স্বদেশ
পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন : বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের অভাবনীয় সাফল্য
বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাটের নতুন জাত উদ্ভাবন করা যাবে। পাটের গুণগত মান ও বিপুল মাত্রায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নতুন জাত উদ্ভাবন করা হ’লে পানিতে জাগ দেওয়ার সময় কম লাগবে, অাঁশ দিয়ে জৈব জ্বালানী ও ওষুধ তৈরী করা সম্ভব হবে।
বিশ্বের প্রাণরসায়ন গবেষণায় পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন একটা অভাবনীয় অর্জন। বিশ্বে এ পর্যন্ত ১৭টি উদ্ভিদের জীবনরহস্য উন্মোচিত হয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশের মতো কোন উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীরা একাজে বড় সাফল্য অর্জন করলেন। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম। ২০০৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পেঁপে ও ২০০৯ সালে মালয়েশিয়া সরকারের হয়ে রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচিত হয় বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ও বেসরকারী তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা ‘ডাটা সফট’ যৌথভাবে গবেষণার কাজটি করেছে। ২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরী ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে এই গবেষণার সূত্রপাত। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন। মাকসুদুল আলম বলেন, ‘গবেষণার একটি স্তর আমরা শেষ করেছি। পরবর্তী বীজ তৈরির আগ পর্যন্ত আমাদের আরও নিষ্ঠার সাথে সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন জাতের পাঠ উদ্ভাবন করা সম্ভব, যার অাঁশ দিয়ে জৈব জ্বালানী তৈরী করা যাবে। এতে দেশের জ্বালানী সমস্যার সমাধানও অনেকাংশে সম্ভব হবে’।
২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট
দেশীয় শিল্প, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহীত গত ১০ জুন আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৩২ হাযার ১৭০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। যা জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ। এটি দেশের ৩৯তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাযার ৮৪৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রের কর থেকে ৭২ হাযার ৫৯০ কোটি টাকা, রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত সূত্র থেকে ৩ হাযার ৪৫২ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত খাত থেকে ১৬ হাযার ৮০৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাযার ৩২৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক সূত্র থেকে ১৫ হাযার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ২৩ হাযার ৬৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ধরা হয়েছে ৩৮ হাযার ৫শ’ কোটি টাকা এবং রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ হাযার ২৩০ কোটি টাকা। বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষাখাতে : শিক্ষাকে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের অন্যতম কৌশল হিসাবে গ্রহণ করে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ১৭ হাযার ৯৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে শতকরা ১৩.৫ শতাংশ বেশী।
যেসব জিনিসের দাম বাড়বে : ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানী শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুনভাবে করারোপের কারণে বেশকিছু পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। যেসব জিনিস ও সেবার দাম বাড়বে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মোটরগাড়ি (১০০১ সিসি থেকে ১৫০০ সিসি), মাইক্রোবাস (১৮শ’ সিসি পর্যন্ত), পেপার ববিন, আমদানীকৃত টেলিভিশন যন্ত্রাংশ, মনোফিলামেন্ট রড, ডিজেল ইঞ্জিন, সাদা প্রিন্টিং পেপার, ব্লেড, সিগারেট, জর্দ্দা, গুল, টাইলস, মোজাইক, শ্যাম্পু, মিনারেল ওয়াটার (তিন লিটার পর্যন্ত), বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ছাপাখানা, কুরিয়ার সার্ভিস, অডিট ও একাউন্টিং ফার্ম, গ্রাফিক ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ও ইনটেরিয়র ডিজাইনার প্রভৃতি।
