পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব ।

(ঙ) চোগলখুরী করা : কোন বিষয়ে একজনের নিকটে এক কথা, আবার অন্যজনের নিকটে আরেক কথা বলাকে চোগলখুরী বলে। এটি ইসলামী শরী‘আতে হারাম। যারা এহেন গর্হিত কাজে লিপ্ত তারা চতুরতার আড়ালে নিজেদের প্রকৃত রূপটা লুকিয়ে রাখে। কিন্তু আল্লাহ বলেন,يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَلاَ يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللهِ. ‘এরা লোকদের কাছ থেকে নিজেদের কর্মকান্ড আড়াল রাখতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করতে পারে না’ (নিসা ৪/১০৮)

চোগলখোরের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীছে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। যেমন-

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ.

হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[1]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে ওদের কাছে আসে’।[2] ক্বিয়ামতের দিন চোগলখোরের জিহবা হবে আগুনের। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَمَّارٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ ذَا وَجْهَيْنِ فِىْ الدُّنْيَا كَانَ لَهُ لِسَانَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِّنْ نَّارٍ.

আম্মার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, ক্বিয়ামতের দিন তার আগুনের দু’টি জিহবা হবে’।[3] অপর হাদীছে আছে-

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدٍ قَالَتْ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِخِيَارِكُمْ؟ قَالُوْا بَلَى، اَلَّذِيْنَ إِذَا رُؤُوْا ذُكِرَ اللهُ، أَفَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِشِرَارِكُمْ؟ قَالُوْا بَلَى، قَالَ: اَلْمَشَّاؤُوْنَ بِالنَّمِيْمَةِ اَلْمُفْسِدُوْنَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ، اَلْبَاغُوْنَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ.

আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যকার সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তারা ঐ সকল লোক যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরো বললেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্টতম লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না’? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, ‘যারা চোগলখুরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়’।[4]

চোগলখোরের শাস্তি সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূল (ছাঃ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, এ দুই ব্যক্তিকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। কোন বড় পাপের কারণে তাদের আযাব হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, বিষয়টি বড়। তাদের একজন চোগলখুরী করে বেড়াত, আরেকজন প্রস্রাবের সময় পর্দা করত না’।[5]

পবিত্র কুরআনে এদের ব্যাপারে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তার অনুসরণ কর না, যে কথায় কথায় কসম করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যকে লাগিয়ে বেড়ায়’ (কলাম ৬৮/১০-১১)

যারা দ্বিমুখী তাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কল্যাণ ও অকল্যাণের কথা বিবেচনায় রেখে চোগলখুরীর পথ পরিহার করা উচিত।

(চ) যুলুম বা অত্যাচার করা : কোন বস্ত্তকে উপযুক্ত অবস্থান থেকে স্থানান্তরিত করে অনুপযুক্ত স্থানে রাখাকে (وضع الشيئ فى غير محله) যুলুম বলে। স্বভাবগতভাবে মানুষের অন্তর আল্লাহ্কে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষ যখন তার বিপরীত কিছুকে কল্পনা বা বিশ্বাস করে অথবা অন্তরে স্থান দেয়, তখন তা স্বভাববিরোধী হওয়ার কারণে যুলুমের পর্যায়ভুক্ত হয়ে পড়ে। সে কারণেই মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় যুলুম’ (লোক্বমান ১৩)। ব্যবহারিক অর্থে- সত্য ও ন্যায়কে পরিহার করে তার বিপরীতকে অনুসরণ করা এবং জান-মাল, মান-সম্মানের উপর আক্রমণ করাকে যুলুম বলা হয়।

পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে সবলরা দুর্বলের উপর নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছে। অথচ এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। অত্যাচারী ব্যক্তিকে যেমন আল্লাহ পসন্দ করেন না, তেমনি মানুষও তাকে অপসন্দ করে। পবিত্র কুরআনে অত্যাচারীর পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। রাসূল (ছাঃ)ও বিভিন্ন হাদীছে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। যেমন- আবু যার (রাঃ) রাসূলুললাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তাঁর প্রভু আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুম করাকে নিজের উপর হারাম করেছি এবং তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। অতএব তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলুম করবে না’।[6] তিনি আরো বলেন,اَلظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যুলুম ক্বিয়ামতের দিন বহু অন্ধকারের কারণ হবে’।[7]

