পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব ।
ভূমিকা :
নির্লোভ, নিরহংকার ও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) ভারতীয় উপমহাদেশের জ্ঞানাকাশের এক দেদীপ্যমান নক্ষত্র। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বড় মাপের আহলেহাদীছ আলেম, মুহাদ্দিছ, ফকীহ ও ‘মিশকাতুল মাছাবীহ’-এর প্রামাণ্য আরবী ভাষ্য ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’-এর রচয়িতা। ইলমে হাদীছে তাঁর গভীর মনীষা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, সমাদৃত ও সর্বজনগ্রাহ্য। একবার সঊদী আরবের ‘দারুল ইফতা’ আধুনিক যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি ব্যতিক্রমী হাদীছের মর্মার্থ তাঁর কাছে জানতে চায়।[1] এতে সহজেই অনুমিত হয় যে, মুসলিম বিশ্বে মুহাদ্দিছ হিসাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।
নাম, উপনাম ও উপাধি :
তাঁর নাম ওবায়দুল্লাহ। উপনাম আবুল হাসান।[2] উপাধি ‘শায়খুল হাদীছ’। ইলমে হাদীছে অগাধ ব্যুৎপত্তি এবং শিক্ষকতা ও গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রায় এক শতাব্দী ইলমে হাদীছের খিদমতে নিয়োজিত থাকায় তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। উর্দূ রীতি অনুযায়ী কখনো কখনো এই উপাধিকে সংক্ষিপ্ত করে ‘শায়খ’ বা ‘শায়খ ছাহেব’ বলা হ’ত। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে লোকজন তাঁকে তাঁর নামের চেয়ে এই উপাধিতেই বেশী ডাকত। উল্লেখ্য, ভারতীয় উপমহাদেশে যাঁরা ছহীহ বুখারী ও মুসলিম পড়ান, তাঁরা ‘শায়খুল হাদীছ’ উপাধিতে বরিত হন।[3] ‘জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী খিদমাত’ গ্রন্থের লেখক আযীযুর রহমান সালাফী বলেন, ‘ইলমে হাদীছে অগাধ ব্যুৎপত্তির অধিকারীকে অতীতকালে ‘মুহাদ্দিছ’ বলা হ’ত। কিন্তু ‘শায়খুল হাদীছ’ শব্দটি নতুন এবং ভারতীয়দের পরিভাষা। মানুষেরা আল্লামা আহমাদুল্লাহ প্রতাপগড়ীকে ‘শায়খুল হাদীছ’ উপাধিতে ডাকত। অতঃপর যখন আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হ’লেন এবং তাঁকে ছহীহ বুখারী ও মুসলিম পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হ’ল, তখন তিনিও ‘শায়খুল হাদীছ’ রূপে আহূত হ’তে লাগলেন। অতঃপর মানুষের মুখে উচ্চারিত হ’তে হ’তে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর দেয়া এই উপাধিতেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন।[4]
হাবীবুর রহমান মেŠবী বলেন, ‘ওবায়দুল্লাহ রহমানী শায়খুল হাদীছ উপাধিতে এমনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন যে, যখন আহলেহাদীছদের নিকট এই উপাধি সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয়, তখন তিনিই উদ্দেশ্য। যেমন ভারতে ‘হাফেয’ উপাধিটি আহলেহাদীছদের নিকট উল্লেখিত হ’লে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী। আর ‘মিয়াঁ ছাহেব’ দ্বারা উদ্দেশ্য শায়খুল কুল ফিল কুল সাইয়েদ নাযীর হুসাইন দেহলভী। যেমন বৈশ্বিক ইলমী পরিমন্ডলে ‘আল-হাফেয’ উপাধি দ্বারা হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) উদ্দেশ্য’।[5]
