‘হেফাজতে
ইসলাম বাংলাদেশ’-এর আমীর এবং চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার
মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী (১০৩) গত ১৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার
সন্ধ্যায় ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন।
পরদিন শনিবার বাদ যোহর হাটহাজারী মাদ্রাসায় তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত
হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও পাখিয়ারটিলা কওমী মাদ্রাসার
পরিচালক মাওলানা ইউসুফ। অতঃপর মাদরাসার কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
জানাযায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। তার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী
শোক প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এরই মধ্যে আহমদ শফীর কনিষ্ঠ পুত্র অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক আনাস মাদানীর ব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনায় নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠার প্রেক্ষিতে শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই সাথে যুক্ত হয় আহমদ শফীর পর মাদ্রাসা পরিচালনার কর্তৃত্ব নিয়েও। যার প্রেক্ষিতে গত ১৬ ও ১৭ই সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভ হয় এবং আহমদ শফীর দফতরেও ভাঙচুর করা হয়। অতঃপর ১৭ই সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলনের মুখে ঐদিন রাতে অনুষ্ঠিত শুরা বৈঠকে তিনি মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এসময় আনাস মাদানীকেও আজীবনের জন্য অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঘোষণার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ১২-টায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন বিকালে যরূরী ভিত্তিতে তাঁকে ঢাকায় আনার পর সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য যে, আল্লামা আহমদ শফী দেওবন্দী কওমী ধারার আলেমদের প্রধান মুরববী এবং কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া এবং কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীছের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গঠিত সংস্থা আল-হাইআতুল ‘উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সংস্থার অধীনে ২০১৭ সালের ১৭ই এপ্রিল কওমী মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদীছ শ্রেণীকে ‘মাস্টার্স’-এর মান দেয় সরকার।
২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁকে এর আমীর করা হয়। তবে তিনি মূলতঃ আলোচনায় আসেন ২০১৩ সালে। এসময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ প্রণয়নের প্রতিবাদে এবং নাস্তিক ব্লগার ও জাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে ১৩ দফা দাবী নিয়ে ঢাকায় লংমার্চ করেন। অতঃপর ওই বছরের ৫ই মে রাজধানীর শাপলা চত্বর এলাকায় লাখো মানুষ অবস্থান নেয়। রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে সংগঠনের অভ্যন্তরে বড় ধরণের বিরোধ দেখা দেয়। কারণ হতাহতদের ব্যাপারে সংগঠনটি নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। যা আজও অব্যাহত আছে।
আহমদ শফী ১৯১৬ সালে রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি হাটহাজারী ও দেওবন্দ মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন এবং ১৯৪৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। অতঃপর ১৯৮৬ সাল থেকে মৃত্যুর ২০ ঘন্টা আগে অব্যাহতি নেওয়ার পূর্বপর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই পুত্র ও ৩ কন্যার জনক ছিলেন।