পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । শেষ পর্ব ।
(জানুয়ারী’২৪-এর পর)
(৪) মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে সীমালংঘন :
ইতিপূর্বে আমরা ঈমান, আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে সীমালংঘন সম্পর্কে জেনেছি। এক্ষণে মু‘আমালাত বা পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সীমালংঘন ও এর পরিণাম জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।-
‘মু‘আমালাত’ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ- কারবার ও লেনদেন সমূহ (মিছবাহুল লুগাত)। পরিভাষায় মু‘আমালাত হ’ল সেইসব বিধান যা দ্বারা পারস্পরিক লেনদেন, আদান-প্রদান, ক্রয়-বিক্রয় ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পন্ন হয়।
মহান আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই একে অপরের পরিপূরক করে সৃষ্টি করেছেন। এ জগতে কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, একমাত্র মহান আল্লাহ ব্যতীত। কেবলমাত্র তিনিই মুখাপেক্ষীহীন (ইখলাছ ১১২/২)। একজনের প্রয়োজনে অপরজন এগিয়ে আসবে, সুখে-দুখে একে অপরের সাথী হবে, পারস্পরিক লেনদেন, আদান-প্রদান, ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হবে এটাই চিরায়ত নিয়ম। তবে এ জাতীয় বৈষয়িক বিষয়গুলোতেও রয়েছে শরী‘আতের কঠোর নীতিমালা। রয়েছে চূড়ান্ত দিক-নির্দেশনা।
তবে রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আতকে কমই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজের অনেক মানুষকে দেখা যায় যে, পাক্কা মুছল্লী, নফল ছিয়াম পালনকারী, নিয়মিত তাহাজ্জুদগুযার হওয়া সত্ত্বেও লেনদেনে অস্বচ্ছতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে হালাল-হারামের মিশ্রণ, ওয়াদার বরখেলাফ, কথায়-কাজের অমিল, অপরকে ঠকানের প্রবণতা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা দোষে দুষ্ট। আর এগুলো সংঘটিত হয় মূলতঃ লোভ ও দুনিয়ার মোহ থেকে। অথচ ইসলাম বহু পূর্বেই লোভ-লালসা থেকে সতর্ক করেছে।
আল্লাহ মানুষকে ধন ও জন দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ দেখতে চান বান্দা সন্তান পেয়ে ও ধন-সম্পদের মালিক হয়ে তাঁকে ভুলে যায় কি-না? তাঁর প্রেরিত বিধান মোতাবেক এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করে কি-না? যেমন তিনি বলেন, إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা মাত্র। আর আল্লাহর নিকটেই রয়েছে মহা পুরস্কার’ (তাগাবুন ৬৪/১৫)। তিনি আরো বলেন, أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ، نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ بَلْ لَا يَشْعُرُونَ، ‘তারা কি ধারণা করে যে, আমরা তাদেরকে সাহায্য করছি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে এবং (এর দ্বারা) তাদেরকে দ্রুত কল্যাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং ওরা (আসল তত্ত্ব) বুঝে না’ (মুমিনূন ২৩/৫৫-৫৬)।
রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً وَفِتْنَةُ أُمَّتِي المَالُ ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিৎনা রয়েছে। আর আমার উম্মতের ফিৎনা হ’ল সম্পদ’।[1] তিনি বলেন, مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ المَرْءِ عَلَى المَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ ‘দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশী ধ্বংসকর নয়, যত না বেশী ধ্বংসকর মাল ও মর্যাদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য।[2] রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَوَاللَّهِ لاَ الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا وَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের দরিদ্রতাকে ভয় পাই না। বরং তোমাদের স্বচ্ছলতাকে অধিক ভয় পাই। যেমন তোমাদের পূর্বের লোকদেরকে স্বচ্ছলতা প্রদান করা হয়েছিল। তোমরা পূর্ব যুগের মানুষদের মতো দুনিয়া অর্জনে মেতে উঠবে, অতঃপর দুনিয়া তোমাদের ধ্বংস করে দিবে। যেমন তা বিগত যুগের উম্মতকে ধ্বংস করেছে’।[3] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَأْتِى عَلَى النَّاسِ زَمَان، لاَ يُبَالِى الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلاَلِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ ‘এমন একটি যুগ আসছে, যখন মানুষ তোয়াক্কাই করবে না যে, বস্ত্তটি হারাম না হালাল’।[4] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ، وَرُزِقَ كَفَافًا، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ‘ঐ ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম কবুল করেছে এবং তাকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক দেওয়া হয়েছে। আর অল্লাহ তাকে যে রিযিক দিয়েছেন, তাতেই তিনি তাকে সন্তুষ্ট রেখেছেন’।[5]
