগে, কিন্তু তাজাজ্জুদে আমরা মজা পাই না। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত বা দ্বীনের পথে সময় দেওয়ার ব্যাপারে কত হিসাব নিকাশ করি, কিন্তু দুনিয়াবী স্বার্থের পিছনে বেহিসাব সময় খরচ করতে কুণ্ঠিত হই না। মূলতঃ আমাদের পাপাচার ও বেশুমার অবাধ্যতার কারণে আমাদের হৃদয়ে মরিচা পড়ে গেছে। তাই আমরা ইবাদতে প্রশান্তি লাভে ব্যর্থ হচ্ছি এবং ইবাদতের অবসরে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। আব্দুল্লাহ আর-রাযী (রহঃ) বলেন,إِنْ سَرَّكَ أَنْ تَجِدَ حَلاوَةَ الْعِبَادَةِ وَتَبْلُغَ ذُرْوَةَ سَنَامِهَا؛ فَاجْعَلْ بَيْنَكَ وَبْيَنَ شَهَوَاتِ الدُّنْيَا حَائِطًا مِنْ حَدِيدٍ، ‘যদি তুমি ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করতে চাও এবং আনুগত্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করে আনন্দিত হ’তে চাও, তবে তোমার পার্থিব কামনা-বাসনার মাঝে লোহার প্রাচীর দাঁড় করিয়ে দাও’।[41]
আবূল লাইছ সামারকান্দী (রহঃ) বলেন, বান্দা ইবাদতের মিষ্টতা লাভ করতে পারবে কেবল তখনই, যখন সে তার নিয়তকে খালেছ করে ইবাদতে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহভীরুতার সাথে আমল করবে। যখন সে নিয়ত পরিশুদ্ধ করবে, তখন দেখতে পাবে যে, মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাকে এই আমল করার তাওফীক্ব দান করেছেন। ফলে তার হৃদয়ে শুকরিয়া ও প্রশান্তির অনুভূতি জাগ্রত হবে।[42]
সুতরাং ইবাদতের সময় লক্ষ্য করতে হবে যে, আমি ইবাদতের মাধ্যমে প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করতে পারছি কি-না। যদি প্রশান্তি পাই তাহ’লে ইবাদতের অবসর যথার্থ হয়েছে। আর যদি প্রশান্তি না পাই, তাহ’লে নিশ্চিত বুঝে নিতে হবে, আমাদের পাপই এর জন্য দায়ী। ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‘যদি তুমি রাত্রি জাগরণে সক্ষম না হও এবং দিনের বেলা ছিয়াম পালন করতে না পার, তবে তুমি বুঝে নিবে, তুমি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। তোমার পাপ তোমার হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়েছে’।[43]
(৬) ইবাদতে পরিশ্রম করা :
ঐকান্তিক পরিশ্রম ছাড়া কোন সফলতা পাওয়া যায় না। সেটা দুনিয়ার সফলতা হোক বা আখেরাতের সফলতা হোক। তবে দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের সফলতা অর্জনে বেশী পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পূর্বাপর সকল গুনাহ-খাতা মাফ হওয়া সত্ত্বেও ইবাদতে পরিশ্রম করতেন। রাত জেগে দীর্ঘ ক্বিয়ামের কারণে তার পা দু’টো ফুলে যেত। আল্লাহর ইবাদতে এতো কঠোর পরিশ্রমের কারণ জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলতেন, أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না’?[44] তিনি শুধু জিহাদের ময়দানে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় দুই বছর সময়। বরী‘আ ইবনে কা‘ব আল-আসলামী (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে জান্নাতে থাকার তীব্র আকাঙ্খা ব্যক্ত করলেন, নবী করীম (ছাঃ) তাকে ফরয ছালাতের পাশাপাশি বেশী বেশী নফল ছালাত আদায়ের পরামর্শ দেন।[45]
আমরা দুনিয়াবী সফলতার জন্য যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করি, জান্নাত লাভের জন্য যদি তদ্রূপ কষ্ট স্বীকার করতে পারতাম, তবে আমাদের জীবনটা কতই না সুন্দর হ’ত! মানুষ দুনিয়াতে কয়েকদিন ভালো থাকার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যেভাবে সময়-শ্রম ব্যয় করে, আখেরাতে ভালো থাকার জন্য তার কানাকড়ি পরিশ্রম করতে রাযী হয় না। অথচ আখেরাতের জীবনই উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী। বকর ইবনে আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,اجتهدوا في العمل، فإن قصّر بكم ضعف فكفّوا عن المعاصي، ‘তোমরা আমল সম্পাদনে পরিশ্রম কর। যদি দুর্বলতা সত্যিই তোমাদের বাধাগ্রস্ত করে, তবে গোনাহ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখ’।[46] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, من كان قويا فليعتمد على قوّته في طاعة الله؛ وإن كان ضعيفا فليكّف عن معاصي الله، ‘যে ব্যক্তি শক্তিশালী, সে যেন আল্লাহর আনুগত্যে স্বীয় শক্তির উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ শক্তিশালী ব্যক্তির মতো ইবাদত করে)। আর যে ব্যক্তি (ইবাদতে) দুর্বল, সে যেন আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকে’।[47]
