ভূমিকা :
‘শায়খুল কুল ফিল কুল’ মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর (১৮০৫-১৯০২ খৃঃ) প্রায় সোয়া লক্ষ ছাত্রের মাঝে যারা নিজেদের ইলমী আভা বিকিরণে সদা তৎপর ছিলেন এবং গ্রন্থ রচনা ও হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসারে নিশিদিন অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করেছেন মাওলানা অহীদুয্যামান ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (রিয়াদ, সঊদী আরব) শিক্ষক ড. আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ বলেন,
من مشاهير الهند وكبار تلامذة السيد نذير حسين. قضى حياةه فى نشر السنة النبوية، وله منة عظيمة على أهل الهند حيث قام بةرجمة وشرح كةب السنة إلى الأردية.
‘তিনি ভারতের প্রখ্যাত আলেম এবং সাইয়িদ নাযীর হুসাইনের বড় মাপের ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হাদীছের প্রসারে তিনি তাঁর জীবন ব্যয় করেছেন। ভারতবাসীর ওপর তাঁর বড় অবদান রয়েছে। তিনি উর্দূতে হাদীছের গ্রন্থাবলী অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেন’।
জীবনের প্রথমদিকে তিনি কট্টর হানাফী ছিলেন। কিন্তু কালপরিক্রমায় ছহীহ হাদীছের উজ্জ্বল কিরণমালা মাওলানার আচরিত তাক্বলীদের অন্ধ প্রকোষ্ঠকে আলোকোজ্জ্বল করে তুললে তাঁর বিবেকের বদ্ধ দুয়ার খুলে যায়। এক সময় তিনি আহলেহাদীছ হয়ে যান। হানাফী থাকা অবস্থায় হানাফী মাযহাবের সমর্থনে ‘নূরুল হেদায়া’ লিখলেও আহলেহাদীছ হওয়ার পর হেদায়ার কুরআন ও ছহীহ হাদীছ বিরোধী মাসআলাগুলোকে জনসম্মুখে উন্মীলন করেন তাঁর ‘তানক্বীদুল হেদায়াহ ওয়া তাসদীদুর রিওয়াহ ওয়া ইছলাহুল হেদায়া’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থে। কুতুবে সিত্তাহর উর্দূ অনুবাদ করে তিনি হাদীছ শাস্ত্রের দিগ্বলয়ে দীপ্ত রবির ন্যায় চিরভাস্বর হয়ে আছেন।
জন্ম ও বংশ পরিচিতি :
মাওলানা অহীদুয্যামান ১৭ রজব ১২৬৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৫০ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা মুলতান থেকে লক্ষ্মৌতে হিজরত করেন। তারপর কানপুরে বসতি গাড়েন। তাঁর পূর্ণ বংশপরিক্রমা হ’ল- অহীদুয্যামান বিন মসীহুয্যামান বিন নূর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ ফারূকী মুলতানী হায়দরাবাদী লক্ষ্মৌভী।
শিক্ষা-দীক্ষা :
বাবা মাওলানা মসীহুয্যামান (মৃঃ ১২৯৫ হিজরী, মক্কায়)-এর কাছেই তাঁর দ্বীনী জ্ঞানার্জনের হাতেখড়ি হয়। আট বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বাবার কাছে অর্থসহ কুরআন মাজীদ পড়া শিখেন এবং উর্দূ-ফার্সীর প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী, শায়খ হুসাইন আরব ইয়ামানী (১২৪৫-১৩২৭ হিঃ), মাওলানা মুফতী এনায়েত আহমাদ (ইলমুছ ছীগাহ-এর লেখক), মাওলানা মুহাম্মাদ সালামাতুল্লাহ কানপুরী (আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভীর ছাত্র), মাওলানা মুহাম্মাদ বশীরুদ্দীন কন্নৌজী (শরহে মুসাল্লামুছ ছুবূত এর লেখক), মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল হাই লক্ষ্মৌভী, মাওলানা আব্দুল হক বেনারসী (ইমাম শাওকানী ও শাহ ইসমাঈল শহীদের ছাত্র), মাওলানা মুহাম্মাদ লুতফুল্লাহ আলীগড়ী, শায়খ আহমাদ বিন ঈসা আশ-শারকী, মাওলানা হাফেয আব্দুল আযীয লক্ষ্মৌভী, মাওলানা বদরুদ্দীন মাদানী, মাওলানা ফযলুর রহমান মুরাদাবাদী প্রমুখের কাছে তাফসীর, হাদীছ, ফিকহ প্রভৃতি বিষয় অধ্যয়ন করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি কানপুরের ‘ফয়যে আম’ মাদরাসা থেকে ফারেগ হন।