ভারতীয় উপমহাদেশে যারা ইসলামিয়া মাদরাসা থেকে ফারেগ হন, তারা সেই মাদরাসার দিকে সম্পর্কিত হন। যেমন জামে‘আ সালাফিয়া (বেনারস) থেকে ফারেগ হ’লে সালাফী, নাদওয়াতুল ওলামা (লক্ষ্ণৌ) থেকে ফারেগ হ’লে নাদবী ইত্যাদি। সেরূপ দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী থেকে ফারেগ হওয়ার জন্য ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর নামের শেষে ‘রহমানী’, জন্মস্থান মুবারকপুরের দিকে সম্বন্ধিত করে মুবারকপুরী ও নিজ যেলা আযমগড়ের দিকে সম্পর্কিত করে আযমী উল্লেখিত হয়ে থাকে।[6] তবে তিনি ওলামায়ে কেরামের নিকট ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রূপেই সর্বাধিক পরিচিত ও খ্যাত।
জন্ম ও নসবনামা :
বিশ্ববরেণ্য এই মুহাদ্দিছ ১৩২৭ হিজরীর মুহাররম মাস মোতাবেক ১৯০৯ সালে উত্তর প্রদেশের আযমগড় যেলার মুবারকপুর[7] গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আহলেহাদীছ আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[8] তাঁর পূর্ণ বংশপরিক্রমা হ’ল- ওবায়দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম বিন খান মুহাম্মাদ বিন আমানুল্লাহ বিন হুসামুদ্দীন।[9]
বংশীয় ঐতিহ্য :
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর দাদা খান মুহাম্মাদ (১২৫৭-১৩২৭ হিঃ) মুত্তাকী ও দানবীর ছিলেন। অধিক কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত, হাদীছে বর্ণিত দো‘আ-কালাম মুখস্থকরণ, ধর্মীয় গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন এবং মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারে তার গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি আহলেহাদীছ ছিলেন। তাঁর বড় আববা (বাবার নানা) আমানুল্লাহ (মৃঃ ১২৯৯ হিঃ) হেকীম, বংশের নেতা ও হাদীছের প্রতি আমলকারী তথা আহলেহাদীছ ছিলেন। তিনি শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভীর (১১৫৯-১২৩৯ হিঃ) ছাত্র শাহ আবূ ইসহাক আল-লেহরাবীর ছাত্র ছিলেন।[10] বাবা মাওলানা আবুল হুদা সালামাতুল্লাহ ওরফে আব্দুস সালাম মুবারকপুরী একজন বড় মাপের আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। তিনি ১২৮৯ হিজরীতে মুবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি হাফেয আব্দুর রহীম মুবারকপুরী (মৃঃ ১৩৩০ হিঃ), আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, হুসামুদ্দীন মেŠবী (মৃঃ ১৩১০ হিঃ), হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী[11] আব্দুল হক কাবুলী (মৃঃ ১৩২১ হিঃ) প্রমুখের নিকট থেকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী (১২৪৬-১৩২০ হিঃ) এবং হুসাইন বিন মুহসিন ওরফে হুসাইন আরব ইয়ামানীর[12] নিকট থেকেও সনদ লাভ করেন। ফারেগ হওয়ার পর তিনি মাদরাসা আহমাদিয়া (আরাহ, বিহার), মাদরাসা ছাদেকপুর, পাটনাতে ১৫ বছর, মাদরাসা আলিয়া আরাবিয়া (মৌ, উত্তর প্রদেশ)-এ ৩ বছর, মাদরাসা সিরাজুল উলূমে (বনঢেয়ার, বলরামপুর, উত্তর প্রদেশ) ৪ বছর এবং জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লীতে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতায় তাঁর খ্যাতি দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।[13] মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮-১৯৪৮ খৃঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী প্রকৃতার্থেই একজন আলেম এবং বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষক খুঁজতে গেলে তাঁর ওপরই প্রথম নযর পড়ত’।[14]
