১১. ইলম অর্জন করা :
পবিত্র কুরআনে সর্বপ্রথম জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইলম অর্জনের গুরুত্ব সর্বাধিক, কেননা ইলম ছাড়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে চেনা যায় না, শরী‘আত উপলব্ধি করা যায় না এবং কোন ইবাদত সঠিকভবে সম্পাদন করা যায় না। ইলম বাহ্যিকভাবে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্জন করা যায়, আবার নিভৃতে সবার অজান্তেও ইলম চর্চা করা যায়। ওলামায়ে কেরাম বলেন, العلم صلاة السر، وعبادة القلب ‘ইলম হচ্ছে গোপন ছালাতের মত। আর এটা অন্তরের ইবাদত’।[1] এজন্য সালাফে ছালেহীন কুরআন ও হাদীছের গভীর পান্ডিত্য অর্জন করতেন, অথচ সেটা তার প্রতিবেশী বুঝতে পারত না। বছরের পর বছর কুরআন তেলাওয়াত করতেন কেউ সেটা টের পেত না। ইলম অর্জন করাকে ইবাদত মনে করার কারণেই মূলতঃ তারা এগুলো গোপন রাখার চেষ্টা করতেন।
এ ব্যাপারে ইমাম আল-মাওয়ার্দী (রহঃ)-এর জীবনীতে প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা রয়েছে। ইখলাছ ও আমল গোপন করার ক্ষেত্রে তার ঘটনাটি বড়ই অদ্ভূত। তিনি তাফসীর, ফিক্বহ প্রভৃতি বিষয়ে অনেক বই লিখেছিলেন। কিন্তু তার জীবদ্দশাতে কোনটিই জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। বইগুলো রচনা শেষে এমন স্থানে লুকিয়ে রেখেছিলেন, যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানত না। মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তিনি তার একজন বিশ^স্ত লোককে বলেন, ‘অমুক জায়গায় রক্ষিত সকল বই আমার রচিত। আমি খাঁটি নিয়তে বইগুলো রচনা করেছি কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকায় বইগুলো প্রকাশ করিনি। যখন আমার মৃত্যু নিকটবর্তী হবে এবং আমি মুমূর্ষু দশায় পতিত হব, তখন তুমি তোমার হাত আমার হাতে রেখো। যদি আমি তোমার হাতটা মুঠি পাকিয়ে ধরতে পারি এবং তাতে চাপ দিতে পারি, তাহ’লে তুমি বুঝবে যে আমার কোন কিছুই আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়নি। তুমি তখন বইগুলো নিয়ে রাতের আঁধারে দজলা নদীতে ফেলে দিয়ো। আর যদি আমি আমার হাত প্রসারিত করে তোমার হাত মুঠিবদ্ধ করতে না পারি, তাহ’লে তুমি বুঝবে যে, সেগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে এবং আল্লাহর কাছে আমার যে চাওয়া-পাওয়া ছিল তা পূর্ণ হয়েছে। ঐ ব্যক্তি বলেন, অতঃপর তার মৃত্যু যখন আসন্ন হ’ল, তখন আমি আমার হাত তার হাতে রাখলাম। তিনি হাত প্রসারিত করে আমার হাত মুঠিবদ্ধ করতে গেলেন, কিন্তু পারলেন না। তখন আমি বুঝলাম এটা তার বইগুলো কবুল হওয়ার আলামত। তারপর আমি তার বইগুলো প্রকাশ করার ব্যবস্থা করলাম।[2] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘আমি যত ইলম জানি, মানুষ যদি আমার কাছ থেকে সেসব শিখে নিত এবং আমার প্রশংসা না করত! তাহ’লে আমি এ কাজের জন্য পুরস্কৃত হ’তাম এবং নিজের জন্য কোন আশঙ্কায় পড়তাম না’।[3] ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-ওছায়মীন (রহঃ) বলেন,إن طلب العلم عبادة ومن أفضل العبادات، فهو أفضل من السنن الراتبة، وأفضل من الوتر، وأفضل من قيام الليل ‘জ্ঞান অন্বেষণ করা একটি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। এটা সুন্নাতে রাতেবা, বিতর এবং ক্বিয়ামুল লাইলের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত’।[4]
১২. ইবাদতের জন্য নির্জনতা অবলম্বন করা :