এ প্রসঙ্গে অপর এক হাদীছের বর্ণনা নিম্নরূপ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব কে? ছাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই তো নিঃস্ব যার টাকা-কড়ি ও ধন-সম্পদ নেই। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘যে দুনিয়া হ’তে ছালাত, ছিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে এবং সাথে ঐ সকল লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো মাল-সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। সুতরাং এই হকদারকে (যুলুমের বিনিময়ে) তার নেকী হ’তে প্রদান করা হবে, ঐ হকদারকে তার নেকী হ’তে প্রদান করা হবে। এভাবে সকল হকদারের হক পরিশোধ করার পূর্বে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের গোনাহসমূহ ঐ ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। অবশেষে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[8] এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) এ ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোন মুসলমান ভাইয়ের প্রতি সম্মান কিংবা অন্য কোন বিষয়ে যুলুম করেছে, সে যেন আজই তার নিকট থেকে তা মাফ করে নেয়; ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন তার নিকটে কোন দিরহাম ও দীনার থাকবে না। যদি তার নিকট নেক আমল থাকে, তবে তাত্থেকে তার যুলুম পরিমাণ নেকী নেওয়া হবে, আর যদি তার কাছে নেকী না থাকে, তবে মাযলূম ব্যক্তির গোনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে’।[9]

মাযলূম এবং আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اِتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ. ‘তুমি মাযলূমের বদদো‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা মাযলূমের বদদো‘আ ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা থাকে না’।[10]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্য হাদীছে বলেন, ثَلاَثٌ دَعْوَاتٌ مُسْتَجَابَةٌ لاَشَكَّ فِيْهِنَّ، دَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ. ‘তিন ব্যক্তির দো‘আ সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়ে থাকে। ১- মাযলূমের দো‘আ ২- মুসাফিরের দো‘আ ও ৩- সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ’।[11] তিনি (ছাঃ) আরো বলেন, دَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ مُسْتَجَابَةٌ وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا، فَفُجُوْرُهُ عَلَى نَفْسِهِ. ‘মাযলূমের দো‘আ কবুল হয়ে থাকে। যদি সে পাপাচারী হয় তবুও। (এমতাবস্থায়) তার পাপ তার উপর বর্তাবে’।[12]

যুলুম করা বা যুলুম থেকে বেঁচে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ দো‘আটি পড়তেন- اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ الْفَقْرِ، وَأَعُوْذُبِكَ مِن الْقِلَّةِ وَالذِّلَّةِ، وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ أَنْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দারিদ্র্য, স্বল্পতা, লাঞ্ছনা এবং কারো প্রতি যুলুম করা বা যুলুমের শিকার হওয়া হ’তে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[13]

(ছ) আমানতের খেয়ানত করা : আমানতদারী একটি মহৎ গুণ। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে আমানত রক্ষায় ইসলামী শরী‘আত বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার প্রকৃত হক্বদারকে প্রত্যর্পণ করতে’ (নিসা ৪/৫৮)। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নিজেই প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তির পরিচয় ও গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘আর যারা নিজেদের আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে’ (মুমিনূন ২৩/৮; মা‘আরিজ ৭০/৩২)। মুনাফিকের লক্ষণের মধ্যে একটি অন্যতম লক্ষণ হল, وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ. ‘তার কাছে আমানত রাখলে খিয়ানত করে’।[14]

আমানতের খেয়ানত করা ক্বিয়ামতের আলামত। ক্বিয়ামতের পূর্বে আমানত উঠে যাওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি নিদ্রা গেল, তখন তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়া হবে, তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। আবার ঘুমাবে। তখন আবার তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর তার চিহ্ন ফোস্কার মত অবশিষ্ট থাকবে। তোমার পায়ের উপর গড়িয়ে পড়া অঙ্গার সৃষ্ট চিহ্ন, যাকে তুমি ফোলা মনে করবে, প্রকৃতপক্ষে তাতে কিছুই থাকবে না। মানুষ বেচাকেনা করতে থাকবে বটে, কিন্তু কেউ আমানত আদায় করবে না। তারপর লোকেরা বলাবলি করবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার লোক আছে। সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হবে যে, সে কতই না জ্ঞানী, কতই না হুঁশিয়ার, কতই না বাহাদুর? অথচ তার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে না’।[15]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. ‘যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে তখন ক্বিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেক’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জবাবে বললেন,إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. ‘যখন অযোগ্য-অদক্ষ ব্যক্তিদের কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে, তখন তোমরা ক্বিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেক’।[16]

আমানতের খেয়ানত থেকে বেঁচে থাকার জন্য রাসূল (ছাঃ) এ দো‘আটি পড়তেন- اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُوْعِ، فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيْعُ! وَأَعْوُذُبِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ، فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ. ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে পানাহ চাচ্ছি। কেননা তা কতই না নিকৃষ্ট নিদ্রা-সাথী এবং তোমার নিকট খিয়ানত থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। কেননা তা কতই না মন্দ গোপন চরিত্র’।[17]

