ভূমিকা :
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। পার্থিব জীবনে আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে বান্দা তাঁর অনুগত থাকবে, এটাই তার কর্তব্য। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, তাঁর অবাধ্য হয় তখন সে হয় পাপী, গোনাহগার। আর তার পাপের কারণে পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। এ নিবন্ধে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।-
পাপের পরিচয় :
পাপ অর্থ কলুষ, দৃষ্কৃতি, অন্যায়, অধর্ম, শাস্ত্রবিরুদ্ধ কর্ম, গোনাহ ইত্যাদি।[1] এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে আল-ইছম (الإثم), আল-মা‘ছিয়াহ (المعصية), আয-যাম্বু (الذنب), আল-খাত্বা (الخطأ), আস-সায়্যিআহ (السيئة) ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে আল-ইছম (الإثم) শব্দটি ৪৮ বার উল্লেখিত হয়েছে। পাপ হচ্ছে মানুষের কৃত মন্দকর্ম, ঘৃণ্য কাজ। পারিভাষিক অর্থে পাপ হচ্ছে শরী‘আতে নিষিদ্ধ ছোট-বড় গোপন-প্রকাশ্য সকল প্রকার কথা, কর্ম ও বিশ্বাসের নাম।
আল্লামা রাগেব ইছফাহানী বলেন, الإثم والأثام اسم للأفعال المبطئة عن الثواب، ‘আল-ইছম (পাপ) হচ্ছে এমন কর্মকান্ডের নাম যা ছওয়াব মন্থর বা বিলম্বিত করে দেয়’।[2]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ- ‘আর পাপ হ’ল যা তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে, আর সেটা মানুষ জানতে পারুক তা তুমি অপসন্দ কর’।[3]
পাপের প্রকারভেদ :
পাপ বা গোনাহ প্রধানত দুই প্রকার। যথা- ১. কবীরা ২. ছগীরা। পবিত্র কুরআনে এসেছে,وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَاوَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا، ‘আর পেশ করা হবে আমলনামা। তখন তাতে যা আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের দেখবে আতংকগ্রস্ত। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ! এটা কেমন আমলনামা যে, ছোট-বড় কোন কিছুই গণনা করতে ছাড়েনি? আর তারা তাদের সকল কৃতকর্মসহ সামনে উপস্থিত পাবে। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি অবিচার করেন না’ (কাহফ ১৮/৪৯)। এখানে মহান আল্লাহ দুই প্রকার গোনাহের কথা উল্লেখ করেছেন।
১. কবীরা : এমন গোনাহ যার কারণে হদ্দ বা দন্ড ওয়াজিব হয় কিংবা যার ব্যাপারে জাহান্নামের হুমকি, অভিশাপ আপতিত হওয়া, গযব নাযিল হওয়া অথবা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন শিরক, জাদু, মানুষ হত্যা, সূদগ্রহণ, হারাম ভক্ষণ, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন প্রভৃতি। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ ‘আর (তাদের জন্য) যারা কবীরা গোনাহ ও অশ্লীল কর্মসমূহ হ’তে বিরত থাকে’ (শূরা ৪২/৩৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ، ‘যারা বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কর্ম সমূহ হ’তে বেঁচে থাকে ছোটখাট পাপ ব্যতীত, (সে সকল তওবাকারীর জন্য) তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী’ (নাজম ৫৩/৩২)। তিনি আরো বলেন, يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا، ‘লোকেরা তোমাকে প্রশ্ন করছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। তুমি বল যে, এ দু’য়ের মধ্যে বড় পাপ রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু উপকার রয়েছে। তবে এ দু’টির পাপ তার উপকার অপেক্ষা গুরুতর’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيلَ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا، وَهْوَ خَلَقَكَ. قَالَ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ثُمَّ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ، أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ. قَالَ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ثُمَّ أَنْ تُزَانِىَ بِحَلِيلَةِ جَارِكَ. فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَصْدِيقَهَا (وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا)
আমর বিন শুরাহবীল হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বড় গুনাহ কোন্টি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ গণ্য কর অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, তুমি তোমার সন্তানকে এ ভয়ে হত্যা কর যে, সে তোমার সঙ্গে খাদ্য খাবে। লোকটি বলল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, তারপর হ’ল, তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে যিনা কর। অতঃপর আল্লাহ এ কথার সত্যতায় অবতীর্ণ করলেন, ‘যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করে না, আর যারা আল্লাহ যাকে নিষিদ্ধ করেছেন তাকে সঙ্গত কারণ ব্যতীত হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যারা এগুলি করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে’ (ফুরক্বান ২৫/৬৮)।[4] উল্লেখ্য যে, খালেছ অন্তরে তওবা ব্যতীত কবীরা গোনাহ মাফ হয় না।
