পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ ।

তারা জানাযার ছালাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হ’লে পানি পাওয়া সত্ত্বেও তায়াম্মুম করা জায়েয বলেন। এর প্রমাণ হিসাবে তারা নবী করীম (ছাঃ) কর্তৃক সালামের জবাব দিতে গিয়ে তায়াম্মুম করা সংক্রান্ত আবূ জাহ্ম (রাঃ)-এর হাদীছ তুলে ধরেন। তারপর তারা দুই জায়গায় এই হাদীছের বিরোধিতা করেন। (১) তিনি তার মুখমন্ডল ও হাতের দুই তালুতে তায়াম্মুম করেছেন দুই কনুই পর্যন্ত নয়।[1] (২) তারা ওযূহীন ব্যক্তির জন্য সালামের জবাব দানকে মাকরূহ গণ্য করেন না এবং সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব মনে করেন না।[2]

তারা ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা শৌচকার্যে দু’টি  ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার যথেষ্ট হওয়ার দলীল দেন। তিনি বলেছেন,أَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّي الله عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ ذَهَبَ لحِاَجَتِهِ- وَقاَلَ لَهُ : ائتني بِأَحْجَارٍ، فَأتاه بحَجَرَيْنِ وروثة، فَأَخَذَ الحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ وَقَالَ : هَذِه رِكْسٌ- ‘একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শৌচকার্যে গমনের জন্য আমাকে তিনটি পাথর এনে দিতে বলেন। আমি দু’টি পাথর পেলাম। আর তৃতীয়টি খোজাখুঁজির পরও না পেয়ে তার কাছে শুকনো গোবর নিয়ে আসলাম। তিনি পাথর দু’টি নিলেন এবং গোবরটা ফেলে দিলেন এবং বললেন, এটা অপবিত্র’।[3]

তারপর তারা হাদীছের মূল কথারই বিরোধিতা করেছেন। তারা গোবর দিয়ে শৌচকার্যের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু হাদীছ থেকে দু’টি পাথর যথেষ্ট হওয়ার যে নির্দেশনা পাওয়া গেল সেদিকে তারা দলীল গ্রহণ করেননি।

তারা বলেন, ‘মহিলাকে স্পর্শ করলে ওযূ ভাঙ্গে না। কেননা নবী করীম (ছাঃ) (তাঁর নাতনী) উমামা বিনতে আবুল আছকে কাঁধে তুলে ছালাত আদায় করছিলেন। তিনি যখন দাঁড়াচ্ছিলেন তখন তাকে তুলে নিচ্ছিলেন, আবার যখন রুকূ‘ কিংবা সিজদায় যাচ্ছিলেন তখন নামিয়ে দিচ্ছিলেন।[4] তারপর তারা বলেছেন, ‘এভাবে ছালাত আদায় করলে ইমাম-মুক্তাদী সবার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে’।

জনৈক বিদ্বান বলেছেন, ‘এরা এভাবে ছালাত আদায় তো বাতিল করে দেয়, কিন্তু নিম্নোক্ত নিয়মের ছালাত তারা খুব শুদ্ধ বলে। যেমন একজন ছালাত আদায়কারী مُدْهَامَّتَان (আর-রহমান ৫৫/৬) আয়াতটি আরবীর বদলে ফারসীতে পড়ল; তারপর একবার শ্বাস ফেলার পরিমাণ সময় রুকূ‘ করল; তারপর রুকূ‘ থেকে তলোয়ারের মত বাঁকা ধারের মত সোজা হয়ে অথবা মোটেও সোজা না হয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল, কিন্তু সিজদাকালে তার দুই হাত ও দুই পা মাটিতে রাখল না, এমনকি সম্ভব হ’লে তার দুই হাঁটু ও কপালও মাটিতে রাখল না কেবল নাকের ডগা একবার শ্বাস ফেলার পরিমাণ সময় মাটিতে রেখে সিজদা করল; তারপর তাশাহহুদ পরিমাণ সময় বসল; তারপর ছালাতের পরিপন্থী কোন কাজ করল যেমন নিঃশব্দে অথবা সশব্দে পায়ু পথে বায়ু ছাড়ল অথবা হেসে দিল কিংবা এমন কিছু একটা করল, এরপরও তার ছালাত ছহীহভাবে হয়ে গেল’।[5]

তারা যুদ্ধবন্দিনী ও ক্রীতদাসীর সাথে ইস্তিবরার[6] পূর্বে সঙ্গম করা হারাম বলেন। কেননা নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,لَا تُوطَأُ حَامِلٌ حَتَّى تَضَعَ، وَلَا حَائِلٌ حَتَّى تُسْتَبْرَأَ بِحَيْضَةٍ ‘গর্ভবতীর সাথে বাচ্চা জন্মের আগে সঙ্গম করা যাবে না এবং যে গর্ভবতী নয় তার সাথে এক মাসিক যোগে ‘ইস্তিবরা’ না করা অবধি সঙ্গম করা যাবে না’।[7]

তারপর তারা হাদীছটির সুস্পষ্ট নির্দেশ লঙ্ঘন করে বলেছেন, দাসীর মালিক যদি আগের রাতে তার সঙ্গে সঙ্গমের পর তাকে আযাদ করে দিয়ে অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে দেয় তাহ’লে স্বামীর জন্য ঐ রাতেই তার সাথে সঙ্গম করা হালাল হবে।[8]

তারা খালার পক্ষে বোনের শিশু সন্তানের প্রতিপালনের অধিকার লাভের প্রমাণ দেন হামযা (রাঃ)-এর কন্যার হাদীছ দ্বারা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর খালার পক্ষে তাকে প্রতিপালনের ফায়ছালা দিয়েছিলেন।[9]

তারপর তারা হাদীছটির নির্দেশ লঙ্ঘন করে বলেছেন, খালা যদি ঐ মেয়ের মাহরাম ব্যতীত অন্যের সঙ্গে যেমন তার চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে করে তাহ’লে খালার প্রতিপালনাধিকার রহিত হয়ে যাবে।[10]

তারা আলী (রাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা দুই (বন্দী) ভাইয়ের মাঝে বিচ্ছেদ  ঘটানোর  নিষেধের  প্রমাণ দেন।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)

তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে নিষেধ করেছেন।[11]

তারপর তারা হাদীছের বিরুদ্ধে গিয়ে বলেছেন, এমন বেচা-বিক্রি হয়ে থাকলে বিক্রিত বিষয় ফেরত নেবে না। অথচ হাদীছে ফেরৎ নেওয়ার আদেশই রয়েছে।