আমানতের মূল ভিত্তি হ’ল বিশ্বাস। কেউ যখন আমানতের খিয়ানত করে, তখন সে তার বিশ্বস্ততা হারায়। যার ফলে সে জনবিচ্ছিন্নি হয়ে পড়ে।

(জ) ওয়াদা খেলাপ করা : আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা খেলাপ করা এবং মিথ্যা বলা মুনাফেকীর লক্ষণ। আর মুনাফিকের শেষ ঠিকানা হ’ল জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে এবং তুমি তাদের কখনো কোন সহায় পাবে না’ (নিসা ৪/১৪৫)। প্রকৃতপক্ষে যারা মুনাফিক তাদের বাহ্যিকভাবে চেনা কষ্টসাধ্য। কিন্তু পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, ‘আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা ঈমানদার এবং অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা মুনাফিক’ (আনকাবূত ২৯/১১)। শুধু প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হবেন না ক্বিয়ামতে তাদের কঠিন শাস্তি দিবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী- যারা আল্লাহ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, তাদেরকে শাস্তি দিবেন’ (ফাত্হ ৪৮/৬)। ওয়াদা খেলাপকারীরা ক্বিয়ামতের দিন যেমন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে, তেমন দুনিয়াবী জীবনেও তারা চরমভাবে অপমানিত হয়ে থাকে। তাই কোন মুসলমানের চরিত্রে ওয়াদা খেলাপের মত ঘৃণ্য দোষ থাকা উচিত নয়।

(ঝ) অপমান করা : প্রত্যেক মানুষেরই আত্মসম্মানবোধ আছে। কেউ যখন কারো আত্মমর্যাদাহানি ঘটায়, তখন সে তার থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া মুসলমান হিসাবে কারো মর্যাদাহানি ঘটানো ঠিক নয়। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ. ‘একজন মুসলমানের জন্য অন্য মুসলমানকে খুন করা, তার মাল গ্রাস করা ও তার সম্মানে আঘাত করা অর্থাৎ অপমান করা হারাম’।[18]

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন আমাকে মি‘রাজে গমন করানো হয়েছিল, তখন আমি এমন এক কওমের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখসমূহ ছিল তামার। তারা নখ দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ খামচাচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা মানুষের গোশত খেত (গীবত করত) এবং তাদের মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলত’।[19] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, مَنْ رَمَىَ مُسْلِمًا بِشَىْءٍ يُرِيْدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يُخْرِجَ مِمَّا قَالَ. ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কোন অপবাদ দিয়ে তার মর্যাদাহানি করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের সেতুতে আটকে দিবেন। যতক্ষণ না সে যা বলেছিল তা বের করে দেয়’।[20] পক্ষান্তরে প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব হ’ল, তার অপর ভাইয়ের মান-সম্মান রক্ষা করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের মান-সম্মান রক্ষা করল, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন’।[21]

(ঞ) ছিদ্রান্বেষণ করা : মানুষ মাত্রই কোন না কোন দোষে দোষী। শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে কোন ব্যক্তি যখন কোন অপরাধ করে, পরক্ষণে তার বিবেক জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে সে সারাক্ষণ উক্ত অপরাধের জন্য বিবেকের দংশনে জর্জরিত হ’তে থাকে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সে মহান আল্লাহর নিকটে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এহেন দোষত্রুটি খুঁজে বের করাকে ‘ছিদ্রান্বেষণ’ বলে। এটি কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَجَسَّسُوْا. ‘তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না’ (হুজুরাত ৪৯/১২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّكَ إِنِ اتَّبَعْتَ عَوْرَاتِ النَّاسِ أَفْسَدْتَهُمْ أَوْ كِدْتَ أَنْ تُفْسِدَهُمْ. ‘তুমি যদি মানুষের দোষ খুঁজে বেড়াও, তাহ’লে তুমি তাদেরকে ধ্বংস করলে অথবা প্রায় ধ্বংস করে ছাড়লে’।[22]