দারুল হাদীছ রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকাকালে দিল্লীর চাঁদনী চক রোডে এক উন্মত্ত ঘোড়ার পদতলে পিষ্ট হয়ে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। এ ঘটনার কিছু দিন পর ১৮ রজব ১৩৪২ হিঃ/২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯২৪ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।[15] উর্দূতে প্রণীত ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর অনবদ্য জীবনী ‘সীরাতুল বুখারী’ তাঁর অমর কীর্তি। এটি আরবী ও ইংরেজীতে অনূদিত হয়ে সমগ্র বিশ্বে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।
আব্দুস সালাম মুবারকপুরী যখন মারা যান, তখন তার তিন সন্তাই ছাত্র ছিল। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, ‘এই লাইনগুলোর (সীরাতুল বুখারীর ভূমিকা) লেখক দারুল হাদীছ রহমানিয়ার পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আর তাঁর দু’ছোট সহোদর মুহাম্মাদ উযাইর ও ওবায়দুর রহমান গ্রামের মাদরাসায় প্রাথমিক দিকের কিছু ফার্সী বই পড়ছিলেন’।[16]
আব্দুস সালাম মুবারকপুরীর তিন পুত্র সন্তান ছিল। (১) ওবায়দুল্লাহ (২) ওবায়দুর রহমান (৩) মুহাম্মাদ উযাইর। ওবায়দুর রহমান দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী ফারেগ ছিলেন। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘আমার স্নেহাষ্পদ ভাই ওবায়দুর রহমান মাযাহিরী রহমানী চরিত্রবান ও ভদ্র ছিলেন। তিনি ভাল কবি ও খ্যাতিমান আলেম ছিলেন। আল্লাহ তাকে সুরুচি ও সূক্ষ্ম অনুভূতিশক্তি দিয়েছিলেন। ... তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছিল এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১০ যিলহজ্জ ১৩৬৪ হিজরীতে তিনি আমাদেরকে চিরবিদায় জানান। মৃত্যুকালে তিনি টগবগে যুবক ছিলেন। তিনি দারুল হাদীছ রহমানিয়ার শিক্ষক ছিলেন’।[17]
শিক্ষা জীবন :
ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণতঃ মা ও দাদী-নানীদের কাছে বাড়ীতে মুসলিম সন্তানদের পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়। তাদের কাছে ছোট্ট সোনামণিরা প্রথমতঃ আরবী অক্ষর, শব্দ অতঃপর বাক্য পরিচয় শেখে। এভাবে কুরআন মাজীদ পড়তে সমর্থ হ’লে গোটা কুরআন মাজীদ অন্ততঃ একবার দেখে পড়ে। অধিকাংশ রক্ষণশীল পরিবারে এ নিয়ম চালু আছে। অতঃপর সন্তানকে গ্রামের নিকটবর্তী কোন মাদরাসায় ভর্তি করা হয় এবং প্রাথমিক স্তরে সেখানে তার নিয়মতান্ত্রিক পড়াশুনার পথযাত্রা শুরু হয়।
সম্ভবতঃ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর বেলায়ও এমনটি হয়েছিল। যদিও তাঁর জীবনের ঊষালগ্নের এ পর্যায় সম্পর্কে জীবনী গ্রন্থগুলোতে তেমন কোন বিবরণ পাওয়া যায় না, তবুও আযমগড় যেলার পরিবেশ ও প্রচলিত রীতি এদিকে ইঙ্গিত করে। এরপর তিনি ‘মাদরাসা দারুত তা‘লীম’ (প্রতিষ্ঠা : ১৯১২)-এ ভর্তি হন। প্রাথমিক স্তরে তিনি কয়েক বছর এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন। মৌলভী মুহাম্মাদ আছগার, মৌলভী শাহ মুহাম্মাদ প্রমুখ এখানে তার শিক্ষক ছিলেন।[18] এরপর তার বাবা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী শিক্ষকতার সুবাদে তাকে নিম্নোক্ত মাদরাসাগুলোতে সাথে করে নিয়ে যান এবং সেগুলোতে তিনি শিক্ষার্জন করেন।