যেসব জিনিসের দাম কমবে : যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল, গুঁড়া দুধ, নারিকেল তেল, সিএনজি অটোরিক্সা, টেম্পো, দেশে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, মোটরসাইকেল, প্রিন্টার, টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি, টিনের পাত্র, প্লাস্টিক লেন্স প্রভৃতি।
বাজেট প্রতিক্রিয়া : এবারের বাজেট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘উচ্চভিলাসী’ ‘লুটপাট’ ও ‘ডিজিটাল মারপ্যাঁচের অস্পষ্ট বাজেট’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) প্রস্তাবিত বাজেটকে নীতি ও দর্শনের দিক থেকে গতানুগতিক এবং ধনিকশ্রেণীর স্বার্থরক্ষার দলীল হিসাবে অভিহিত করেছে। অনেকেই বাজেটকে বড় আকারের আখ্যায়িত করে এটি বাস্তবায়ন করা দুঃসাধ্য ও চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা বাজেটকে ‘শিল্পবান্ধব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
৮ মাত্রার ভূমিকম্প হ’লে ঢাকার ২৮ ভাগ ঘরবাড়ী ধ্বংস হয়ে যাবে
৮ মাত্রার ভূমিকম্প হ’লে ঢাকার ২৮ ভাগ ঘরবাড়ী ধ্বংস ও লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির আশংকা করছেন গবেষকরা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৯০টি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ির পরিস্থিতি ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্লেষণের মাধ্যমে ‘সম্ভাব্য ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের সম্পদ ধ্বংস ও জীবনহানি নির্ধারণ’ শীর্ষক গবেষণায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. মেহেদী আহমাদ আনছারী এবং মিলিটারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর কর্ণেল গাযী ফিরোয রহমান এসব তথ্য জানান। গবেষণায় তারা বলেন, ঢাকার ৯০টি ওয়ার্ডে ৬০ লাখেরও বেশী লোক বাস করে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হ’লে ৩ দশমিক ৭ ভাগ লোকের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এ সংখ্যা হবে কমপক্ষে এক লাখ। তবে ভূমিকম্প সকালে হ’লে ৭৭ হাযার, রাতে হ’লে ৯৭ হাযার এবং দুপুরে হ’লে ৫৪ হাযার লোকের প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। একই সঙ্গে আহত হবে যথাক্রমে এক লাখ ১০ হাযার, ১ লাখ ২৬ হাযার এবং ৬৯ হাযার। উল্লেখ্য, ঢাকায় বাড়ীঘর আছে আড়াই লাখের মতো।
ঢাকার ৬৫ ভাগ মাটি বহুতল ভবনের উপযোগী নয় : রাজধানীর ৬৫ শতাংশ এলাকার মাটির গুণগত মান বহুতল ভবন নির্মাণ করার উপযুক্ত নয়। এসব এলাকার মাটিতে ছয় তলার বেশী উঁচু ভবন নির্মাণ করা হ’লে তা যেকোন সময় উপড়ে বা হেলে পড়তে পারে। এমনকি নীচে দেবে যাওয়ার আশংকাও আছে। ঢাকা শহরের মাটির মানের এ চিত্র বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের গবেষণায় উঠে এসেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদন; বহাল থাকছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা
গত ৩১ মে মন্ত্রীসভার বৈঠকে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন করে শিক্ষানীতি ২০১০-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। শিক্ষানীতিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে মাধ্যমিক স্তর ৯ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত করা এবং সব ধারার শিক্ষায় কিছু অভিন্ন বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো, মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাঠ্যসূচী বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে বর্তমান প্রচলিত ডিগ্রি (পাস) কোর্স ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এটিকে অনার্স কোর্সে পরিণত করা হবে। প্রাথমিক স্তরে প্রথম শ্রেণীর আগে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য থাকছে এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। পঞ্চম শ্রেণীর ফলাফলের উপর বৃত্তির ব্যবস্থা থাকবে।
২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে হবে : ২০১২ সালে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বাংলা ১ম পত্র বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশ্নের মানবণ্টন হবে সৃজনশীল প্রশ্ন-৬০ এবং বহু নির্বাচনী প্রশ্ন-৪০। গত ৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারী করা এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এর পরবর্তী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্য বিষয়গুলোকে সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা হবে।
