পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব ।
ভূমিকা :
সুবিশাল সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হ’ল মানুষ। পৃথিবীর সকল মানুষ এক আদমের সন্তান। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أََيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْراً وَّنِسَاءً. ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। এ দু’জন থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন’ (নিসা ৪/১)। সেই সুবাদে জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষ আদম-হাওয়া পরিবারের সদস্য এবং পরস্পর ভাই ভাই।
প্রত্যেক মানুষ স্বভাবধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ،ِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيْمَةُ بَهِيْمَةً جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّوْنَ فِيْهَا مِنْ جَدْعَاءَ؟ ثُمَّ يَقُوْلُ : فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ.
‘প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত (স্বভাবধর্ম)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। যেভাবে পশু পূর্ণাঙ্গ পশুই প্রসব করে, তাতে তোমরা কোন কানকাটা দেখ কি? (দেখ না। অতঃপর মানুষ তার কান কেটে, নাক ছিদ্র করে বিকলাংগ করে দেয়)। অতঃপর তিনি (এর প্রমাণে এই আয়াতটি) পাঠ করলেন, আল্লাহর ফিতরাত যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটিই সরলসোজা মযবূত দ্বীন’।[1] আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হ’ল সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা। শরীরের একটি অঙ্গ যেমন পৃথকভাবে কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজে বসবাসকারী লোকদেরকেও পৃথকভাবে ভাবার কোন অবকাশ নেই। মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ)-এর নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্যই সঙ্গী হিসাবে বিবি হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। সহজাত প্রবৃত্তির তাড়না এবং বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের তাগিদে মানুষকে সামাজিক পরিবেশে বসবাস করতে হয়। মানব জীবনে সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, Man is dependent on society for protection, comfort, nurture, education, equipment, opportunity and the multitude of definite services which society provides. His birth in socicty brings with it the absolute need of society itself. ‘মানুষ তার নিরাপত্তা, সুখ, পরিচর্যা, শিক্ষা, উপকরণ, সুযোগ-সুবিধা এবং সমাজের দেয়া বহুমুখী সেবাকার্যের জন্য সমাজের উপর নির্ভরশীল। সমাজে মানুষের জন্মগ্রহণই সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা সূচিত করে’।
মানুষ হিসাবে সমাজে সকল মানুষের মর্যাদা সমান। আলী (রাঃ) বলেন,
اَلنَّاسُ مِنْ جِهَّةِ التَّمْثِيْلِ أَكْفَاءُ * أَبُُوْهُمْ آدَمُ وَالْأُمُّ حَوَّاءُ
نَفْسٌ كَنَفْسٍ وَأَرْوَاحٌ مُشَاكَلَةٌ * وَأَعْظُمٌ خُلِقَتْ فِيْهَا وَأَعْظَاءُ.
‘আকৃতির দিক দিয়ে সকল মানুষ সমান। তাদের বাবা আদম ও মা হাওয়া (আঃ)। মানুষের অন্তর এবং তাদের রূহগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রত্যেকের দেহ হাড্ডি দ্বারা তৈরী। আর তাতে রয়েছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ’।[2] তবে কর্মে, জ্ঞানে, পদমর্যাদায় একজন অপরজন থেকে স্বতন্ত্র্য হয়ে ওঠে। ইসলামী শরী‘আতের বিধান মতে আরব-অনারব, সাদা-কালো, ধনী-গরীবের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। এক কথায় সকলেই আদম সন্তান, আর আদম মাটির তৈরী। তাই একজন মানুষের পক্ষে অন্য মানুষকে ঘৃণা করা, অবজ্ঞা করা, অপমান বা অসম্মান করা, হেয়জ্ঞান করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। বরং যে মানুষ আত্মমর্যাদার সঙ্গে পরমর্যাদার বিষয়টি সংযুক্ত করে আত্ম-পর এক করে গ্রহণ করে, সেই প্রকৃত মানুষ। আর একে অপরের প্রতি এই সহানুভূতিশীল মনোভাবকেই বলে ‘ভ্রাতৃত্ব’।
আরবীতে أُخُوَّةٌ শব্দের অর্থ ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ইত্যাদি। তত্ত্বকথায় পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা, আন্তরিকতা, সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নিবিড় সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্ব বলা হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর শান্তির অন্যতম নিয়ামক হ’ল ভ্রাতৃত্ব। বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করলে অর্থাৎ ব্যবহারিক দিক থেকে ‘ভ্রাতৃত্ব’ তিন প্রকার। যেমন- জন্মগত ভ্রাতৃত্ব, জাতিগত বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। এ তিনটি স্তর কমবেশী পরস্পরের পরিপূরক। ইসলামী শরী‘আতে ভ্রাতৃত্বের উক্ত তিনটি স্তরই স্বীকৃত।