২. ছগীরা : ছগীরা হচ্ছে কবীরা গোনাহ ব্যতীত অন্যান্য গোনাহ। যার ব্যাপারে দুনিয়াতে কোন হদ্দ বা পরকালে কোন শাস্তি বর্ণিত হয়নি। এই ছগীরা গোনাহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا، ‘যদি তোমরা কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাক, যা থেকে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তাহ’লে আমরা তোমাদের (ছগীরা) গোনাহসমূহ মার্জনা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো’ (নিসা ৪/৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ، ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত এবং এক রামাযান থেকে অপর রামাযান পর্যন্ত এইসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’।[5]
তিনি আরো বলেন,مَا مِنَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا، إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ، ‘যে কোন মুসলিম ফরয ছালাতের সময় হ’লে উত্তমভাবে ওযূ করে, বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ‘ করে (ছালাত আদায় করে) তার এ ছালাত পূর্বের গোনাহের কাফ্ফারাহ (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে কবীরাহ গোনাহ করে। আর এভাবে সর্বদাই চলতে থাকবে’।[6]
অন্যত্র তিনি বলেন,إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوْا فِىْ بَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُوْدٍ وَجَاءَ ذَا بِعُوْدٍ حَتَّى أَنْضَجُوْا خُبْزَتَهُمْ وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ. ‘তোমরা ছোট ছোট গোনাহ থেকে বেঁচে থাক। তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ সম্প্রদায়ের মত যারা কোন উপত্যকায় অবতরণ করেছে। অতঃপর প্রত্যেকে একটি করে কাঠ নিয়ে এসেছে। এমনকি তা স্তূপাকার ধারণ করেছে। যার দ্বারা তারা রুটি পাকাতে পারে। আর নিশ্চয়ই ছোট ছোট গোনাহ যখন পাপীকে পাকড়াও করবে তখন তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’।[7] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ طَالِباً.
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আয়েশা! তুমি ছোট ছোট গোনাহগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কেননা সেটা লেখার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন’।[8]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) গোনাহের আরো ৪টি প্রকার উল্লেখ করেছেন। যথা-
১. মালাকিয়াহ : এমন গোনাহ যাতে রবূবিয়াত সম্পর্কিত গুণাবলীর দাবী করা হয়। যেমন রব, মহত্ত্ব, অহংকার, প্রতাপশালী, সর্বোচ্চ, মহাপরাক্রান্ত এবং বান্দার ইবাদত পাওয়ার হকদার দাবী করা ইত্যাদি। এসব মূলত শিরক।
২. শায়ত্বনিয়াহ : শয়তানের কর্মকান্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ গোনাহ। যেমন হিংসা-বিদ্বেষ, অবাধ্যতা, শত্রুতা, ধোঁকা-প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ ও তা সুশোভিত করা, আল্লাহর আনুগত্য থেকে নিষেধ করা, দ্বীনের মাঝে বিদ‘আত করা এবং ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর দিকে আহবান জানানো ইত্যাদি।
৩. সাবু‘ইয়াহ : বাড়াবাড়ি-সীমালংঘন, ক্রোধ, রক্ত প্রবাহিত করা, দুর্বল-অক্ষমদের উপরে অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া, মানুষকে নানা ধরনের কষ্ট-যন্ত্রণা দেওয়া এবং নির্যাতন ও শত্রুতায় ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করা প্রভৃতি।
৪. বাহীমিয়াহ : পশু সুলভ দুষ্কর্ম। যেমন পেট ও লজ্জাস্থান সম্পর্কিত চাহিদা পূরণে অপরিমিত আসক্তি। আর এ থেকেই ব্যভিচার, চৌর্যবৃত্তি, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ, কৃপণতা-ব্যয়কুণ্ঠতা, ভীরুতা, অস্থিরতা-অসহিষ্ণুতা প্রভৃতি তৈরী হয়।[9]
গোনাহের স্তর সমূহ :
শিরক ও কুফর : এ পাপ অমার্জনীয়, তওবা ব্যতীত এ পাপ ক্ষমা হয় না। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করল, সে মহাপাপের মিথ্যা রটনা করল’ (নিসা ৪/৪৮)। তিনি আরো বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ- ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৫/৭২)।
কুফর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ- ‘আর যে ব্যক্তি ঈমানের বদলে কুফরী করে, তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (মায়েদাহ ৫/৫)। তিনি আরো বলেন,وَمَنْ يَتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ- ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি ঈমানের বদলে কুফরকে গ্রহণ করে, সে ব্যক্তি সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১০৮)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللهِ قَدْ ضَلُّوا ضَلَالًا بَعِيدًا، إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا، إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرًا- ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে ও আল্লাহর রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করে, তারা দূরতম ভ্রষ্টতায় পতিত। নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে ও ঈমানদারগণের উপর যুলুম করে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন না, জাহান্নামের পথ ব্যতীত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ’ (নিসা ৪/১৬৭-৬৯)। তাদের পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ- ‘আর যারা অবিশ্বাসী, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের উপর মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে তারা মরে যাবে (ও শান্তি পাবে)। আর তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমরা প্রত্যেক কাফেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’ (ফাতির ৩৫/৩৬)।
কুফরীর পর্যায় বহির্ভূত বিদ‘আত : এমন নতুন কিছু উদ্ভাবন করা যা কুফরীর পর্যায়ে পড়ে না। যেমন আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটনা কিংবা অজ্ঞভাবে আল্লাহর উপরে এমন কোন কথা আরোপ করা যার কোন দলীল নেই। আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ- ‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা হারাম করেছেন এবং হারাম করেছেন সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় বাড়াবাড়িকে। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না যে বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলো না, যে বিষয়ে তোমরা জানো না’ (আ‘রাফ ৭/৩৩)।
গোনাহের ক্ষেত্র সমূহ :
পাপ ও অবাধ্যতার নানা ক্ষেত্র রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে মানুষ অনায়াসে পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাপ : দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন জিহবার পাপ হচ্ছে মিথ্যা বলা, গীবত-তোহমত করা, গালিগালাজ করা, কটু কথা বলা, অন্যকে তুচ্ছ করা ও অপমান করা ইত্যাদি। চোখের পাপ হচ্ছে নিষিদ্ধ বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা। কানের পাপ হচ্ছে হারাম বিষয় শ্রবণ করা। হাতের পাপ হচ্ছে নিষিদ্ধ বিষয় স্পর্শ করা বা ধরা, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি করা, অন্যায়ভাবে কাউকে প্রহার করা, হত্যা করা ইত্যাদি। পায়ের পাপ হচ্ছে নিষিদ্ধ স্থানে গমন করা। অন্তরের পাপ হচ্ছে অন্যায় চিন্তা ও কারো ক্ষতি করার পরিকল্পনা করা। লজ্জাস্থানের পাপ হচ্ছে ব্যভিচার করা।
২. অন্তরের পাপ : অন্তরের পাপ হচ্ছে গর্ব-অহংকার করা, হিংসা-বিদ্বেষ করা, অন্যের সাথে শত্রুতা করা, আত্মম্ভরিতা, দাম্ভিকতা, ষড়যন্ত্র, ধোঁকা দেওয়া, শঠতা, ইবাদতে লৌকিকতা ও জনশ্রুতির উদ্দেশ্য করা ইত্যাদি।
৩. হক আদায়ে কম করা : অন্যের হক আদায়ে কমতি করা। যেমন পিতা-মাতার হক, স্ত্রী-সন্তানের হক, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর হক আদায়ে কম করা কিংবা হক বিনষ্ট করা। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধে কম করা। আল্লাহর পথে দাওয়াত না দেওয়া এবং বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানবতার সাহায্যে এগিয়ে না আসা।
৪. আনুগত্যে কম করা : আল্লাহর আনুগত্যের কাজে কমতি বা ঘাটতি করা। যেমন ইবাদতে যথাযথ মনোযোগ, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা না থাকা এবং নফল ইবাদতকে উপেক্ষা করা ইত্যাদি।
৫. নে‘মতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করা : আল্লাহ অগণিত নে‘মত দিয়ে বান্দাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছেন। তাঁর এসব নে‘মতের শুকরিয়া করলে আরো বৃদ্ধি হয়। আর কৃতঘ্ন হ’লে পরকালে শাস্তি পেতে হবে। আল্লাহ বলেন,لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা বান্দার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় না করা পাপ। পার্থিব জীবনে অগণিত-অসংখ্য নে‘মত ভোগ করে সেগুলোর জন্য নে‘মতদাতার আনুগত্য না করা বা অবাধ্যতা করা ধৃষ্টতা বৈ কি? বান্দা যখন এসব নে‘মত সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করবে, তখন তার অন্তর অজান্তেই আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে, আনুগত্যে তার শির নত হবে, প্রভুর সকাশে সে সিজদাবনত হবে।
ছগীরা গোনাহ কখন কবীরা গোনাহে রূপান্তরিত হয়?