তিন বছরে দেশে ৬ লাখ বেকার ও ৪২ লাখ আধা বেকার বেড়েছে
বাংলাদেশে গত তিন বছরে বেকার ও আধা বেকারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে দিনমজুরের সংখ্যা। ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র ২০০৯ সালের জরিপ থেকে জানা গেছে যে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার যেখানে ৪.৩ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০০৯ সালে তা ৫.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২১ লাখ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়ে ২৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে আধা বেকারের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা দুই কোটি ৮৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে আরো দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি খাতে কর্মরতদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে যেখানে মোট শ্রমশক্তির ৪৮.১ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত ছিল, সেখানে ২০০৯ সালে কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির সংখ্যা নেমে আসে ৪৩.৬ শতাংশে।
ফারাক্কা পয়েন্টে এবার দেড় লাখ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ
গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে মোট ১৫ কিস্তিতে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাযার কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ এই পরিমাণ পানি কম পেয়েছে ভারত থেকে। যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১৫ কিস্তির মধ্যে বাংলাদেশ ছয় লাখ ২২ হাযার ১৫৭ কিউসেক পানি পাওয়ার দাবীদার ছিল। কিন্তু ১৫টি কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে চার লাখ ৭৬ হাযার ৫৬ কিউসেক। অর্থাৎ ১৫ কিস্তিতে এক লাখ ৪৬ হাযার এক কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ।
পুরান ঢাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত ১২১
৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৮-টা। পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাবকাটরা রোডের ৪৩/৩ নম্বর বাড়ীতে রুনা নামক এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। চলছিল মেহমানদের জন্য নানা পদের রান্নার কাজ। হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখা দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দিল। মানুষের আর্তচিৎকারে পুরান ঢাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠল। আগুন, অন্ধকার ও ধোঁয়ায় অকুস্থলের ভবনগুলো পরিণত হ’ল মৃতুকূপে। জীবন বাঁচানোর জন্য মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হ’ল না। নিজের চোখের সামনে সন্তান বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনকে দগ্ধীভূত হ’তে দেখেও তাদেরকে উদ্ধার করতে পারল না লেলিহান অগ্নিশিখার কারণে। মুহূর্তেই পুরান ঢাকার নিমতলী শোকের চাদরে আবৃত হ’ল। এ মর্মান্তিক ট্যাজেডিতে সর্বমোট নিহত হয় ১২১ জন। আহত দু’শতাধিক। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের সাত সদস্যও রয়েছেন। আছেন বিয়ে বাড়ীতে আসা একই পরিবারের প্রায় অর্ধশত আত্মীয়-স্বজন। আহতরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এক অব্যক্ত দুঃসহ বেদনা আর আত্মীয়-স্বজনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার করুণ স্মৃতি তাদের তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত। পুরনো ঢাকার সরু রাস্তার কারণে দমকল বাহিনী প্রায় ৪ ঘণ্টা পর অকুস্থলে পৌঁছায়। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। এ অগ্নিকান্ডে এক কোটি ৬৮ লাখ ৫৫ হাযার টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়।