কিছু কিছু নফল ইবাদতের জন্য নির্জনতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই। কারণ এই আমলগুলো নির্জনে যাওয়া ছাড়া আদায় করা এবং গোপন করা সম্ভব হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,صَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ صَلاَةِ الـمَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا الصَّلاَةَ الـمَكْتُوبَةَ، ‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে (নফল) ছালাত আদায় কর। কেননা মানুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম ছালাত হ’ল যা সে তার ঘরে আদায় করে, তবে ফরয ছালাত ব্যতীত’।[5] তাছাড়া নেক আমল করা যেমন ইবাদত তেমনি পাপ থেকে বিরত থাকাও অনেক বড় ধরনের ইবাদত। আর নির্জনতা অবলম্বণের মাধ্যমে অনেক পাপ থেকে বাঁচা সম্ভব হয়।
আবূদ্দারদা (রাঃ) বলেন,نِعْمَ صَوْمَعَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ بَيْتُهُ، يَكُفُّ لِسَانَهُ، وَفَرْجَهُ، وَبَصَرَهُ، وَإِيَّاكُمْ وَمُجَالَسَةَ الأَسْوَاقِ، تُلْهِي وَتُلْغِي، ‘একজন মুসলিমের জন্য উত্তম ইবাদতখানা হ’ল তার নিজ গৃহ। এখানে সে তার জিহবা, লজ্জাস্থান ও চোখের হেফাযত করতে পারে। সুতরাং তোমরা বাজারে আড্ডা দেওয়া থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটা তোমাকে গাফেল করে ফেলবে এবং বাজে কথাবার্তায় সময় নষ্ট করে দিবে’।[6] আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,أَسْعَدُ النَّاسِ فِي الْفِتَنِ كُلُّ خَفِيٍّ نَقِيٍّ، إِنْ ظَهَرَ لَمْ يُعْرَفْ، وَإِنْ غَابَ لَمْ يُفْتَقَدْ، وَأَشْقَى النَّاسِ فِيهَا كُلُّ خَطِيبٍ مِسْقَعٍ، أَوْ رَاكِبٍ مُوضِعٍ، لَا يَخْلُصُ مِنْ شَرِّهَا إِلَّا مَنْ أَخْلَصَ الدُّعَاءَ كَدُعَاءِ الْغَرَقِ فِي الْبَحْرِ، ‘ফেৎনার সময় সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে ফেৎনা মুক্ত রেখে নির্জনে আল্লাহর ইবাদত করে। সে যদি বাহিরে বের হয়, তবে তাকে চেনা যায় না। আর যদি নিজেকে আড়াল করে রাখে, তবে তার অনুসন্ধান করা হয় না। দুর্ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে ঐ সময় সক্রিয় থেকে ফেৎনায় বিদগ্ধ হয় অথবা ফেৎনাসংকুল স্থানে অবতরণ করে। সে ফেৎনার অনিষ্টকারিতা থেকে মুক্ত হ’তে পারে না, যতক্ষণ না সে সাগরে নিমজ্জমান ব্যক্তির মতো একনিষ্ঠভাবে (আল্লাহর কাছে) দো‘আ করে’।[7] মাসরূক্ব (রহঃ) বলেন, إِنَّ الْمَرْءَ لَحَقِيقٌ أَنْ تَكُونَ لَهُ مَجَالِسُ يَخْلُو فِيهَا يَذْكُرُ فِيهَا ذُنُوبَهُ فَيَسْتَغْفِرُ مِنْهَا، ‘প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নির্জনে একটি নিজস্ব বৈঠক হওয়া, যেখানে সে নিজের পাপের কথা স্মরণ করবে এবং তা থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে’।[8] ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, لابدَّ للعبدِ من عزلةٍ لعبادتِه وذكرِه وتلاوتِه، ومحاسبتِه لنفسِه، ودعائِه واستغفارِه، وبُعدِه عن الشرِّ، ‘কয়েকটি উদ্দেশ্যে বান্দাকে নির্জনতা অবলম্বন করা যরূরী। যেমন নফল ইবাদত করা, যিকির করা, কুরআন তেলাওয়াত, আত্মসমালোচনা, দো‘আ-প্রার্থনা, ক্ষমাপ্রার্থনা এবং অকল্যাণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা’।[9]
সুতরাং জীবন চলার পথে প্রতিদিন একটি সময় বরাদ্দ রাখা উচিত, যে সময়টা ব্যয় হবে একান্ত নিরালায়-নির্জনে। মুহূর্তগুলো ব্যয় হবে আখেরাতের জন্য। আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতের জন্য। তওবা-ইস্তিগফার ও আত্মসমালোচনার জন্য।
১৩. গোপন পাপ থেকে বেঁচে থাকা :