তারা মুসলিম ও যিম্মীর মধ্যে ক্বিছাছ কার্যকরের বিষয়ে একটি হাদীছের বরাত দেন। বর্ণিত আছে যে, জনৈক মুসলিম এক ইহূদীকে কিল-থাপ্পড় মেরেছিল। ফলে নবী করীম (ছাঃ) ঐ মুসলিম থেকে উক্ত ইহূদীর ক্বিছাছ নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।[12] তারপর তারা হাদীছের বিরুদ্ধে গিয়ে বলেছেন, কিল-থাপ্পড় ও আঘাতে কোন ক্বিছাছ নেই; না দু’জন মুসলিমের মাঝে, না একজন মুসলিম ও একজন কাফেরের মাঝে।

তারা দলীল দেন যে, মালিক ও তার দাসের মাঝে কোন ক্বিছাছ নেই। কেননা নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ لَطَمَ عَبْدَهُ فَهُوَ حُرٌّ- ‘যে তার দাসকে কিল-থাপ্পড় মারবে সে স্বাধীন হয়ে যাবে’।[13]

তারপর তারা হাদীছের বিরুদ্ধে গিয়ে বলেছেন, এজন্য সে স্বাধীন হবে না। তারা ঐ হাদীছ দ্বারাও দলীল দেন, যাতে আছে, مَنْ مَثَّلَ بِعَبْدِهِ عَتَقَ عَلَيْهِ ‘যে তার দাসকে শাস্তি দিবে ঐ দাস তার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে’।[14]

তারপর তারা বলেছেন, মারার জন্য না তার উপর ক্বিছাছ আবশ্যিক হবে, না ঐ দাস তার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।

তারা ‘আমর বিন শু‘আইব থেকে তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণিত হাদীছ فِي الْعَيْنِ نِصْفُ الدِّيَةِ ‘চোখ নষ্টে অর্ধেক দিয়ত’[15] দ্বারা চোখের দিয়ত পুরো দিয়তের অর্ধেক বলে দলীল দেন। তারপর তারা বেশ কিছু স্থানে হাদীছটির বিরোধিতা করেছেন। তন্মধ্যে একটি স্থান, وَفِي الْعَيْنِ الْقَائِمَةِ السَّادَةِ لِمَوْضَعِهَا ثُلُثُ الدِّيَةِ- ‘যথাস্থানে থাকা দৃষ্টিহীন বা কানা চোখ উপড়ে ফেললে পুরো দিয়তের এক-তৃতীয়াংশ দিতে হবে’।[16] আরেকটি স্থান, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণীفِي السِّنِّ السَّوْدَاءِ ثُلُثُ الدِّيَةِ ‘একটি কালো (নষ্ট) দাঁত ভেঙে ফেলায় এক-তৃতীয়াংশ দিতে হবে’।[17]

সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য বৈধ বলে তারা নু‘মান বিন বাশীর বর্ণিত হাদীছ দ্বারা দলীল দেন। ঐ হাদীছে আছে أَشْهِدْ عَلَي هَذَا غَيْرِيْ  ‘এ বিষয়ে আমাকে বাদে অন্যকে সাক্ষী রাখ’।[18] তারপর তারা হাদীছের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন।[19] কেননা খোদ ঐ হাদীছে এসেছে, اِنَّ هَذَا لَا يَصْلُحُ ‘নিশ্চয়ই এটা সমীচীন নয়’। অন্য শব্দে এসেছেاِنَّي لَا اَشْهَدُ عَلَي       جَوْرٍ  ‘আমি অন্যায়-যুলুমের পক্ষে সাক্ষ্য দিব না’। কিন্তু তারা বলছেন, ‘একাজ বরং সমীচীন এবং এতে কোন যুলুম-অন্যায় নেই। প্রত্যেকেই এক্ষেত্রে সাক্ষী হ’তে পারবে’।[20]

তারা হাদীছ দ্বারা পানি ছাড়াও তরল পদার্থ দিয়ে নাজাসাত বা অপবিত্রতা দূরীকরণের দলীল দেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلِيهِ الْأَذَى، فَإِنَّ التُّرَابَ لَهما طَهُورٌ ‘যখন তোমাদের কেউ তার দু’স্যান্ডেল দ্বারা নাপাক জিনিস মাড়াবে তখন মাটি ঐ দু’টির পবিত্রতার উপকরণ হবে।[21] তারপর তারা এর বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘কেউ যদি তার দুই মোযা দ্বারা নাপাকী মাড়ায় তাহ’লে মাটি দ্বারা মোযা পাক হবে না’।[22]

তারা আহত কিংবা ক্ষত স্থানের পট্টি-ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ বৈধ হওয়ার দলীল দেন মাথা ফেটে যাওয়া ছাহাবীর হাদীছ দ্বারা।

তারপর তারা উহার সরাসরি বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, পানি (ওযূ) ও মাটি (তায়াম্মুম) একত্রিত করা যাবে না। বরং অঙ্গের সুস্থ অংশটুকু যদি বেশী হয় তাহ’লে সেটুকু ধুয়ে নিলেই তার যথেষ্ট হবে, তাকে তায়াম্মুম করতে হবে না। আর যদি আহত স্থানের পরিমাণ বেশী হয় তাহ’লে শুধুই তায়াম্মুম করবে, সুস্থ অঙ্গটুকু তাকে ধুতে হবে না।

তারা আমীরদের অথবা শাসকদের অথবা মুতাওয়াল্লীদের একের পর এক বা পরম্পরাক্রমে নিয়োগদান বৈধ হওয়ার দলীল দেন নবী করীম (ছাঃ)-এর নিম্নের বাণী দ্বারাاَمِيْرُكُمْ زَيْدٌ فَاِنْ قُتِلَ زَيْدٌ فَجَعْفَرٌ، فانْ قُتِلَ فَعَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ ‘তোমাদের আমীর হবে যায়েদ, সে নিহত হ’লে তারপর হবে জা‘ফর, সে নিহত হ’লে তারপর হবে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা’।[23] তারপর তারা খোদ হাদীছের বিপক্ষে গিয়ে বলেছেন, ওয়ালী নিয়োগে কোন শর্তারোপ ছহীহ বা সঠিক নয়। আমরা কিন্তু আল্লাহকে সাক্ষী মেনে বলছি, রাসূলুল্লাহ কর্তৃক উক্ত (শর্তযুক্ত) নিয়োগদান পৃথিবীতে সংঘটিত সকল নিয়োগদান অপেক্ষা বিশুদ্ধ ও সঠিক এবং তা তাদের সম্পাদিত নিয়মে আদ্যোপান্ত যত ওয়ালী নিয়োগ হয়েছে বা হবে তার সবগুলো থেকে সঠিক ও শ্রেয়।

বিনষ্টকারী যা বিনষ্ট করবে তার ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে এবং সে বিনষ্ট দ্রব্যের মালিক হবে এ সম্পর্কে তারা পেয়ালা ভাঙার হাদীছ দ্বারা দলীল দেন যে, জনৈকা উম্মুল মুমিনীন পেয়ালা ভেঙে ফেলেছিলেন। ফলে নবী করীম (ছাঃ) পেয়ালার মালিক আরেক উম্মুল মুমিনীনকে অনুরূপ একটি পেয়ালা ফেরৎ দিয়েছিলেন।

