১. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,تَفَقَّدُوا الْحَلَاوَةَ فِي ثَلَاثٍ: فِي الصَّلَاةِ، وَفِي الْقُرْآنِ، وَفِي الذِّكْرِ، فَإِنْ وَجَدْتُمُوْهَا فَامْضُوا وَأَبْشِرُوا، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوْهَا فَاعْلَمْ أَنَّ بَابَكَ مُغْلَقٌ، ‘তোমরা তিনটি বিষয়ে সুমিষ্টতা তালাশ কর : ছালাতে, কুরআনে এবং যিক্রে। যদি এই তিনটি বিষয়ে মিষ্টতা খুঁজে পাও, তবে এগুলো অব্যাহত রাখো এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর যদি মিষ্টতা না পাও, তবে জেনে রেখ তোমার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে’।[1]

২. ইবনু কুদামা মাক্বদেসী (রহঃ) বলেন,فَإِنَّ التَّدَبُّرَ هُوَ المَقْصُودُ مِنَ القِرَاءَةِ، وَإِنْ لَمْ يَحْصُلِ التَّدَبُّرُ إِلَّا بِتَرْدَادِ الآيَةِ، فَلْيُرَدِّدْهَا، ‘কুরআন পাঠের মূল উদ্দেশ্য হ’ল অনুধাবন। যদি একটা আয়াত বারংবার তেলাওয়াত করা ছাড়া অনুধাবন করা সম্ভব না হয়, তাহ’লে পাঠক আয়াতটি বারবার তেলাওয়াত করবে’।[2]

৩. ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহ) বলেন,فَإِنَّ الإِنسَانَ إِذَا قَرَأَ القُرآنَ وَتَدَبَّرَهُ كَانَ ذَلِكَ مِنْ أَقْوَى الأَسْبَابِ المَانِعَةِ لَهُ مِنَ المَعَاصِي، ‘মানুষ যখন কুরআন পাঠ করে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, তখন সেই তেলাওয়াত হয়ে যায় তার জন্য পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষাবূহ্য’।[3]

৪. হাসান ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন,‌مَنْ ‌لَمْ ‌يَرْدَعْهُ ‌الْقُرْآنُ ‌وَالْمَوْتُ، ثُمَّ تَنَاطَحَتِ الْجِبَالُ بَيْنَ يَدَيْهِ، لَمْ يَرْتَدِعْ، ‘মৃত্যুর স্মরণ ও কুরআন যাকে (পাপ থেকে) নিবৃত্ত রাখতে পারবে না, তার সামনে পাহাড়গুলো পরস্পর ধাক্কা লাগলেও সে আর নিবৃত্ত হবে না’।[4]

৫. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,‌تِلاَوَةُ ‌الْقُرْآنِ ‌تَعْمَلُ ‌فِي ‌أَمْرَاضِ ‌الْفُؤَادِ مَا يَعْمَلُهُ الْعَسَلُ فِي عِلَلِ الأَجْسَادِ، ‘অন্তরের রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে কুরআন তেলাওয়াত সেইভাবে কাজ করে, যেভাবে শরীরের রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে মধু কাজ করে’।[5]

৬. ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, وَمِنْ حُرْمَتِهِ (القرآن) أَلَّا يُخَلِّيَ يَوْمًا مِنْ أَيَّامِهِ مِنَ النَّظَرِ فِي الْمُصْحَفِ مَرَّةً، ‘কুরআনের প্রতি সম্মানের বহিঃপ্রকাশ এভাবে হবে যে, মুসলিম ব্যক্তি তার জীবনের প্রতিটা দিন একবার হ’লেও মুছহাফ খুলে তাতে চোখ বুলাবে (অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া এক দিনও অতিবাহিত করবে না)’।[6]

৭. ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, مَنْ تَدَبَّرَ القُرْآنَ طَالِبًا لِلْهُدَى مِنْهُ تَبَيَّنَ لَهُ طَرِيقُ الحَقِّ، ‘যে ব্যক্তি হেদায়াত লাভের প্রত্যাশায় কুরআন নিয়ে চিন্তা করে, তার সামনের হকের পথ সুস্পষ্ট হয়ে যায়’।[7]