(ট) উপহাস করা :  কোন ব্যক্তিকে উপহাস বা তিরস্কার করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে প্রত্যেক মুসলমানকে এসব বদঅভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। কোন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার কোন দোষ এমনভাবে উল্লেখ করা, যাতে শ্রোতাদের মধ্যে হাসির খোরাক হয়। উপহাস কথায়, ভাবভঙ্গিমায় বা আকার-ইঙ্গিতেও হ’তে পারে। এরূপ কাজে উপহাসকারী অন্যকে অপমানিত, লাঞ্ছিত ও হেয় করার মধ্য দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে থাকে। ইসলামী শরী‘আতে এটি ঘৃণ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কেন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হ’তে পারে। আর কোন নারীও যেন অপর কোন নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হ’তে পারে’ (হুজুরাত ৪৯/১১)

মানুষের বাহ্যিক চালচলন ও আচার-আচরণ দেখে তাকে ভাল বা মন্দ বলা কঠিন। তাই দৃশ্যমান কার্যকলাপের মূল্যায়নে কাউকে ভাল বা মন্দ বলা ঠিক হবে না। এ ধরনের উপহাসকারীকে কেউ পসন্দ করে না।

(ঠ) তুচ্ছজ্ঞান বা হেয় প্রতিপন্ন করা : মানুষ মাত্রই আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং একজন আরেকজনকে তুচ্ছ বা হেয়জ্ঞান করতে পারে না। যখন কোন ব্যক্তি কাউকে হেয়জ্ঞান করে তখন স্বভাবতই সে নিজেকে তার চেয়ে শ্রেয় মনে করে, যা অহংকারের পর্যায়ভুক্ত। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীছে জনৈক ছাহাবীর এক প্রশ্নের উত্তরে অহংকারের ব্যাখ্যা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَ غَمْطُ النَّاسِ. ‘অহংকার হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা এবং লোকদের নীচুজ্ঞান করা’।[23] এজন্য কথা, কর্ম বা আচরণের মাধ্যমে কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করা বা হেয় প্রতিপন্ন করা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, بِحَسْبِ امْرِءٍ مِّنَ الشَّرِّ أَنْ يُّحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ. ‘এক ব্যক্তি গোনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে নীচুজ্ঞান করবে’।[24] অপর হাদীছে আছে, وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَيَحْقِرُهُ ‘কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে না অপমান করবে, আর না তুচ্ছজ্ঞান করবে’।[25] সুতরাং কোন মুসলমানের পক্ষে মানুষকে হেয়জ্ঞান করা মহা অন্যায়।

(ড) ক্ষতিসাধন করা : ক্ষতি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। তবে সাধারণ অর্থে কোন মানুষের দ্বারা অপর মানুষের বাহ্যতঃ যেসব ক্ষতি হওয়া সম্ভব সেগুলোই উদ্দেশ্য। যে ব্যক্তি অপরের ক্ষতিসাধন করে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিসম্পাত প্রাপ্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ ضَارَّ ضَارَّ اللهُ بِهِ وَمَنْ شَاقَّ شَاقَّ اللهُ عَلَيْهِ. ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের ক্ষতিসাধন করল, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কষ্ট দিল, আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন’।[26] এরূপ ব্যক্তিকে দুনিয়ার মানুষ না ভালবাসে, না তার সাথে মেলামেশা করে। তাই একজন মুসলমানের উচিত দ্বীনী ভাইয়ের কোন প্রকার ক্ষতিসাধন না করে সর্বদা তার কল্যাণ কামনা করা। এতে একদিকে যেমন ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে।

(ঢ) ধোঁকা বা প্রতারণা করা : কথাবার্তা, লেনদেন বা কার্যকলাপে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ইসলামী শরী‘আতে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে আমাদের ধোঁকা দিবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[27]

মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ যে বান্দার উপর শাসন কর্তৃত্ব অর্পণ করেন, সে যদি তার অধীনস্তদের সাথে প্রতারণাকারী অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন’।[28]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَلْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ، وَالْفَاجِرٌ خَبٌّ لَئِيْمٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি হয় উজ্জ্বল চরিত্র সম্পন্ন ও উদারহস্ত আর পাপাচারী লোক হয় শঠ এবং নীচু প্রকৃতির’।[29] তাই নিজেকে সচ্চরিত্রবান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার লক্ষ্যে ধোঁকা ও প্রতারণার পথ পরিহার করা উচিত।