জন্মগত ভ্রাতৃত্ব : একই ঔরসজাত পিতার সহোদর সন্তানের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব তাই জন্মগত ভ্রাতৃত্ব। আর এটিই সকল ভ্রাতৃত্বের উৎসমূল।
জাতিগত বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব : মানুষ সৃষ্টিগতভাবে যেমন পরস্পর ভাই ভাই, তেমনি ব্যবহারিক দিক থেকে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, মানুষ যে দেশের, ভাষার, গোত্রের, বর্ণের, পরিবেশের হোক না কেন, সকলের মৌলিক চাহিদা, অনুভূতি ও উপলব্ধির মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। শ্বসন প্রক্রিয়া, রেচনতন্ত্রের ক্রিয়া, শোণিত প্রবাহসহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গাদির ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সকল মানুষের একই। তাই বিশ্বের সকল মানুষ ভাই ভাই। এটাই হ’ল জাতিগত ভ্রাতৃত্ব বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব।
বিশ্বভ্রাতৃত্বের মূল উৎস হ’ল তাওহীদ। একজন মানুষ জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে, অন্য কারো নয়। তার উন্নত ললাট দুনিয়ার কোন মানুষের সামনে কিংবা দুর্ধর্ষ দিগ্বিজয়ী বীরের কাছেও নত হবে না। সকলে আদম সন্তান হিসাবে ভাই ভাই। সুতরাং সবাই সবার সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকবে এটাই মূলত তাওহীদের অন্তর্নিহিত দাবী।
কালের বিবর্তনে বনু আদমের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দূরত্ব, আবহাওয়া, ভৌগলিক পরিবেশসহ বিভিন্নমুখী প্রভাবে তারা নানা গোত্র, বর্ণ, আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি ও ভাষার মানদন্ডে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। স্বতন্ত্র্য পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে তাদের আদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেও ফাটল ধরে। ফলশ্রুতিতে যত দিন যায় ততই তারা সৃষ্টির প্রকৃত পরিচয় ভুলে কার্যক্ষেত্রে একে অপরের শত্রুতে পরিণত হ’তে থাকে। ধন-সম্পদ, বংশ মর্যাদা এবং ভাষা ও বর্ণের মিথ্যা আভিজাত্যের দম্ভে মদমত্ত হয়ে তারা দিন দিন অন্ধ হয়ে পড়ে। যে কারণে অতি তুচ্ছ বিষয় ও ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি, কাটাকাটি, হিংসা-হানাহানী, খুন, রাহাজানী ইত্যাকার উচ্ছৃঙ্খল ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে মানুষ অহরহ লিপ্ত আছে। আর এই বংশ, গোত্র, অর্থ-সম্পদ, বর্ণ-রূপ, ভাষা-অঞ্চল, আকৃতি-প্রকৃতি ইত্যাদি ভেদবুদ্ধির কারণে পৃথিবীতে একশ্রেণীর মানুষ প্রভুত্বের আসনে সমাসীন হয়ে অন্য শ্রেণীকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে অভ্যস্থ।
ভারতীয়রা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ছাড়া সারা দুনিয়ার মানুষকে ‘ম্লেচ্ছ’, ‘অস্পৃশ্য’, ‘যবন’ ইত্যাদি গণ্য করেছে। একই সাথে নিজেদেরকে ব্রাহ্মন, খৈত্রীয়, শুদ্র ও বৈম্য এই চারটি বর্ণে বিভক্ত করে নিজেদের মধ্যে সম্মান ও অধিকারের তারতম্য সৃষ্টি করেছে। সেখানে শুদ্রদের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার পর্যন্ত খর্ব করা হয়েছে। প্রাচীন ইরানীয়রাও এভাবে চারটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। রোমানরা নিজেদেরকে প্রভুত্বের আসনে সমাসীন করে অন্যদেরকে গোলাম তুল্য জ্ঞান করত। প্রাচীন ইহুদীরা নিজেদের ব্যতীত দুনিয়ার সবাইকে পাপী ও ছোটলোক মনে করত। বনী ইসরাঈলরা নিজেদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে গণ্য করত। আল্লাহ বলেন, وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاءُ اللّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوبِكُمْ بَلْ أَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَاءُ وَيُعَذِّبَ مَنْ يَّشَاءُ. ‘ইহুদী ও খৃষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি প্রদান করবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দান করেন’ (মায়েদাহ ৪/১৮)। চীনের প্রাচীন নামই ‘স্বর্গরাজ্য’। সুতরাং তাদের নিকট চীন বাদে সমগ্র পৃথিবী নরক তুল্য। ইউরোপে শ্বেতাঙ্গরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির একচ্ছত্র অধিকারী বলে দাবী করত। কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের সমপর্যায়ের বলে বিবেচিত হ’ত না। আমেরিকার মানবদরদীদের দৃষ্টিতে সেখানকার হাবশী বা নিগ্রো বাসিন্দাদের তো বেঁচে থাকারও কোন অধিকার ছিল না। এমনকি সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের সাথে পড়ার অধিকার পর্যন্ত পেত না। আর দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকায় কেবল হাবশীই নয়; বরং ভারতীয় তথা এশীয়রাও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। পার্থিব অধিকারের বিষয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিমন্ডলের সীমা ছাড়িয়ে এসব ভেদাভেদ উপাসনালয় পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৃষ্টিকর্তার দুই বান্দা একই উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার কোন সুযোগ নেই। শ্বেতাঙ্গদের গির্জা আলাদা, কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জা পৃথক। অথচ মানুষ একটিবারের জন্যও চিন্তা করে না যে, বাইরের ঐ পাতলা চামড়াটুকুর নীচে যে আসল প্রাণশক্তি রক্ত-ধারা, রাসায়নিক বিশ্লেষণে তাতে কোনই পার্থক্য নেই। আর মানুষে মানুষে গোত্র, ভাষা ও বর্ণের বিভাজনে তাদের নিজেদের তো কোন হাত নেই। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে, যার মূল এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হ’ল পারস্পরিক পরিচিতি; গর্ব-অহঙ্কর বা ঘৃণা করার জন্য নয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وُّأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ. ‘হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হ’তে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বহু সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হ’তে পার। তবে আল্লাহর নিকটে সেই শ্রেষ্ঠ, যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর খবর রাখেন’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।
মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে এই যে বিভেদের প্রাচীর সহস্রাধিক বর্ষ হ’তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মানুষের জ্ঞান, পৌরুষ ও আত্মসম্মানকে নিরবে ধিক্কার দিচ্ছিল, মহানবী (ছাঃ) এসে সে বাধার প্রাচীর ভেঙে দিয়ে মহাসাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী উচ্চকিত করে মানুষের মৌলিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلاَ إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، لاَ فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى عَجَمِىٍّ وَلاَ لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلاَ لِأَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ وَلاَ لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ إِلاَّ بِالتَّقْوَى. ‘হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের সকলের প্রভু এক। অতএব অনারবীর উপর আরবের, আরবীর উপর অনারবের, লালের উপরে কালোর এবং কালোর উপরে লালের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই তাক্বওয়া ব্যতীত।[3] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, النَّاسُ بَنُوْ آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ ‘প্রত্যেক মানুষ আদম সন্তান, আর আদম মাটির তৈরী’।[4]
মানবতার চিরন্তন আকাঙ্খা হচ্ছে বিশ্বজুড়া প্রেম, ভালবাসা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সুনিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা। বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের উচিত বিশ্বভ্রাতৃত্বের অধীনে সংঘবদ্ধ হয়ে কল্যাণের অনুগামী হওয়া। আর এটাই মূলতঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। ইসলাম কোন অবস্থাতেই ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদকে সমর্থন করে না।
পৃথিবীর সকল মানবের মূলে আছে এক জোড়া মানব-মানবী আদম ও হাওয়া (আঃ)। সংখ্যাধিক্যের কারণে আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন বর্ণে, গোত্রে ও ভাষায় বিভক্ত করেছেন শুধুমাত্র পারস্পরিক পরিচিতির জন্য, গর্ব-ঘৃণা বা ঝগড়-বিবাদ করার জন্য নয়। কেননা আল্লাহর নিকটে শ্রেষ্ঠত্ব বা সম্মানের মাপকাঠি একটাই, তা হ’ল তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। তাছাড়া বান্দার প্রতি আল্লাহর হাযারো নিদর্শনের মধ্যে ভাষা ও বর্ণের বিভাজন অন্যতম নিদর্শন। মহান আল্লাহ বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلاَفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالَمِيْنَ. ‘তার নিদর্শনের মধ্যে আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে পৃথিবীবাসীর জন্য নিদর্শনাবীল রয়েছে’ (রূম ৩০/২২)। অর্থাৎ মানুষে মানুষে ভাষা ও বর্ণের বিভাজন ঘৃণা বা অহংকার করার জন্য নয়; বরং শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। মহান আল্লাহর নিকটে সঊদী আরব বা আমেরিকার অধিবাসীরা সম্মানিত নয়; বরং সমগ্র মাবন জাতি তথা সকল আদম সন্তানই সম্মানিত। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً. ‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে তাদেরকে অনেকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’ (বনী ইসরাইল ১৭/৭০)।