৮. ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন,يُسْتَحَبُّ البُكَاءُ مَعَ القِرَاءَةِ وَعِندَهَا، وَطَرِيْقُ تَحْصِيلِهِ أَنْ يُحْضِرَ قَلْبَهُ الحُزْنَ وَالخَوْفَ بِتَأَمُّلِ مَا فِيهِ مِنَ التَّهْدِيْدِ وَالوَعِيدِ الشَّدِيْدِ وَالوَثَائِقِ وَالعُهُوْدِ، ثُمَّ يَنْظُرَ تَقْصِيرَهُ فِي ذَلِكَ، فَإِنْ لَّمْ يُحْضِرْهُ حُزْنٌ، فَلْيَبْكِ عَلَى فَقْدِ ذَلِكَ، وَإِنَّهُ مِنْ أَعْظَمِ المَصَائِبِ۔ ‘কুরআন পাঠের সময় ক্রন্দন করা মুস্তাহাব। আর এটা অর্জন করার উপায় হচ্ছে- কুরআনে বর্ণিত ভীতিপ্রদর্শন, কঠিন শাস্তির হুমকি, প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার সমূহের কথা চিন্তা করে অন্তরে দুঃখ ও দুশ্চিন্তা নিয়ে আসা। অতঃপর এ ব্যাপারে নিজের অক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। যদি মনে দুঃখ সঞ্চার না হয়, তবে এর (অনুধাবনের নে‘মত) হারানোর কারণে সে ক্রন্দন করবে। কেননা কুরআন বুঝতে না পারা সবচেয়ে বড় বিপদ’।[8]

৯. ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, فَإِنَّ الَّذِي يُدَاوِمُ عَلَى ذَلِكَ (القُرْآنِ) يَذِلُّ لَهُ لِسَانُهُ وَيَسْهُلُ عَلَيْهِ قِرَاءَتُهُ، فَإِذَا هَجَرَهُ ثَقُلَتْ عَلَيْهِ القِرَاءَةُ وَشَقَّتْ عَلَيْهِ، ‘যে ব্যক্তি এই কুরআন নিয়মিত তেলাওয়াত করবে, এর জন্য তার জিহবা নমনীয় হবে এবং তেলাওয়াত তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর যখন সে কুরআন পরিত্যাগ করবে, তখন এর তেলাওয়াত তার কাছে ভারী ও কঠিন হয়ে যাবে’।[9]

১০. ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لَأَنْ أَقْرَأَ البَقَرَةَ فِي لَيْلَةٍ وَأَتَفَكَّرَ فِيهَا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَقْرَأَ القُرْآنَ هَذْرَمَةً، ‘রাতের বেলা চিন্তা- ভাবনা করে শুধু সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করা আমার কাছে অধিকতর প্রিয় সারারাত না বুঝে দ্রুত কুরআন পাঠের চেয়ে’।[10]

১১. আবূ সাঈদ আল-খার্রায (রহঃ) বলেন, مَنْ أَحَبَّ اللَّهَ أَحَبَّ كَلَامَ اللَّهِ، وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ تِلَاوَتِهِ ‘যে আল্লাহকে ভালবাসে, সে আল্লাহর কালামকেও ভালবাসবে। আর এর তেলাওয়াতে সে কখনো পরিতৃপ্ত হবে না’।[11]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী; এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. আবূ নু‘আইম ইস্পহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৬/১৭১; আব্দুল কারীম আল-কুশায়রী, আর-রিসালাতুল কুশায়রিইয়াহ ২/৩৭৮

[2]. ইবনু কুদামা, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছেদীন, পৃ. ৫৩

[3]. ইবনে তায়মিয়া, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২০/১২৩

[4]. খত্বীব বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ ৭/৩৪৯

[5]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ ১/৭৯

[6]. তাফসীরে কুরতুবী ১/২৮।

[7]. ইবনে তায়ামিয়া, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩/১৩৭।

[8]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ ৭/২৭২।

[9]. ফাৎহুল বারী ৯/৭৯।

[10]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/২৯৭।

[11]. তাফসীরে ইবনে রজব হাম্বলী ২/৩৮১।






আরও
আরও
.