(ণ) হিংসা করা : হিংসা-বিদ্বেষ বা পরশ্রীকাতরতা একটি মারাত্মক ঘৃণ্য ও ক্ষতিকর অভ্যাস। পরশ্রীকাতরতার মধ্যে নিজের প্রাপ্তির চেয়ে অন্যের ক্ষতির কামনাটাই বেশি ক্রিয়াশীল থাকে। তাই ইসলামী শরী‘আত হিংসাকে হারাম করেছে। শত্রুতা, অহংকার, ক্ষমতার মোহ প্রভৃতি কারণে একে অপরের প্রতি হিংসা করে থাকে। হিংসাকারীকে মানুষ ভালবাসে না। তাছাড়া হিংসার কারণে মানুষের নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীছের শুরুতেই রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَتَحَاسَدُوْا ‘তোমরা পরস্পর হিংসা কর না’।[30] মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে হিংসুকের হিংসা থেকে পরিত্রাণ কামনায় উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ‘আর হিংসুকের হিংসা থেকে (পরিত্রাণ চাই), যখন সে হিংসা করে’ (ফালাক্ব ১১৩/৫)। সুতরাং এই ক্ষতিকর অভ্যাস পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

উল্লেখ্য যে, কোন্ ক্ষেত্রে হিংসা করা যাবে সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত কেউ ঈর্ষার পাত্র নয়। প্রথম ঐ ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সাথে সাথে তাকে তা সত্যের পথে ব্যয় করার মানসিকতাও দান করেছেন এবং দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ হিকমত দিয়েছেন, সে তা দিয়ে ফায়ছালা করে এবং মানুষকে তা শিক্ষা দেয়’।[31]

(ত) অহঙ্কার করা : আত্মার ব্যাধিসমূহের মধ্যে অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি। অহংকার হল নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেয় বা বড় জ্ঞান করা এবং অন্যকে নিজের তুলনায় তুচ্ছ ও নিকৃষ্ট মনে করা। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে ইবলীস। আল্লাহ যখন জান্নাতে সকল ফেরেশতাকে আদমকে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা ইবলীসকে জিজ্ঞেস করে বলেন, ‘আমি নির্দেশ করার পরও তাকে সেজদা করতে তোমাকে কিসে নিষেধ করল?’ (আ‘রাফ ৭/১২)। তখন ইসলীস বলেছিল, ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ, আর তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছ’ (আ‘রাফ ৭/১২)। মহান আল্লাহ তখন বলেন, ‘এখান থেকে নেমে যাও। এখানে থেকে অহংকার করবে, তা হ’তে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত’ (আ‘রাফ ৭/১৩)

অহংকারী ব্যক্তি যেহেতু নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে, সে কারণে সে সাধারণ মানুষের সাথে উঠা-বসা, পানাহার, কথাবার্তা ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখে। সাধারণ মানুষের সাথে মেলামেশার বিষয়টি তার শানের খেলাপ বলে মনে করে। সে কারণে আল্লাহ অহংকারীকে পসন্দ করেন না। পবিত্র কুরআনে লোকমান হাকীম কর্তৃক পুত্রকে প্রদত্ত উপদেশ বিধৃত হয়েছে, ‘অহংকারবশে তুমি মানুষের সঙ্গে মুখ ভেংচিয়ে কথা বলবে না এবং পৃথিবীতে অহংকার প্রদর্শন করে বিচরণ করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন আত্মম্ভরি দাম্ভিককে পসন্দ করেন না’ (লোক্বমান ৩১/১৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করবে না। তুমি তো কখনই পদভারে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনই পর্বত সমান হ’তে পারবে না’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৭)। প্রচুর প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্যের অধিকারী কারূণকে আল্লাহ তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে বিলীন করে দিয়েছিলেন তার দাম্ভিকতার কারণে (ক্বাছাছ ৭৬-৮১)। অহংকার সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার ইযার। সুতরাং যে ব্যক্তি এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে ঢুকাব’। অপর বর্ণনায় আছে, ‘আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’।[32] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِّنْ كِبْرٍ، ... اَلْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ. ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ... অহংকার হল দম্ভের সাথে সত্যকে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে হেয় ও তুচ্ছ মনে করা’।[33]

অহংকারীর পরিণতি সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছে আরো স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। আমর ইবনু শু‘আয়েব তার পিতার সূত্রে এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘অহংকারীরা ক্বিয়ামতের দিন মানুষরূপী পিপীলিকা সদৃশ হবে। লাঞ্ছনা ও অপমান চতুর্দিক থেকে তাদেরকে পরিবেষ্টিত করে রাখবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি কারাগারের দিকে তাড়িয়ে নেওয়া হবে, যার নাম বুলাস। তাদের জন্য জাহান্নামের লেলিহান অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের দুর্গন্ধময় ঘাম ও বিষাক্ত পানীয় পান করতে দেওয়া হবে’।[34] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ. ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবগত করব না? তারা হ’ল- অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদকারী, বদ মেজাযী, অহংকারী’।[35] দুনিয়াতেও স্বাভাবিক অবস্থায় অহংকারী ব্যক্তিকে মানুষ পসন্দ করে না। তাই ইহ ও পরকালীন মুক্তির স্বার্থে এই গর্হিত অভ্যাস থেকে প্রত্যেক মুমিনকে দূরে থাকা একান্ত যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لاَيَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট এ মর্মে অহী করেছেন যে, তোমরা নম্র হও। কেউ কারো উপর গর্ব কর না’।[36]