তারপর তারা প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করে বলেছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া চলবে কেবল দীনার-দিরহাম বা টাকা-পয়সা দ্বারা; সমতুল্য বস্ত্ত দ্বারা নয়। তারা এ বিষয়ে সেই ছাগল বিষয়ক হাদীছ দ্বারাও দলীল দেন, যার মালিকের অনুমতি ছাড়াই তাকে যবেহ করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার মালিককে ছাগল ফেরৎ দেননি। তারপর তারা সুস্পষ্টতই এর বিপক্ষে গিয়েছেন। কেননা নবী করীম (ছাঃ) ছাগলটিকে তো যবেহকারীর মালিকানায় দিয়ে দেননি। তিনি বরং তা যুদ্ধবন্দীদের খাইয়ে দিতে আদেশ দিয়েছিলেন।

তারা ফলমূল ও দ্রুত নষ্ট হয় এমন জিনিস চুরিতে হাত কাটা রহিত হওয়ার দলীলে বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَا قَطْعَ فِي ثَمَرٍ، وَلَا كَثَرٍ ‘কোন ফল চুরি করলে হাত কাটা নেই এবং খেজুর গাছের মাথি চুরি করলেও নেই’।[24] তারপর বেশকিছু ক্ষেত্রে তারা হাদীছটির বিপরীতে গিয়েছেন। যথা (১) ঐ হাদীছে আছে, فَإِذَا آوَاهُ الي الْجَرِينِ فَفِيْهِ الْقَطْعُ ‘তবে খেজুর শুকানোর স্থানে জমা করার পর চুরি করলে তাতে হাত কাটা যাবে’।[25] কিন্তু তাদের মতে খেজুর শুকানোর স্থানে জমা করার পর চুরি করুক কিংবা আগে করুক কোন অবস্থাতেই হাত কাটা যাবে না।

(২) তিনি বলেছেন, اِذَا بَلَغَ ثَمَنُ الْمِجَنِّ ‘যখন চুরির পরিমাণ একটি ঢালের মূল্যের সমান হবে’।[26] ছহীহ বুখারীতে এসেছে, সেকালে ঢালের মূল্য ছিল তিন দিরহাম।[27] কিন্তু তাদের মতে এই পরিমাণ চুরিতে হাত কাটা যাবে না। (৩) তাদের মতে খেজুর শুকানোর স্থান কোন সুরক্ষিত জায়গা নয়। তাই সেখানে পাহারাদার না থাকলে শুকনো ফল বা খেজুর চুরিতে হাত কাটা যাবে না।[28]

পালিয়ে যাওয়া দাসকে ধরে নিয়ে আসা ব্যক্তি চল্লিশ দিরহাম পাবে-এ মাসআলার দলীল হিসাবে তারা যে হাদীছ তুলে ধরেন তাতে আছে,ان مَنْ جَاءَ بِآَبِقٍ مِنْ خَارِجِ الْحَرَمِ فَلَهُ عَشَرَةُ دَرَاهِمَ اَوْ دِيْنَارًا- ‘যে ব্যক্তি পালিয়ে যাওয়া কোন দাসকে হারামের বাইরে থেকে ধরে নিয়ে আসবে সে দশ দিরহাম অথবা এক দীনার পাবে’।[29] কিন্তু তারা হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে দশের স্থলে চল্লিশ দিরহাম নির্ধারণ করেছেন।[30]

শুফ‘আর এখতিয়ার (বিক্রয়ের সাথে) তাৎক্ষণিকভাবে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তারা ইবনুল বায়লামানী বর্ণিত হাদীছ দ্বারা দলীল দিয়েছেন। ঐ হাদীছটি হ’ল الشُّفْعَةُ كَحَلِّ الْعِقَالِ ولَا شُفْعَةَ لِصَغِيرٍ، وَلَا لِغَائِبٍ- ‘শুফ‘আ দড়ি খোলার মত। আর শুফ‘আ নেই অপ্রাপ্তবয়ষ্কের জন্য ও অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য’।[31] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,وَمَنْ مَثَّلَ بِعَبْدِهِ  فَهُوَ حُرٌّ  ‘আর যে তার দাসের দেহ বিকৃত করবে সেই দাস মুক্ত হয়ে যাবে’।[32]

এই হাদীছের الشُّفْعَةُ كَحَلِّ الْعِقَالِ ‘শুফ‘আ দড়ি খোলার মত’-অংশটুকু বাদে বাকী বিষয়গুলো তারা অবলীলায় বর্জন করেছে।

পিতা সন্তানকে এবং মনিব দাসকে হত্যা করলে ক্বিছাছ অকার্যকর হওয়ার বিষয়ে তারা নিম্নের হাদীছ দ্বারা দলীল দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেন,لَا يُقَادُ وَالِدٌ بِوَلَدِهِ وَلاَ سَيِّدٌ بِعَبْدِهِ- ‘পিতাকে নিজ সন্তানের হত্যার দরুন এবং মনিবকে নিজ দাসের হত্যার দরুন (ক্বিছাছ মূলে) হত্যা করা যাবে না’।[33] কিন্তু তারা খোদ হাদীছের বিরুদ্ধে গিয়েছেন এবং বলেছেন, দাসের দৈহিক বিকৃতি ঘটালে ঐ দাস মুক্ত হয়ে যাবে না। অথচ তাদের উল্লিখিত হাদীছের শেষে রয়েছে যে, وَمَنْ مَثَّلَ بِعَبْدِهِ فَهُوَ حُرٌّ ‘যে তার দাসের দৈহিক বিকৃতি ঘটাবে তার ঐ দাস মুক্ত হয়ে যাবে’।[34]

তারা বলেন, ব্যভিচারজাত সন্তানের পিতৃত্ব বিছানার মালিক তথা ব্যভিচারিণীর স্বামীর সঙ্গে নির্ধারিত হবে; ব্যভিচারীর সঙ্গে নয়। তারা এজন্য যাম‘আর দাসীপুত্রের হাদীছ দলীল হিসাবে তুলে ধরেন। তাতে আছে, الوَلَدُ لِلْفِرَاشِ ‘সন্তান বিছানার (মালিকের)’।[35] তারপর তারা সরাসরি স্বয়ং হাদীছটির বিরোধিতা করে বলেছেন, দাসীর বিছানা হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ঐ বিচার দাসীকে কেন্দ্র করেই ছিল। অবাক করা ব্যাপার এই যে, তারা বলেন, যখন কেউ তার মা, তার মেয়ে ও তার বোনের সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হবে তখন ঐ বিবাহ হারাম ও বাতিল হ’লেও সন্দেহ হেতু তার উপর যিনার দন্ড আরোপিত হবে না এবং এ বিবাহ বাতিল হ’লেও তাতে বিছানা সাব্যস্ত হবে। আর যে দাসী তার ঔরসজাত সন্তানের মা এবং যে তার জীবনসাথী যার সাথে সে রাত-দিন মেলামেশা করে সে তার বিছানা হ’তে পারল না!