১. মাদরাসা আলিয়া আরাবিয়া, মৌনাথভঞ্জন (প্রতিষ্ঠা : ১২৮৫ হিঃ/১৮৬৮ খৃঃ) : মুবারকপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মৌনাথভঞ্জন নগরীতে অবস্থিত এ মাদরাসায় ১৩৩৩-১৩৩৬ হিঃ/১৯১৪-১৯১৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছর আব্দুস সালাম মুবারকপুরী শিক্ষকতা করেন। তিনি তখন মুহাম্মাদ নু‘মানের[19] ডুমনপুরার বাড়ীতে অবস্থান করতেন। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী এই মাদরাসায় পড়তেন এবং নু‘মানের পরিবারের ও গ্রামের অন্য শিশুদের সাথে খেলাধূলা করতেন। তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮ বছর। তিনি এখানে উর্দূ ও ফার্সী ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। সম্ভবতঃ তিনি এখানে প্রাথমিক স্তরের পড়াশুনাও শেষ করেন।[20]
২. মাদরাসা সিরাজুল উলূম (বনঢেয়ার, বলরামপুর, উত্তর প্রদেশ) : ১৩৩৬-১৩৪১ হিঃ/১৯১৭-২৩ খৃঃ পর্যন্ত ৫ বছর আব্দুস সালাম মুবারকপুরী এখানে শিক্ষকতা করেন। বাবার কাছে এ মাদরাসায় ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী নাহু, ছরফ, সাহিত্য, ফিকহ ও মানতেকের বিভিন্ন কিতাব তথা কাফিয়া, শরহে মুল্লা জামী, শরহে বেকায়া, মিশকাতুল মাছাবীহ, সিরাজী, শরহে তাহযীব, কুতবী, দীওয়ানে মুতানাববী, অক্লীদাস (অংক) অধ্যয়ন করেন।[21] সাথে সাথে অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও তিনি পাঠ গ্রহণ করেন, যাদের নাম জানা যায়নি।
৩. দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী (প্রতিষ্ঠা : ১৯২১, বন্ধ ১৯৪৭) : ১৩৪১ হিঃ/১৯২৩ সালে আব্দুস সালাম মুবারকপুরী এখানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এখানে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী ও হুসাইন বিন মুহসিন ওরফে হুসাইন আরব ইয়ামানীর ছাত্র আল্লামা আহমাদুল্লাহ প্রতাপগড়ী দেহলভীর[22] নিকট ছহীহ বুখারী, মুসলিম, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক; হাফেয আব্দুর রহমান নগরনাহসাবীর নিকট তাফসীরে জালালায়ন, তিরমিযী, নূরুল আনওয়ার, মাকামাতে হারীরী ও দীওয়ানুল হামাসা; গোলাম ইয়াহ্ইয়া খানপুরীর নিকট তাফসীরে বায়যাভী, হেদায়া (শেষ দু’খন্ড), তালবীহ, তাওযীহ, শামসে বাযেগাহ, হামদুল্লাহ, কাযী মুবারক, শরহে হিদায়াতুল হিকমাহ, শরহে আকাইদে নাসাফী, শরহে মাওয়াকিফ, তাছরীহ, শরহে চগমনী, শরহে মাতালে‘ ও মুসাল্লামুছ ছুবূত; আবূ তাহের বিহারীর নিকট সুনান আবূ দাঊদ ও হাদিয়া সা‘দিয়া; আব্দুল গফূর জয়রাজপুরীর নিকট মুকাদ্দামা ইবনে খালদূন ও শামসে বাযেগার কতিপয় খন্ড; মুহাম্মাদ ইসহাক আরাভীর নিকট শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রচিত আল-ফাওযুল কাবীর; আব্দুল ওয়াহ্হাব আরাভীর নিকট ছদরা এবং হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবীর[23] নিকট তাফসীরে বায়যাভীর কিয়দংশ অধ্যয়ন করে জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করেন। এখানে তিনি ক্লাসে সবসময় ফার্স্ট হতেন। এভাবে সুদীর্ঘ ৫ বছর দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় বাবা ও উল্লেখিত খ্যাতিমান আলেমদের নিকট শিক্ষা লাভ করে ১৩৪৫ হিঃ/১৯২৭ খৃষ্টাব্দে এখান থেকে ফারেগ হন এবং সনদ লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।[24]
আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর কাছে শিক্ষাগ্রহণ :
ইলমে দ্বীন শিক্ষা লাভে প্রবল আগ্রহী ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় অধ্যয়নকালে ছুটিতে বাড়ীতে এসে অযথা সময় নষ্ট করতেন না। সে সময় তিরমিযীর জগদ্বিখ্যাত ভাষ্যকার আব্দুর রহমান মুবারকপুরী মুবারকপুরে অবস্থান করছিলেন। জ্ঞান সমুদ্রের মণি-মুক্তা আহরণে সদা উদগ্রীব মুবারকপুরী এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর নিকট মাদরাসার ছুটিকালীন সময়ে তিরমিযীর (প্রথম দিকের বেশ কিছু অংশ), শরহে নুখবাতুল ফিকার (কিয়দংশ), মুকাদ্দামা ইবনে ছালাহ ও সিরাজী অধ্যয়ন করেন।[25]
‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ প্রণয়নে সহযোগিতা :
মাত্র ১৮ বছর বয়সে দারুল হাদীছ রহমানিয়া থেকে ফারেগ হওয়ার পর মুবারকপুরী সেখানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এদিকে শেষ জীবনে আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার কারণে তিরমিযীর ভাষ্য ‘তুহফাতুল আহওযায়ী’র শেষ দু’খন্ড রচনায় সাহায্য করার জন্য তিনি ইলমে হাদীছে পারদর্শী একজন আলেমের সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন। দারুল হাদীছ রহমানিয়ার দায়িত্বশীলগণের নিকট তিনি ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আতাউর রহমান এ প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করেন। তিনি তাঁকে এ মহান কাজে সহায়তা করার জন্য আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর নিকটে প্রেরণ করেন। দীর্ঘ দু’বছর তিনি তাঁকে এক্ষেত্রে সহায়তা করেন। এই সুযোগে তাঁর কাছে হাদীছের বিভিন্ন গ্রন্থও অধ্যয়ন করেন।[26]
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী এ সম্পর্কে নিজেই বলেন,
وقد صحبت ولازمت شيخنا الأجل المباركفورى سنتين كاملتين لإعانته على تحرير الربعين الأخيرين الثالث والرابع من تحفة الأحوذى، وقرأت عليه أطرافا من الصحاح الستة وغيرها من كتب الحديث وشيئا كثيرا من شروح الحديث وقدرا معتدا به من مقدمة ابن الصلاح، وقد كنت قرأت عليه قبل ذلك أوائل جامع الترمذى والسراجية فى علم الفرائض، وبذلت جهدى فى الاستغراف من بحار علومه والاستفادة من فوائده والتأدب بآدابه.
‘তুহফাতুল আহওয়াযীর শেষ দু’খন্ডের (৩য় ও ৪র্থ খন্ড) রচনার কাজে সহায়তা করার জন্য আমি আমাদের মহান শিক্ষক আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর সান্নিধ্যে দু’বছর অতিবাহিত করি। (এ সময়) আমি তাঁর নিকট কুতুবে সিত্তাহ ও অন্যান্য হাদীছের গ্রন্থাবলী, হাদীছের বহু ভাষ্যগ্রন্থ ও মুকাদ্দামা ইবনে ছালাহর কিছু অংশ অধ্যয়ন করি। ইতিপূর্বে আমি তাঁর নিকট তিরমিযীর প্রথম দিকের বেশ কিছু অংশ ও ফারাইযের সিরাজী গ্রন্থ অধ্যয়ন করি। তাঁর জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিতে, তাঁর কাছ থেকে উপকৃত হ’তে ও তাঁর চরিত্রে নিজেকে চরিত্রবান করে গড়ে তুলতে আমি আমার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা নিয়োজিত করি’।[27]
[চলবে]
[1]. ড. আছেম বিন আব্দুল্লাহ আল-কারয়ূতী, কাওকাবাতুম মিন আইম্মাতিল হুদা ওয়া মাছাবীহিদ দুজা (মদীনা মুনাওয়ারা : ১৪২০ হিঃ/ ২০০০), পৃঃ ২২২।
[2]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ (বেনারস : জামে‘আ সালাফিয়া, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৯ হিঃ/১৯৯৮ খৃঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৯, জীবনী অংশ দ্র.।
[3]. মাসিক ছাওতুল উম্মাহ (আরবী), জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারস, খন্ড ৪০, সংখ্যা ১২, ডিসেম্বর ২০০৮, পৃঃ ১৪।
[4]. মাসিক মুহাদ্দিছ (উর্দূ), জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারস, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭, পৃঃ ২৭৮।
[5]. ঐ, পৃঃ ১১০-১১।