(থ) মন্দ নামে ডাকা : পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির একটি বড় বিষয় হ’ল আন্তরিকতাপূর্ণ সম্বোধন। সেক্ষেত্রে কোন প্রকার ঘাটতি থাকলে হৃদ্যতারও ঘাটতি ঘটে। সমাজে অনেককে দেখা যায়, কোন ব্যক্তি হয়তো কখনো কোন অন্যায় কাজ করেছে, পরবর্তীতে তার নামের সাথে ঐ অপকর্মের পরিচিতি উল্লেখ করে আগে বা পরে উপাধি লাগানো হয়েছে। যা ঐ ব্যক্তির জন্য অবশ্যই কষ্টদায়ক। কাউকে লাঞ্ছিত করা, হেয় প্রতিপন্ন করা বা লজ্জা দেয়ার উদ্দেশ্যে এরূপ মন্দ নামে ডাকা ইসলামী শরী‘আতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না; ঈমান আনার পরে কাউকে মন্দ নামে ডাকা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১১)। তাছাড়া কোন ব্যক্তি চায় না যে, তাকে কেউ মন্দ নামে সম্বোধন করুক। তাই অন্যের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ সম্পর্কে নিম্নের হাদীছটি স্মরণযোগ্য।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! কোন বান্দা পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হ’তে পারবে না, যে পর্যন্ত সে কোন মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেটা পসন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে’।[37] অবশ্য হাদীছটি ব্যাপক অর্থবোধক। তাই শুধু কাউকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্র হাদীছের অনুসরণ অতীব প্রয়োজন। ইসলামী শরী‘আতের এই বিধান থেকে দূরে সরে থাকার কারণে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে সমাজে নানা রকম অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

(দ) ক্রোধান্বিত হওয়া : ক্রোধ অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ। কোন মানুষ যখন রাগান্বিত হয়ে উঠে, তখন তার আপাদমস্তক এমনকি শিরা-উপশিরায় এমন উত্তেজনা বিরাজ করে, যেন সে একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। একারণে রাগান্বিত অবস্থায় সে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে এবং ন্যায়-নীতির সীমা অতিক্রম করে ফেলে। এ কারণেই ইসলামী শরী‘আত ক্রোধকে মন্দ স্বভাব বলে আখ্যায়িত করেছে। সৃষ্টির উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানব শরীরে রাগ আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু রাগ একটি ক্ষতিকর অভ্যাস, তাই একে সংবরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে জনৈক ব্যক্তির উপদেশ প্রার্থনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, لاَتَغْضَبْ ‘তুমি রাগ কর না’।[38] ক্রোধ সংবরণের ক্ষেত্রে নিম্নের হাদীছটি সুস্পষ্ট।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় পরাভূত করে। বস্ত্তত সেই প্রকৃত বীর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে’।[39]

আবু যার (রাঃ) বর্ণিত অপর এক হাদীছে ক্রোধ সংবরণের কৌশল হিসাবে বলা হয়েছে, إِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ قَائِمٌ فَلْيَجْلِسْ فَإِنْ ذَهَبَ عَنْهُ الْغَضَبُ وإِلاَّ فَلْيَضْطَجِعْ. ‘যখন তোমাদের কেউ ক্রদ্ধ হবে তখন দাঁড়িয়ে থাকলে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি তার রাগ দূর না হয় তাহ’লে সে যেন শুয়ে পড়ে’।[40]

ক্রোধ সংবরণ করার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ أَنْ يُّنَفِّذَهُ، دَعَاهُ اللهُ عَلَى رُوُؤْسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِىْ أَىِّ الْحُوْرِ شَاءَ. ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রাগ চেপে রাখে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টজীবের সামনে তাকে আহবান করে যে কোন হূর নিজের জন্য পসন্দ করার অধিকার দিবেন’।[41]