দিনের বেলায় সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার আগে রামাযানের ছিয়ামের নিয়ত করলে তা জায়েয হওয়ার পিছনে তারা আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা দলীল দিয়েছেন,اِنَّ النَِّبيَّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا فَيَقُوْلُ : هَلْ مِنْ غِدَاءٍ؟ فَتَقُوْلُ : لَا فَيَقُوْلُ : فَاِنَّي صَائِمٌ- ‘নবী করীম (ছাঃ) তাঁর সাথে দেখা করে বলতেন, সকালের খাবার কি কিছু আছে? যদি বলতেন, না, তাহ’লে বলতেন, তাহ’লে আমি ছিয়াম রাখলাম’।[36]

তারপর তারা বলেছেন, যদি কেউ নফল ছিয়ামে এভাবে নিয়ত করে তাহ’লে তার ছিয়াম ছহীহ হবে না। অথচ হাদীছ নফল ছিয়ামের বিষয়েই বর্ণিত হয়েছে।[37]

তারা ‘মুদাববার’ দাস বিক্রয় নিষেধের পিছনে দলীল দেন যে, তার মাঝে মুক্তির চুক্তি সংঘটিত হয়েছে। এক্ষণে তাকে বিক্রয় করলে তার সে সুযোগ বাতিল করা হবে। নবী করীম (ছাঃ) যে মুদাববারকে বিক্রি করেছিলেন।[38]

তারা তার উত্তরে বলেন, তিনি তার সেবা বিক্রয় করেছিলেন। তারপর তারা বলেন, মুদাববারের সেবা বিক্রয় করাও জায়েয নয়।

জমি এবং জমিতে বিদ্যমান গাছপালাতে শুফ‘আ কার্যকর হয় বলে তারা নিম্নের হাদীছ দ্বারা দলীল দেনقَضَي رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالشُّفْعَةِ فِيْ كُلِّ شِرْكٍ فِيْ رِبْعَةٍ اَوْ حَائِطٍ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিটি শরীকানা জমি কিংবা বাগানে শুফ‘আর ফায়ছালা দিয়েছেন।

তারপর তারা এই হাদীছেরই মূল পাঠের বিরোধিতা করেছেন। কেননা তাতে আছে,ولَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَبِيعَ حَتَّى يُؤْذِنَ شَرِيكَهُ، فَإِنْ بَاعَ وَلَمْ يُؤْذِنْهُ فَهُوَ أَحَقُّ بِه- ‘আর তার জন্য নিজ শরীকের অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করা বৈধ হবে না। যদি তার অনুমতি না নিয়ে বিক্রয় করে তবে সে তা লাভে বেশী হকদার হবে’।

কিন্তু তারা বলছেন, তার অনুমতি নেওয়ার আগেই তা বিক্রয় করা তার জন্য জায়েয এবং কেউ যাতে শুফ‘আ দাবী না করতে পারে সেজন্য হীলা-বাহানা খাড়া করা তার জন্য বৈধ। আবার শরীকের অনুমতি নিয়ে বিক্রয় করলেও তখন সে শুফ‘আ মূলে তা লাভে বেশী হকদার হবে। অনুমতি নেওয়া বা না নেওয়ার এখানে কোন মূল্য নেই।

তারা জলপাইয়ের বদলে জলপাইয়ের তেল বিক্রয় নিষেধ করেন। তবে জলপাইয়ের মধ্যে যে তেল রয়েছে তা নিকষিত তেল থেকে কম বলে জানা গেলে তা বিক্রয় করা যাবে বলে মত ব্যক্ত করেন। দলীল হিসাবে তারা ঐ হাদীছ তুলে ধরেন, যাতে পশুর বদলে  গোশত বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে।[39]

তারপর তারাই আবার খোদ হাদীছের বিপক্ষে গিয়ে বলেছেন, পশুর বদলে গোশত বিক্রয় জায়েয আছে চাই তা একই শ্রেণীর হৌক কিংবা ভিন্ন শ্রেণীর হৌক।

তারা মরণাপন্ন রোগীর দানকে অছিয়তের পর্যায়ে গণ্য করেন, যা এক-তৃতীয়াংশের মধ্যেই কেবল কার্যকর হবে, তার বেশীতে নয়। দলীল হিসাবে তারা ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) বর্ণিত নিম্নের হাদীছ তুলে ধরেন,اِنَّ رَجُلًا اَعْتَقَ سِتَّةَ مَمْلُوْكِيْنَ عِنْدَ مَوْتِهِ لَا مَالَ لَهُ سِوَاهُمْ فَجَزَّهُمُ النَّبِيُّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةَ اَجْزَاءٍ وَاَقْرَعَ بَيْنَهُمْ فَاَعْتَقَ اِثْنَيْنِ وارق اَرْبَعَةً ‘এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে তার ছয়জন দাসকে আযাদ করে দেয়। ঐ দাসগুলো ব্যতীত তার আর কোন সম্পদ ছিল না। ফলে নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে তিন ভাগে ভাগ করেন এবং লটারি করে দু’জনকে মুক্ত করে দেন এবং চার জনকে দাস হিসাবে রেখে দেন।[40] তারপর দুই জায়গায় তারা হাদীছটির বিরোধিতা করেছেন। (১) তাদের মধ্যে কোনভাবেই লটারি করা যাবে না। (২) প্রত্যেক দাসের এক-ষষ্ঠাংশ মুক্ত হয়ে যাবে।[41]  

এরূপ উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যাবে। মূলকথা তাক্বলীদই তোমাদের উপর এ হুকুম চালিয়েছে এবং জোর করে তোমাদের এদিকে টেনে এনেছে। যদি তোমরা তাক্বলীদের বিরুদ্ধে দলীলকে বিচারক মানতে তাহ’লে এরকম খাদে পা দিতে না। কেননা এসব হাদীছ যদি ছহীহ হয়, হক হয় তাহ’লে এগুলোর আনুগত্য ফরয হবে এবং তার নির্দেশ পালন করতে হবে। আর যদি ছহীহ না হয় তাহ’লে তার মধ্যকার কোন কিছুই গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু যদি হাদীছ ছহীহ হয় আর অনুসরণীয় ইমামের মতের সাথে মিলে যায় তাহ’লে তা মানব এবং না মিললে তাকে যঈফ কিংবা বাতিল মনে করব অথবা অন্য কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাব- এটা বড় রকমের গলদ ও বিরুদ্ধাচরণ বৈ নয়।