সুতরাং আল্লাহ যাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার জন্য যরূরী হ’ল দৈহিক, আত্মিক ও অর্থনৈতিক ইবাদতের জন্য অবসরে যাওয়া এবং আল্লাহর রেযামন্দি হাছিলের জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। মৃত্যুর আগেই আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ে সর্বাত্মক পরিশ্রমী ও মনোযোগী হওয়া। বেলাল ইবনে সা‘দ (রহঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তুমি কি মৃত্যু পসন্দ কর?’ সে উত্তরে বলবে, ‘না’। যদি বলা হয়, ‘কেন?’ তাহ’লে বলবে, ‘আমি আমল করার আগে মরতে চাই না’। আবার সে বলবে, ‘আমি আগামীকাল থেকে আমল করা শুরু করব’। তার অবস্থাটা একটু খেয়াল করে দেখ, সে মৃত্যুকেও পসন্দ করে না আবার নেক আমল করাও পসন্দ করে না।[48]
বিশিষ্ট ছাহাবী আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ইবাদতে কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন এবং মুত্যুর আগে আমলের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেন। তাকে বলা হ’ল, যদি আপনি একটু বিরত থাকতেন এবং নিজের প্রতি সামান্য কোমলতা প্রদর্শন করতেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘যখন কোন ঘোড়াকে কোথাও পাঠনো হয়, গন্তব্যের কাছাকাছি গিয়ে সে তার সর্বশক্তি ব্যয় করে এবং গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আমিও আমার গন্তব্যের নিকটবর্তী হয়েছি এবং সময়ও খুবই অল্প। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আল্লাহর ইবাদতে পরিশ্রমী অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন।[49] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহম করুন! যে নিজের জীবনকে আখেরাতমুখী জীবন বানিয়েছে। ফলে রুটির টুকরো আহার করেছে, পুরাতন কাপড় পরিধান করেছে, ইবাদতে পরিশ্রম করেছে, নিজের পাপের জন্য কান্নাকাটি করেছে, আল্লাহর আযাব থেকে পলায়ণ করেছে এবং আল্লাহর রহমত অম্বেষণ করেছে, অবশেষে এই অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করেছে’।[50]
সুতরাং নিজে হিসাব করা উচিত যে, আমি আল্লাহর ইবাদতের জন্য এবং আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ে কতটুকু পরিশ্রম করছি। যদি আল্লাহর আনুগত্যে পরিশ্রমী হওয়া যায়, তবে ইবাদতের জন্য অবসর হওয়া যথার্থ হবে এবং হেদায়াত লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ- ‘আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা আমাদের পথ সমূহের দিকে পরিচালিত করব। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)।
(৭) ইবাদতে ইস্তিক্বামাত থাকা :
আল্লাহর ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার সর্বশেষ স্বরূপ হ’ল ইবাদতে ইস্তিক্বামাত তথা অবিচল থাকা। আর ইবাদতে অবিচল থাকার অর্থ হচ্ছে গুরুত্বের সাথে নিয়মিত আল্লাহর আনুগত্য করা এবং শরী‘আতের আদেশ-নিষেধ মান্য করে সর্বদা ছিরাতে মুস্তাক্বীমে অটল থাকা। মহান আল্লাহ বলেন, أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ، ‘তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন। অতএব তোমরা তাঁর দিকেই দৃঢ়ভাবে গমন কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৬)। আল্লামা সা‘দী বলেন, এই আয়াতের নির্দেশ হ’ল, اسلكوا الصراط الموصل إلى الله تعالى، بتصديق الخبر الذي أخبر به، واتباع الأمر، واجتناب النهي، هذه حقيقة الاستقامة، ‘আল্লাহ (কুরআনের মাধ্যমে) যে সংবাদ দিয়েছেন, তা সত্য হিসাবে বিশ^াস করে, তাঁর নির্দেশ মেনে নিয়ে এবং নিষেধকে বর্জন করে তোমরা এমন পথের পথিক হও, যে পথ তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যাবে। আর এটাই ইস্তিক্বামাতের প্রকৃত স্বরূপ’।