কর্মজীবন :
১২৮৩ হিঃ/১৮৬৬ খৃষ্টাব্দে বাবা মাওলানা মসীহুয্যামান হায়দরাবাদ সরকারের (দাক্ষিণাত্য, ভারত) অধীনে অহীদুয্যামানের চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন। ৩৪ বছর পর্যন্ত তিনি সেখানে চাকুরি করেন এবং বিভিন্ন পদে সমাসীন হন। হায়দরাবাদ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘ওয়াকার নওয়ায জঙ্গ বাহাদুর’ (وقار نواز جنگ بهادر) উপাধি প্রদান করা হয়।
কুরআন মাজীদ মুখস্থকরণ :
তিনি বাল্যকাল থেকেই প্রচন্ড ধীশক্তির অধিকারী ছিলেন। অধ্যয়নের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল দুর্নিবার। তাই চাকুরিরত অবস্থায় ২৩ বছর বয়সে কুরআন মাজীদ মুখস্থের সাধ মনে জাগে। দেড় বছরে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেন। জীবন-প্রদীপ নিভে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে দু’বার কুরআন খতম দেয়া তাঁর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।
কাব্য-প্রতিভা ও ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন :
কবিতা রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। আরবী-উর্দূ দু’ভাষাতেই তাঁর কবিতা পাওয়া যায়। ১২৯৮ হিজরীতে ৬ মাসে ইংরেজী ভাষায় এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যে, বিভিন্ন মিটিংয়ে ইংরেজীতে বক্তৃতা দিতেন।
হজ্জ আদায় :
তিনি মোট তিনবার (১২৮৭, ১২৯৪ ও ১৩৩২ হিঃ) হজ্জ আদায় করেন। প্রথম দু’বার বাবা মাওলানা মসীহুয্যামান-এর সাথে এবং তৃতীয়বার স্বপরিবারে। ইচ্ছা ছিল হজ্জ শেষে মদীনা মুনাওয়ারায় বসবাস করা। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণদামামা বেজে উঠলে মদীনায় বসবাসের সাধ তাঁর অপূর্ণই থেকে যায়।
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সদস্য :
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৩৩২ হিঃ/১৯১৩ খৃষ্টাব্দে একটি পরিষদ গঠন করা হয়। মাওলানা অহীদুয্যামান এ পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
দেশ ও জাতির খেদমত :
চাকুরি জীবন এবং কুতুবে সিত্তাহর অনুবাদ ও গ্রন্থ রচনার ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নাদওয়াতুল ওলামা, লক্ষ্মৌ, আলীগড় কলেজ (পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়), মাদরাসা ফয়যে আম (কানপুর), আহলেহাদীছ মাদরাসা সমূহের পরিচালনা পরিষদ প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা দিতেন।
কুতুবে সিত্তাহর উর্দূ অনুবাদে ভূপালীর অনুপ্রেরণা :
নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (১৮৩২-৯০) মাওলানা অহীদুয্যামানকে কুতুবে সিত্তাহ (ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ)-এর উর্দূ অনুবাদ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং এর জন্য মাসিক ৫০ রূপী মাসহারা নির্ধারণ করেন। বড় ভাই মাওলানা বদীউয্যামান (১২৫০-১৩০৪ হিঃ) ছোট ভাই অহীদুয্যামানকে লিখিত এক পত্রে বলেন, ‘নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী ১২৯৪ হিজরী থেকে তোমার ও আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন এবং কুতুবে সিত্তাহর অনুবাদের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। একাজে সময় ব্যয়ের জন্য তিনি মাসিক ৫০ রূপী বেতনও নির্ধারণ করেছেন’।