এখন যদি তোমরা বল, আমরা যেসব হাদীছের উপর আমল করছি না সেগুলোর তুলনায় আমাদের পক্ষীয় হাদীছসমূহ তুলনামূলক বিচারে বেশী শক্তিশালী এবং যেসব হাদীছের উপর আমল করছি তাদের বিপরীতের হাদীছসমূহ এমন নয় যে, সেগুলো আমলে নেওয়া ও আমাদের আমলী হাদীছসমূহ বাদ দেওয়া আবশ্যক; তাহ’লে বলতে হবে, পূর্বে উল্লিখিত হাদীছসমূহ এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীছসমূহ হয় রহিত হয়ে গেছে কিংবা রহিত হয়নি; যদি রহিত হয়ে থাকে তাহ’লে কারো জন্যই ওগুলো দিয়ে দলীল দেওয়া বৈধ হবে না, আর যদি রহিত না হয়ে থাকে তাহ’লে এসব হাদীছের কোন একটারও বিরোধিতা করা কারো জন্য বৈধ হবে না।

এবার যদি তোমরা বল, যেসব হাদীছের উপর আমরা আমল করছি সেগুলো রহিত হয়নি, আর যেসব হাদীছের উপর আমাদের আমল নেই সেগুলো রহিত হয়ে গেছে; তাহ’লে বলতে হবে, এহেন দাবী স্পষ্টতই বাতিল। এরূপ দাবীদার যে জানাশোনার ভিত্তিতে এমন দাবী করছে এবং তার কাছে কোন প্রমাণ আছে তাও নয়। এখানে এই দাবীদারের বিপক্ষ দাবীদার যদি উল্টো বলে, আমাদের আমলী হাদীছ রহিত হয়নি বরং তোমাদের হাদীছ রহিত হয়ে গেছে তাহ’লে উভয়ের দাবীই একই হয়ে দাঁড়াবে। দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না। আবার উভয়েই বিপরীতক্রমে এমন দাবী তুলছে যা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে আবশ্যিক হবে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করা, তাকে বিচারক মানা এবং তার কাছেই বিচার নিয়ে যাওয়া যে পর্যন্ত না কোন সুন্নাহ রহিত হওয়ার পক্ষে অকাট্য দলীল মেলে, অথবা মুসলিম উম্মাহ কোন সুন্নাহ বর্জন করে তার বিপরীত আমলের উপর ইজমা করে। দ্বিতীয় ধারাটি স্বভাবতই অসম্ভব। কেননা মুসলিম উম্মাহ কোন রহিতকৃত সুন্নাহ বাদে একটি সুন্নাহর উপরও আমল বর্জনে ইজমা করেনি। তারা বরং এমন সুন্নাহর উপর আমল বাতিলে ইজমা করেছে, যা সুস্পষ্টভাবে রহিত হয়ে গেছে এবং যার রহিতকারী দলীলও উম্মাতের নিকট স্পষ্ট রয়েছে।

এক্ষেত্রে রহিতকৃত সুন্নাহর উপর আমল বাতিল ও রহিতকারী সুন্নাহর উপর আমল কার্যকরী হবে। আর ব্যক্তি বিশেষের কথায় সুন্নাহ বর্জন, তা কোনক্রমেই হ’তে পারে না, তিনি যে মাপের লোকই হৌন না কেন। আল্লাহ্ই তাওফীক্বদাতা।

[মুক্বাল্লিদরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাদের ইমামদের আদেশ লঙ্ঘন করে চলেছে।]

২০তম দলীল : মুক্বাল্লিদরা আল্লাহর আদেশ, তাঁর রাসূলের আদেশ, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের পন্থা এবং তাদের ইমামদের আদেশের বিরোধিতা করে চলেছে। সেই সাথে তারা বিদ্বানদের রাস্তার বিপরীত রাস্তা ধরেছে। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন যে, মুসলমানরা কোন বিষয়ে মতানৈক্য  করলে তার সমাধানের জন্য তারা তা আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ফেরাবে। কিন্তু মুক্বাল্লিদরা বলে, আমরা তা কেবলই আমাদের অনুসৃত ইমামের দিকে ফেরাব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আদেশ দিয়েছেন যে, মতানৈক্যের ক্ষেত্রে তার সুন্নাত ও তার সৎপথপ্রাপ্ত ধার্মিক খলীফাদের সুন্নাত ধারণ করবে, সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁতে কামড়ে পড়ে থাকবে। কিন্তু মুক্বালিলদরা বলে, মতানৈক্যের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অনুসৃত ইমামকে আঁকড়ে ধরব এবং তাঁকে অন্য সবার উপরে স্থান দেব। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, পন্থা হিসাবে ছাহাবায়ে  কেরামের একজনও কোন একজন ছাহাবীর যাবতীয় কথার তাক্বলীদ করতেন না। তিনি এমন করতেন না যে, ঐ ছাহাবীর একটা কথাও অমান্য করছেন না, আর অন্য ছাহাবীদের কোন কথাই গ্রহণ করছেন না। কিন্তু এখন যে এক ইমামের সকল কথারই তাক্বলীদ করতে হবে এবং অন্যদের কথা সব ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, এটি একটি জঘন্য বিদ‘আত। তাদের ইমামগণও তাদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নিষেধ সত্ত্বেও তাদের তাক্বলীদ করে তারা তাদেরই বিরোধিতা করছেন। তাদের নিষেধ বিষয়ক কিছু কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা যে বিদ্বানদের রাস্তার বিপরীত রাস্তা ধরেছে সে সম্পর্কে কথা এই যে, বিদ্বানদের রাস্তা হ’ল, বিদ্বানদের কথাগুলো একত্র করা, সেগুলো সংরক্ষণ করা, তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা, সেগুলোকে কুরআন, রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত সুন্নাত এবং তার খলীফাবৃন্দের কথামালার সাথে মিলানো। সেসব কথা কুরআন, প্রমাণিত সুন্নাহ ও খলীফাদের কথার সবগুলোর সাথে কিংবা কোন একটার সাথে মিলে গেলে তারা তা গ্রহণ করেন, তদনুযায়ী আল্লাহর আনুগত্য করেন, বিচার করেন এবং ফৎওয়া দেন। আর যা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হয় তাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেন, তার দিকে ভ্রূক্ষেপও করেন না। আর যা তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না সেগুলোকে তারা ইজতিহাদী বা গবেষণামূলক মাসআলা হিসাবে গণ্য করেন যার চূড়ান্ত কথা এই যে, সেগুলো মানা বড় জোর জায়েয হবে; সেগুলোকে ওয়াজিব গণ্য করা যাবে না। তারা সেগুলো কারো উপর আবশ্যিক গণ্য করেন না এবং এ কথাও বলেন না যে, এ বিষয়ে আমাদের ইজতিহাদ সঠিক, আর অন্যদের ইজতিহাদ ভুল। এটাই হ’ল, পূর্বসুরী ও উত্তরসুরী বিদ্বানদের রাস্তা।

