সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দুই প্রধান কারণ (২য় কিস্তি)

(২) আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান : এটি আল্লাহ সম্পর্কে আরেকটি ভ্রান্ত আক্বীদা। ছূফীরা ‘যত কল্লা তত আল্লাহ’তে বিশ্বাসী। অর্থাৎ প্রতিটি বস্ত্তর মধ্যেই আল্লাহ রয়েছে। তাদের মতে আল্লাহ সবসময় সর্বত্র হাযির থাকেন। এক পর্যায়ে এরা ‘ফানাফিল্লাহ’ হয়ে নিজের মধ্যেই আল্লাহর অস্তিত্ব খুঁজে ফিরে এবং বলে, ‘আনাল্লাহ’ অর্থাৎ আমিই আল্লাহ। নাঊাযুবিল্লাহ

উক্ত বিষয়ে সঠিক আক্বীদা হচ্ছে আল্লাহ আরশে সমুন্নত। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন, বরং তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি আরশ থেকেই কুল কায়েনাতের সবকিছু দেখেন, শুনেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর জ্ঞানের বাইরে গাছের একটি পাতাও ঝরে পড়ে না (আন‘আম ৬/৫৯)। মহান আল্লাহ তাঁর অবস্থান সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى- ‘রহমান আরশে উনণীত’ (ত্বোয়াহা ২০/৫)। তিনি বলেন,إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু আল্লাহ। যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর আরশে উন্নীত হয়েছেন’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)

তিনি আরো বলেন, أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ، أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ- ‘তোমরা কি নিশ্চিত হয়ে গেছ যে, আসমানে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দিবেন না? যখন তা হঠাৎ প্রকম্পিত হবে। অথবা তোমরা কি নিশ্চিত হয়ে গেছ যে, আসমানে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী ঝঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করবেন না? আর তখন তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী’ (মুলক ৬৭/১৬-১৭)। আলোচ্য আয়াতেও আল্লাহর অবস্থান আসমানে তথা আরশে নির্দেশ করেছেন।

এতদ্ব্যতীত হাদীছে উল্লেখ আছে- আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِى كِتَابِهِ، فَهْوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِى غَلَبَتْ غَضَبِى- ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন- অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’।[1]

একই রাবী হ’তে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ- ‘আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা প্রত্যেক রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। (এ সময়ে) তিনি বলেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ আমার নিকটে কিছু চাইবে, আমি তাকে প্রদান করব। কে আছ আমার নিকটে ক্ষমা প্রাথনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।[2]

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন,الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا مَنْ فىِ الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ- ‘দয়াশীলের উপর দয়াময় দয়া করেন। তোমরা যমীনবাসীর প্রতি দয়া কর, আসমানের অধিবাসী তোমাদের উপর দয়া করবেন’।[3]

উপরোক্ত দলীলসমূহের আলোকে একথা স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহ সাত আসমানের উপরে আরশে সমুন্নত। সেখান থেকে তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁর সত্তা নয়, বরং তাঁর শক্তি ও জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পার যে, ভর দুপুরে স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন আকাশে সূর্যকিরণ যেভাবে যমীনে পতিত হয়, সেসময়ে হাযারো পাত্রে পানি রাখা হ’লে প্রত্যেক পাত্রের মধ্যে যেমন আস্ত সূর্য দেখা যায়, তেমনি বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহও তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সর্বত্র বিরাজমান। বিদ‘আতী আক্বীদাপুষ্ট একশ্রেণীর আলেম ও তাদের অন্ধ অনুসারীদের আক্বীদা হচ্ছে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, যা সর্বৈব ভ্রান্ত ও বিশুদ্ধ আক্বীদার পরিপন্থী।