হানাফী থেকে আহলেহাদীছ : জীবনের মোড় পরিবর্তন
মাওলানা জীবনের প্রথম দিকে কট্টর হানাফী ছিলেন। হানাফী থাকা অবস্থায় তিনি শরহে বেকায়ার শরাহ ‘নূরুল হেদায়া’ লিখেন। এর মুখবন্ধে তিনি তাক্বলীদে শাখছী অপরিহার্য মর্মে বিভিন্ন দলীল পেশ করেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের অন্যান্য জায়গায় আহলেহাদীছ মাসলাকের কড়া সমালোচনা করতেও কসুর করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে বড় ভাই মাওলানা বদীউয্যামান (যিনি পাক্কা আহলেহাদীছ ছিলেন)-এর সাথে মতবিনিময়ের ফলে মাযহাবী তাক্বলীদ ছেড়ে ছহীহ দলীলের অনুসরণ করতে শুরু করেন। মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষ্মৌভী (হানাফী) মাওলানা সম্পর্কে লিখেছেন যে, كان شديدا فى التقليد فى بداية أمره ثم رفضه وتحرر واختار مذهب أهل حديث. ‘তিনি প্রথমদিকে কট্টর মুক্বাল্লিদ ছিলেন। অতঃপর তাক্বলীদের বন্ধন মুক্ত হয়ে আহলেহাদীছ মতাদর্শ গ্রহণ করেন’।
মাওলানা অহীদুয্যামান তাঁর বড় ভাইয়ের দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত ছিলেন। বড় ভাই সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘মৌলভী হাজী বদীউয্যামান ১৩১২ হিজরীতে হায়দরাবাদে আনুমানিক ষাট বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং এই শহরেই তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি অতুলনীয় বাগ্মী ছিলেন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠের বক্তৃতার প্রশংসা মাদ্রাজ, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, বাংলা, পাঞ্জাব, রেঙ্গুন (মিয়ানমার) কলকাতা, দিল্লী এবং লক্ষ্মৌর প্রত্যেক শহরে সকলের মুখে মুখে ধ্বনিত হ’ত’।
চরিত্র-মাধুর্য :
মাওলানা অহীদুয্যামান চরিত্রবান, নম্র, বিনয়ী, পরিশ্রমী, কষ্টসহিষ্ণু, অতিথিপরায়ণ, উদার, মিশুক ও রসিক ছিলেন। হক কথা বলতে সামান্যতম দ্বিধা করতেন না। অল্প বয়স থেকেই তাহাজ্জুদগুযার ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ অভ্যাস বজায় ছিল। তিনি স্বীয় রচনাবলীর কোন রয়্যালিটি নিতেন না। বাহাছ-মুনাযারা একেবারে অপসন্দ করতেন।
রচনাবলী :
তাঁর রচনাবলীর সংখ্যা প্রায় ১০০। নিম্নে উল্লেখযোগ্য রচনার তালিকা প্রদান করা হ’ল-
কুরআন মাজীদ : ১. মুওয়ায্যিহাতুল ফুরক্বান (কুরআন মাজীদের উর্দূ অনুবাদ) ২. তাফসীরে ওয়াহীদী ৩. লুগাতুল কুরআন ৪. বিশারাতুল ইখওয়ান বি-ফাযায়িলিল কুরআন ৪. তাববীবুল কুরআন লিযাবতি মাযামীনিল ফুরক্বান।
হাদীছ : ১. তায়সীরুল বারী (বুখারীর সটিকা অনুবাদ) ২. তাসহীলুল কারী (উর্দূতে ছহীহ বুখারীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা গ্রন্থ) ৩. আল-মু‘লিম (সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহ ছহীহ মুসলিমের অনুবাদ) ৪. কাশফুল মুগাত্তা (মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেকের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা) ৫. আল-হুদা আল-মাহমূদ (আবূ দাঊদের অনুবাদ) ৬. রাওযুর রুবা (নাসাঈর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা) ৭. রাফ‘উল আজাজাহ (ইবনু মাজাহ-এর অনুবাদ) ৮. ইশরাকুল আবছার ফী তাখরীজি আহাদীছি নূরিল আনওয়ার (আরবী) ৯. আহসানুল ফাওয়ায়েদ ফী তাখরীজি আহাদীছি শরহিল আক্বায়েদ (আরবী) ১০. আনওয়ারুল লুগাহ ওয়া আসরারুল লুগাহ (হাদীছের দুর্বোধ্য শব্দের ব্যাখ্যা। ২৮ খন্ডে সমাপ্ত)।