[পরবর্তী লোকেরা দ্বীনের নিয়ম-নীতি উল্টিয়ে দিয়েছে]

কিন্তু পরবর্তী কালের লোকেরা বিদ্বানদের উক্ত রাস্তা পাল্টে ফেলেছে এবং দ্বীনের নিয়ম-নীতি উল্টিয়ে দিয়েছে। তারা আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত, তার খলীফাবৃন্দ ও সকল ছাহাবীর কথাকে অচল গণ্য করে সেগুলোকে তাদের অনুসৃত ইমামের মতের সাথে মিলিয়ে দেখে। অতঃপর যেগুলো তার মতের সাথে মিলে যায় সেগুলো সম্পর্কে বলে, এগুলো আমাদের এবং বিগলিত চিত্তে তা মেনে নেয়। আর যেগুলো তাদের অনুসৃত ইমামদের কথার সাথে মিল খায় না সেগুলো গ্রহণ করে না এবং বিনয়ের ভাবও দেখায় না; বরং বলে, প্রতিপক্ষরা অমুক অমুক কথা দিয়ে দলীল দিয়ে থাকেন।

তাদের বিদ্বানরা এসব দলীল খন্ডন করতে যথাসাধ্য হীলা-বাহানা তালাশ করে। তারা বাহানা তালাশ করতেই থাকে করতেই থাকে যে পর্যন্ত না দলীলগুলো তাদের মাযহাবের সাথে মিলে যায়। অবশ্য এই একই বাহানা বা পদ্ধতি যদি প্রতিপক্ষদের মতের দলীলে হুবহু বিদ্যমান থাকে তখন কিন্তু তারা তাদের গালমন্দ করে এবং এমন ধারার বাহানা করা ঠিক নয় বলে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, এ জাতীয় কথা দিয়ে কুরআন-হাদীছের দলীল খন্ডন করা যায় না। (অথচ নিজেরাই কিন্তু ঐ জাতীয় কথা দিয়ে কুরআন-হাদীছের নছ খন্ডন করে)। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর সন্তুষ্টির দিকে অগ্রসর হওয়ার এবং যে হক দিয়ে আল্লাহ তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন তার সাহায্য-সহযোগিতা করার সদিচ্ছা রাখে, সে যেখানেই থাকুক আর যার সাথেই থাকুক (মাযহাব সমর্থনের) এমন বাজে পন্থা ও নিন্দনীয় খাছলতের সাথে সে নিজেকে যুক্ত করতে মোটেও রাযী হবে না।

যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে তাদেরকে আল্লাহ নিন্দা করেছেন :

২১তম দলীল : যারা তাদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে আল্লাহ তাদের নিন্দা করে বলেছেন, كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ ‘তারা প্রত্যেকটি দল স্ব স্ব মতে গর্বিত/উল্লসিত’ (রূম ৩০/৩২)। এরা সরাসরি তারা, যারা তাক্বলীদপন্থী। পক্ষান্তরে বিদ্যাধারীরা এর মাঝে নেই। কেননা তারা মতভেদ করলেও দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেনি এবং দলে দলে বিভক্ত হয়নি। বরং তারা একটাই দল, যারা সত্যের সন্ধানে একতাবদ্ধ। সত্য উন্মোচিত হ’লে তারা তাকে প্রাধান্য দেয় এবং সবকিছুর উপরে সত্যকে স্থান দেয়। ফলে তারা একটা দলই থাকছে যাদের লক্ষ্য ও পন্থা এক। পথও এক, লক্ষ্যও এক। কিন্তু মুক্বাল্লিদরা এর বিপরীত। তাদের লক্ষ্যও ভিন্ন ভিন্ন, পথও ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং লক্ষ্যে ও পথে তারা ইমামদের সাথে নেই।

যারা নিজেদের দ্বীনী কার্যকে বহু ভাগে ভাগ করেছে আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন :

মহান আল্লাহ যারা নিজেদের দ্বীনী কাজকে বহু ভাগে ভাগ করেছে (এবং নিজেদের মনমত তা পালন করছে) তাদের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন,كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ‘প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট’ (রূম ৩০/৩২)।  তিনি আরও বলেছেন,يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ، وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ، فَتَقَطَّعُوْا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ. ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সব বিষয়ে আমি অবগত। আর নিশ্চয়ই তোমাদের এই দ্বীন একই দ্বীন এবং আমি তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা তাদের দ্বীনকে বহু ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। আর প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট’ (মুমিনূন ২৩/৫১-৫৩)

আয়াতে উল্লিখিত হুবহু শব্দের অর্থ নিজেদের প্রণীত বইপত্র, আল্লাহর গ্রন্থ এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যা সহ পাঠিয়েছেন তার প্রতি কুণ্ঠিত হয়ে সেসব বইপত্র নিয়ে তারা মেতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদের যেসব আদেশ দিয়েছেন তাদের উম্মতকেও সেই আদেশ দিয়েছেন যে, তারা সবাই উৎকৃষ্ট হালাল জিনিস খাবে, সৎকাজ করবে, একমাত্র তাঁর ইবাদত করবে, একমাত্র তাঁর হুকুম মানবে এবং দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করবে না। রাসূলগণ এবং তাদের অনুসারীরা তদনুযায়ী আল্লাহর হুকুম মেনে চলেছিলেন, তাঁর রহমতের ছায়াতলে তারা থাকতে পেরেছিলেন। এমনি করে একসময় পরবর্তীকালীনরা এলো। তারা নিজেদের মাঝে দ্বীনী বিষয়ে টক্কর লাগিয়ে বহুধা বিভক্ত হয়ে গেল। এখন তারা প্রত্যেকটি দল স্ব স্ব মতে গর্বিত। অনন্তর যে এই আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে এবং বাস্তবতার সাথে মিলাবে তার সামনে প্রকৃত অবস্থা যাহির হয়ে যাবে এবং কোন দলে সে আছে তাও বুঝতে পারবে। মহান আল্লাহই তো সাহায্য লাভের কেন্দ্র।

২৩তম দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হ’ল সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। এসব গুণে গুণান্বিতদের আল্লাহ সফলতার সাথে খাছ করেছেন; অন্যদের নয়। আর কল্যাণের দিকে আহবানকারীরা তো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের দিকে আহবানকারী। অমুকের মত তমুকের মতের দিকে আহবানকারী নয়।

যারা আল্লাহর বিধান মোতাবেক বিচারের দিকে আহবান জানালে তা উপেক্ষা করে আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন :

২৪তম দলীল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান জানালে যে তা উপেক্ষা করে এবং অন্যের বিচার-ফয়ছালার প্রতি রাযী-খুশী প্রকাশ করে আল্লাহ তা‘আলা তার নিন্দা করেছেন। মুক্বাল্লিদদের অবস্থাও একই। আল্লাহ বলেছেন,وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا ‘যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন তুমি কপট বিশ্বাসীদের দেখবে যে, তারা তোমার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিবে’ (নিসা ৪/৬১)। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে দাওয়াতদাতা থেকে যেই উপেক্ষায় মুখ ফিরিয়ে নিবে সেই এই নিন্দার অন্তর্ভুক্ত হবে, কম হোক বা বেশী হোক।

নানা কথার মধ্যে হক বা সঠিক একটা :

২৫তম দলীল : তাক্বলীদকারী ফির্কাগুলোর নিকট জিজ্ঞাসা,  তোমাদের মতে যে কোন বিষয়ে আল্লাহর দ্বীন বা বিধান তো একটাই-আর সেটা রয়েছে তোমাদের কথা ও প্রতিপক্ষের কথার মধ্যে।  

তাহ’লে কি আল্লাহর দ্বীন বা বিধান বিভিন্ন বিপরীতমুখী কথার সমষ্টি, যার একটি আরেকটিকে নাকচ ও বাতিল করে দেয়? যদি তারা বলে, আল্লাহর দ্বীন বা বিধান বিভিন্ন বিপরীতমুখী কথার সমষ্টি, যার একটি আরেকটিকে নাকচ ও বাতিল করে দেয়, তাহ’লে তারা তাদের ইমামদের সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ইমামগণের সবাই একমত যে, নানা কথার মধ্যে হক বা সঠিক কথা একটাই, যেমন নানাদিকের মধ্যে ক্বিবলার দিক একটাই। একইভাবে তারা কুরআন, সুন্নাহ ও সুস্পষ্ট যুক্তি-বুদ্ধি থেকেও বিচ্যুত হয়ে যাবে।

 [চলবে]


[1]. অনেক মাযহাবপন্থী তায়াম্মুমে কনুই পর্যন্ত মাসাহ করেন যা এই হাদীছের পরিপন্থী।-অনুবাদক।

[2]. অথচ রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুম করেছিলেন সালামের উত্তর দেওয়ার জন্যই।-অনুবাদক।

[3]. বুখারী হা/১৫৬।

[4]. বুখারী হা/৫১৬; মুসলিম হা/৫৪৩।  

[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, কিতাবুছ ছালাত, পৃঃ ৮১-৮৬; আল-মাত্বালিবুল মুনীফা ফিয-যাবিব আনিল ইমাম আবী হানীফা, মুহাক্বিকের তাহক্বীক্বসহ।   

[6]কেউ কোন যুদ্ধবন্দিনী কিংবা ক্রীতদাসীর মালিক হ’লে তার সাথে সে তৎক্ষনাৎ সঙ্গম করতে পারে না। তাকে বরং এক মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ঐ যুদ্ধবন্দিনী কিংবা ক্রীতদাসীর মাসিক পেরিয়ে গেলে তখন সে ইচ্ছা করলে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে। একে ইস্তিবরা বলে। এর মাধ্যমে গর্ভে সন্তান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।-অনুবাদক।

[7]. আবূদাঊদ হা/২১৫৭; দারেমী হা/২৩৪১; ইরওয়া হা/১৮৭, হাদীছ ছহীহ।    

[8]. যাদুল মা‘আদ ৪/১৭৯, ২১৩, ২১৪, ২২৭, ২৩২, ২৩৮, ২৩৯।      

[9]. বুখারী হা/২৬৯৯, ৪২৫১।       

[10]. যাদুল মা‘আদ ২/১৫৩।       

[11]. হাদীছটি হাকাম ইবনু উতায়বা আবদুর রহমান ইবনু আবী লায়লার বরাতে আলী (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাচনিক বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি তাদের দু’জনের সাথে মিলিত হও বা দেখা কর, তারপর তাদেরকে ফিরিয়ে নাও এবং দু’জনকে একসাথে ছাড়া বেচা-বিক্রি কর না’। তবে হাকাম ইবনু উতায়বা থেকে বর্ণনার ক্ষেত্রে মতভেদ আছে। তার থেকে সাঈদ ইবনু আবী আরূবা উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন (বাযযার হা/৬২৪)। বাযযার ও দারাকুৎনী ইলাল গ্রন্থে বলেছেন, সাঈদ হাকাম থেকে কিছুই শোনেননি। অবশ্য হাদীছটির একাধিক সনদ রয়েছে।        

[12]. বুখারী হা/২৪১২, ৩৩৯৮, ৪৬৩৮, ৬৯১৬, ৬৯১৭, ৭৪২৭; মুসলিম হা/২৩৭৩। বর্ণনাগুলোতে শুধুই নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট অভিযোগের কথা আছে। নবী করীম (ছাঃ) তার থেকে ইহূদীর ক্বিছাছ নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন এমন কথা তাতে নাই।

[13]. মুসলিম হা/১৬৫৭।

[14]. বায়হাকী হা/১৫৯৫০।

[15]. মুসনাদে আহমাদ হা/৭০৯২; তিনি ইবনু ইসহাকের সনদে এটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু ইসহাক একজন মুদাল্লিস এবং তিনি ‘আন‘আনা পদ্ধতিতে এটি বর্ণনা করেছেন। ফলে হাদীছটি দুর্বল। তবে তিনি সুলায়মান বিন মূসার থেকে মুহাম্মাদ ইবনু রাশেদের সনদে এই একই হাদীছের একটি অনুগামী বর্ণনা এনেছেন (২/২২৪)। এই মুতাবে‘ সনদটি হাসান স্তরের নীচে নয়। অতএব হাদীছটি আর দুর্বল থাকছে না।         

[16]. নাসাঈ হা/৪৮৪০, সনদটি উত্তম। মুহাক্কিক বলেন, এখানে হাদীছ দু’টির মধ্যে কোন সংঘর্ষ নেই। ভাল চোখ নষ্ট করলে অর্ধেক দিয়ত দিতে হবে এবং কানা চোখ নষ্ট করলে এক-তৃতীয়াংশ দিয়ত দিতে হবে।          

[17]. আবূদাউদ হা/৪৫৬৭।      

[18]. বুখারী হা/২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০; মুসলিম হা/১৬২৩।           

[19]. তারা বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি-‘এ বিষয়ে আমাকে বাদে অন্যকে সাক্ষী রাখ’-দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ ধরনের চুক্তিতে সাক্ষ্য দেওয়া জায়েয আছে। নতুবা তিনি কেন অন্যকে সাক্ষী রাখতে বলবেন?