উল্লেখ্য যে, অদৃশ্য বিষয় বা গায়েব সম্পর্কে বিনা বাক্যব্যয়ে বিশ্বাস করাটাই ঈমানের দাবী। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রশ্নাতীতভাবে হুবহু তা বিশ্বাস করতে হবে। যেমন ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) আল্লাহর আরশে অবস্থান সম্পর্কে বলেন যে,الاستواء معلوم والكيف مجهول والإيمانُ به واجِب والسؤالُ عنه بدعة ‘আল্লাহ আরশে আছেন এ কথা সুবিদিত, কিন্তু তাঁর কায়ফিয়াত বা অবস্থা অবিদিত। এর উপরে ঈমান আনা হচ্ছে ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে বিদ‘আত’।[4] অর্থাৎ মহান আল্লাহ আরশে কিভাবে আছেন? এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। কেননা এটি সম্পূর্ণ অদৃশ্য বিষয়। কুরআন-হাদীছে এ বিষয়ে যতটুকু বিবরণ পাওয়া যায় তার উপরেই ঈমান আনতে হবে।

(খ) রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে আক্বীদা :

আক্বীদার ক্ষেত্রে সীমালংঘনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হ’ল রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে আক্বীদা। তিনি সকল নবী-রাসূলের মধ্যে সর্বকনিষ্ট হ’লেও মর্যাদায় সবার উপরে। হাশরের ময়দানে উম্মতের জন্য সুফারিশ করার ক্ষমতা হবে একমাত্র তাঁর। তিনি সেদিন উম্মতের নাজাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় পড়ে যাবেন।[5] তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তাঁর আগে অন্য কারো জন্য জান্নাতের খাযেন বা দ্বাররক্ষী দরজা খুলবেন না।[6] এগুলো তাঁর মর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ দিক। যা বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এমন সব ভ্রান্ত ও উদ্ভট কিছু আক্বীদা সমাজে চালু আছে, যেগুলির কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। যা স্রেফ বাড়াবাড়ি, অতিরঞ্জন ও সীমালংঘন বৈ কিছুই নয়। এরকম কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার বিশ্লেষণ নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-

(১) রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরী : রাসূল (ছাঃ) মাটির তৈরী, নাকি নূরের তৈরী এই বিতর্কের আগে তিনি আদম সন্তান কি-না সেটা ভাবা প্রয়োজন। কুরআনুল কারীমের বিবরণ অনুযায়ী আমরা জানি যে, পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব হচ্ছেন আদম (আঃ)। অতঃপর তাঁর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁর সঙ্গিনী হাওয়া (আঃ)-কে। এরপর আদম ও হাওয়া থেকে সকল নর-নারীকে (নিসা ৪/১; হুজুরাত ৪৯/১৩)। সে অর্থে নবী-রাসূল থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষ আদম সন্তান। সেকারণ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে আল্লাহ ‘বনু আদম’ বা ‘আদম সন্তান’ বলে সম্বোধন করেছেন (আ‘রাফ ৭/২৬-২৭, ৩১, ৩৫; ইসরা ১৭/৭০; ইয়াসীন ৩৬/৬০ প্রভৃতি)। অর্থাৎ আদম আমাদের পিতা, আর আমরা তাঁর সন্তান। আর পিতা-পুত্রের সৃষ্টিউপাদান অভিন্ন হবে এটিই স্বাভাবিক।

আদম (আঃ)-এর সৃষ্টিউপাদান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘(স্মরণ কর সেই সময়ের কথা) যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি মাটি থেকে একজন মানুষ সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার সৃষ্ট রূহ ফুঁকে দিব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদা কর’ (ছোয়াদ ৩৮/৭১-৭২)। ‘তিনি মাটি হ’তে মানুষ (আদম) সৃষ্টির সূচনা করেছেন’ (সাজদাহ ৩২/৭)। ‘আর অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি পচা কাদার ঠনঠনে মাটি হ’তে’ (হিজর ১৫/২৬)। ‘তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা হ’তে’ (আর-রহমান ৫৫/১৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির নির্যাস থেকে’ (মুমিনূন ২৩/১২)। উল্লেখ্য যে, আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী মাটির অনেক উপাদান মানবদেহে বিদ্যমান। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফারসহ প্রায় ২৬টি উপাদান মানুষের শরীরে পাওয়া যায়।