ব্যবসা-বাণিজ্য :
ব্যবসা একটি মহৎ পেশা। যে পেশার কথা কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। হাদীছে এর পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর বিখ্যাত সব মনীষী, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, এমনকি নবী-রাসূলগণের অনেকেই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সঙ্গত কারণেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন্ ধরনের উপার্জন সর্বোত্তম? তিনি বললেন, عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُورٍ ‘নিজের হাতের উপার্জন (কায়িক পরিশ্রমের কাজ) এবং প্রত্যেক সঠিক ক্রয়-বিক্রয়’।[6]
কিন্তু এই মহৎ পেশাকে কলুষিত করেছে সীমালংঘন। হারাম পণ্যের ব্যবসা, ওযনে কম দেওয়া, মিথ্যা শপথ করা, জীবননাশক ঔষধ প্রয়োগ করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, প্রতারণা ইত্যাদি জঘন্য অপরাধ এই পবিত্রাঙ্গনকে যেমন করেছে কলুষিত, তেমনি বৈধ উপার্জনকে করেছে অবৈধ। নিম্নে ব্যবসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সীমালংঘন তুলে ধরা হ’ল।-
হারাম পণ্যের ব্যবসা: ব্যবসা বৈধ হওয়ার জন্য আবশ্যক হ’ল পণ্য হালাল হওয়া। ইসলামী শরী‘আতে যে সকল বস্ত্ত হারাম ঐ সকল বস্ত্ত ক্রয়-বিক্রয় করা এবং এর ব্যবসা করাও হারাম। যেমন মদ ও মদ জাতীয় সকল বস্ত্ত, কুকুর-শূকুরের ব্যবসা ইত্যাদি। এমনকি সন্দেহজনক ব্যবসা থেকেও রাসূল (ছাঃ) বিরত থাকতে বলেছেন। নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْحَلَالُ بَيِّنٌ، وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ ‘হালালও সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট, এতদুভয়ের মাঝখানে কতক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে, যে সম্পর্কে অধিকাংশ লোক অজ্ঞাত। যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় সমূহ থেকে বিরত থাকল, সে তাঁর দ্বীন ও সম্ভ্রমকে পবিত্র রাখল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়সমূহে জড়িয়ে পড়ল সে হারাম বিষয়ের মধ্যে পতিত হ’ল’।[7] উল্লেখ্য, হাল যামানায় এমন সব ব্যবসা চালু হয়েছে, যার হালাল-হারাম নির্ণয় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে তো অসম্ভব বটে, এমনকি অনেক নামী-দামী আলেমও বুঝে না বুঝে অথবা লোভে পড়ে এসব ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এমএলএম ব্যবসা, শেয়ার বাযার যার অন্যতম। এছাড়াও ব্যবসার অন্যতম শর্ত পণ্যের উপস্থিতির তোয়াক্কা না করে বর্তমান অনলাইন জগতে বহু ব্যবসা চালু হয়েছে, যা বৈধতার মানদন্ডে টিকে না। যা ধোঁয়াশা ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং এ সমস্ত সন্দেহজনক ব্যবসা থেকে বিরত থাকাই প্রকৃত ঈমানের দাবী।
ওযনে কম দেওয়া: ব্যবসার ক্ষেত্রে ওযনে কম দেওয়ার রেওয়াজ দূর অতীত থেকে চলে আসা একটি জঘন্য অপরাধ। ফলে এই ঠকবাজ ওযনে কমদাতাদের সতর্ক করে কুরআন মাজীদে ‘সূরা মুত্বাফফিফীন’ নামে একটি পৃথক সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সূরায়ও এ বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ‘আর মাপে পরিপূর্ণ দাও যখন তোমরা পরিমাপ কর এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওযন কর। এটা কল্যাণকর ও পরিণামে সুন্দরতম’ (ইসরা ১৭/৩৫)। যারা ওযনে কম দেয় তাদের পরিণতির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ، الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ، وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ، أَلَا يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوثُونَ، لِيَوْمٍ عَظِيمٍ، يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ، ‘দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় বা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে, যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে (মুত্বাফফিফীন ৮৩/১-৬)। উক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দুনিয়াতে ওযনে কম দানের মাধ্যমে মানুষকে ঠকালে তথা হাক্কুল ইবাদ নষ্ট করলে ক্বিয়ামতের দিন নেকী দিয়ে পরিশোধ করতে হবে, যেমনটি অন্যান্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।[8] কেননা বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। অতএব ব্যবসায়ীরা সাবধান!