[51]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ، ‘অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ সেভাবে দৃঢ় থাক এবং তোমার সাথে যারা (শিরক ও কুফরী থেকে) তওবা করেছে তারাও। আর তোমরা সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের সকল কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেন’ (হূদ ১১/১১২)। ইবনু আত্বিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিরাতে মুস্তাক্বীমে দৃঢ়ভাবে অটল থাকার পরে আল্লাহ তাঁকে ইস্তিক্বামাতের নির্দেশ দিয়েছেন। মূলতঃ এটা হচ্ছে ইবাদতে নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে দৃঢ় থাকার নির্দেশ’।[52] আবুবকর আল-জাযায়েরী বলেন, অত্র আয়াতের মাধ্যমে আক্বীদা, ইবাদত, শারঈ বিধি-বিধান প্রতিপালন এবং আদব-শিষ্টাচার সহ দ্বীনের সকল ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকাকে অপরিহার্য করা হয়েছে’।[53]
সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আছ-ছাক্বাফী (রহঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে ইসলামের ব্যাপারে এমন একটি কথা বলুন, যে বিষয়ে আপনার পরে আর কাউকে জিজ্ঞেস করব না। আল্লাহর রাসূল তাকে বললেন,قُلْ: آمَنْتُ بِالله ثمَّ اسْتَقِم، ‘তুমি বল! আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এর উপর অবিচল থাক’।[54] অন্যত্র তিনি বলেন,وَإِنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ مَا دَامَ وَإِنْ قَلَّ، ‘আর আল্লাহর নিকট ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা অল্প হ’লেও নিয়মিত করা হয়’।[55] আর অল্প ইবাদত যখন নিয়মিত করা হয়, তখন গাফেলতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মৃত্যুর জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি নেওয়ার অনুভূতি সদা জাগ্রত থাকে। ইবাদতে ইস্তিক্বামাত থাকার মূল উদ্দেশ্য এটাই। কেননা মানুষ জানে না কখন তার মৃত্যু চলে আসবে। সেজন্য যুহাইর ইবনে নু‘আইম বলেন, إحذر أن يأخذك الله وأنت على غفلة، ‘সতর্ক থেকো! উদাসীন থাকা অবস্থায় আল্লাহ যেন তোমাকে পাকড়াও না করেন’।[56]
তবে ইবাদতে ইস্তিক্বামাত তখনই আসে, যখন ইবাদতটা খুলূছিয়াতের সাথে করা হয় এবং এর মাধ্যমে নিজের ভিতর-বাহির প্রভাবিত হয় ও প্রশান্তি অনুভূত হয়। কারো ইবাদত যদি তাকে প্রবৃত্তির লাগাম টানতে এবং পাপ বর্জন করতে উৎসাহিত না করে, তবে বুঝতে হবে- ইবাদতের হক্ব আদায় হচ্ছে না। ফলে এই ইবাদতে অবিচল থাকাও তার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া মনকে আল্লাহর ইবাদতে প্রতিষ্ঠিত রাখা খুব সহজ ব্যাপার নয়; ইবাদতের অবসরে যাওয়ার জন্য যারা নিয়মিত স্বীয় নফসের সাথে মুজাহাদা করে, কেবল তারাই ইস্তিক্বামাতের গুণ অর্জন করতে সক্ষম হয়। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনক্বাদির (রহঃ) বলেন,كَابَدتُ نَفْسِي أَرْبَعِيْنَ سَنَةً حَتَّى اسْتَقَامَتْ، ‘আমি চল্লিশ বছর নিজের নফসের সাথে সংগ্রাম করেছি, তারপর সে (আল্লাহর অনুগত্যে) অবিচল হয়েছে’।[57]
উপসংহার :
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহর সফল বান্দা হওয়ার জন্য ইবাদতের অবসর একটি অপরিহার্য মাধ্যম। আমরা কোভিড-১৯-এর সময় দেখেছি- করোনায় আক্রান্ত রোগীকে তার পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হ’ত। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটাই ছিল প্রধান চিকিৎসা। ঠিক সেরকম পাপ বিদগ্ধ পরিবেশে নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে- মৃত্যুর পরে কবরে একা একা থাকতে হবে, হাশরের ময়দানে একা চলতে হবে, তাই দুনিয়াতে নিজের নাজাতের পথ নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে। জান্নাতের রাজপথে চলতে গিয়ে জিনরূপী ও মানবরূপী শয়তান যেন কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে না পারে- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের ঈমান ও আমলে বরকত দান করুন। আমৃত্যু তাঁর আনুগত্যে অবিচল রাখুন এবং তাঁর ইবাদতের জন্য সময় বের করার তাওফীক্ব দানে ধন্য করুন- আমীন!
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, পৃ. ৭৮৭।
[2]. তিরমিযী হা/২৪৬৬; ছহীহাহ হা/১৩৫৯; মিশকাত হা/৫১৭২, সনদ ছহীহ।
[3]. শরহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪/৪৫।
[4]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৮/৩২৩৮।
[5]. দুরূসুশ শায়েখ মুহাম্মাদ ইসমাঈল মুক্বাদ্দাম, ক্যাসেট, ২৫/৭।
[6]. কূতুল কূলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব, ১/৪১৯।
[7]. তিরমিযী হা/২৪৬৬; মিশকাতা হা/৫১৭২; সনদ ছহীহ।
[8]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৭৯২৬; ছহীহাহ হা/১৩৫৯, সনদ ছহীহ।
[9]. মুসলিম হা/২৬৯৯।
[10]. সুনানে নাসাঈ হা/২৪৩৬, সনদ হাসান।
[11]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৮/৪৩৩।
[12]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২/৫৭০।
[13]. মাফাতিহুল গায়েব (তাফসীরুর রাযী) ১২/ ৪৪৭।
[14]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৩/২৭২; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৪/২২১।
[15]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯১৩, সনদ ছহীহ।
[16]. বুখারী হা/৩; মিশকাত হা/৫৮৪১।
[17]. মাজমাউয যাওয়াইদ হা/১৭৭২২; ১০/২৩২, সনদ ছহীহ।
[18]. ছান‘আনী, আত-তানভীর শারহু জামি‘ইছ ছাগীর ৩/৪১০।
[19]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, ১/২৩১।
[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৮/২৫৫।
[21]. তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৯২৯।
[22]. বুখারী হা/৫৪৬৫; মুসলিম হা/৫৬০।
[23]. মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ ২/৩৯৮।
[24]. দুরূসুশ শায়েখ ইসমাইল মুক্বাদ্দাম, ক্যাসেট নং: ২৫/৭।
[25]. তিরমিযী হা/৩৪৭৯; মিশকাত হা/২২৪১, সনদ হাসান।
[26]. ইবনুল মুবারাক, আয্-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব ১/৯৭; গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৪/৪২৫।
[27]. মুসলিম হা/১১৬৩; মিশকতা হ/২০৩৯।
[28]. উসামা সুলাইমান, তাফসীরুল কুরআনিল কারীম ২/১৮।
[29]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৩৫০৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৯০, সনদ ছহীহ।
[30]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; তিরমিযী হা/২৩৯১।
[31]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ২/৫৯৪।
[32]. মুসলিম হা/১০২৮; আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৫।
[33]. মাদারিজুস সালিকীন ২/৫৬।
[34]. বুখারী হা/৫৮৬১; মুসলিম হা/৭৮২।
[35]. ওবায়দুল্লহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/২৪১।
[36]. তাফসীরে ছা‘লাবী (আল-কাশ্ফু ওয়াল বায়ান), ২/২৪৩।
[37]. আহামদ হা/১২২৯৩; নাসাঈ হা/৩৯৪০; মিশকাতা হা/৫২৬১, সনদ হাসান।
[38]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৮৮; আবূদাঊদ হা/৪৯৮৬, সনদ ছহীহ।
[39]. ছালেহ আল-উছায়মীন, মাকারিমুল আখলাক্ব (রিয়াদ: দারুল ওয়াত্বান, তাবি) পৃ. ২১।
[40]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/৪০০।
[41]. আহমাদ আদ-দিনাওয়ারী, আল-মুজালাসাহ ও জাওয়াহিরুল ইলম, ৩/৫৩৩।
[42]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃ. ৫৯২।
[43]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/২৩৮।
[44]. বুখারী হা/১১৩০; মুসলিম হা/২৮১৯।
[45]. মুসলিম হা/৪৮৯।
[46]. ইবনু কুতায়বাহ, উয়ূনুল আখবার ২/৩৯৭।
[47]. ইবনু আব্দি রবিবহী, আল-ইক্বদুল ফারীদ ৩/১৩৪।
[48]. আবূ নু‘আইম আস্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া, ৫/২৩০।
[49]. ইবনু আবীদ্দুনইয়া, কাছরুল আমাল, পৃ. ১০৮।
[50]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃ. ৬৫।
[51]. তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৭৪৫।
[52]. আবূ হাইয়ান আন্দালুসী, আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৬/২২০।
[53]. জাযায়েরী, আয়সারুত তাফাসীর, ২/৫৮৪।
[54]. মুসলিম হা/৩৮; মিশকাত হা/১৫।
[55]. বুখারী হা/৫৮৬১; মুসলিম হা/৭৮২।
[56]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/২২৯।
[57]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৫/৩৫৫।