এখানে আল্লাহ মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী কিংবা কোন বিশেষ অঞ্চল, ভাষা বা বর্ণের মানুষদের কথা না বলে সকল বনু আদমের কথা উল্লেখ করেছেন। ইসলামী বিশ্বাসের এই উদার বহিঃপ্রকাশ মানুষের মধ্যে রক্ত, বর্ণ, ভাষা, গোত্র ও ভৌগলিক সীমারেখার সকল ব্যবধান চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে মানব জাতিকে এক পরিবারে পরিণত করেছে।
বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে বিদায় হজের ময়দানে মহানবী (ছাঃ) বলেন, اِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هذَا، فِىْ شَهْرِكُمْ هذَا فِىْ بَلَدِكُمْ هذَا. ‘তোমাদের একের রক্ত (জীবন) ও সম্পদ তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম- যেভাবে এই দিনে, এই মাসে, এই শহরে হারাম’।[5] এই মর্মে রাসূল (ছাঃ) আরও বেশ কিছু হাদীছ বর্ণনা করেছেন। যেমন, হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একটি হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَيَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَّ يَرْحَمُ النَّاسَ. ‘আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’।[6] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেন, وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ قِيْلَ مَنْ يَا رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اَلَّذِيْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. ‘আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে রাসূল (ছাঃ)! সে কে? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট হ’তে নিরাপদ নয়’।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’।[8]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيْرُ الْجِيْرَانِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সাথী সে, যে তার সঙ্গী-সাথীর নিকট উত্তম। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার পড়শীর নিকট উত্তম’।[9]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُّحِبَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أَوْ يُحِبَّهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ فَلْيَصْدُقْ حَدِيْثَهُ إِذَا حَدَّثَ، وَلِيُؤَدِّ أَمَانَتَهُ إِذَا اؤْتُمِنَ. وَلِيُحْسِنْ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَهُ.
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসতে চায় অথবা চায় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) তাকে ভালবাসুক, সে যেন কথা বলার সময় সত্য কথা বলে, আমানত রাখা হ’লে তা আদায় করে এবং প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করে’।[10]
عَنْ مُجَاحِدٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو ذُبِحَتْ لَهُ شَاةٌ فِىْ أَهْلِهِ، فَلَمَّا جَاءَ قَالَ : أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُوْدِىِّ؟ أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُوْدِىِّ؟ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : مَازَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِىْ بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ.
‘মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে ছাগল যবেহ করা হ’ল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে হাদিয়া স্বরূপ কিছু পাঠিয়েছ? তোমরা কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে হাদিয়া স্বরূপ কিছু পাঠিয়েছ? আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমাকে জিবরীল (আঃ) প্রতিবেশীর ব্যাপারে সর্বদা উপদেশ দিয়ে থাকেন। এমনকি আমার এ ধারণা সৃষ্টি হ’ল যে, তিনি তাকে ওয়ারিছ বানিয়ে ছাড়বেন’।[11]
অন্য এক হাদীছে তিনি বলেন, إِرْحَمُوْا مَنْ فِىْ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَّنْ فِىْ السَّمَاءِ.ِ ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহ’লে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’।[12]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
جَعَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَّتِسْعِيْنَ، وَأَنْزَلَ فِى الْأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا، فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الْخَلْقُ، حَتَّى تَرْفَعَ الْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا، خَشْيَةَ أَنْ تُصِيْبَهُ.