অন্য হাদীছে এসেছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন ব্যক্তির রাগ দমন করার চেয়ে আল্লাহর নিকট বড় প্রতিদান আর নেই’।[42]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট দু’ব্যক্তি ঝগড়া করার সময় একজনের রাগান্বিত হওয়া ও চেহারা লাল হয়ে যাওয়া দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنِّىْ لَأَعْرِفُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِىْ يَجِدُ: أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. ‘আমি এমন একটি বাক্য জানি, যদি সে তা বলে তাহ’লে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সেটি হ’ল- ‘আ‘উযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রজীম’- ‘আমি বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি’।[43] অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ. ‘যখন তুমি ক্রদ্ধ হবে তখন চুপ থাকবে’।[44] সুতরাং একজন মুসলমানের উচিত রাগান্বিত অবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। এর মাধ্যমে যেকোন অনিষ্ট হ’তে যেমন রক্ষা পাওয়া সহজ হবে, তদ্রূপ পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ববোধের সৌধও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।

(ধ) সন্দেহযুক্ত আচরণ করা : কোন মুমিন ভাই বা বন্ধুর সম্মুখে এমন কোন আচরণ করা ঠিক হবে না, যার ফলে তার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরকম আচরণ পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরায়। এ প্রসঙ্গে নিম্নের হাদীছ প্রণিধানযোগ্য।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা তিন জন একত্রে থাকবে, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দুই জনে চুপে চুপে কথা বলবে না; অন্যান্য লোকের সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত। এটি এজন্য যে, এ (আচরণ) তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে’।[45]

শুধু কানে কানে কথা বলাই নয়, বন্ধুর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হ’তে পারে এরূপ সকল আচরণ ও কর্ম থেকে দূরে থাকা উচিত।

(ন) গালি দেওয়া : মুমিনের যবান সংযত থাকা একান্ত কাম্য। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে পরিবেশ দূষিত করা তার জন্য শোভা পায় না। আচার-ব্যবহার ও ভাষার সৌন্দর্য পারস্পরিক বন্ধুত্ব সৃষ্টি ও তা স্থায়ীকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ. ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী ও হত্যা করা কুফরী’।[46] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, اَلْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِىْ مِنْهُمَا مَالَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُوْمُ. ‘মাযলূম যদি সীমালংঘন না করে তাহ’লে দু’জন গালিগালাজকারী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যে সূচনাকারী তার উপর উভয়ের পাপ বর্তাবে’।[47] আরেকটি হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَهَاتَرَانِ، وَيَتَكَاذَبَانِ. ‘যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা উভয়েই শয়তান। উভয়েই কটু কথা বলে এবং উভয়েই মিথ্যুক’।[48]

উপসংহার : পৃথিবীর সকল মানুষ মুসলিম ও অমুসলিম- এই দুই ভাগে বিভক্ত। ইসলাম মুসলমানদের ধর্ম হ’লেও ইসলামের বিধান শুধুমাত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রে নয়, সকল মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ যেমন আলো-বাতাস, খাদ্য-পানিতে মুসলিম-অমুসলিমে বেশ-কম করেন না। তদ্রূপ একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সাথে মৌলিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণের কোন বাছ-বিচার করা উচিত নয়। অর্থাৎ আদম সন্তান হিসাবে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। অতঃপর শারঈ বিধান মতে একজন মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব আছে। সে সকল দায়িত্ব পালনের অন্যতম উপায় হল পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব স্থাপন। কারো সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন বা শত্রুতার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই সীমালঙ্ঘন করা ঠিক হবে না। আলী (রাঃ) ইবনুল কাওয়াকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘প্রবীণরা কি বলেছেন জান? তোমরা বন্ধুর প্রতি বন্ধুত্ব প্রদর্শন করতেও সীমার মধ্যে থাকবে। কাল হয়ত সে তোমার শত্রুতে পরিণত হবে। আর তোমরা শত্রুর প্রতি শত্রুতা পোষণ করতেও সীমার মধ্যে থাকবে। কাল সে তোমার বন্ধুতেও পরিণত হবে’।[49] মহান আল্লাহ সকলকে শারঈ বিধান মোতাবেক সকলের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দুনিয়াবী জীবনে শান্তি এবং পরকালীন জীবনে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমীন\


[1]. মুত্তাফাক্বব আলাইহ, মিশকাত, হা/ ৪৮২৩।

[2]. মুত্তাফাক্বব আলাইহ, মিশকাত, হা/ ৪৮২২।

[3]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৩ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩১০; সিলসিলা ছহীহা হা/৮৮৯, মিশকাত, হা/৪৮৪৬, হাদীছ হাসান।

[4]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/ ৩২৩, আত-তা‘লীকুর রাগীব ৩/২৬০, ২৯৫, হাদীছ হাসান।

[5]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৫৩৮; মিশকাত হা/৩৩৮।

[6]. মুসলিম, হা/২৫৭৭।

[7]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/৫১২৩।

[8]. মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত, হা/৫১২৭।

[9]. বুখারী, মিশকাত, হা/৫১২৬।

[10]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/১৭৭২

[11]. তিরমিযী হা/১৯০৫ ‘সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭, হাদীছ হাসান

[12]. আহমাদ হা/৮৪৪০, ২/৩৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৮২, হাদীছ হাসান

[13]. নাসাঈ হা/৫৪৬০ ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪, মিশকাত হা/২৪৬৭ হাদীছ ছহীহ

[14]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫।

[15]. বুখারী হা/৬৪৯৭ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২৩০ ‘ঈমান’ অধ্যায়

[16]. বুখারী হা/৬৪৯৬ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, ‘আমানত উঠে যাওয়া’ অনুচ্ছেদ

[17]. নাসাঈ হা/৫৪৬৮-৬৯ ‘আশ্রয় চাওয়া’ অধ্যায়, ১৯ ও ২০ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/২৪৬৯, হাদীছ হাসান ছহীহ

[18]. মুসলিম; বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫২৮।

[19]. আবূদাউদ, হা/৪৮৭৮; মিশকাত হা/৫০৪৬; বঙ্গানুবাদ রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫২৭, হাদীছ ছহীহ।

[20]. আবুদাঊদ হা/৪৮৮৩; মিশকাত হা/৪৯৮৬, হাদীছ হাসান

[21]. তিরমিযী, হা/১৯৩১, হাদীছ ছহীহ।

[22]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৮, হাদীছ ছহীহ

[23]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮ ।

[24]. মুসলিম, হা/২৫৬৪।

[25]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৯

[26]. ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, হা/১৯৪০; মিশকাত হা/৫০৪২, হাদীছ হাসান।

[27]. মুসলিম হা/১৬৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়

[28]. বুখারী হা/৭১৫০ ‘আহকাম’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়।

[29]. আবূদাঊদ হা/৪৭৯০; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৪১৮, হাদীছ ছহীহ ।

[30]. মুসলিম, বুলূগুল মারাম, হা/ ১২৯১।

[31]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০২

[32]. মুসলিম, মিশকাত, হা/৫১১০।

[33]. মুসলিম হা/১৪৭, মিশকাত, হা/৫১০৮।

[34]. তিরমিযী হা/২৪৯২; মিশকাত হা/৫১১২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৫৭, হাদীছ হাসান।

[35]. বুখারী হা/৬০৭১ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘অহংকার’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫১০৬

[36]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৭৯; আবূদাঊদ হা/৪৯৫; সিলসিলা ছহীহা হা/৫৭০, হাদীছ ছহীহ

[37]. মুসলিম হা/৭২।

[38]. বুখারী, মিশকাত, হা/৫১০৪।

[39]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, হা/৫১০৫।

[40]. আহমাদ, তিরমিযী, আবূদাঊদ হা/৪৭৮২, মিশকাত, হা/৫১১৪, হাদীছ ছহীহ।

[41]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৬; তিরমিযী হা/২০২১; সিলসিলা ছহীহা হা/১৭৫০, হাদীছ ছহীহ

[42]. ইবনু মাজাহ, হা/৪১৮৯, আহমাদ, মিশকাত হা/৫১১৬, হাদীছ ছহীহ

[43]. বুখারী হা/৬১১৫; মুসলিম হা/২৬১০ ‘সদ্ব্যবহার ও শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে তার ফযীলত ও কিসের দ্বারা রাগ দূরীভূত হয়’ অনুচ্ছেদ

[44]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩২০; সিলসিলা ছহীহা হা/১৩৭৫, হাদীছ ছহীহ লি-গায়রিহি

[45]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৬৫।

[46]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৮১৪

[47]. তিরমিযী হা/১৯৮১, হাদীছ ছহীহ

[48]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪২৭, আত-তা‘লীকুর রাগীব ৩/২৮৫, হাদীছ ছহীহ

[49]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১৩২১।






বিষয়সমূহ: নীতি-নৈতিকতা
প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের শিষ্টাচার - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (২য় কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
কুরআন-হাদীছের আলোকে ভুল - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
চিন্তার ইবাদত (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
শরী‘আহ আইন বনাম সাধারণ আইন : একটি পর্যালোচনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
যেসব ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৩য় কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ‘আত-তাহরীক’-এর ভূমিকা - বযলুর রশীদ
আল-কুরআনের আলোকে জাহান্নামের বিবরণ (২য় কিস্তি) - বযলুর রশীদ
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে শিথিলতা : আমাদের করণীয় (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
দাজ্জাল : ভ্রান্তি নিরসন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আরও
আরও
.