মিথ্যা শপথ করা : এটি হরহামেশা দৃশ্যমান। অর্থাৎ বিক্রেতা তার পণ্যের কাটতির জন্য এর উচ্চ প্রশংসা করতে গিয়ে মিথ্যা কসম করে থাকে। ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য সত্যমিথ্যা বলে পণ্যটি উপস্থাপন করা হয়। এটিও ব্যবসার ক্ষেত্রে সীমালংঘন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِى بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا ‘যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে। যদি তাঁরা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে, তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে’।[9] একই মর্মে আবূ যার নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَ مِرَارٍ قَالَ أَبُو ذَرٍّ خَابُوا وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ ‘তিন ব্যক্তির সাথে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না। তাদের প্রতি তাকাবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাবী বলেন, তিনি এটা তিনবার বললেন। আবূ যার (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এসব ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ-মনোরথ ব্যক্তি কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে- যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করে, যে দান করে খোঁটা দেয় এবং যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে’।[10]
প্রতারণা করা : ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণার কোন শেষ নেই। সরলপ্রাণ ক্রেতাদের সাথে হেন প্রতারণা নেই যা একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী করে না। ওযনে কম, মিথ্যা হলফ তো আছেই, এছাড়াও পন্য টাটকা রাখতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন বা এ জাতীয় মেডিসিন, যা ক্রেতাদেরকে নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত করে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাছাড়া দুই নম্বর মালকে এক নম্বর বলে চালিয়ে দেওয়া বা এক নম্বরের সাথে দুই/তিন নম্বর মাল মিশ্রণ করে এক নম্বর বলে বিক্রি করা। যেমন মধুর সাথে চিনির শিরা, দুধের সাথে পানি, সোয়াবিনের সাথে পামওয়েল মিশিয়ে বিক্রি করা এবং পণ্যের দোষ বা ত্রুটিপূর্ণ মাল গোপন করে ভাল মাল উপরে রাখা ইত্যাদি সবই মারাত্মক প্রতারণা ও চরম সীমালংঘন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّى- ‘একদা রাসূল (ছাঃ) স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙগুলগুলো আদ্র দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি কেন? যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমার সাথে সম্পৃক্ত নয়। অর্থাৎ আমার উম্মত নয়’।[11]
লেনদেন :
লেনদেন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। লেনদেন হয়না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই লেনদেনে সীমালংঘনের দৃষ্টান্তও কম নয়। পাওনা টাকা আদায়ে কোর্ট-কাচারী পর্যন্ত করতে হয়। সূদ-ঘুষের তো কোন হিসাবই নেই। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষ সূদ-ঘুষের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের কোন তাগাদা নেই। ওয়াদার পর ওয়াদা করে ভঙ্গ করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পাওনাদারকে বরং হুমকি দেওয়া হয়। গরীবের রক্তচোষা এনজিওগুলো ভাল ভাল কথা বলে চড়া সূদে ঋণ দিয়ে পরিশোধে ব্যর্থ হ’লে ঘরের চালের টিন খুলে নেওয়ার খবরও মাঝেমধ্যে খবরের কাগজে প্রকাশ পায়। অনেক ক্ষেত্রে পাকাপোক্ত ডকুমেন্টের অভাবে লেনদেনকে অস্বীকার করা হয়। সেকারণ ইসলাম লেনদেন লিখে রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুরআনী নির্দেশনা হচ্ছে- ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যেকার কোন লেখক যেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবে লিপিবদ্ধ করে।...এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের মধ্যেকার দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে। যদি দু’জন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী, যাদেরকে তোমরা পসন্দ কর সাক্ষীদের মধ্যে। যাতে একজন ভুলে গেলে অন্যজন তা স্মরণ করিয়ে দেয়’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)। মোটকথা লেনদেন হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হক। দুনিয়াতে মিটমাট করে যেতে না পারলে আখেরাতে, যেদিন কোন টাকা-পয়সা থাকবে না, সেদিন নেকী দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে।
আমানত রক্ষা করা :
মু‘আমালাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরস্পরে আমানত রক্ষা করা। কথার আমানত, কাজের আমানত, অথের্র আমানত, দায়িত্বের আমানত, নেতৃত্বের আমানত সর্বপ্রকার আমানত রক্ষার মাধ্যমে মুমিন পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করবে। কেননা আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন যেখানে তিনি এ কথা বলতেন না যে, لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ ‘যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যার অঙ্গীকার ঠিক নেই তার দ্বীন নেই’।[12]
(৫) মু‘আশারাতের ক্ষেত্রে সীমালংঘন :
মু‘আশারাত তথা পারস্পরিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও শরী‘আতের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম উত্তম আচরণকে উৎসাহিত ও মন্দ আচরণকে নিরুৎসাহিত করেছে। উত্তম আচরণের উপদেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا ‘তোমরা মানুষের সাথে উত্তম কথা বল’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا ‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম কথা বল’ (নিসা ৪/৫)। নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে সদাচরণের উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا ‘আর যদি বণ্টনে নিকটাত্মীয় এবং ইয়াতীম ও মিসকীনরা উপস্থিত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদেরকে তা থেকে প্রদান করবে এবং তাদের সাথে উত্তম কথা বলবে’ (নিসা ৪/৮)। লোকমান স্বীয় সন্তানকে মু‘আশারাতের সুন্দর উপদেশ দিয়েছিলেন। যা মহান আল্লাহর কাছে পসন্দনীয় হওয়ার এটি কুরআনে উল্লেখ করে দিয়েছেন। লোকমান স্বীয় সন্তানকে বলেছিলেন,وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ، وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِير- ‘আর তুমি মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে অহংকার করে চলাফেরা কর না; নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পসন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার গলার আওয়ায নীচু কর; নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার ডাক’ (লোকমান ৩১/১৮-১৯)।
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَإِنَّ مِنَ المَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ، وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ ‘প্রত্যেক ভাল কাজই ছাদাক্বাহ। তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির সাহায্যে (কুয়ো থেকে পানি তুলে) তোমার ভাইয়ের পাত্র ভরে দেওয়াও ছাদাক্বার পর্যায়ভুক্ত’।[13]
আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ، وَأَمْرُكَ بِالمَعْرُوفِ وَنَهْيُكَ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلَالِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَبَصَرُكَ لِلرَّجُلِ الرَّدِيءِ البَصَرِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِمَاطَتُكَ الحَجَرَ وَالشَّوْكَةَ وَالعَظْمَ عَنِ الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِفْرَاغُكَ مِنْ دَلْوِكَ فِي دَلْوِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ- ‘তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি ছাদাক্বা। সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজের নিষেধ করাও ছাদাক্বা, পথ হারানো ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়াও ছাদাক্বা, দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানোও ছাদাক্বা, রাস্তা থেকে পাথর, কাটা, হাড্ডি সরিয়ে ফেলাও তোমার জন্য ছাদাক্বা, তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[14]