[6]. ছাওতুল উম্মাহ, ডিসেম্বর ’০৮, পৃঃ ১৪; ড. আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ, জুহূদ মুখলিছাহ (বেনারস : জামে‘আ সালাফিয়া, ১৯৮৬), পৃঃ ২৯৩-৯৪।
[7]. মুবারকপুর গ্রামটি আযমগড় যেলার ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং রাজধানী দিল্লী থেকে সাতশ’ (৭০০) কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর আগে সম্রাট হুমায়ূনের শাসনামলে রাজা শাহ সাইয়েদ মুবারক মানেকপুরী (মৃঃ ৯৬৫ হিঃ) নামে জনৈক বুযর্গ ব্যক্তির হাতে এ নগরীর বর্তমান ভিত্তি স্থাপিত হয়। তার নামেই পরবর্তীতে এটি মুবারকপুর রূপে পরিচিত হয়। এর পূর্বে এ স্থানের নাম ছিল কাসেমাবাদ। রেশম শিল্পের জন্য এ নগরীটি অত্যন্ত বিখ্যাত। হিজরী ৮ম শতকের মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৬৮ খৃঃ) তাঁর ভ্রমণকাহিনীর এক জায়গায় এ সম্পর্কে লিখেছেন, وتصنع بها الثياب الرفيعة، ومنها تجلب إلى دهلى وبينهما مسيرة ثمانية عشر يوما. ‘এখানে উন্নতমানের কাপড় তৈরী করা হয় এবং তা দিল্লীতে আমদানী করা হয়। দিল্লী ও এর মাঝে দূরত্ব ১৮ দিনের পথ’ (রিহলাতু ইবনে বতুতা ২/২৫)। প্রাচীনকাল থেকেই মুবারকপুর মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত। নগরীর অধিকাংশ গ্রাম-পাড়া ও রাস্তাগুলো ইসলামী ও আরবী নামে নামকরণকৃত। তিরমিযীর বিশ্ববরেণ্য ভাষ্যকার আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (১২৮৩-১৩৫৩ হিঃ), আব্দুস সালাম মুবারকপুরী, ‘আর-রাহীকুল মাখতূম’ রচয়িতা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (১৯৪২-২০০৬) প্রমুখ মুবারকপুরের উজ্জ্বল নক্ষত্র (আলোচনা দ্রঃ কাযী আতহার মুবারকপুরী, তাযকেরায়ে ওলামায়ে মুবারকপুর (মুম্বাই : রহীমী প্রেস, ১৯৭৪), পৃঃ ১৪-২৩; ছাওতুল উম্মাহ, নভেম্বর ’০৮, পৃঃ ১২-১৩।
[8]. ইমাম খান নওশাহরাবী, তারাজিমে ওলামায়ে হাদীছ হিন্দ (পাকিস্তান : মারকাযী জমঈয়তে তলাবায়ে আহলেহাদীছ, ২য় সংস্করণ, ১৯৮১), পৃঃ ৩২৯; ছাওতুল উম্মাহ, ডিসেম্বর ’০৮, পৃঃ ১৪; মাসিক আল-বালাগ (উর্দূ), মুম্বাই, খন্ড ৪, সংখ্যা ৮, মার্চ ১৯৯৪, পৃঃ ৩৯।
[9]. তাযকেরায়ে ওলামায়ে মুবারকপুর, পৃঃ ১৬৭; মির‘আতুল মাফাতীহ ১/৯।
[10]. তাযকেরায়ে ওলামায়ে মুবারকপুর, পৃঃ ১৬৭; আব্দুস সালাম মুবারকপুরী, সীরাতুল বুখারী (কুয়েত : দারুল ফাতহ, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭), পৃঃ ৪১, পাদটীকা-১৭।
[11]. ‘উসতাযুল আসাতিযাহ’ (أسةاذ الأساةذة) বা ‘শিক্ষককুল শিরোমণি’ খ্যাত হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী আযমগড় যেলার মৌনাথভঞ্জনে ১২৬১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর তিনি স্বপরিবারে গাযীপুরে চলে আসেন। সেযুগের খ্যাতনামা শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা লাভের পর তিনি গাযীপুরের ‘চশমায়ে রহমত’ মাদরাসায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এ মাদরাসায় পাঠদানকালে আহলেহাদীছ ছাত্রদের সাথে হানাফী ফিকহের বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে তাঁর আলোচনা-পর্যালোচনা হ’ত। ফলে তিনি ইলমে হাদীছে অধিক ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দিল্লীতে মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর নিকট চলে যান। সেখানে তিনি তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদীছের জ্ঞানার্জন করে আহলেহাদীছ হয়ে যান (ফালিল্লাহিল হামদ)। দিল্লী থেকে ফিরে এসে নিজ কর্মস্থল ‘চশমায়ে রহমত’ মাদরাসায় স্বীয় পদে পুনর্বহাল হন। একদিন মাগরিবের ছালাতে জোরে আমীন বললে ও রুকূতে যাওয়ার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়ন করলে তাকে ১৩০৫ হিজরীতে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি মাদরাসা আহমাদিয়া, আরাহতে গিয়ে সুদীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ শিক্ষকতা করেন। ১৯১৮ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি লক্ষ্ণৌতে ইন্তেকাল করেন এবং ‘আয়েশ বাগ’ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা বিশের অধিক। ভারতে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। (দ্রঃ তারাজিম, পৃঃ ৩৫৯-৬৬; মুহাম্মাদ উযাইর সালাফী, হায়াতুল মুহাদ্দিছ শামসুল হক ওয়া আ‘মালুহু (বেনারস : জামে‘আ সালাফিয়া, ১৯৭৯), পৃঃ ২৮৫-২৮৯ প্রভৃতি।
[12]. শায়খ হুসাইন বিন মুহসিন আল-আনছারী আল-খাযরাজী আস-সা‘দী আল-ইয়ামানী ওরফে হুসাইন আরব ইয়ামানী ১২৪৫ হিজরীর ১৪ জুমাদাল ঊলা ইয়ামানের ‘হাদীদা’ বন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের জনৈক শায়খের কাছে শিক্ষার হাতেখড়ি হবার পর তিনি ‘আল-মুরাওয়া‘আহ’ গ্রামে গিয়ে ৮ বছর যাবৎ ইলমে দ্বীন হাছিল করেন। ইমাম শাওকানী (১১৭৩-১২৫০ হিঃ) ও মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ বিন নাছের আল-হাযেমী (মৃঃ ১২৮৩ হিঃ) প্রমুখের কাছ থেকেও তিনি হাদীছের সনদ লাভ করেন। ইয়ামানের ‘লাহয়াহ’ (لحية) নগরীতে তিনি কাযীর দায়িত্ব পালন করেন। চার বছর পর তিনি কাযীর পদ ত্যাগ করেন। ১২৭৮ হিজরীতে রাণী সিকান্দার বেগমের রাজত্বকালে তিনি ভূপালে আসেন। রাণী তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং ‘দারুল হাদীছ’-এর শিক্ষক হিসাবে নিয়োগদান করেন। ১/২ বছর পর তিনি ইয়ামানে ফিরে যান। ভূপালের রাণী শাহজাহান বেগমের সময় তিনি স্ব-পরিবারে ভূপালে হিজরত করে তথায় বসতি স্থাপন করেন। দিল্লী ও ভূপালে তাঁর কাছে অনেকেই হাদীছের দরস গ্রহণ করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে মুহাদ্দিছ হিসাবে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে দূর-দূরান্তের ছাত্ররা তার ছাত্রত্ব গ্রহণ করে হাদীছের অমীয় সুধা পান করে। ১৩২৭ হিজরীর ১০ জুমাদাল ঊলা বুধবার ছহীহ বুখারীর ভাষ্য ‘ফাতহুল বারী’ অধ্যয়কালে তিনি ইন্তেকাল করেন (হায়াতুল মুহাদ্দিছ শামসুল হক ওয়া আ‘মালুহু, পৃঃ ২৪৮-৫০)। আবূ দাঊদের ভাষ্যকার, খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম শামসুল হক আযীমাবাদী (১৮৫৭-১৯১১ খৃঃ) তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ছিলেন। হাদীছের দুর্বোধ্য অনেক বিষয় তিনি তার কাছ থেকে জেনে নিতেন।
[13]. সীরাতুল বুখারী, পৃঃ ২২-২৩; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ১৪২; হায়াতুল মুহাদ্দিছ শামসুল হক ওয়া আ‘মালুহু, পৃঃ ২৯৮-৯৯।
[14]. তারাজিম, পৃঃ ৩২৩-২৪।
[15]. তারাজিম, পৃঃ ৩২৩; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ১৪২; সীরাতুল বুখারী, পৃঃ ২৫।
[16]. সীরাতুল বুখারী, পৃঃ ২৮।
[17]. ঐ, পৃঃ ২৮।
[18]. মুহাদ্দিছ, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ’৯৭, পৃঃ ২৬৮-৬৯।
[19]. মুহাম্মাদ নু‘মান বিন আলহাজ আব্দুর রহমান মৌবী আযমী (১২৯৭-১৩৭১ হিঃ) জামে‘আ সালাফিয়া বেনারসের সাবেক রেক্টর ড. মুকতাদা হাসান আযহারীর (১৯৩৯-২০০৯ খৃঃ) নানা। তিনি (নু‘মান) মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর ছাত্র। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ওমরাবাদে অবস্থিত জামে‘আ দারুস সালামে (প্রতিষ্ঠা : ১৯২৪ খৃঃ) তিনি হাদীছের দরস দেন (জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ১৫৪, ২৬৬)।