[20]. ইবনুল ক্বাইয়িমের আলোচনা দেখুন : তাহযীবুস সুনান ৫/১৯১-৯৩; ইগাছাতুল লাহফান ১/৩৬৫; বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ ৩/১০১-১০২, ৩/১৫১-১৫২, ৪/১২৮।            

[21]. আবূদাঊদ হা/৩৮৫; বাগাবী হা/৩০০।             

[22]. ইগাছাতুল লাহফান ১/১৪৬-১৪৮; তুহফাতুল মাওদূদ, পৃঃ ২১৯।

[23]. বুখারী হা/৪২৬১। (এই ভবিষ্যদ্বাণী মূতার যুদ্ধ সম্পর্কে। খৃষ্টানদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধে উক্ত তিন ছাহাবী পরপর সেনাপতিত্ব করেন এবং শহীদ হন। তারপর খালিদ বিন ওয়ালীদের সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী জয় লাভ করে।-অনুবাদক)।          

[24]. আবূদাঊদ হা/৪৩৮৮; ইরওয়া হা/২৪১৪, ছহীহ। হাদীছটি ইয়াহইয়া বিন সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত এবং তার উপরের এসে সনদে মতভেদ লক্ষণীয়। আরো অনেকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদের মাধ্যমে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু হিববান থেকে তিনি রাফে‘ ইবনু খাদীজ থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সনদটি মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন। কেননা মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনে হিববান রাফে‘ ইবনু খাদীজ থেকে শোনেননি। আবার মুত্তাছিল বা অবিচ্ছিন্ন সূত্রেও হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে হুমায়দী হা/৪০৮; নাসাঈ ৮/৭৮; ইবনু মাজাহ হা/২৫৯৩ প্রমুখ সুফিয়ান বিন উয়াইনার সনদে মুত্তাছিল বা অবিচ্ছিন্ন সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।               

[25]. আবূদাঊদ হা/১৭১০; নাসাঈ হা/২৫৯৬।           

[26]. বুখারী হা/৬৭৯২, ৬৭৯৩, ৬৭৯৪; মুসলিম হা/১৬৮৫।           

[27]. বুখারী হা/৬৭৯৫-৬৭৯৮; মুসলিম হা/১৬৮৬।              

[28]. যাদুল মা‘আদ ৩/২১১, ২১২।             

[29]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১২১২৩। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীছে আছে হারামের মধ্যে পালিয়ে থাকা দাসকে পেলে তার জন্য নবী করীম (ছাঃ) দশ দিরহাম প্রদানের আদেশ দিয়েছিলেন। হাদীছটি মুত্তাছিল বা অবিচ্ছিন্ন হ’লেও দুর্বল। অপরদিকে ইবনু আবী মুলায়কা ও আমর বিন দীনার থেকে ইবনু জুরাইজ বর্ণিত হাদীছটি মাহফূয। তারা দু’জন বলেছেন, পালিয়ে যাওয়া দাস, যাকে হারামের বাইরে পাওয়া যাবে তার (প্রাপকের) জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশ দিরহাম নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এ হাদীছটির সনদ মুনকাতি‘ বা বিচ্ছিন্ন।      

[30]. এটি ইমাম আবূ হানীফার মাযহাব। তিনি তিন দিন বা তার কম- বেশী দূরত্বের ভিত্তিতে এ পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। দেখুন : মুখতাছারুত ত্বাহাবী হা/১৪১; আল-মাবসূত ১১/১১, তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৬১৩; বাদায়েউছ ছানায়ে ৬/৫৩; হাশিয়াতু ইবনে আবেদীন ৪/২৮৮। আর এটি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বিচার। আবদুর রাযযাক হা/১৪৯১১, আবূ ইউসুফ, আল-আছার হা/৭৬১,৭৬২। অবশ্য বর্ণনাটির সনদ দুর্বল।

[31]. ইবনু মাজাহ হা/২৫০০, ২৫০১। হাদীছটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। হাফেয ইবনু হাজার বলেছেন, এর সনদ অত্যন্ত দুর্বল। দ্র ঃ তালখীছ ৩/৫৬। ইবনু হিববান বলেছেন, এর কোন ভিত্তি নেই। বায়হাক্বী বলেছেন, এটি প্রামাণ্য নয়। দ্র ঃ ইরওয়া ৫/৩৭৯; নায়লুল আওতার ৫/৩৭৮।

[32]. বায়হাক্বী হা/১৫৯৫০।             

[33]. হাদীছটির উল্লিখিত শব্দ এভাবে এসেছে,لَا يُقَادُ مَمْلُوكٌ مِنْ مَالِكِهِ، وَلَا وَلَدٌ مِنْ وَالِدِهِ ‘দাসের জন্য তার মালিক থেকে ক্বিছাছ নেওয়া যাবে না এবং সন্তানের জন্য তার পিতা থেকে ক্বিছাছ নেওয়া যাবে না’। এটি একটি লম্বা হাদীছ এবং এর শেষে আছে,مَنْ حُرِّقَ بِالنَّارِ، أَوْ مُثَِّلَ بِهِ فَهُوَ حُرٌّ ‘যার দেহে আগুন লাগানো হবে কিংবা দেহের বিকৃতি ঘটানো হবে সে (দাসত্ব থেকে) মুক্ত হয়ে যাবে। দ্র ঃ তাবারানী, আল-আওসাত হা/৮৯০৬।

[34]. বায়হাকী হা/১৫৯৫০।             

[35]. বুখারী হা/২০৫৩             

[36]. মুসলিম হা/১১৫৪।           

[37]. তাহযীবুস সুনান ৩/৩২৭, ৩২৮, ৩৩১-৩৩৩; যাদুল মা‘আদ ১/২১৮।

[38]. বুখারী হা/২২৩০।

[39]. ইমাম আবূদাঊদ, আল-মারাসীল হা/১৭৮; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা হা/১০৫৭০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ হা/২০৬৬; মিশকাত হা/২৮২১; ইরওয়া হা/১৩৫১, হাসান।              

[40]. মুসলিম হা/১৬৬৮।           

[41]. এটা ইমাম আবু হানীফার মাযহাব। দেখুন : মুখতাছারুত তাহাবী হা/৩৭৪; আল-লুবাব ৩/১১৬-১১৭; আল-মাবসূত ২৯/৭১; আল-বিনায়া ১০/৪৮৭; আল-ইশরাফ ৪/৬১১।





উত্তম মৃত্যুর কিছু নিদর্শন ও আমাদের করণীয় - ইহসান ইলাহী যহীর
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
এক হাতে মুছাফাহা : একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও অপব্যয় - মুহাম্মাদ আকবার হোসাইন
হারাম দৃষ্টিপাতের ভয়াবহতা - সুরাইয়া বিনতে মামূনুর রশীদ
ফৎওয়া : গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও বিকাশ - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ঈদে মীলাদুন্নবী - আত-তাহরীক ডেস্ক
আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা - মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম
ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব (৪র্থ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.