যেভাবে ঘটে অগ্নিকান্ড : সরকারী প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, বিয়ে বাড়ির সিঁড়িকোঠায় দীর্ঘ সময় ধরে রান্নার কাজ চলায় তা থেকে সৃষ্ট তাপ গুদামে সংরক্ষিত রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায় এবং দ্রুত পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জ্বলন্ত রাসায়নিক দ্রব্য ট্রান্সফরমারের নীচে রাস্তায় থাকা মোটরসাইকেলে এসে লাগলে তাতে আগুন ধরে যায়। আগুন এতই তীব্র ছিল যে বাড়ির গ্যাসের পাইপ পুড়ে যায়। নিগর্ত গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এসে আরও ভয়াবহতার সৃষ্টি করে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন দু’টি ট্রান্সফরমারে ছড়িয়ে পড়লে বিকট শব্দে বৈদ্যুতিক স্পার্কের সৃষ্টি হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত রিপোর্টেও কেমিক্যালের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারী তদন্ত কমিটির মতে, গুদামে যে রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয়েছিল তার নাম এনএন ডাই নাইট্রোসো পেন্টামিথিলিন টেট্রামিল (ডিএনপিটি)। এটি থেকে একটু গ্যাস বের হ’লে তাতে আগুন লেগে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার জন্য দায়ী : এ ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য বসতবাড়ির নীচে অবৈধভাবে গুদামজাত করার জন্য ব্যবসায়ী অহিদুল্লাহ মজুমদার এবং বাড়ির মালিক মুহাম্মাদ গুলযার, মুহাম্মাদ দিদার ও মুহাম্মাদ ফারূককে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সরকারী তদন্ত কমিটি। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরী ছিলেন সরকারী তদন্ত কমিটির প্রধান।
চৌদ্দগ্রামে প্রথম সীমান্ত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন
দেশে প্রথমবারের মতো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গোমারবাড়ি সীমান্তে স্থাপন করা হয়েছে বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) নামে সীমান্ত রক্ষা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এতে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাযার টাকা। স্থানীয় দু’জন জমির মালিক নিষ্কণ্টকভাবে এ টাওয়ারের জমিটি দান করেছেন।
চার ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে ঢাকার চার লাখ ভবন
৫৯০ বর্গমাইলের রাজধানী ঢাকার মোট ভবনের সংখ্যা বুয়েটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় তিন লাখ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হিসাবে চার লাখ। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৭০ হাযার, ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর প্রকাশিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জরিপ মতে ২৫ হাযার, বুয়েটের আরবান ও রিজিওনাল প্লানির বিভাগের প্রতিবেদন মতে প্রায় চার হাযার এবং রাজউক-এর মতে তিন হাযার ৮৮৫টি। জানা গেছে, ঢাকার ৮টি জোনে অবস্থিত চার লাখ ভবনের আইনানুগ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে মাত্র চারজন অথরাইজড অফিসারের উপর। অর্থাৎ গড়ে প্রতি জনের ভাগে রয়েছে এক লাখ ভবন। নির্মাণ-পূর্ব ভবনের ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র, নকশা অনুমোদন, নকশাবহির্ভূত ভবন চিহ্নিতকরণ এবং উচ্ছেদের আইনগত অনুমোদন এসব কিছুর দায়িত্বই অথরাইজড অফিসারের ওপর।
বিদেশ
সন্তানের সঙ্গে বন্ধন বাড়াতে বৃটিশ মায়েদের জন্য সরকারী বরাদ্দ
সন্তান লালনপালন করার জন্য ব্রিটেনের অসচ্ছল মায়েরা সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ পাউন্ড অর্থ বা বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। তবে সেটা তাঁরা পান সন্তানের ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে। কিন্তু সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধন আরও জোরদার করতে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন লেবার দলের এক এমপি। ফ্রাঙ্ক ফিল্ড নামে ঐ এমপির প্রস্তাব অনুযায়ী সন্তানের প্রথম দুই বছর বয়সের মধ্যে ঐ অর্থের এক-চতুর্থাংশ অর্থ ২৫ হাযার পাউন্ড দিতে হবে। তাহ’লে সন্তান জন্মের পর আবার কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য মায়েদের তাড়া থাকবে না। এতে মায়েরা বাড়ীতে সন্তানকে আরও বেশী সময় দিতে পারবেন। সন্তানের সঙ্গে তাঁদের বন্ধন আরও জোরালো হবে। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মা কাজে থাকেন তাঁদের সন্তানের স্বাস্থ্য বাড়ীতে থাকা মায়েদের সন্তানের স্বাস্থ্যের চেয়ে খারাপ।
ইসরাঈলী নারী বিয়ে করলে মিসরে নাগরিকত্ব বাতিল
কোন মিসরীয় ইসরাঈলী নারী বিয়ে করলে তার নাগরিকত্ব বাতিল করার পক্ষে রায় দিয়েছে মিসরের সুপ্রিম কোর্ট। মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি আবেদন ৫ জুন খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ইসরাঈলের আরব নাগরিক ও ইসরাঈলের ইহুদী নাগরিককে বিয়ে করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রায়ে বলা হয়, ইসরাঈলী আরব তথা ফিলিস্তীনী মেয়েদের বিয়ে করতে পারবে মিসরীয় পুরুষরা। এতে বলা হয়, ইসরাঈলী ইহুদী নারী ও দখলদারিত্বের আওতায় বসবাসকারী আরবদের মেয়েদের বিয়ে করার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আর কোন সুযোগ না থাকলেও কারো নাগরিকত্ব বাতিলের আগে তা মিসরীয় সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে হবে, সেখানেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইসরাঈলী নারীদের বিয়ে করা মিসরীয় ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ হাযার। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ আরব ইসরাঈলীদের বিয়ে করেছে।
ভারতে মাওবাদীদের হামলায় ৫ বছরে নিহত ২৬৭০ জন
২০০৫ সাল থেকে ভারতে মাওবাদীদের হাতে নিহত হয়েছেন ২৬৭০ জন। এর মধ্যে সাধারণ নাগরিক ১৬৮০ জন এবং নিরাপত্তাকর্মী ৯৯০ জন। গড়ে প্রতি ২ দিনে মাওবাদীরা খুন করছে ৩ জনকে। উল্টো দিকে গত পাঁচ বছরে প্রাণ হারিয়েছে ১৪৪০ জন মাওবাদী। ২০১০ সালে মাওবাদীদের শিকার ৪৬০ জন। এর মধ্যে নিরাপত্তাকর্মী ১৬৭ জন।
মার্কিন ঘাঁটি বন্ধে ব্যর্থতার দায়ে জাপানী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ; কান নয়া প্রধানমন্ত্রী
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী নাওতো কান (৬৩)। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউকিয়ো হাতোয়ামার স্থলাভিষিক্ত হ’লেন। ওকিনাওয়া দ্বীপের মার্কিন বিমান ঘাঁটি বিতর্কে ২ জুন হাতোয়ামা পদত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, হাতোয়ামা গত নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ ঘাঁটিটি বন্ধের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। গত ৪ জুন জাপানী পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ভোটাভুটিতে কানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। ৪৭৭টি বৈধ ভোটের মধ্যে কান পান ৩১৩টি। পরে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ২৩৭ ভোটের মধ্যে ১২৩ ভোট পেয়ে কান তার প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত করেন।
ব্রিটেনের পারমাণবিক বোমার সংখ্যা ১৬০টি
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ জানান, সেদেশে পূর্ণ কর্মক্ষম ১৬০টি আণবিক বোমা রয়েছে। আরও কিছু বোমা আপাতত নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশটি তার আণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ২২৫-এ সীমিত রাখতে চায়।
জাতিসংঘ রিপোর্ট
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে
ড্রোন বিমানের মত অস্ত্র ব্যবহার করে গণহত্যা পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা ফিলিপ অ্যালস্টন। তিনি বলেন, ড্রোন বিমানের সাহায্যে বেসামরিক লোকজনকে পাইকারীভাবে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করছে এবং বিশ্বে আইনের শাসনের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করছে। তিনি আরো বলেন, ড্রোন হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে হরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহতভাবে ড্রোন হামলার কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ধীরে ধীরে কম্পিউটার গেম হিসাবে বিবেচিত হবে বলে জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বিষয়ক বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যালস্টন আশংকা ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তিনি তাঁর এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দেনার পরিমাণ ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের দেনা বর্তমানে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশী। দেশটির ইতিহাসে এত বেশী দেনা এবারেই প্রথম। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সবচেয়ে বেশী : বিশ্বের সেরা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে বিশাল অংকের অর্থ ঋণ নিয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদে চীন ৯০ হাযার ২০ কোটি ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণদাতা দেশ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন। এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদে জাপান ৭৯ হাযার ৫০ কোটি ডলার এবং ব্রিটেন ২৩ হাযার ৯৩ কোটি ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করেছে।
নেদারল্যান্ডে বিশ্বের বৃহত্তম রেডিওটেলিস্কোপ স্থাপন
নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা গত ১২ জুন বিশ্বের বৃহত্তম রেডিওটেলিস্কোপ চালু করে বলেছে, এটি ‘বিগ ব্যাংক’-এর মতো বহু দূরের দুর্বল সংকেত ধারণ করতে সক্ষম। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর এসেনের কাছে ঐ টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে। নেদারল্যান্ডের রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি ইন্সটিটিউটের ফেমকি বোয়েখাট জানান, লোফার (লো ফ্রিকোয়েন্সি এরে) এ ৫০ সেন্টিমিটারের মধ্যে ২৫ হাযার ক্ষুদ্র এন্টেনা সংযোজন করা হয়েছে এবং দুই মিটার দূরে প্রচলিত বৃহৎ ডিস বসানো হয়েছে। তবে অ্যান্টেনাগুলো পুরো নেদারল্যান্ড এমনকি জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স ও ব্রিটেনেও ছড়ানো রয়েছে। যখন সম্মিলিতভাবে অ্যান্টেনাগুলো যুক্ত হবে তখন এটি একটি বৃহত্তম টেলিস্কোপে পরিণত হবে এবং এর ডায়ামিটার দাঁড়াবে প্রায় এক হাযার কিলোমিটার।
ইয়েমেনে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে গত ডিসেম্বর মাসে আল-কায়েদা বিরোধী অভিযানের সময় ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করেছে। এতে ৫৫ জন মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি’ জানায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আবিয়ান প্রদেশের আল-মাজালায় হামলার সময় এ জাতীয় বোমা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যামনেস্টির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ গবেষক মাইক লিইস জানান, ইয়েমেনে এ ধরনের বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পেয়ে অ্যামনেস্টি ভীষণ উদ্বিগ্ন। ক্লাস্টারের মতো বোমার একটি ভয়ংকর বিপজ্জনক দিক হচ্ছে এগুলো অবিস্ফোরিত অবস্থায় বছরের পর বছর জীবনের জন্য বিস্ফোরণের ঝুঁকি হয়ে থাকে।
ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরাঈলী বর্বর আক্রমণ
অবরুদ্ধ গাযার পথে তুর্কী ত্রাণসামগ্রী বহনকারী জাহাজে ইসরাঈলী নৌবাহিনী হামলা চালায় গত ৩১ মে সকাল ৫-টার সময়। এতে ২০ জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন তুরষ্কের নাগরিক। গাযার সমুদ্র তীরের ১৫০ কিলোমিটার দূরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৭০০ যাত্রী ও ১০ হাযার টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে জাহাজগুলো সাইপ্রাসের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি সমুদ্রবন্দর থেকে ছেড়ে আসে। ফিলিস্তীনী একটি গ্রুপ ও তুরষ্কের একটি মানবাধিকার সংস্থার উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী গাযায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হচ্ছিল। গাযা উপকূল থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে ইসরাঈলী কমান্ডোরা হেলিকপ্টার থেকে তুরষ্কের মাভি মারমারা নামক যাত্রীবাহী জাহাজে নেমেই যাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো শুরু করে। তবে ইসরাঈল বলেছে, প্রাণসংহারী ও সহিংস আচরণের কারণেই নৌসেনারা গুলী চালাতে বাধ্য হয়। তারা অজুহাত দেখিয়ে বলেছে, জাহাজটি এমন কিছু দ্রব্য বহন করছিল যা হামাস ব্যবহার করে ইসরাঈলের দিকে রকেট নিক্ষেপের কাজে।
এ ন্যক্কারজনক আক্রমণের প্রতিবাদে গোটা বিশ্ব ফুঁসে উঠেছে। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এ হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে এবং একে ‘গণহত্যা’র শামিল দাবী করে ইসরাঈলকে সমুচিত শাস্তি দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু ইসরাঈল এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে অস্বীকার এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহবানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নামকাওয়াস্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট নিজস্ব তদন্ত কমিশন গঠন করেছে আইওয়াশ করার জন্য। উল্লেখ্য, গত তিন বছর ধরে ইসরাঈল গাযা অবরোধ করে রেখেছে।