[20]. ছাওতুল উম্মাহ, ডিসেম্বর ’০৮, পৃঃ ১৬-১৭।
[21]. ঐ, পৃঃ ১৭; মির‘আতুল মাফাতীহ ১/৯; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৯।
[22]. আহমাদুল্লাহ প্রতাপগড়ী ভারতবর্ষের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম ও মুহাদ্দিছ। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড় যেলার মুবারকপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলভী প্রমুখের কাছে দরসে নিযামীর উচ্চতর পাঠ গ্রহণ করেন। ফারেগ হওয়ার পর দিল্লীর হাজী আলীজান মাদরাসায় (প্রতিষ্ঠাকাল : ১৩০৯ হিঃ, বন্ধ : ১৯৪৭) বিশ বছর যাবৎ শিক্ষকতা করেন। ১৩৩৭ হিজরীতে তিনি ‘তাবলীগে সুন্নাহ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। কিন্তু কিছুদিন পর পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। ১৩৩৯ হিঃ/ ১৯২১ সালে দারুল হাদীছ রহমানিয়া প্রতিষ্ঠিত হ’লে তিনি সেখানে যোগদান করে দীর্ঘ সময় তাফসীর, হাদীছ, উছূলে হাদীছ, উছূলে ফিকহ প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করেন। এরপর তিনি দিল্লীর মাদরাসা যাবীদিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৩৬২ হিজরীর ২৯ ছফর/১৯৪৩ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন (দ্র. তারাজিম, পৃঃ ১৬৬-৬৯; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ১৫০-৫১; হায়াতুল মুহাদ্দিছ শামসুল হক ওয়া আ‘মালুহু, পৃঃ ২৬৭-৬৯; আবেদ হাসান রহমানী ও আযীযুর রহমান সালাফী, জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী খিদমাত (বেনারস : জামে‘আ সালাফিয়া, ১৯৮০), পৃঃ ২৩, ২৫-২৬।
[23]. ফকীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, উছূলবিদ হাফেয আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ আ‘যম বিন ফযলুদ্দীন গোন্দলবী পাকিস্তানের গুজরানওয়ালার গোন্দলানওয়ালা গ্রামে ১৩১৫ হিজরী/১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তিনি কুরআন মাজীদ হিফয সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরস-তাদরীসে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পঞ্চাশের অধিকবার ছহীহ বুখারী পড়ান। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। এক সময় তিনি ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ’ পশ্চিম পাকিস্তানের আমীর ছিলেন। তিনি খুবই আল্লাহভীরু বা-আমল মুহাদ্দিছ ছিলেন। জীবনের সুদীর্ঘ ৫০ বছরে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে কোনদিন তাঁর তাকবীরে তাহরীমা ছুটেনি। ১৪ রামাযান ১৪০৫ হিঃ/ ৪ জুন ১৯৮৫ সালে ৯০ বছর বয়সে এই ইলমী মহীরুহ ইন্তেকাল করেন (জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২০১-২০৯; কাওকাবা, পৃঃ ২১-৩৬)।
[24]. তারাজিম, পৃঃ ৩২৯; মির‘আতুল মাফাতীহ, ১/৯; ছাওতুল উম্মাহ, ডিসেম্বর ’০৮, পৃঃ ১৮; জানুয়ারী ’০৯, পৃঃ ১১-১২; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৯-৪০।
[25]. মির‘আতুল মাফাতীহ ১/৯; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৪০।
[26]. মির‘আতুল মাফাতীহ ১/৯-১০; তারাজিম, পৃঃ ৩৩০।
[27]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৯৬।