সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এ প্রিয় বাংলাদেশ, শস্যের পাশাপাশি ফলমূলেও প্রসিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ফল নিরাপত্তা একটি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ফলমূলে দেশকে আরও প্রসিদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টার। আমেরিকার US-DARS এর গবেষণায় এটি বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফলদ বৃক্ষের সংগ্রহশালা।

ফলের জিন সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, ফলের হিডেন নিউট্রেশন সংরক্ষণ এবং কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় ‘সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশনে’র অর্থায়নে ১৯৯১ সালে ১ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই ফল জাদুঘর। তখন এর নাম ছিল ‘ফ্রুট ট্রি স্টাডিজ’। পরবর্তীকালে এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্প’। যার বর্তমান নাম ফলদ বৃক্ষের জার্মপ্লাজম সেন্টার এবং এর বর্তমান আয়তন ৩২ একর ।

এই জাদুঘরে ড্রাগনসহ হাযার প্রজাতির আকর্ষণীয় বিরল দেশী-বিদেশী ফলের গাছ রয়েছে। কোনটি মৌসুমী, কোনটি দোফলা, কোনটি ত্রিফলা আবার কোনটি বারমাসী। কোনটি দেশী, কোনটি বিদেশী আবার কোনটি উদ্ভাবিত। প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে দেশী-বিদেশী অনেক গবেষক ও দর্শনার্থী আসেন এ ফল জাদুঘর দেখতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করতেও আসে হাযার হাযার মানুষ। দেশের বাইরেও এর প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

১৯৯১ সাল থেকে মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত গবেষকদের নিরলস গবেষণার ফলে সর্বমোট ৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এ জাতগুলোর মধ্যে আমের ২১টি, পেয়ারার ১০টি, কুলের ৩টি, লেবুর ৩টি, জাম্বুরার ৫টি, কামরাঙ্গা ৩টি, বাউ-কুলের ৩টি, লিচু ৩টি, জলপাই, আমলকী, ডুমুর, মালটা, অরবরই ও কাজুবাদামের ১টি করে জাত, জামরুলের ৩টি ও সফেদার ৩টি, বাউ রসুন ৩টি, বাউ গাজর ২টি, বাউ মিষ্টি কুমড়া ২টি জাত, বাউ মাল্টা-১, বাউ ষ্ট্রবেরি-১ এবং বাউ ডুমুর-১। এছাড়া বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), বাউ ড্রাগন ফল-৩, বাউ লঙ্গা-১ (বোগর), বাউ তেঁতুল-১ (মিষ্টি), বাউ তেঁতুল-২ (টক), বাউ কদবেল-১ (বনলতা), বাউ পেয়ারা-৭ (বীজশূন্য গোল), বাউ পেয়ারা-৮ (বীজশূন্য ডিম্বাকার) উল্লেখযোগ্য।

এ জার্মপ্লাজম সেন্টারে রয়েছে ১৮১ প্রজাতির প্রায় ১০,২৭৩ টি (দশ হাযার দুই শত তিয়াত্তর) জাতের মাতৃগাছ যার মধ্যে ১১৯৫টি দেশী-বিদেশী বিরল জাতের। এসব  দেশী-বিদেশী বিরল গাছের মধ্যে রয়েছে ২২০ রকমের আম, ৫৭ রকমের পেয়ারা, ২৩ রকমের লিচু, ৪৭ রকমের লেবু, ৯৪ রকমের কাঁঠাল, ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় অপ্রধান ফল, ৬৮ প্রজাতির ফলদ ঔষধি গাছ, ২৭ প্রজাতির ভেষজ  গাছ ও ৫৮ প্রজাতির বিদেশী ফল।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে প্রায় ৭০টি ফল অপ্রচলিত বা স্বল্প পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে টাকিটুকি, পানকি, চুনকি, লুকলুকি, উড়িআম, বৈঁচি, চামফল, নোয়াল, রক্তগোটা, মাখনা, আমঝুম, মুড়মুড়ি, তিনকরা, সাতকরা, তৈকর, আদা জামির, ডেফল, কাউফল, বনলেবু, চালতা ইত্যাদি ফল নানা কারণে এবং আমাদের অসচেতনতায় দেশ থেকে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আশার বিষয় হচ্ছে, বিলুপ্ত প্রায় এসব ফল এ জার্মপ্লাজম সেন্টার বন-জঙ্গল, পাহাড়, বসত-ভিটাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সন্ধানের মাধ্যমে সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে এবং এর উপর নিবিড় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন বিদেশী  ফল বা ফলের গাছ যেমন- প্যাসন ফল, জাবাটিকাবা, শানতোল, রাম্বুটান, লংগান, ম্যাঙ্গোষ্টিন, সীডলেস লিচু, ডুরিয়ান, এভোকেডো ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করছেন ভবিষ্যতে এ দেশে নতুন জাত হিসেবে মুক্তি দিতে। বর্তমানে এখানে ৪৯টি দেশের প্রায় ৫৮টি ফল ও ফল গাছের উপর গবেষণা করা হচ্ছে। এ সেন্টারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত পিএইচডি ও এমএস পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা। বর্তমানে ২৮ জন এমএস এবং ৭ জন পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রী গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক হিসাবে আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম.এ. রহীম ও তাঁর গবেষণা সহযোগী হিসাবে রয়েছেন কৃষিবিদ ড. মো. শামসুল আলম মিঠু।







গভীর রাতে মহাসড়কে চা হাতে পুলিশের অপেক্ষা!
উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য ইএমপি হামলায় ধসে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, মারা পড়বে সেদেশের ৯০% মানুষ!
ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে গলা কেটে যুবক খুন
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
করোনায় জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু
পাথরের মত শক্ত হয়ে যাওয়ার পথে শিশুটি
ছানিজনিত অন্ধের সংখ্যা বছরে বাড়ছে ১ লাখ ৩০ হাযার
কানাডায় হিজাবের পক্ষে যুগান্তকারী রায়
বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হ’তে পারে
বরগুনার ১১৭ কেজি ওযনের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হ’ল বরিশালে
ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হ’লে যে ক্ষতি
প্রাথমিক থেকে দ্বাদশের শিক্ষাক্রম বদলে যাচ্ছে
আরও
আরও
.