উপরোক্ত দলীলগুলোতে পারস্পরিক সদাচরণের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। সাক্ষাৎ হলে মুচকি হাসা, উত্তম কথা বলা, অপর ভাইয়ের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেওয়া সবই কল্যাণকর এবং ছাদাক্বার নেকীর সমপর্যায়ের। এক মুসলমান অপর মুসলমান থেকে নিরাপদ থাকবে, একজনের ব্যথায় আরেকজন সমব্যথী হবে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দিবে এটাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু কিন্তু অপ্রিয় সত্য হচ্ছে- আমরা আজকাল সর্বক্ষেত্রেই যেন এর বিপরীত। আমাদের মধ্যে যেন মায়া-মহববত প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বিপদ দূর তো দূরের কথা বরং কিভাবে অপর ভাইকে বিপদে ফেলা যায় সেই কোশেশ আমাদের দিন-রাতের। সামান্য স্বার্থের টানে দীর্ঘদিনের দ্বীনী বন্ধনও আজ ছিন্নভিন্ন। মাল ও মর্যাদার লোভ আমাদেরকে পেয়ে বসেছে ষোলআনা। আখেরাতের ভাবনা এ তো মুখে আছে, হৃদয়ে নেই। মু‘আমালাত ও মু‘আশারাতের সীমালংঘন যেন মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। হাশরের ময়দানের নিদারুণ চিত্র আমাদের হৃদয়ে রেখাপাত করে না। অথচ এক্ষেত্রে সীমালংঘনের কারণে কতইনা করুণ পরিণতির সম্মুখীন হ’তে হবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদিন ছাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟ قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ، وَصِيَامٍ، وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ ‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে? তারা বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোন আসবাবপত্র নেই। তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে (প্রকৃত) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে ক্বিয়ামতের দিন ছালাত, ছিয়াম ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে (অর্থাৎ এই সমস্ত মযলূম ব্যক্তিবর্গও সেদিন তার সামনে উপস্থিত হবে)। তখন একে তার নেকী থেকে দেওয়া হবে, ওকে তার নেকী থেকে দেওয়া হবে (অর্থাৎ দুনিয়াতে তার দ্বারা যুলমের শিকার ব্যক্তিদেরকে এক এক করে তার নেকী থেকে দিয়ে যুলমের ঋণ পরিশোধ করা হবে)। অতঃপর যদি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের (মযলূমদের) পাপ থেকে নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে (তার আমলনামায় যোগ করা হবে)। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[15]
এভাবেই দুনিয়াতে সীমালংঘনের কারণে জান্নাতের পথযাত্রীর পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করতে করতে অবশেষে নিঃস্ব হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। দয়াময় আল্লাহ এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে আমাদের নিরাপদ করুন এবং সকল প্রকার সীমালংঘন থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[ক্রমশঃ]
[1]. তিরমিযী হা/২৩৩৬।
[2]. তিরমিযী হা/২৩৭৬।
[3]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৩।
[4]. বুখারী হা/২০৮৩।
[5]. মুসলিম হা/১০৫৪; মিশকাত হা/৫১৬৫।
[6]. আহমাদ হা/১৭৩০৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬৯০।
[7]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭৬২।
[8]. মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭।
[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৮০২।
[10]. মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫।
[11]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[12]. বায়হাক্বী-শু’আবুল ঈমান, আহমাদ, মিশকাত হা/৩৫ সনদ হাসান; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৯৪।
[13]. তিরিমিযী হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১৯১০, সনদ ছহীহ।
[14]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; সিলিসিলা ছহীহাহ হা/৫৭২।
[15]. মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭।