পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব 

সঊদী আরব গমন :

গীবত থেকে বেঁচে থাকা : মুবারকপুরী (রহঃ) সর্বদা গীবত থেকে বেঁচে থাকতেন। তাঁর যবান কখনও কোন ব্যক্তির গীবতের দ্বারা কলুষিত হয়নি। তাঁর যবান দ্বারা উপস্থিত বা অনুপস্থিত কোন ব্যক্তি যেন কোনভাবেই কষ্ট না পায় সেদিকে তিনি পূর্ণমাত্রায় খেয়াল রাখতেন।[1]

হিন্দুকে সহযোগিতা : সীমিত আয় সত্ত্বেও তাঁর দানের হাত কুঞ্চিত নয় বরং প্রশস্ত ছিল। কোন অমুসলিম ব্যক্তিও তাঁর নিকটে আসলে তাকে তিনি অকুণ্ঠচিত্তে সহযোগিতা করতেন। মুবারকপুরীর জামাই মুহাম্মাদ ফারূক আযমী বর্ণনা করেছেন যে, একদিন তিনি মুবারকপুরী (রহঃ)-এর নিকট আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝি সময় অবস্থান করছিলেন। কঠিন গরমের সময়। বিদ্যুৎ ছিল না। মুবারকপুরী (রহঃ) বাড়ির আঙ্গিনায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করছিলেন। ইত্যবসরে এক বিপদগ্রস্ত হিন্দু বলল, ‘মাওলানা ছাহেব বাড়িতে আছেন’? তিনি ‘এসো’ বলে তার প্রশ্নের জবাব দিলেন। সে বাড়িতে প্রবেশ করে আদবের সাথে এক জায়গায় বসে বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। ঐ সময় তিনি উঠে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে এসে চুপিসারে তার হাতে গুঁজে দিলেন। লোকটি চলে যাবার পর তার পরিচয় জানতে চাইলে শুধু বললেন, একজন বিপদগ্রস্ত হিন্দু। এর বেশী কিছু বলতে চাইলেন না।[2]

ইলমে হাদীছে অবদান :

দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় দীর্ঘ বিশ বছর মুবারকপুরী (রহঃ) বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করলেও হাদীছ ছিল তাঁর প্রিয় সাবজেক্ট। এ সুদীর্ঘ সময়ে তিনি ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, তিরমিযী, আবূদাঊদ, মুওয়াত্ত্বা মালেক, বুলূগুল মারাম প্রভৃতি হাদীছগ্রন্থ দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে পাঠ দান করে ইলমে হাদীছের খিদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি জন্মভূমি মুবারকপুরে চলে এসে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। এ সময় হাফেয মুহাম্মাদ যাকারিয়া লায়েলপুরী (মৃঃ ১৯৪৯ খৃঃ) তাঁকে মিশকাতের ব্যাখ্যা রচনার প্রস্তাব দিলে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন। ‘মির‘আতে’র ভূমিকায় এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, إن بعض الإخوان سألنى أن أعلق له شرحا لطيفا على مشكوة المصابيح للشيخ ولى الدين أبى عبد الله محمد بن عبد الله الخطيب العمرى التبريزى، فأجبته إلى سؤاله رجاء المنفعة به. ‘শায়খ অলীউদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-খাতীব আল-উমরী আত-তাবরীযীর মিশকাতুল মাছাবীহ-এর একটি সুন্দর ব্যাখ্যা লেখার জন্য জনৈক ভাই আমাকে অনুরোধ করলে (মুসলিম উম্মাহর) কল্যাণচিন্তায় আমি তার আহবানে সাড়া দেই|[3]

উক্ত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার পর ‘মির‘আত’ রচনা তাঁর জ্ঞানগবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। ফলে নিশিদিন অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে তিনি তাঁর জীবদ্দশায়كتاب المناسك এর শেষ পর্যন্ত ব্যাখ্যা সমাপ্ত করে যেতে সক্ষম হন। এ কাজে মাওলানা মুহাম্মাদ বাকের এর নির্দেশ এবং মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানীর (১৯০৯-১৯৮৭) অনুপ্রেরণা তাঁকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ ও সাহস যুগিয়েছে। এটি ৯ খন্ডে জামে‘আ সালাফিয়া বেনারস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এর ১ম খন্ডটি সর্বপ্রথম মাওলানা ভূজিয়ানীর ‘আল-মাকতাবাতুস সালাফিয়া’ (লাহোর, পাকিস্তান) থেকে প্রকাশিত হয়।[4]

ইতিপূর্বে অনেকেই মিশকাতের ভাষ্য লিখলেও ‘ফিকহুল হাদীছ’ বা হাদীছ ভিত্তিক বিস্তৃত ব্যাখ্যা এটিই প্রথম। অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলীর কারণে গ্রন্থটি আলেম সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। নিমেণ এর বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হ’ল-

১. ব্যাখ্যাকার মুবারকপুরী (রহঃ) প্রত্যেক হাদীছের পৃথক পৃথক নম্বর দিয়েছেন যাতে মিশকাতের সঠিক হাদীছ সংখ্যা সম্পর্কে পাঠক অবগত হতে পারে। পাশাপাশি বন্ধনীর মাঝে প্রত্যেক অনুচ্ছেদের হাদীছের পৃথক নম্বর দিয়েছেন, যাতে তা মূল হাদীছ নম্বরের সাথে মিলে না যায় এবং প্রত্যেক অনুচ্ছেদে সংকলিত হাদীছ সংখ্যা সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়।

২. তিনি প্রত্যেক খন্ডের চারটি করে সূচী তৈরী করেছেন। (ক) প্রথমটি মিশকাতের মূল অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও পরিচ্ছেদ সম্পর্কিত। (খ) দ্বিতীয়টিতে হাদীছ ও তার ভাষ্যের সূচী (অধ্যায়, অনুচ্ছেদ, হাদীছ নম্বর, ভাষ্যের শিরোনাম ও পৃষ্ঠা নম্বর সহ)। (গ) তৃতীয়টিতে যেসব ছাহাবী, তাবেঈন এবং মুহাদ্দিছীনে কেরামের বর্ণনা ও উল্লেখ মিশকাতে রয়েছে তাদের নাম। (ঘ) চতুর্থটিতে আরবী বর্ণমালার ক্রমানুসারে মিশকাতে আলোচিত স্থান সমূহের নাম রয়েছে।

৩. ছাহাবী, তাবেঈন ও অন্যদের জীবনী ও স্থান পরিচিতি প্রয়োজন অনুযায়ী সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ সকল মনীষীর ও স্থানের নাম মিশকাতের প্রথম যে জায়গায় এসেছে, সেখানে তাদের জীবনী ও স্থান পরিচিতি উল্লেখ করা হয়েছে।

৪. সালাফে ছালেহীনের মানহাজ অনুযায়ী হাদীছের বিস্তৃত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে।

৫. হাদীছের বিভিন্ন ভাষ্য ও টীকা-টিপ্পনীতে আহলেহাদীছদের উপর মুকাল্লিদদের আরোপিত ভ্রান্ত অপবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে।

৬. মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলোতে ফকীহগণের মতামত তাদের দলীল সহ উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে সাথে দলীলের আলোকে যে মতটি ব্যাখ্যাকারের নিকট অধিক গ্রহণীয় তা উল্লেখ করতঃ অন্যদের পেশকৃত দলীলগুলোর জবাব দেয়া হয়েছে।

৭. বিস্তারিত আলোচনা করলে পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক হ’তে পারে ভেবে কতিপয় মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা আলোচনা করার সময় হাদীছের বিভিন্ন গ্রন্থ, ভাষ্য ও ফিকহের গ্রন্থাবলীর নাম পৃষ্ঠা সহ উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীদের জন্য সহজ হয়।

৮. মিশকাতের সংকলক প্রথম ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ছহীহায়ন (বুখারী ও মুসলিম) বা এর যে কোন একটির যে সকল হাদীছ উল্লেখ করেছেন, সেগুলো আর কোন্ কোন্ মুহাদ্দিছ কোথায় সংকলন করেছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মিশকাতের ‘ঈমান’ অধ্যায়ের প্রথম হাদীছটির (মুসলিম) ব্যাখ্যা শেষে ভাষ্যকার বলেন, وحديث عمر هذا أخرجه أيضا أحمد وأبو داود فى السنة والترمذى والنسائى فى الإيمان وابن ماجه فى السنة وابن خزيمة وأبو عوانة وابن حبان وغيرهم، وفى الباب عن غير واحد من الصحابة. ‘ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এই হাদীছটি অনুরূপভাবে ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ সুন্নাহ অধ্যায়ে, তিরমিযী ও নাসাঈ ঈমান অধ্যায়ে, ইবনু মাজাহ সুন্নাহ অধ্যায়ে, ইবনু খুযায়মা, আবূ আওয়ানা, ইবনু হিববান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে একাধিক ছাহাবীর বর্ণনা রয়েছে’|[5]

৯. দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে সংকলক কর্তৃক বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্য যে সকল হাদীছ উদ্ধৃত হয়েছে, সেগুলোরও তাখরীজ করেছেন তথা আর কে কে সে হাদীছগুলো সংকলন করেছেন তা উল্লেখ করেছেন।

১০. মিশকাত প্রণেতা যে সকল হাদীছের সূত্র উল্লেখ না করে ফাঁকা রেখে দিয়েছিলেন, ব্যাখ্যাকার সেগুলোর সূত্র উল্লেখ করেছেন।

১১. ছহীহায়ন ব্যতীত মিশকাতে সংকলিত অন্য হাদীছগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি (الصحة والضعف) নির্ণয় করেছেন। এক্ষেত্রে এ বিষয়ে বরেণ্য হাদীছ সমালোচকদের বক্তব্যও উদ্ধৃত করেছেন।

১২. ছহীহায়ন বা এর যেকোন একটির বর্ণিত হাদীছ যদি দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে এবং অন্য হাদীছগুলো প্রথম অনুচ্ছেদে মিশকাত প্রণেতা সংকলন করে থাকেন, তাহ’লে ব্যাখ্যাকার সেই ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন।

১৩. ছাহেবে মিশকাত কোন হাদীছ সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করে থাকলে ব্যাখ্যাকার পূর্ণাঙ্গ হাদীছটি উল্লেখ করেছেন।

১৪. বুখারী-মুসলিম ছাড়া যে সকল হাদীছ মিশকাতে সংকলন করা হয়েছে সেগুলোর সমর্থনে অন্যান্য হাদীছ ও আছার উল্লেখ করেছেন এবং সেগুলোর মান নির্ণয় করেছেন।

১৫. শাব্দিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি কোন শব্দের একাধিক পঠনরীতি থাকলে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِيْنَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلىَ جُحْرِهَا. ‘ঈমান ঐভাবে মদীনায় ফিরে আসবে যেভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে’।[6]

উক্ত হাদীছে উল্লেখিত لَيَأْرِزُ শব্দের পঠনরীতি উল্লেখ করতে গিয়ে ব্যাখ্যাকার বলেন, بكسر الراء عند الأكثر، ويروى بالفتح، وحكى بالضم، أى يأوى وينضم، وينقبض ويلتجئ. ‘অধিকাংশের মতে ‘রা’ বর্ণে যের দিয়ে। যবর দিয়েও বর্ণিত আছে। পেশ দ্বারাও কথিত আছে। অর্থাৎ আশ্রয় নিবে, মিলিত হবে এবং গুটিয়ে আসবে’।[7]

১৬. নাহবী বা ব্যাকরণগত আলোচনাও এতে স্থান পেয়েছে। যেমন- كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُّحَدِّثَ بِكُلِّ سَمِعَ. ‘কোন ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়’।[8] এ হাদীছের ব্যাকরণগত দিক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, قوله (كفى بالمرء) هو مفعول (كفى) و(الباء) زائدة، و(كذبا) تمييز، و(أن يحدث) فاعل (كفى). ‘রাসূলুললাহ (ছাঃ)-এর বাণী : كفى بالمرء এর المرء শব্দটি كفى ক্রিয়ার مفعول বা কর্ম। بالمرء এর (ب) অব্যয়টি অতিরিক্ত। كذبا শব্দটি تمييز হয়েছে। كفى- أن يحدث ক্রিয়ার فاعل বা কর্তা’।[9]

১৭. হাদীছে উল্লেখিত আল্লাহর গুণবাচক শব্দের ব্যাখ্যায় সালাফে ছালেহীনের মানহাজ অনুসরণ করা হয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يَدُ اللهِ مَلْأَى... ‘আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ...’।[10] এ হাদীছে উল্লেখিত يد শব্দের ব্যাখ্যায় মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,الواجب فى هذا اللفظ وفى أمثاله الإيمان بما جاء فى الحديث و التسليم وترك التصرف فيه للعقل، وهو مذهب السلف. ‘ يد ও অনুরূপ শব্দের ক্ষেত্রে হাদীছে যেভাবে এসেছে সেভাবে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া এবং মস্তিষ্কপ্রসূত ব্যাখ্যা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। এটিই সালাফে ছালেহীনের মাযহাব’।[11] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ قُلُوْبَ بَنِىْ آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ كَيْفَ يَشَاءُ. ‘বনু আদমের অন্তর সমূহ আল্লাহর আঙ্গুল সমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি অন্তরের ন্যায় অবস্থিত। তিনি উহাকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঘুরিয়ে থাকেন’।[12] এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ভাষ্যকার বলেন, هذا من أحاديث الصفات التى نؤمن بها ونعتقد أنها حق من غير تعرض لتأويل ولا لمعرفة المعنى، فالإيمان بها فرض والامتناع عن الخوض فيها واجب، فالمهتدى من سلك فيها طريق التسليم، والخائض فيها زائغ، والمنكر معطل، والمكيف مشبه، قال تعالى : لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْئٌ. ‘এটি আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কিত হাদীছ, যার প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখি যে, কোন প্রকার ব্যাখ্যার অবকাশ বা অর্থোদ্ধার ছাড়াই এটি সত্য। এর প্রতি ঈমান আনা ফরয এবং এ ব্যাপারে আলোচনায় প্রবৃত্ত না হওয়া ওয়াজিব। যে এ ব্যাপারে মেনে নেয়ার পথ অবলম্বন করবে সে হেদায়াতপ্রাপ্ত, আলোচনায় নিমগ্ন ব্যক্তি বক্র হৃদয়ের অধিকারী, অস্বীকারকারী নির্গুণবাদী এবং আকৃতি সাব্যস্তকারী সাদৃশ্যবাদী। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তার মতো কিছুই নেই’ (শূরা ৪২/১১)[13]

১৮. পরস্পর বিরোধী হাদীছগুলোর সুষ্ঠু সমাধান পেশ করা হয়েছে।

১৯. হাদীছের শব্দাবলী সংকলনের ক্ষেত্রে সংকলকের পক্ষ থেকে কোন ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হ’লে সেদিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতঃ ব্যাখ্যাকার তা ঠিক করে দিয়েছেন।

এ ভাষ্যটি সম্পর্কে জামে‘আ সালাফিয়া বেনারসের সাবেক রেক্টর ড. মুক্তাদা হাসান আযহারী বলেন, والحق أن هذا الشرح رفع مكانة علماء الهند بين علماء الحديث فى العالم وفتح أمامهم طريقا نافعا ومنهجا متميزا لدراسة الحديث النبوى الشريف وللاستنباط منه. ‘বস্ত্তত এ ব্যাখ্যাগ্রন্থটি বিশ্বের মুহাদ্দিছদের মাঝে ভারতীয় আলেমদের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে এবং তাদের সামনে হাদীছে নববী অধ্যয়ন-পর্যালোচনা ও তা থেকে মাসআলা ইস্তিম্বাতের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ পথ ও স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পদ্ধতির দ্বার উন্মোচন করেছে’।[14]

মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী বলেন, ‘এই গ্রন্থটি আরব বিশ্বে এক অনারব ভারতীয় মুহাদ্দিছের ইলমী মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলমে হাদীছ নিয়ে গবেষণাকারীদের জন্য বর্তমানে এটি অধ্যয়ন যরূরী গণ্য হয়ে গেছে’।[15]

আবুল হাসান নাদভী হানাফী বলেন, ولعلماء الهند فى هذا العصر مؤلفات جليلة فى فنون الحديث وشروح لأمهات كتبه تلقاها العلماء بالقبول، منها عون المعبود فى شرح سنن أبى داود .... و تحفة الأحوذى فى شرح سنن الترمذى للعلامة عبد الرحمن المباركفورى ... و مرعاة المفاتيح فى شرح مشكاة المصابيح لشيخ الحديث مولانا عبيد الله المباركفورى. ‘এ যুগে ইলমে হাদীছের বিভিন্ন বিষয়ে এবং হাদীছের উৎস গ্রন্থগুলির ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় ওলামায়ে কেরামের গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলী রয়েছে, যেগুলোকে ওলামায়ে কেরাম সানন্দে গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে সুনানে আবূদাঊদের ভাষ্য ‘আওনুল মা‘বূদ’, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রচিত সুনানে তিরমিযীর ভাষ্য ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ এবং শায়খুল হাদীছ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রচিত ‘মিশকাতুল মাছাবীহ’-এর ভাষ্য ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’ অন্যতম’।[16]

মাওলানা যিয়াউদ্দীন ইছলাহী হানাফী বলেন, ‘এই ব্যাখ্যাগ্রন্থে পূর্ববর্তী অধিকাংশ ভাষ্যের সারাংশ চলে এসেছে। যোগ্য ব্যাখ্যাকার হাদীছ সমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে সেগুলোর মর্ম যথাযথভাবে সুস্পষ্ট করেছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে মুহাদ্দিছগণের প্রতি অপবাদ আরোপকারী, হাদীছ অস্বীকারকারী এবং হাদীছ থেকে ভুল মাসআলা ইস্তিম্বাতকারীদের জবাব দিয়ে তাদের স্ববিরোধিতা ও ত্রুটি প্রকাশ করা হয়েছে।[17]

মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী বলেন, يعد شرحا عديم النظر غير مسبوق به بما يمتاز به من الأوصاف والخصائص. ‘অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে এটিকে অতুলনীয়- অভূতপূর্ব শরাহ হিসাবে গণ্য করা হয়’। তিনি আরো বলেন, وإن هذا الكتاب لايفى بحاجة المرقاة واللمعات فحسب بل يغنى عن كثير من الكتب فى باب تخريج الأحاديث وتنقيحها، إن شاء الله. ‘ইনশাআল্লাহ এই গ্রন্থটি মিরকাত ও লুম‘আত এর প্রয়োজনই কেবল পূরণ করবে তা নয়; বরং হাদীছের তাখরীজ ও শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ে অনেক বই থেকে অমুখাপেক্ষী করে দিবে’।[18]

মুবারকপুরীর পুত্র মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, ولوقلنا : إن الأمور التى راعاها المؤلف فى هذا الشرح الجليل لا توجد مجتمعة فى شرح آخر من شروح المشكاة لم يكن فيه شيئ من المبالغة أصلا. ‘যদি আমরা বলি, এই খ্যাতিমান ভাষ্যগ্রন্থে যে বিষয়গুলোর প্রতি লেখক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়েছেন, মিশকাতের অন্যান্য ভাষ্যে সেগুলো একত্রিতভাবে পরিদৃষ্ট হবে না, তাহ’লে অতিরঞ্জন করা হবে না’।[19]

ফৎওয়া লিখন :

দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় শিক্ষকতা করার সময় মুবারকপুরী (রহঃ)-এর বিদ্যাবত্তার খ্যাতি দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই তিনি ফৎওয়া লেখার খিদমত আঞ্জাম দিতে থাকেন।[20] কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ফৎওয়া প্রদানের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন তাঁর কাছে এসে বিভিন্ন বিষয়ে ফৎওয়া জিজ্ঞেস করত। তিনি সেগুলির দলীলভিত্তিক উত্তর প্রদান করতেন। এ কারণে আহলেহাদীছ ছাড়াও অন্যান্য মাযহাবের লোকেরা তাঁর কাছ থেকে ফৎওয়া জেনে নিতেন ও তদনুযায়ী আমল করতেন। তাঁর অনেক ফৎওয়া ‘মুহাদ্দিছ’, ‘মিছবাহ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তদীয় পুত্র মাওলানা আব্দুর রহমান তাঁর ফৎওয়াগুলো বৃহৎ দু’খন্ডে সংকলন করেছেন। এগুলো মাত্র কয়েক বছরের ফৎওয়া। যদি তাঁর সব ফৎওয়া একত্রে সংকলন করা হয় তাহ’লে কয়েক খন্ডের রূপ পরিগ্রহ করবে।[21]

অন্যান্য রচনাবলী :

‘মির‘আত’ ছাড়া তাঁর আরো দু’টি গ্রন্থের নাম জানা যায়। ১. আশ-শির‘আতু ফী বায়ানে মাহাল্লে আযানে খুতবাতিল জুম‘আ : এতে তিনি জুম‘আর দিনে মসজিদের কোথায় আযান দিতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ২. মাসআলাতুত তামীন ওয়াল ব্যাংক। এ দু’টি গ্রন্থই উর্দূ ভাষায় রচিত।[22]

মৃত্যু :

আহলেহাদীছ জামা‘আতের দৃপ্ত নকীব, আল্লাহভীরু এই প্রতিভার জীবনপ্রদীপ ২২/৭/১৪১৪ হিজরী বুধবার মোতাবেক ৫/১/১৯৯৪ তারিখে ৮৭ বছর বয়সে ভোর ৬-টার সময় নিভে যায়।[23]

ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে মুবারকপুরী :

১. ড. মুক্তাদা হাসান আযহারী বলেন, كان علما من أعلام المحدثين، يمتاز بذاكرت قويت وذهن ثاقب وبصيرت نافذت وقوت نادرت للاستنباط والتخريج وطريقت فريدت فى الجمع والتطبيق، عاش للعلم والتحقيق، وبذل فى سبيل خدمة السنة النبوية الشريفة كل ما آتاه الله من نعمة القوة والصحة، وضرب مثلا رائعا للتفانى فى سبيل الدين والعلم، ولإيثار اللذة العلمية على الراحة الجسمية. ‘তিনি খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ ছিলেন। প্রখর মেধা ও স্মৃতিশক্তি, জাগ্রত জ্ঞান, মাসআলা ইস্তিম্বাত ও তাখরীজের বিরল ক্ষমতা, সংকলন ও (পরস্পর বিরোধী হাদীছের মধ্যে) সমন্বয়ের অনন্য পদ্ধতি প্রভৃতি গুণে তিনি গুণান্বিত ছিলেন। ইলম ও তাহক্বীকের জন্য তিনি বেঁচে ছিলেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি-সামর্থ্যকে তিনি সুন্নাতে নববীর খিদমতে ব্যয় করেছিলেন। দ্বীন ও ইলমের জন্য আত্মনিবেদন করা এবং শারীরিক বিশ্রামের উপর জ্ঞান আহরণের মজাকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন’।[24]

২. মুহাম্মাদ বিন সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ বলেন, أحد كبار علماء الهند ومحدثيها، بل لا ثانى له فى إقليم الهند. ‘মুবারকপুরী ভারতের একজন বড় মাপের আলেম ও মুহাদ্দিছ। বরং ভারতীয় উপমহাদেশে তার সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই’।[25]

৩. ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব তাঁর সাথে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রথমেই তিনি আমার গবেষণার বিষয়বস্ত্ত শুনে বিস্ময় প্রকাশ করলেন ও সফলতার জন্য দো‘আ করলেন। বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর উপরে ডক্টরেট করার নিবন্ধন দিয়েছে। অধিকন্তু আমি এজন্য সরকারী বৃত্তি নিয়ে গেছি, এটাই হ’ল তাঁর নিকটে বিস্ময়ের বস্ত্ত। কারণ ভারতে এটা স্রেফ কল্পনার বিষয়। তাছাড়া মুবারকপুর শহরেই আহলেহাদীছ, দেউবন্দী, ব্রেলভী দ্বন্দ্ব চরমে। কারু সাথে কারু সালাম-কালাম পর্যন্ত নেই। অথচ বাংলাদেশ সে তুলনায় কত উদার! আমি তাঁর এই মনোভাবে খুশী হ’লাম। ঐ সময় বাংলাদেশে দলবদ্ধ মুনাজাত নিয়ে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র সাথে বিরোধীদের দ্বন্দ্ব চরমে ছিল। বিষয়টি অনেক পূর্বেই মীমাংসিত। কিন্তু ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ সাহস করে এটা প্রথম শুরু করে এবং শবেবরাত, মীলাদ, কুলখানি-চেহলাম, মহররম, সাহারীর আযানের বদলে লোক জাগানোর নামে ঢোল-বাদ্য সহ মিছিল ইত্যাদি বিদ‘আতী রেওয়াজ সমূহের সাথে দলবদ্ধ মুনাজাতের বিদ‘আতী প্রথার বিরুদ্ধেও তারা প্রচারণা চালায়। তাতে ঘরে-বাইরে তাদের ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হ’তে হয়। বর্তমানে বিরোধীরা চুপসে গেছে এবং তাদের অনেকে সংশোধিত হয়েছেন। কেবল হঠকারী কিছু লোক মাঝে-মধ্যে শূন্যে চ্যালেঞ্জের গুলি ছুঁড়ে সান্ত্বনা তালাশ করে মাত্র। যাই হোক আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মুহাদ্দিছসুলভ ভঙ্গিতে সুন্দরভাবে তিনি ইলমী আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির অসারতা তুলে ধরেন। আমি মুনাজাতের পক্ষে যত যুক্তি পেশ করেছি, উনি হাদীছ দিয়ে তার জবাব দিয়েছেন। হাদীছের সামনে যুক্তি চলে না। অবশেষে আমি চুপ হয়েছি। বলা চলে যে, এটা ছিল রীতিমত একটা দরসে হাদীছের অনুষ্ঠান। হুঁশিয়ার ছাত্র যেমন শিক্ষককে প্রশ্নবানে মাতিয়ে রাখে, অনুষ্ঠানটি ছিল অনেকটা সেইরূপ। আমার প্রশ্ন ও যুক্তিতর্কে তিনি মোটেই বিরক্ত হননি। বরং খুশী হয়ে দো‘আ করলেন এবং প্রশংসামূলক অনেক কথা বললেন। অবশেষে আমি বাংলাদেশে আমাদের সাংগঠনিক দাওয়াতের মাধ্যমে সংস্কার তৎপরতা তুলে ধরলে তিনি যারপর নেই আনন্দিত হ’লেন এবং বললেন, কেবল লেখনী ও উপদেশ দিয়েই সমাজ সংশোধন সম্ভব নয়। বরং প্রয়োজন জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা। এজন্যই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, يَدُ اللهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ. ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে’।[26] আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিজে সে পথের দিশারী ছিলেন। তিনি বললেন, আজকাল আলেমদের অধিকাংশ কেবল মাসআলা-মাসায়েল-এর খুঁটিনাটি বিতর্ক নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ঝুঁকি নেওয়ার ভয়ে তারা সমাজ সংস্কার প্রচেষ্টা থেকে সর্বদা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন’।

অতঃপর তিনি আমাকে বিশেষভাবে যে নছীহত করেন তা এই যে, বিরোধীদের জওয়াবে কেবল ছহীহ হাদীছ বলে চুপ থাকবেন। অতঃপর ওদের এড়িয়ে চলবেন। মিথ্যা একদিন সত্যের কাছে পরাজিত হবেই। বলা বাহুল্য, আমার মরহূম পিতার উপদেশও ছিল অনুরূপ। মিথ্যাবাদীরা দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে যেভাবে ঢালাও মিথ্যাচার করেছে। অবশেষে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করেছে। জেল-যুলুমে নাজেহাল করেছে। কিন্তু অবশেষে সত্য বিকশিত হয়েছে। মিথ্যার ধ্বজাধারীরা যত যুলুম করেছে, অজানা সত্যসেবীরা তত এগিয়ে এসেছে। এটাই সম্ভবতঃ আল্লাহর চিরন্তন বিধান। আল্লামা মুবারকপুরীর সে রাতের উপদেশ আমরা শিরোধার্য করে নিয়েছিলাম। আজও সেই নীতির উপর দৃঢ় আছি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন সেভাবে থাকতে পারি, আল্লাহর নিকট সেই তাওফীক প্রার্থনা করি।[27]

মুবারকপুরীর জামাই মুহাম্মাদ ফারূক আযমী বলেন, ‘তিনি আহলেহাদীছ জামা‘আতের মধ্যমণি ও সম্মানিত আলেম ছিলেন। কিন্তু তাঁর জ্ঞান, শ্রেষ্ঠত্ব, তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা সবার জন্য প্রবাহমান প্রস্রবণ ছিল। ব্রেলভী, দেওবন্দী, শী‘আ সবাই তার পান্ডিত্য, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং উত্তম চরিত্রের শুধু স্বীকৃতি প্রদানকারীই ছিল না; বরং ভক্তও ছিল। অনেক মাসআলায় তারা তাঁর কাছে ফৎওয়া জিজ্ঞেস করত এবং তাঁর প্রদত্ত ফৎওয়া অনুযায়ী আমল করত’।[28]

৪. ড. আকবর রহমানী বলেন, ‘ভারতের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ফকীহ ও যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরী আজ দুনিয়াতে বেঁচে নেই, কিন্তু তাঁর ইলমী কর্মকান্ড সর্বদা তাঁর কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়’।[29]

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায়, আল্লামা মুবারকপুরী (রহঃ) ‘শেষনবীর সত্যিকারের ওয়ারেছ একজন কথা ও কর্মের আপাদমস্তক আহলেহাদীছ বিদ্বান’ ছিলেন। তিনি ইলমে হাদীছের খিদমতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। হাদীছের মণি-মুক্তা আহরণ ও বিতরণ হয়ে উঠেছিল তাঁর জ্ঞানগবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। সুনাম-সুখ্যাতি ও অর্থ-বিত্ত নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ছিল তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, لا أعلم علما أفضل من علم الحديث لمن أراد به وجه الله تعالى. ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য ইলমে হাদীছের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন ইলম আছে বলে আমার জানা নেই’।[30]

‘মিশকাতুল মাছাবীহ’-এর ভাষ্য ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’ রচনা করে ইলমে হাদীছে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয়। ‘ফিকহুল হাদীছ’ ভিত্তিক এ ভাষ্যটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ায় আলেম সমাজে সাদরে গৃহীত হয়। যতদিন হাদীছ চর্চা অব্যাহত থাকবে ততদিন তাঁর স্মৃতি আমাদের মাঝে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে। আর- রামাহুরমুযী (রহঃ) বলেন, وكفى بالمحدث شرفا أن يكون إسمه مقرونا بإسم النبي، وذكره متصلا بذكره، وذكر أهل بيته وأصحابه. ‘মুহাদ্দিছের এ মর্যাদাই যথেষ্ট যে, তার নামটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামের সাথে মিলিত থাকবে এবং তার স্মৃতি রাসূল (ছাঃ), আহলে বায়ত ও তাঁর ছাহাবীগণের স্মৃতির সাথে জাগরুক থাকবে’।[31] ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর মুখমন্ডলকে উজ্জবল করুন[32] এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমীন!!


[1]. আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৬

[2]. ঐ, পৃঃ ৩৫

[3]. মির‘আত ১/১

[4]. মির‘আত ১/৭, ১০, ৯/৩৮৬; তারজুমানুল হাদীছ, ফয়ছালাবাদ, পাকিস্তান, খন্ড ৩১, সংখ্যা ১২, ডিসেম্বর ’৯৮, পৃঃ ৪৩

[5]. মির‘আত ১/৪৩

[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬০ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ

[7]. মির‘আত ১/২৫৬

[8]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৬

[9]. মির‘আত, ১/২৫৩

[10]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৯২

[11]. মির‘আত ১/১৭৯

[12]. মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯

[13]. মির‘আত ১/১৭৪-৭৫

[14]. ঐ, ১ম খন্ড, ভূমিকা দ্র.

[15]. আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৪০

[16]. আবুল হাসান আলী নাদভী, আল-মুসলিমূনা ফিল হিন্দ (লক্ষ্ণৌ : নাদওয়াতুল ওলামা, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৭ হিঃ/১৯৮৭ খৃঃ), পৃঃ ৪১

[17]. তারজুমানুল হাদীছ, ডিসেম্বর ’৯৮, পৃঃ ৪২

[18]. মির‘আত ১/৮

[19]. ঐ, ১/১১

[20]. মির‘আত ১/১০; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৪০

[21]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৯; মির‘আত ১/১০; আল- বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৪, ৪২

[22]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৯; মির‘আত ১/১০

[23]. সীরাতুল বুখারী, পৃঃ ২৫; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৭-৩৮

[24]. মির‘আত, ভূমিকা দ্র.

[25]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৮

[26]. তিরমিযী, ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৬৫

[27]. তথ্য : ঐ, তাং- ১২/০৮/২০১০ইং

[28]. আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৪

[29]. ঐ, পৃঃ ৩৮, ৪২

[30]. নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী, আল-হিত্তাহ বি-যিকরিছ ছিহাহ আস-সিত্তাহ (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৮৫), পৃঃ ৩৮

[31]. মুহাম্মাদ মুহিববুদ্দীন আবূ যায়দ, খাছায়িছু আহলিল হাদীছ ওয়াস সুন্নাহ (মিসর : দারু ইবনিল জাওযী, ১৪২৬/২০০৫), পৃঃ ৪৭

[32]. রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, نَضَّرَ اللهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِىْ فَحَفِظَهَا وَوَعَاهَا وَأَدَّاهَا. ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কথা শুনেছে। অতঃপর তা যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছে, রক্ষা করেছে এবং অন্যের নিকটে পৌঁছিয়ে দিয়েছে’। দ্রঃ শাফেঈ, আর-রিসালাহ, পৃঃ ১০৬; মুসনাদে শাফেঈ, পৃঃ ৮২; আল-বায়হাক্বী, আল-মাদখাল; মিশকাত হা/২২৮, মির‘আত ১/৩২৮, হাদীছ ছহীহ।






শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আরও
আরও
.