গোপন পাপ মানুষের দ্বীন-দুনিয়া উভয়টাই বরবাদ করে দেয়। আর গোপন পাপ থেকে বেঁচে থাকা তখনই সম্ভব হয়, যখন বান্দা প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারে। সেজন্য গোপন পাপ থেকে বেঁচে থাকা গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। রাস্তা-ঘাটে চলতে-ফিরতে এবং ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করার প্রাক্কালে চোখ ও কানের খেয়ানত করার অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিবিধ পাপের উন্মুক্ত দুয়ারে প্রবেশের ফুরসত মেলে। হয়ত পাপটা করে ফেললে পৃথিবীর কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু সেই মুহূর্তে নিজেকে যদি হেফাযত করা যায়, তবে সেটা অনেক বড় ইবাদত হিসাবে গণ্য হয়। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, مسكين ابن آدم...لو خاف الله في الباطن كما يخاف خلقه في الظاهر لسعد في الدارين جميعاً، ‘আদম সন্তান কত অসহায়! সে বাহ্যিকভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকে যেভাবে ভয় করে, ভিতরে ভিতরে যদি সেইভাবে আল্লাহকে ভয় করতে পারত, তবে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়কালেই সে সৌভাগ্যবান হ’তে পারত’।[10]
অনুরূপভাবে গোপনে গোপনে নিজের ভুলগুলো থেকে ফিরে আসার মাধ্যমে বান্দা নিজেকে সফলতার চূড়ায় উন্নীত করতে পারে। এর প্রভাব তার বাহ্যিক জীবনেও ফুটে ওঠে। ফলে দুনিয়া-আখেরাতে আল্লাহপাক তাকে কল্যাণের বারিধারায় সিক্ত করেন। সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) বলেন, مَنْ أَصْلَحَ سَرِيرَتَهُ أَصْلَحَ اللهُ عَلَانِيَتَهُ وَمَنْ أَصْلَحَ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ أَصْلَحَ اللهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ عَمِلَ لِلآخِرَةِ كَفَاهُ اللهُ الدُّنْيَا، ‘যে ব্যক্তি তার গোপন বিষয়গুলো সংশোধন করে নেয়, মহান আল্লাহ তার প্রকাশ্য দিকটা সংশোধন করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক রাখে, মানুষের সাথে তার মধ্যকার সম্পর্ককে আল্লাহ পরিশুদ্ধ রাখেন। যে ব্যক্তি আখেরাতের জন্য কাজ করে, দুনিয়াবী ব্যাপারে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান’।[11]
কিন্তু বান্দা যদি গোপন পাপ থেকে বিরত থাকার ইবাদত করতে না পারে, তবে উভয়কালে তার সর্বনাশ হয়ে যায় এবং মানবজাতির কাছে অপদস্ত হয়ে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا، فَيَجْعَلُهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا، قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لَا نَكُونَ مِنْهُمْ، وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ، قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ، وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ، وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللهِ انْتَهَكُوهَا، ‘আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা ক্বিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। কিন্তু মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। ছাওবান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা নির্জনে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে লিপ্ত হবে’।