মানুষ যেসব গোনাহ করে তন্মধ্যে কিছু আছে ছোট পাপ। কিন্তু এসব পাপও অব্যাহতভাবে করতে থাকলে তা আর ছোট থাকে না। তদ্রূপ বিভিন্ন কারণে ছগীরা বা ছোট গোনাহ কবীরা বা বড় গোনাহে রূপান্তরিত হয়। নিম্নে কিছু কারণ উল্লেখ করা হ’ল।-
১. গোনাহের পুনরাবৃত্তি করা : যে ব্যক্তি বার বার ছগীরা গোনাহে লিপ্ত হয়, তার ভয় করা উচিত যে এটা কবীরা গোনাহে রূপান্তরিত হ’তে পারে। আর মহান আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন যে, তারা বার বার গোনাহে লিপ্ত হয় না। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ، ‘যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজেদের উপর যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর তাদের পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে? আর যারা জেনে-শুনে স্বীয় কৃতকর্মের উপর হঠকারিতা করে না’ (আলে ইমরান ৩/১৩৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَيْلٌ لِلْمُصِرِّينَ الَّذِينَ يُصِرُّونَ عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ، ‘দুর্ভোগ বারবার গোনাহকারীর জন্য যারা জ্ঞাতসারে বারবার অন্যায় কাজ করতে থাকে’।[10] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, لَا كَبِيرَةَ مَعَ اسْتِغْفَارٍ، وَلَا صَغِيرَةَ مَعَ إِصْرَارٍ ‘ক্ষমা প্রার্থনায় কবীরা গোনাহ থাকে না। আর ছগীরা গোনাহ বার বার করলে তা ছগীরা থাকে না’।[11]
২. গোনাহ করার পর তা প্রকাশ করা : কোন কোন পাপিষ্ঠ পাপাচার করার পরে তা প্রকাশ করে। এটা এ কারণে যে তার অন্তরে আল্লাহর মহত্ত্ব-বড়ত্ব ও সম্মান কম থাকে। আল্লাহভীতি থাকে না। এটা কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হ’তে পারে না। মুমিনদের অন্তর আল্লাহভীতিতে পূর্ণ থাকে। ফলে তারা পাপাচার হয়ে গেলে তা প্রকাশ করে না এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না। বরং কখনও ভুল-ত্রুটি ও গোনাহ হয়ে গেলে সত্বর তওবা করার চেষ্টা করে। মহান আল্লাহ গোনাহ প্রকাশ করা অপসন্দ করেন। তিনি বলেন,لَا يُحِبُّ اللهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللهُ سَمِيعًا عَلِيمًا، ‘আল্লাহ কোন মন্দ কথা প্রকাশ করা পসন্দ করেন না। তবে যে অত্যাচারিত হয় (তার কথা স্বতন্ত্র)। আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নিসা ৪/১৪৮)। যারা গোনাহ প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,كُلُّ أُمَّتِى مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ، فَيَقُولَ يَا فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْهُ، ‘আমার সকল উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয়ই এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হ’লে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল’।[12]
৩. গোনাহকে ছোট মনে করা : গোনাহের পর্যায় বা স্তর যাই হোক না কেন বান্দার উচিত লক্ষ্য করা যে, সব ধরনের গোনাহই আল্লাহর অবাধ্যতা। এজন্য বেলাল ইবনু সা‘দ বলেন, لا تنظر إلى صغر المعصية، ولكن انظر من عصيت، ‘গোনাহ ছোট কি-না তার দিকে দেখ না বরং লক্ষ্য কর তুমি কার অবাধ্যতা করছ’।[13] রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً يَهْوِى بِهَا فِى جَهَنَّمَ، ‘বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[14] সুতরাং গোনাহকে তুচ্ছ বা ছোট মনে করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ ‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকের উপর দিয়ে চলে যায়’।[15]
৪. ছগীরা গোনাহগারের অনুসরণ করা হ’লে : যখন কোন ছগীরা গোনাহগারের গোনাহের অনুসরণ করা হয় তখন সে গোনাহ ছোট থাকে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণের গোনাহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। কারণ তারা হচ্ছেন মুমিনা নারীদের অনুসরণীয় ও আদর্শস্থানীয়। আল্লাহ বলেন,يَانِسَاءَ النَّبِيِّ مَنْ يَأْتِ مِنْكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرًا ‘হে নবীপত্নীগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তবে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি। আর এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ’ (আহযাব ৩৩/৩০)। ওমর (রাঃ) যখন কোন বিষয়ে মানুষকে আদেশ কিংবা কোন ব্যাপারে নিষেধ করতেন তখন তিনি স্বীয় পরিবারের নিকটে গমন করে বলতেন,إني قد أمرت الناس بكذا، ونهيت الناس عن كذا، وإن الناس ينظرون إليكم نظر الطير إلى اللحم، والذي نفس عمر بيده لا أسمع أن أحداً منكم ترك الذي أمرت به، أو فعل الذي نهيت عنه إلا ضاعفت عليه العقوبة. ‘আমি মানুষকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি এবং এ বিষয় থেকে তাদেরকে নিষেধ করেছি। মানুষ তোমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যেভাবে পাখি গোশতের প্রতি
অথচ গোনাহ প্রকাশ না করে গোপন রাখলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَدْنُو أَحَدُكُمْ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيْهِ فَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا. فَيَقُولُ نَعَمْ. وَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا. فَيَقُولُ نَعَمْ. فَيُقَرِّرُهُ ثُمَّ يَقُولُ إِنِّى سَتَرْتُ عَلَيْكَ فِى الدُّنْيَا، فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ. ‘তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রতিপালকের এত কাছাকাছি হবে যে, তিনি তার উপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দু’বার জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। আবার তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। এভাবে তিনি তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গোনাহ ক্ষমা করে দিলাম’।[17]
[ক্রমশঃ]
[1]. বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ২য় সংস্করণ, ১৪০২ বাংলা/১৯৯৬ খৃঃ), পৃঃ ৩৪৭।
[2]. আন-নিহায়াহ ফী গরীবিল হাদীছ ওয়াল আছার, ১/৩৪ পৃঃ।
[3]. মুসলিম হা/২৫৫৩; তিরমিযী হা/২৩৮৯।
[4]. বুখারী হা/৬৮৬১, ৪৪৭৭; মুসলিম হা/৮৬; মিশকাত হা/৪৯।
[5]. মুসলিম হা/২৩৩; মিশকাত হা/৫৬৪; ছহীহাহ হা/৩৩২।
[6]. মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬।
[7]. আহমাদ হা/২২৮৬০; ছহীহাহ হা/৩৮৯, ৩১০২।
[8]. আহমাদ হা/২৪৪৬০; মিশকাত হা/৫৩৫৬; ছহীহাহ হা/২৭৩১।
[9]. ইবনুল কাইয়েম আল-জাওয়িাহ, আদ-দা’ ওয়াদ দাওয়াহ, (মরক্কো : দারুল মারিফাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪১৮ হিঃ/১৯৯৭ খৃঃ), পৃঃ ১২৪।
[10]. মুসনাদ আহমাদ হা/৬৫৪১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৯৭; ছহীহুত তারগীব হা/২২৫৭।
[11]. শরহু উছূলে ই’তিক্বাদে আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, ৬/১১১০ পৃঃ; মুসনাদুশ শিহাব, (বৈরূত : মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪০৭হিঃ/১৯৮৬ খৃঃ), ২/৪৪।
[12]. বুখারী হা/৬০৬৯; মুসলিম হা/২৯৯০; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫১২।
[13]. খতীব বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ, (বৈরূত : দারুল গারবিল ইসলামী, ১ম প্রকাশ, ১৪২২হিঃ/২০০২ খৃঃ), ৪/৪৫১; আবুল হুসাইন ইবনে আবী ইয়া‘লা, ত্বাবাকাতুল হানাবিলা, (বৈরূত : দারুল মা‘রিফা, তাবি), ১/৩২১।
[14]. বুখারী হা/৬৪৭৭-৭৮; মুসলিম হা/২৯৮৮; মিশকাত হা/৪৮১৩।
[15]. বুখারী হা/৬৩০৮; তিরমিযী হা/২৪৯৭; মিশকাত হা/২৩৫৮।
[16]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-উছাইমীন, শরহুল আক্বীদাতুস সাফারীনিয়াহ, (রিয়াদ : দারুল ওয়াতান, ১ম প্রকাশ, ১৪২৬হিঃ), পৃঃ ৫৮৯।
[17]. বুখারী হা/৬০৭০, ৭৫১৪, ২৪৪১।