অমর বাণী

১. মা‘রূফ আল-কারখী (রহঃ) বলেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا فَتَحَ عَلَيْهِ بَابَ الْعَمَلِ وَأَغْلَقَ عَنْهُ بَابَ الْجَدَلِ وَإِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ شَرًّا أَغْلَقَ عَلَيْهِ بَابَ الْعَمَلِ وَفَتَحَ عَلَيْهِ بَابَ الْجَدَلِ، ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান, তখন তার জন্য আমলের দ্বার খুলে দেন এবং তর্ক-বিতর্কের দ্বার বন্ধ করে দেন। আর যখন তিনি কোন বান্দার অকল্যাণ চান, তখন তার জন্য আমলের দরজা বন্ধ করে দেন এবং তর্ক-বিতর্কের দরজা উন্মুক্ত করে দেন’।[1]

২. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,اَلْجُودُ بِالْعِلْمِ وَبَذْلِهِ، وَهُوَ مِنْ أَعْلَى مَرَاتِبِ الْجُودِ، وَالْجُودُ بِهِ أَفْضَلُ مِنَ الْجُودِ بِالْمَالِ، لِأَنَّ الْعِلْمَ أَشْرَفُ مِنَ الْمَالِ، ‘সর্বোচ্চ স্তরের দানশীলতা হ’ল ইলমের দানশীলতা ও বদান্যতা। সম্পদ দান করার চেয়ে ইলম বিতরণ শ্রেয়। কেননা সম্পদের চেয়ে ইলমের মর্যাদা অনেক বেশী’।[2]

৩. আবূ হায্যান (রহঃ) বলেন,قُلْتُ لِعَطَاءٍ: مَا مَجْلِسُ الذِّكْرِ؟ قَالَ: مَجْلِسُ الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ، وَكَيْفَ تُصَلِّي؟ وَكَيْفَ تَصُومُ؟ وَكَيْفَ تَنْكِحُ؟ وَكَيْفَ تُطَلِّقُ؟ وَتَبِيعُ وَتَشْتَرِي؟ ‘আমি আত্বা ইবনে আবী রাবাহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যিকরের মজলিস কি? তিনি বললেন, হালাল-হারাম আলোচনার মজলিস এবং কিভাবে তুমি ছালাত আদায় করবে, কিভাবে ছিয়াম পালন করবে, কিভাবে বিবাহ করবে, কিভাবে তালাক দিবে এবং কিভাবে ক্রয়-বিক্রয় করবে, তা বর্ণনার মজলিস’।[3]

৪. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, مِنْ أَعْظَمِ الْأَشْيَاءِ ضَرَراً عَلَىَ الْعَبْدِ بِطَالَتُهُ وَفَرَاغُهُ، فَإِنَّ النَّفْسَ لاَ تَقْعُدُ فَارِغَةً، بَلْ إِنْ لَمْ يُشَغِّلْهَا بِمَا يَنْفَعُهَا شَغَّلَتْهُ بِمَا يَضُرُّه وَلَا بُدَّ، ‘বান্দার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হ’ল বেকারত্ব ও অবসর। কেননা নফস কখনো অবসর বসে থাকে না। বান্দা যদি একে উপকারী কাজে ব্যস্ত না রাখে, তবে সে বান্দাকে অবশ্যই ক্ষতিকর কাজে নিয়োজিত করবে’।[4]

৫. জা‘ফর বিন মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, ‌لاَ ‌يَتَمُّ ‌الْمَعْرُوْفُ ‌إِلاَّ ‌بِثَلاَثَةٍ بِتعْجِيْلِهِ وَتَصْغِيْرِهِ وَسِتْرِهِ، ‘নেক আমল তিনটি মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে- (১) আমলটা দ্রুত সম্পাদন করা, (২) আমলটাকে ক্ষুদ্র মনে করা (তা নিয়ে বড়াই না করা) এবং (৩) তা গোপন রাখা’।[5]

৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, مَنْ كَانَ يُحِبُّ أَنْ يَعْلَمَ أَنَّهُ يُحِبُّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَلْيَعْرِضْ ‌نَفْسَهُ ‌عَلَى ‌الْقُرْآنِ فَإِنْ أَحَبَّ الْقُرْآنَ فَهُوَ يُحِبُّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنَّمَا الْقُرْآنُ كَلَامُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘কেউ যদি এটা জেনে খুশি হ’তে চায় যে, সে মহান আল্লাহকে ভালোবাসে, তবে সে যেন নিজেকে কুরআনের সামনে পেশ করে। যদি সে কুরআনকে ভালোবাসতে পারে (তাহ’লে বোঝা যাবে যে) সে আল্লাহকে ভালোবাসে। কেননা কুরআন হ’ল মহামহিম আল্লাহর বাণী’।[6]

৭. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, مِفْتَاحُ حَيَاةِ الْقَلْبِ تَدَبُّرُ الْقُرآنِ وَالتَّضَرُّعُ بِالْأَسْحَارِ وَتَرْكُ الذُّنُوبِ، ‘অন্তর জীবন্ত রাখার চাবিকাঠি হ’ল- কুরআন অনুধাবন, শেষ রাতে আল্লাহর দরবারে সকাতর প্রার্থনা এবং পাপ বর্জন করা’।[7]

৮. আব্দুল্লাহ ইবনে জা‘ফর (রহঃ) বলেন, لَيْسَ ‌الْجَوَادُ ‌الَّذِي يُعْطِيكَ بَعْدَ الْمَسْأَلَةِ، وَلَكِنَّ الْجَوَادَ الَّذِيْ يَبْتَدِئُ؛ ‘ঐ ব্যক্তি প্রকৃত দানশীল নয়, যে চাওয়ার পরে তোমাকে দান করে; বরং প্রকৃত দানশীল সেই ব্যক্তি, যে চাওয়ার আগেই দান করে’।[8]

৯. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,‌يَحْتَاجُ ‌الْمُؤْمِنُ ‌إِلَى ‌الصَّبْرِ كَمَا يَحْتَاجُ إِلَى الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ، ‘মুমিনের জন্য ছবর তেমন প্রয়োজন, যেমন তার জন্য খাবার ও পানীয় প্রয়োজন’।[9]

১০. বকর বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,‌إِذَا ‌أَتَاكَ ‌ضَيْفٌ فَلَا تَنْتَظِرْ بِهِ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ، وَتَمْنَعْهُ مَا عِنْدَكَ، بَلْ قَدِّمْ إِلَيْهِ مَا حَضَرَ، وَانْتَظِرْ بِهِ بَعْدَ ذَلِكَ مَا يَزِيدُ مِنْ إِكْرَامِهِ، ‘যখন তোমার বাড়িতে কোন মেহমান আসবে, তখন তোমার ঘরে যা নেই তা আনার জন্য মেহমানকে অপেক্ষায় রেখো না। আর তোমার ঘরে যা আছে তা দিয়ে আপ্যায়ন করবে না এমনটি যেন না হয়; বরং উপস্থিত যা পাও, তা-ই তার সামনে পেশ কর। এরপর অন্য কিছু দিয়ে আরো আপ্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে পার’।[10]

১১. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,أَيْسَرُ حَرَكَاتِ الْجَوَارِحِ حَرَكَةُ اللِّسَانِ وَهِيَ أَضَرُّهَا عَلَى الْعَبْدِ، ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়ার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও হালকা হ’ল জিহবার নড়াচড়া। আর এটাই বান্দার জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক’।[11]

এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. হিলয়াতুল আওলিয়া ৮/৩৬১।

[2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/২৭৯।

[3]. আবূ নু‘আইম ইস্পাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/৩১৩; আল-মাজালিসুল ফিক্বহিইয়াহ, পৃ. ২৩৩।

[4]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ত্বরীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৭৫।

[5]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৩৯২।

[6]. আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বল, আস-সুন্নাহ, ১/১৪৮।

[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিউল আরওয়াহ, পৃ. ৬৯।

[8]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, ক্বাযাউল হাওয়াইজ, পৃ. ৫০।

[9]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আছ-ছাবরু ওয়াছ ছাওয়াবু আলাইহি, পৃ. ৬১

[10]. বুরজুলানী, আল-কারামু ওয়াল জূদ, পৃ. ৫২।

[11]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃ. ১৬১।






আরও
আরও
.