[12] এই হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, একদল মুসলিম ইবাদত-বন্দেগীতে অভ্যস্ত হয়ে এমনকি তাহাজ্জুদগুযার হওয়া সত্ত্বেও কেবল তার গোপন পাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার নেকীগুলো বরবাদ করে দেওয়া হবে। আবূদ দারদা (রাঃ) বলেন,إن العبد ليخلو بمعصية الله تعالى، فيلقي الله بغضه في قلوب المؤمنين من حيث لا يشعر، ‘মানুষ যখন নির্জনে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা অব্যাহত রাখে, তখন আললাহ তা‘আলা মুমিনদের অন্তর সমূহে তার প্রতি অপসন্দনীয়তা এমনভাবে স্থাপন করেন যে, সে বুঝতেই পারে না’।[13] এজন্য ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) একটি কথা প্রায়ই বলতেন, ما ابتلي المؤمن ببلية شر من المعصية الخفية، ولا أوتي دواءً خيرا من طاعة الخفاء، ‘মুমিন বান্দাকে গোপন পাপের চেয়ে মনদ কোন বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয় না এবং এর প্রতিশেষক হিসাবে গোপন অনুগত্যের চেয়ে উত্তম কিছু তাকে প্রদান করা হয় না’।[14] অর্থাৎ গোপন পাপের উত্তম প্রতিশেধক হচ্ছে গোপন ইবাদত।
১৪. গোপনে উপদেশ দেওয়া :
লোকচক্ষুর অন্তরালে কাউকে নেক কাজের উপদেশ দেওয়া গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। নেককার সালাফগণ এটা চর্চা করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, ‘আগে লোকেরা যখন তার কোন ভাইয়ের মাঝে কোন অপসন্দনীয় বিষয় দেখতে পেত, তাকে গোপনে আদেশ করত এবং গোপনে নিষেধ করত। সে গোপনে আদেশ-নিষেধের ছওয়াব পেয়ে যেত। কিন্তু এখন কেউ তার ভাইয়ের মাঝে অপসন্দনীয় কিছু দেখলে তাকে রাগিয়ে তোলে এবং তার গোপনীয়তা নষ্ট করে’।[15] সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, একদিন আব্দুল জাববার ইবনে ওয়ায়েল (রহঃ)-এর কাছে ত্বালহা (রহঃ) আগমন করলেন। তখন সেখানে অনেক লোক ছিল। ত্বালহা তার সাথে গোপনে কিছু কথা বললেন। এরপর চলে গেলেন। তখন আব্দুল জাববার (রহঃ) উপস্থিত লোকদের বললেন, ‘তোমরা কি জান, সে আমাকে কি বলেছে?’ সে বলেছে, ‘আমি আপনাকে গতকাল ছালাতরত অবস্থায় অন্যদিকে তাকাতে দেখেছি’।[16] তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ভুল সংশোধনই যেন এর মূল উদ্দেশ্য হয়; ভুলকারীকে অপমান করা যেন এর উদ্দেশ্য না হয়।
১৫. অখ্যাত থাকার চেষ্টা করা :
যত বেশী অখ্যাত থাকা যায়, তত বেশী রিয়ামুক্ত থাকা যায়। ইখলাছ বজায় রাখা যায় ও গোপন ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা যায়। এজন্য সালাফে ছালেহীন খ্যাতি ও প্রসিদ্ধিকে অপসন্দ করতেন। তারা পরস্পরের কল্যাণকামী হয়ে অখ্যাত ও অজ্ঞাত থাকার উপদেশ দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,كُونُوا يَنَابِيعَ الْعِلْمِ مَصَابِيحَ الْهُدَى أَحْلَاسَ الْبُيُوتِ سُرُجَ اللَّيْلِ جُدُدَ الْقُلُوبِ خُلْقَانَ الثِّيَابِ تُعْرَفُونَ فِي السَّمَاءِ وَتَخْفَوْنَ عَلَى أَهْلِ الْأَرْضِ، ‘তোমরা জ্ঞানের ঝর্ণাধারা হয়ে যাও, হেদায়াতের আলোকবর্তিকা হও, বাড়িতে অবস্থান কর, রাতের প্রদীপ হও, হৃদয়কে নবায়ন কর, পুরাতন কাপড় পরিধান কর, তাহ’লে তোমরা আকাশে প্রসিদ্ধি অর্জন করতে পারবে এবং দুনিয়াবাসীর কাছে অখ্যাত থাকতে পারবে’।[17] বিশর ইবনে হারেছ (রহঃ) বলেন, ‘মুনিনের জন্য এটা গনীমত যে, মানুষ তার ব্যাপারে উদাসীন আর তার অবস্থান মানুষের অজানা’।[18] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, সালাফদের কারো পিছনে যখন মানুষ হাঁটত, তখন তিনি পিছনে ফিরে বলতেন, ‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন, তোমাদের এমন করা উচিত নয়’।[19] মুহাম্মাদ ইবনে হাসান বলেন, ‘আমি আবূ আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবনে হাম্বলকে দেখেছি, তিনি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন, তখন কেউ তার পেছনে হাঁটুক এটা তিনি পসন্দ করতেন না’।[20]