ফিক্বহ : ১. নূরুল হেদায়া (শরহে বেকায়ার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা) ২. কানযুল হাকায়িক্ব ফী ফিক্বহি খায়রিল খালায়িক্ব (আরবীতে ফিক্বহুল হাদীছ বিষয়ক গ্রন্থ) ৩. নুযুলুল আবরার মিন ফিক্বহিন নাবিইয়িল মুখতার (আরবী) ৪. হাদিয়াতুল হুদা মিনাল ফিক্বহিল মুহাম্মাদী (আরবী; ৭ খন্ড প্রকাশিত হয়েছে)। প্রথম খন্ড আকবীদা সম্পর্কিত, ২য় খন্ড দলীল সাব্যস্তকরণের পদ্ধতি এবং পরবর্তী চার খন্ড ফিক্বহী মাসায়েল সংক্রান্ত। প্রত্যেক খন্ডের ভিন্ন ভিন্ন নাম। যেমন ৭ম খন্ডের নাম ‘তানক্বীদুল হেদায়াহ ওয়া তাসদীদুর রিওয়াহ ও ইছলাহুল হেদায়া’। এ খন্ডটি ১৩৩৮ হিজরীতে মাওলানার মৃত্যুর দু’মাস পর তদীয় পুত্র মাওলানা আহসানুয্যামানের তত্ত্বাবধানে লক্ষ্মৌর মুজতাবায়ী প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়। ৫. তাশরীহুল হজ্জ ওয়ায যিয়ারাহ (উর্দূ)।
আক্বীদা : ১. আল-ইন্তিহার ফিল ইস্তিওয়া (আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা) ২. আক্বীদায়ে আহলে সুন্নাত (একই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা) ৩. ফাতাওয়া বে-নযীর দর নফিয়ে মিছলে অাঁ-হযরত বাশীর ওয়া নাযীর (উর্দূ) ৪. আল-হাশিয়া আল-ওয়াহীদিয়াহ আলাল হাশিয়া আয-যাহিদিয়াহ।
বিবিধ : ১. রাহে নাজাত (উর্দূ) ২. তাযকেরাতুল ওয়াহীদ (১৩২৭ হিজরী পর্যন্ত আত্মজীবনী) ৩. তাক্বরীরে দিলপযীর হিন্দু-মুসলমান ৪. মাযামীনে সাব‘আ ৫. কাওয়ায়িদে মুহাম্মাদী (উর্দূ) ৬. মাজমূ‘আয়ে কাওয়ানীনে মালী সরকারে নিযাম ওয়া রিপোর্ট লোকাল ফান্ড ৭. তারীখে মামালিকে মাহরূসাহ সরকারে নিযাম হায়দরাবাদ (দাক্ষিণাত্য, ভারত)।
কানযুল উম্মাল-এর শুদ্ধিকরণ :
তিনি ‘কানযুল উম্মাল’ নামক হাদীছ সংকলনের ভুল-ভ্রান্তি যোগ্যতার সাথে সংশোধন করেন।
জীবনের শেষ দিনগুলি ও মৃত্যু :
১৩১৮ হিজরীতে সরকারী চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর দিন-রাত ইবাদত-বন্দেগী এবং অনুবাদ ও গ্রন্থ রচনায় কাটাতে থাকেন। ১৩৩২ হিজরীতে হজ্জ আদায় শেষে দেশে ফিরে এসে হায়দরাবাদের পরিবর্তে মাদ্রাজের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। জীবনের শেষ বছর ১৩৩৭ হিঃ/১৯১৯ খৃষ্টাব্দে হায়দরাবাদ যেলার অকারাবাদে আসেন। এখানেই ৬ শা‘বান ১৩৩৮ হিজরী মোতাবেক ২৬ এপ্রিল ১৯২০ খৃষ্টাব্দে তদীয় পুত্র মুহাম্মাদ মুহসিন ভরা যৌবনে ইন্তেকাল করেন। পুত্রবিয়োগ শোকে মূহ্যমান মাওলানা ১৯ দিন পর ২৫ শা‘বান ১৩৩৮ হিঃ/১৫ মে ১৯২০ সালে ৭০/৭১ বছর বয়সে অকারাবাদে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, মাওলানা অহীদুয্যামান ভারতীয় উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ ছিলেন। সরকারী চাকুরির ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর লেখনীর ঝর্ণাধারা অব্যাহত ছিল। কুরআন মাজীদের উর্দূ অনুবাদ, তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, আক্বায়েদ প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর রচনার সংখ্যা একশ’ ছুঁই ছুঁই। কুতুবে সিত্তাহর উর্দূ অনুবাদ করে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে হাদীছ চর্চার ইতিহাসে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উদার মন নিয়ে কুরআন-হাদীছ গবেষণা করলে তাক্বলীদী ঝঞ্ঝাপীড়িত ব্যক্তিও যে সঠিক পথের দিশা পেতে পারে, মাওলানা অহীদুয্যামান তার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন! আমীন!!
নূরুল ইসলাম