আল্লাহ মানুষকে মাটি থেকে, জিন জাতিকে আগুন থেকে এবং ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,خُلِقَتِ الْمَلاَئِكَةُ مِنْ نُوْرٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ، ‘ফেরেশতাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়া মিশ্রিত অগ্নিশিখা হ’তে এবং আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্তু দ্বারা, যার বর্ণনা (কুরআনে) তোমাদেরকে বলা হয়েছে’।[7] প্রত্যেকের স্বভাবধর্ম পৃথক। বলা যায়, মাখলূকের প্রকৃতি অনুযায়ী উপাদান বেছে নেওয়া হয়েছে। ফেরেশতারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকেন, তারা আল্লাহর ইবাদত, তাসবীহ-তাহলীলে মশগূল থাকেন, সেকারণ তাদের সৃষ্টিউপাদান নূর, যা এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ও মর্যাদাকর। দ্বিতীয়তঃ শয়তান হচ্ছে ক্ষতিকর, ষড়যন্ত্রকারী, ধোঁকাবাজ ও কষ্টদানকারী। আগুনও শাস্তির উপকরণ। সে হিসাবে শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করাও যৌক্তিক। অপরদিকে মানুষ যেহেতু জমি আবাদকারী, আর জমিতে নরম, কঠিন, ভালো ও মন্দ সকল প্রকার মাটি রয়েছে, তাই তাদের সৃষ্টির উপাদানও এমন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যে উপাদানের মধ্যে এসব বিশেষণ বিদ্যমান।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ آدَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيعِ الأَرْضِ فَجَاءَ بَنُو آدَمَ عَلَى قَدْرِ الأَرْضِ فَجَاءَ مِنْهُمُ الأَحْمَرُ وَالأَبْيَضُ وَالأَسْوَدُ وَبَيْنَ ذَلِكَ وَالسَّهْلُ وَالْحَزْنُ وَالْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ،‏‏ ‘আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সর্বত্র হ’তে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। তাই আদম-সন্তানরা মাটির বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন তাদের কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো বর্ণের। আবার কেউ বা এসবের মাঝামাঝি। কেউ বা নরম ও কোমল প্রকৃতির। আবার কেউ কঠোর প্রকৃতির, কেউ মন্দ স্বভাবের, আবার কেউ বা ভালো চরিত্রের’।[8] সুতরাং পিতা আদম (আঃ)-এর সৃষ্টিউপাদান যা, পুত্র মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সৃষ্টিউপাদানও তাই হবে। এটিই যৌক্তিক পিতা মাটি থেকে সৃষ্টি হ’লে সন্তান কিভাবে নূর থেকে সৃষ্টি হ’তে পারে? এটা যে অযৌক্তিক ও মনগড়া দাবী তা একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষেও বুঝা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক! যুক্তির নিরীখে রাসূল (ছাঃ) যে মাটির তৈরী তা আমরা অনুধাবন করলাম। এক্ষণে সরাসরি কুরআন-হাদীছের বক্তব্য শুনলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَراً رَّسُوْلاً ‘বল, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৯৩)। আল্লাহ আরো বলেন,قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً، ‘বল, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একজন। সুতরাং যে তাঁর প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তাঁর প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)। অন্যত্র তিনি বলেন, قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ، ‘বল, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ কিছু নই। আমার নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন’ (হা-মীম সিজদা ৪১/৬)

আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করলেন। রাবী ইবরাহীম বলেন, আমার ঠিক জানা নেই, তিনি বেশী করেছেন না কম করেছেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ছালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন, সেটি কি? তারা বলল, আপনি তো এরূপ এরূপ ছালাত আদায় করলেন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’টি সিজদা দিয়ে পুনরায় সালাম ফিরালেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন,إِنَّهُ لَوْ حَدَثَ فِى الصَّلاَةِ شَىْءٌ لَنَبَّأْتُكُمْ بِهِ، وَلَكِنْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ، أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْن، فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِى، ‘যদি ছালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হ’ত, তবে অবশ্যই তোমাদের জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে’।[9] ছহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত ছালাত আদায় করে সালাম ফিরালে ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ছালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তখন তিনি পুনরায় দু’টি সিজদা দিয়ে সালাম ফিরালেন এবং উপরোক্ত কথা বললেন যে, ‘আমি তোমাদের মত মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই’।[10]

অতএব উপরোক্ত দলীল সমূহের আলোকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে, রাসূল (ছাঃ) মাটির তৈরী ‘মানুষ নবী’ ছিলেন। তিনি কখনো নূরের তৈরী ‘নূর নবী’ ছিলেন না। তাছাড়া মানবীয় সকল গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। পিতা-মাতার মাধ্যমে তাঁর জন্মলাভ করা; খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, হাট-বাজার, কাজ-কর্ম, বিবাহ-শাদী, সন্তান-সন্ততি, ব্যবসা-বাণিজ্য, তন্দ্রা-নিদ্রা, প্রাকৃতিক প্রয়োজন ইত্যাদি মানবীয় সকল গুণাবলীই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। সেকারণ তাঁকে নূরের নবী বলে দাবী করা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন বৈ কিছু নয়। এটি রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কিত আক্বীদার ক্ষেত্রে চরম সীমালংঘন। তাছাড়া ভ্রান্ত আক্বীদার দাবীদাররা হয়তো রাসূল (ছাঃ)-কে নূরের তৈরী সাব্যস্ত করে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বরং আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা নূরের তৈরী ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন মাটির তৈরী আদমকে সিজদা করার জন্য। আর আল্লাহর নির্দেশে ইবলীস ব্যতীত সকল ফেরেশতা আদম (আঃ)-কে সিজদা করলেন (হিজর ১৫/৩০-৩১; ছোয়াদ ৩৮/৭৩-৭৪)। এতে বরং নূরের চেয়ে মাটিরই শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেল। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!

সকল নবী-রাসূল ‘মানুষ নবী’ ছিলেন: শুধু আমাদের নবী (ছাঃ) নন, বরং জগতের সকল নবী-রাসূলগণই আদম সন্তান এবং মানুষ নবী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদের বিভিনণ আয়াতে সুস্পষ্ট বিবরণ বিধৃত হয়েছে। যেমন- নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, فَقَالَ الْمَلأُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَراً مِّثْلَنَا، ‘অতঃপর তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী নেতারা বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত কিছু দেখছি না’ (হূদ ১১/২৭)। ‘আদ ও ছামূদ সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِي اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُم مِّن ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُّسَـمًّى قَالُواْ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا- ‘তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ? যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা! যিনি তোমাদেরকে আহবান করেছেন তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করার জন্য এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেওয়ার জন্য। তারা বলেছিল, তোমরা তো আমাদের মত মানুষ বৈ কিছু নও’ (ইবরাহীম ১৪/১০)। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন,قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِنْ نَحْنُ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ وَلَكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ‘তাদের রাসূলগণ তাদের বলেছিলেন, আমরা তোমাদের মত মানুষ ব্যতীত নই। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন’ (ইবরাহীম ১৪/১১)। অর্থাৎ নবুঅতের মর্যাদা দান করেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوْا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَنْ قَالُوْا أَبَعَثَ اللهُ بَشَراً رَّسُوْلاً- ‘বস্ত্ততঃ যখন মানুষের কাছে হেদায়াত (রাসূল) আসে, তখন তাদেরকে ঈমান আনা হ’তে বিরত রাখে তাদের এই উক্তি যে, ‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৯৪)।وَأَسَرُّواْ النَّجْوَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ هَلْ هَذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ، ‘যালিমরা গোপনে শলা-পরামর্শে বলে, এ ব্যক্তি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ’ (আম্বিয়া ২১/৩)। কওমে ‘আদের নিকটে প্রেরিত রাসূল প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,وَقَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِلِقَاء الْآخِرَةِ وَأَتْرَفْنَاهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هَذَا إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُوْنَ، ‘তার সম্প্রদায়ের নেতারা যারা অবিশ্বাসী ছিল ও আখেরাতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকে মিথ্যা বলত এবং যাদেরকে আমরা পার্থিব জীবনে সুখ-সম্ভার দিয়েছিলাম, তারা বলল, এ ব্যক্তি তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র। তোমরা যা খাও, সেও তাই খায়। তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে’ (মুমিনূন ২৩/৩৩-৩৪)। মূসা এবং হারূণ (আঃ) সম্পর্কে ফেরাঊন ও তার কওম বলল, أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُوْنَ، ‘আমরা কি আমাদের মত দু’ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব? অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে’ (মুমিনূন ২৩/৪৭)। ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন’ (আলে ইমরান ৩/৫৯)

উপরোক্ত দলীলগুলোর মাধ্যমে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জগতের সকল নবী-রাসূলগণই মাটি থেকে সৃষ্টি এবং মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন ‘মানুষ নবী’ ছিলেন।

২. রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানতেন : আল্লাহ ব্যতীত সৃষ্টিকুলের কেউ গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখেন না। কাউকে ভবিষ্যদ্বক্তা মনে করা শিরক। কোন নবী-রাসূল গায়েবের খবর জানতেন না, এমনকি ফেরেশতারাও জানেন না। বিশ্বজগতের সবকিছুই মহান আল্লাহর নির্দেশে পরিচালিত হয়। তিনিই সকল জ্ঞানের অাঁধার। তিনি যাকে যতটুকু জানিয়েছেন তিনি ততটুকু জানতে পেরেছেন। এর অতিরিক্ত নয়। যেমন তিনি বলেন,عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِأَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ، ‘তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। আর তিনি তাঁর অদৃশ্য জ্ঞান কারো নিকটে প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত’ (জিন ৭২/২৬-২৭)

নবী-রাসূলগণের নিকটে আসমানী জ্ঞান আসত। সে জ্ঞানের আলোকেই তাঁরা জাতিকে সতর্ক-সাবধান করতেন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী কথা বলতেন। সেকারণ তাঁদের অনেকের অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও আসমানী বার্তা লাভের কারণে তাঁরা মূলতঃ মহাজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। যেমনটি ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পিতা এবং নমরূদী প্রশাসনের মন্ত্রী ও ধর্মগুরু আযরকে বলেছিলেন,يَاأَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا، ‘হে আমার পিতা! আমার নিকটে এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। অতএব তুমি আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সরল পথ প্রদর্শন করব’ (মারিয়াম ১৯/৪৩)। মূলতঃ এলাহী জ্ঞান ব্যতীত তাঁরা কিছুই বলতে পারতেন না। যেমন হাদীছে জিবরীলে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়কাল সম্পর্কে জিবরীল আমীনের প্রশ্নের জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، ‘এ বিষয়ে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি প্রশ্নকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞাত নন’।[11] অর্থাৎ এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)ও জানেন না এবং জিবরীল আমীনও জানেন না। একমাত্র মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলাই জানেন কখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। তাঁর নির্দেশ পেলেই দায়িত্বরত ফেরেশতা সিংঙ্গায় ফুৎকার দিবেন।

এক্ষণে চলুন আমরা কুরআনের ভাষায় দেখি, অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী কে? আল্লাহ বলেন,قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ- ‘তুমি বল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্যের খবর কেউ রাখে না আল্লাহ ব্যতীত। আর তারা বুঝতেই পারবে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে’ (নামল ২৭/৬৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ، ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য জ্ঞান সমূহ কেবল আল্লাহর নিকটেই রয়েছে এবং তাঁর দিকেই সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। অতএব তুমি তাঁর ইবাদত কর ও তাঁর উপরেই ভরসা কর। আর তোমরা যা কিছু কর, তোমার প্রতিপালক সেসব বিষয়ে উদাসীন নন’ (হূদ ১১/১২৩)। তিনি আরো বলেন,وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ- ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউ তা জানেন না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও সেটা তিনি জানেন। মাটির নীচে অন্ধকারে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যবীজ নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা নীরস বস্ত্ত নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (আন‘আম ৬/৫৯)

রাসূল (ছাঃ) যে গায়েব জানতেন না এ মর্মে আরো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াত সমূহে। আল্লাহ বলেন,قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ- ‘বল যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক নই। যদি আমি অদৃশ্যের খবর রাখতাম, তাহ’লে আমি অধিক কল্যাণ অর্জন করতাম এবং কোনরূপ অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদ দানকারী মাত্র’ (আ‘রাফ ৭/১৮৮)। মক্কার কাফের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক নানা ধরনের প্রলোভন ও প্রশ্নবানে জর্জরিত রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে অহি-র মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দেন যে,قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ، ‘বলে দাও, আমি তোমাদের এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার রয়েছে। আর আমি অদৃশ্যের খবর রাখি না এবং এ কথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো কেবল অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি অহি করা হয়’ (আন‘আম ৬/৫০; হূদ ১১/৩১)। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ، ‘যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, রাসূল (ছাঃ) গায়েবের খবর জানেন, তবে সে মিথ্যা বলল’।[12]

উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) যদি গায়েবের খবর জানতেন তাহ’লে নবুঅতী জীবনে তিনি যে সমস্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা হ’ত না। তিনি অদৃশ্য জ্ঞান দ্বারা ভবিষ্যৎ বিপদ সম্পর্কে জানতে পারতেন এবং সে লক্ষ্যে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারতেন। তাঁকে ওহোদের ময়দানে কঠিন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হ’তে হ’ত না। সাইয়েদুশ শুহাদা হামযাহ (রাঃ)সহ ৭০ জন ছাহাবীর জীবন দিতে হ’ত না। মা আয়েশা (রাঃ)-এর উপর মুনাফিক কর্তৃক যে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তিনি সাথে সাথে বলে দিতে পারতেন যে, এটি ডাহা মিথ্যাচার। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন আসমানী ফায়ছালার অপেক্ষায় থাকলেন। অবশেষে মা আয়েশার সতীত্বের প্রমাণ স্বরূপ আয়াত নাযিল হ’লে নবী পরিবারে স্বস্তি নেমে আসে। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি গায়েব জানতেন না। তাছাড়া হাশরের ময়দায়ে হাউজে কাউছারের পানি পান করানোর সময় বিদ‘আতীদেরকে পানি পান থেকে আড়াল করে দিলে রাসূল (ছাঃ) যখন এর কারণ জিজ্ঞেস করবেন তখন ফেরেশতারা বলবেন, إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ‘নিশ্চয়ই আপনি জানেন না আপনার মৃত্যুর পরে এরা কি কি নতুন রীতি চালু করেছিল তথা বিদ‘আত করেছিল’।[13] এই হাদীছ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানতেন না। অতএব উপরোক্ত বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে একথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, রাসূল (ছাঃ) আদৌ গায়েব জানতেন না। মহান আল্লাহ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যতটুকু তাকে জানিয়েছেন তিনি কেবলমাত্র ততটুকুই জানতে পেরেছেন এবং সেটি উম্মাহর নিকটে পেশ করেছেন।

৩. হায়াতুন্নবী : রাসূল (ছাঃ) হায়াতুন্নবী, যিন্দানবী, তিনি মৃত্যুবরণ করেননি, বরং ইন্তিকাল করেছেন। অর্থাৎ দুনিয়া থেকে কবরে স্থানান্তরিত হয়েছেন মাত্র। সেখানে তিনি জীবিত আছেন ও সমগ্র পৃথিবীর খোঁজ-খবর রাখেন। এমনকি একটি দাওয়াতী ধর্মীয় গোষ্ঠীর আমীরের সাথে তিনি কবর থেকে হাত বের করে দিয়ে মুছাফাহা করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। রাসূল (ছাঃ)-কে নিয়ে এরকম মনগড়া, বানাওয়াট ও বিভ্রান্তিকর আক্বীদা সমাজে চালু আছে। একশ্রেণীর বিদ‘আতী আলেম এগুলোকে লালন করেন। যার সাথে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দূরতম সম্পর্ক নেই। যা আক্বীদার ক্ষেত্রে চরম সীমালংঘন।

উল্লেখ্য, প্রত্যেক প্রাণেরই মৃত্যু অবধারিত। জীবন আছে যার, মৃত্যু হবে তার, এটিই চিরন্তন সত্য। আল্লাহ বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আম্বিয়া ২১/৩৫)। রাসূল (ছাঃ)ও মৃত্যুবরণ করেছন। এ সম্পর্কে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান থাকতে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করা যেমন সীমালংঘন, তেমনি রাসূলের শানে চরম বাড়াবাড়ি। আল্লাহ বলেন, إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ‘নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে’ (যুমার ৩৯/৩০)। তিনি বলেন, وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِنْ مِتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ، ‘আমরা তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। অতএব তোমার মৃত্যু হ’লে কি তারা চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে?’ (আম্বিয়া ২১/৩৪)

মূলতঃ রাসূল (ছাঃ) ৬৩ বছর ৪দিন বয়সে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন সোমবার ১১ হিজরীর ১লা মতান্তরে ১২ই রবীউল আউয়াল তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবারসহ ছাহাবায়ে কেরাম মারাত্মকভাবে শোকাবহ হয়ে পড়েন। রাসূলের বিয়োগব্যথা তারা সহ্য করতে পারছিলেন না। ওমর ফারূক (রাঃ) তো হতবুদ্ধি হয়ে বলতে থাকেন যে, কিছু মুনাফিক ধারণা করে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু হয়েছে। অথচ তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। বরং স্বীয় প্রতিপালকের নিকটে গমন করেছেন। যেমন মূসা (আঃ) নিজ সম্প্রদায় থেকে ৪০ দিন অনুপস্থিত থাকার পর পুনরায় ফিরে এসেছিলেন।[14] সে সময় আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর অনন্য ভূমিকা পরিবেশকে শান্ত করেছিল। তিনি মসজিদে নববীতে গিয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন, أَمَّا بَعْدُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ، ‘(হে লোক সকল!) তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের ইবাদত করে, সে জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি মরেন না’। অতঃপর তিনি কুরআন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করেন,وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِينَ- ‘আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত নন। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছেন। এক্ষণে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তাহ’লে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্ত্ততঃ যদি কেউ পশ্চাদপসরণ করে, সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। সত্বর আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরষ্কৃত করবেন’ (আলে ইমরান ৩/১৪৪)[15] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আবুবকর (রাঃ)-এর উক্ত ভাষণ শোনার পর সকলে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলেন। সবার মনে হ’ল যেন আবুবকরের মুখে শোনার আগে উক্ত আয়াতটি তারা জানতেনই না। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আবুবকরের মুখে উক্ত আয়াত শুনে আমি আমার দু’পা স্থির রাখতে পারিনি। অবশেষে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং আমি নিশ্চিত হ’লাম যে, রাসূল (ছাঃ) মারা গেছেন।[16]

৪. রাসূল (ছাঃ) হাযির-নাযির : মীলাদভক্ত মৌলভী ছাহেব তাদের মীলাদের মজলিসে রাসূল (ছাঃ)-কে হাযির-নাযির জেনে তাঁর নামে ক্বিয়াম করেন। একপর্যায়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলাইকা’ বলে দাঁড়িয়ে যান এবং সমস্বরে চীৎকার করে নিজেদের তৈরীকৃত বানাওয়াট দরূদ পড়তে থাকেন। কোন কোন মজলিসে একটি সুন্দর চেয়ার সাজিয়ে খালি রাখা হয় এ উদ্দেশ্যে যে, রাসূল (ছাঃ) এসে এই চেয়ারে বসবেন (নাঊযুবিল্লাহ)। এভাবে তারা মিথ্যা নবীপ্রেমের মহড়া প্রদর্শন করে। তাদের এই আমল যে অন্তঃসারশূন্য এবং আল্লাহর বিধানের সাথে সীমালংঘন তার প্রতি মোটেও ভ্রূক্ষেপ করে না। মূলতঃ নবী-রাসূল বা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির রূহ কখনো দুনিয়াতে নেমে আসে না। বরং মৃত্যুর পর রূহগুলো নির্ধারিত স্থান ‘ঈল্লীয়্যীন’ বা ‘সিজ্জীনে’ অবস্থান করে। পূর্ববর্তী শিরোনামের আলোচনায় আমাদের নিকটে এ কথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুবরণ করেছেন। সেকারণ তাঁর নির্ধারিত সময় তথা পুনরুত্থান দিবস ব্যতীত পৃথিবীতে আসা অসম্ভব। আল্লাহ বলেন,ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ- ‘এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর তোমরা ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনূন ২৩/১৫-১৬)। তিনি আরো বলেন,حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ، لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- ‘অবশেষে যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়। এটা তো তার একটি (বৃথা) উক্তি মাত্র, যা সে বলে। বরং তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০০)

৫. রাসূল (ছাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করা হ’ত না : একটি জাল বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, لولاك لما خلقت الأفلاك ‘তুমি না হ’লে আমি আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না’।[17] বর্ণনাটি জাল। এই বানাওয়াট কথা প্রচার করে একশ্রেণীর অজ্ঞ লোক রাসূল (ছাঃ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধির কোশেশ করে থাকে। এরা জানে না যে, মিথ্যা দিয়ে কখনো মর্যাদা বাড়ানো যায় না। বরং রাসূল (ছাঃ)-কে অপমান করা হয়। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন-আমীন! [ক্রমশঃ]


[1]. বুখারী হা/৩১৯৪ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৩৬৪ ‘দো‘আ’ অধ্যায়, ‘আল্ল­াহর রহমতের প্রশস্ততা’ অনুচ্ছেদ।

[2]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়

[3]. আবূদাঊদ হা/৪৯৪১; তিরমিযী হা/১৯২৪; মিশকাত হা/৪৯৬৯

[4]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/১৩৮

[5]. বুখারী হা/৪৭১২

[6]. মুসলিম হা/১৯৭

[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭০১

[8]. তিরিমিযী হা/২৯৫৫; ছহীহুত তারগীব হা/৬১৬০, সনদ ছহীহ

[9]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১০১৬

[10]. মুসলিম হা/৫৭২

[11]. বুখারী হা/৫০; মুসলিম হা/১০

[12]. বুখারী হা/৭৩৮০

[13]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭১

[14]. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ: ৭৪৪

[15]. বুখারী হা/১২৪২।

[16]. বুখারী হা/৪৪৫৪; সীরাতুর রাসূল, পৃ: ৭৪৬

[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮২






বিষয়সমূহ: পরকাল
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিধান (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
অল্পে তুষ্টি - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
যেসব ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
মাহে রামাযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য - ড. মুহাম্মাদ আলী
ধর্মদ্রোহিতা - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
এক নযরে হজ্জ - আত-তাহরীক ডেস্ক
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
দাওয়াত ও সংগঠন - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আরও
আরও
.