ইতিহাস সাক্ষী যে, এই পৃথিবীতে যারাই প্রসিদ্ধির পিছনে ছুটেছে, বিখ্যাত হওয়ার জন্য লালায়িত হয়েছে, তারা এক পর্যায়ে মানুষের কাছে অপমানিত হয়েছে, নিন্দিত হয়েছে, তাদের ব্যাপারে মুমিনদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যারা অখ্যাত-অজ্ঞাত থাকার চেষ্টা করেছেন, নির্ঝঞ্ঝাটে গোপন ইবাদত করার জন্য আল্লাহর কাছে অখ্যাত হয়ে বেঁচে থাকার প্রার্থনা করেছেন, তারাই যুগ যুগান্তরে মুমিনের হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা পেয়েছেন। তারা তাদের জীবদ্দশাতেই অথবা তাদের মৃত্যুর পরে ইতিহাসের সোনালী পাতায় সম্মানের সাথে উল্লিখিত হয়েছেন এবং কোটি মানুষের দো‘আয় শামিল হ’তে পেরেছেন। তাই তো সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) বলতেন, ‘সালাফদের মধ্যে যারা বিখ্যাত হয়েছেন, তারা যতক্ষণ না মন থেকে কামনা করতেন যে, আমি যেন খ্যাতি না পাই, ততক্ষণ তারা বিখ্যাত হননি’।[21]
সালাফগণ খ্যাতি-প্রসিদ্ধিকে কেমন অপসন্দ করতেন, তা উপলব্ধি করার জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট। একবার প্রখ্যাত উমাইয়া সেনাপতি ও রাজপুত্র মাসলামা ইবনে আব্দুল মালেক (রহঃ)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী শত্রুপক্ষের একটি দুর্গ অবরোধ করেন। কিন্তু শত্রুপক্ষের তীরবৃষ্টিতে তাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। তখন মুসলমানদের একজন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে দুর্গের মধ্যে প্রবেশের জন্য সুবিধামত একটি সুড়ঙ্গ খনন করে। সে সুড়ঙ্গ পথে দুর্গে ঢুকে পড়ে এবং দ্বাররক্ষীদের সঙ্গে লড়াই করে দুর্গের ফটক খুলে দিতে সমর্থ হয়। তখন মুসলিম বাহিনী দুর্গে প্রবেশ করে তা দখল করে নেয়। কিন্তু কে যে এই সুড়ঙ্গওয়ালা তা জানা গেল না। তখন সেনাপতি মাসলামা (রহঃ) তাকে পুরস্কৃত করার জন্য খোঁজ করলেন। তিন দিন খোঁজার পরেও যখন তাকে পাওয়া গেল না, তখন তিনি সৈন্যদের মাঝে আল্লাহর কসম দিয়ে বললেন, সুড়ঙ্গওয়ালা যেই হোক সে যেন আমার কাছে আসে। রাতের বেলায় একজন আগন্তুক সেনাপতির কাছে গেলেন এবং তিনটি শর্তে সুড়ঙ্গওলার পরিচয় তার কাছে প্রকাশ করতে চাইলেন, (১) সেই সুড়ঙ্গওয়ালাকে পুরস্কৃত করা যাবে না, (২) তার পরিচয় কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না এবং (৩) আর কোন দিন তার অনুসন্ধান করা যাবে না। সেনাপতি শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করলেন। এবার তিনি বললেন, আমি সেই সুড়ঙ্গওয়ালা, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমি একাজ করেছি। কথাটি বলেই সে সেনাপতির তাবু থেকে বের হয়ে গেলেন। আর কোন দিন সেই ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। এরপর থেকে মাসলামা (রহঃ) দো‘আ করতেন, اللهُمَّ اجْعَلْنِي مَعَ صَاحِبِ النَّقْبِ، ‘হে আল্লাহ! আখেরাতে তুমি আমাকে ঐ সুড়ঙ্গওয়ালার সাথে রেখো’।[22]
গোপন ইবাদতের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ইবাদতকারীকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, গোপন আমল যেন তার মনে আত্মমুগ্ধতা তৈরী করতে না পারে। কেননা কোন ব্যক্তি তার আমলের মাধ্যমে জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত করবেন।[23] সুতরাং এমনও হ’তে পারে যে, আমলকারী ব্যক্তি নিজেকে আত্মমুগ্ধতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে চলছেন, কিন্তু মৃত্যুর আগে দেখা গেল তিনি ঈমানহীন হয়ে কবরে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، ‘কোন ব্যক্তি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে জান্নাতীদের মতো আমল করে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আবার মানুষ জনসাধারণের দৃষ্টিতে জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করে; অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[24]
তাই সাবধান থাকতে হবে, যেন নিজের মধ্যে আত্মমুগ্ধতার বিষ না ঢুকে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তিনটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে, তন্মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হ’ল আত্মমুগ্ধতা।[25] এজন্য আল্লাহ আদম সন্তানের মাঝে পাপের অনুভূতি দান করেছেন, যাতে পাপের কারণে তার ভিতরে আত্মমুগ্ধতা না আসে। বরং সে যেন অনুতপ্ত হয়ে সাথে সাথে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। তবে ফাসেক বান্দা ও মুমিন বান্দার পাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফাসেক বান্দা গুনাহ করাকে সাধারণ ব্যাপার মনে করে, ফলে সে অনুশোচনা করে না এবং তওবা-ইস্তিগফারের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। অপরদিকে মুমিন ও পরহেযগারের দ্বারাও পাপ হয়ে যেতে পারে, তবে তারা ছোটখাট পাপকেও খুব ভয় পায়, অনুশোচনায় তাদের পানাহার বন্ধ হয়ে যায়, ঘুম উবে যায়, ফলে তারা গুনাহের পথ বর্জন করে, অনুতপ্ত ও ভগ্ন হৃদয়ে বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে এবং তওবা করে তাঁর অনুগত্যের দিকে ফিরে আসে। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, لَوْلَا تَقْدِير الذَّنب هلك ابْن آدم من الْعجب، ‘যদি গুনাহ করার তাক্বদীর না থাকত, তবে আদম সন্তান আত্মমুগ্ধতার কারণে ধ্বংস হয়ে যেত’।[26]
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, সেটা হ’ল- নেক আমলের কোন নিয়ত করে ফেললে, সেটা করে ফেলা। লৌকিকতার ভয়ে সেটা বর্জন না করা। কারণ অনেক সময় শয়তান মানুষকে নেক ছুরাতে ধোঁকা দেয়। যেমন- কোন গরীব মানুষকে বা মসজিদের দান বাক্সে কিছু টাকা দান করার মনস্থ করলেন এবং আপনি সত্যিই একনিষ্ঠ হয়েই দানটা করতে চাচ্ছেন। কিন্তু যখনই আপনি পকেট থেকে টাকা বের করবেন, তখন শয়তান এসে ধোঁকা দিতে পারে যে, ‘আরে! তুমি এভাবে দান করলে তো মানুষ দেখে ফেলবে! তোমার ইবাদত গোপন থাকবে না। সুতরাং দান করার দরকার নেই’। এই অবস্থাতে আপনার করণীয় হ’ল- তখন আপনি শয়তানের কথায় কর্ণপাত না করে দান করে ফেলবেন। ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন,تركُ العمل لأجل الناس رياءٌ، والعمل لأجل الناس شِركٌ، والإِخلاصُ أن يعافيَك الله منهما، ‘মানুষের কথা ভেবে আমল পরিত্যাগ করা রিয়া বা লৌকিকতা এবং মানুষের কথা ভেবে আমল করা শিরক। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে এতদুভয় থেকে তোমার পরিত্রাণ লাভই হ’ল ইখলাছ’।[27] ইমাম নববী (রহঃ) একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ইবাদত করতে সংকল্পবদ্ধ হয়; কিন্তু মানুষের নযরে পড়ার ভয়ে তা পরিত্যাগ করে, সে একজন রিয়াকার বা লৌকিকতাকারী। কারণ সে মানুষের জন্য আমল বর্জন করেছে। তবে হ্যাঁ! সে যদি আমলটি এজন্য পরিত্যাগ করে যে, পরে গোপনে সেটা আদায় করে নিবে, তাহ’লে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ইবাদতটা যদি একদমই না আদায় করে, তবে সে রিয়ার পাপে পতিত হবে’।[28] ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘কেউ যদি চাশতের ছালাত, তাহাজ্জুদ এবং শরী‘আত সম্মত অন্য কোন নেক আমলে অভ্যস্ত হয়, তবে সে যেখানেই থাক না কেন- আমলগুলো যেন আদায় করে নেয়। মানুষের চোখে পড়ার ভয়ে সেই আমলগুলো পরিত্যাগ করা কোনভাবেই উচিত নয়’।[29] তবে কখনো কখনো ইবাদত গোপন করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও আল্লাহ সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেন। ফলে তিনি সবার কাছে সম্মানিত হন। আর এটা গোপন আমলকারীদের জন্য পার্থিব পুরস্কার।
পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে আকুল প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর নবী-রাসূল ও পুণ্যবান সালাফদের আদর্শের অনুসারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। ছোট-বড় সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থেকে তাঁর ইবাদতের মাধ্যমে জীবনের এই সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করার সুযোগ দেন। আমীন!
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. ড. বকর আবূ যায়েদ, হিলয়াতু ত্বালিবিল ইলম, পৃ. ১৪১।
[2]. তারীখুল ইসলাম ৭/১৬৯; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১৭/৬৬।
[3]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৫৫।
[4]. মুহাম্মাদ ইবনে ওছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী, ৪১/২২।
[5]. বুখারী হা/৭২৯০; মুসলিম হা/৭৮১; মিশকাত হা/১২৯৫ ।
[6]. ইবনু আবীদ্দুনয়া, আল-উয্লাতু ওয়াল ইনফিরাদ, পৃ. ২৫।
[7]. নাঈম ইবনু হাম্মাদ আল-আরওয়াযী, কিতাবুল ফিতান, ১/২৫৫
[8]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ৭/১৪৮।
[9]. ড. আয়েয আল-কারনী, লা তাহ্যান, পৃ. ১৩৭।
[10]. গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/১৯৮।
[11]. ইবনে তায়মিয়াহ, আল-ঈমান, পৃ. ১১; ইবনুল মুফলিহ, আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ ১/১৩৬।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৫; ছহীহাহ হা/৫০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০২৮, সনদ ছহীহ।
[13]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, ১৮৬ পৃ.।
[14]. ইবনু তায়মিয়াহ, কিতাবুল ঈমান, পৃ. ১১।
[15]. আবূ হাতেম বুস্তী, রওযাতুল উক্বালা, পৃ. ১৯৭।
[16]. রওযাতুল উক্বালা, পৃ. ১৯৭।
[17]. ইবনু আব্দিল বার্র, জামে‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী ১/৫০৭।
[18]. শিহাবুদ্দন আবশীহী, আল-মুস্তাত্বরাফ, পৃ. ১৫৪।
[19]. আহমাদ ইবনে হাম্বল, কিতাবুয যুহদ, পৃ. ৩৪৭।
[20]. ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/৫১২।
[21]. ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/৪৬৩।
[22]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৫৮/৩৬; মাওয়ারিদুয যামআন ৩/১৭৩-১৭৪।
[23]. বুখারী হা/৫৬৭৩; মুসলিম হা/২৮১৬।
[24]. বুখারী হা/৪২০২; মুসলিম হা/১১২।
[25]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৩১; মিশকাত হা/৫১২২, সনদ হাসান।
[26]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ৬৭।
[27]. নববী, আল-আযকার, পৃ. ৭; বুস্তানুল ‘আরিফীন, পৃ. ২৭।
[28]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন উওয়াইযাহ, ফাছলুল খিত্বাব, ৫/৩১৬।
[29]. ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/১৭৪।