‘আল্লাহ তা‘আলা দয়াকে ১০০টি অংশে বিভক্ত করেছেন। অতঃপর তাঁর নিকটে ৯৯টি অংশ রেখে দিয়েছেন এবং পৃথিবীতে মাত্র একটি অংশ দিয়েছেন। সেই অংশ থেকেই সৃষ্টজীব পরস্পর দয়া করে। এমনকি পদদলিত হওয়ার ভয়ে ঘোড়া সন্তান থেকে তার ক্ষুরকে উঁচু করে রাখে’।[13]
শুধু এখানেই শেষ নয়, পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবকল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে তাঁর পক্ষ থেকে এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বর প্রেরিত হয়েছেন।[14] কিন্তু তাঁদের সকলের পরিচয় জানা যায় না। তাই ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের প্রবর্তকদের নাম শ্রদ্ধাভরে নেওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সকল নবী-রাসূলের উপর বিশ্বাস করা ঈমানের পরিচায়ক। হাদীছে জিবরীলে ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَنْ تُؤْمِنَ بَاللهِ، وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. ‘আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করা’।[15] আর এটি বিশ্বভ্রাতৃত্বের অন্যতম একটি নিদর্শন। শুধু পয়গম্বর নয়, অন্যান্য ধর্মে যেসব দেব-দেবী আছে যাদেরকে ইসলাম সমর্থন করে না, তাঁদের সম্বন্ধেও কোন কটু বাক্য বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ কোন মুসলমান কোন অমুসলমানের উপাস্যকে গালি দিলে
সেও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে মুসলমানের উপাস্য তথা আল্লাহ্কে গালি দিবে। আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَسُبُّوْا الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّهِ فَيَسُبُّوْا اللّهَ عَدْواً بِغَيْرِ عِلْمٍ. ‘তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহ’লে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ বলবে’ (আন‘আম ৬/১০৮)। সুতরাং অমুসলমান কর্তৃক আল্লাহকে গালি দেওয়ার বিষয়ে ঐ মুসলমানই দায়ী। তাছাড়া একজন মুসলামন দৈনন্দিন ছালাতের শেষ পর্যায়ে ডানে-বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে তার চারপাশে অবস্থিত সকল প্রকার জীবের জন্য আল্লাহর নিকটে শান্তি ও কল্যাণের প্রার্থনা করে থাকে। আপন প্রার্থনায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য আল্লাহর দরবারে মঙ্গল কামনার মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্বের এই চূড়ান্ত নিদর্শন ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ইসলাম শুধু মুসলমানদের ধর্ম নয়, মানবজাতির ধর্ম এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) শুধু মুসলমানদের নবী নন, সমগ্র মানবজাতির নবী তথা বিশ্বনবী।
ইসলাম মনে করে মানুষের বংশ-গোত্র, ধন-দৌলত কোন কিছুই মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেকটি মানুষ মানবতার বিরাট বাগিচার এক একটি ফল। আর এটাই সত্যিকারের বিশ্বভ্রাতৃত্ব।
[চলবে]
[1]. মুত্তাফাক আলাইহ; মিশকাত হা/৯০।
[2]. দীওয়ানে আলী (বৈরুত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ২০০৫), পৃঃ ১৫।
[3]. আহমাদ, হা/২৩৫৩৬।
[4]. তিরমিযী হা/৩৯৫৬; আহমাদ হা/৮৯৭০, হাদীছ হাসান।
[5]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৫৫।
[6]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত, হা/৪৯৪৭; আল-আদাবুল মুফরাদ, তাহকীক : শায়খ আলবানী, হা/৯৬।
[7]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত, হা/৪৯৬২।
[8]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৩।
[9]. তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৮৭; ছহীহ তারগীব হা/২৫৬৮, সনদ ছহীহ।
[10]. বায়হাকী; মিশকাত হা/৪৯৯০, হাদীছ হাসান।
[11]. তিরমিযী হা/১৯৪৩, প্রতিবেশীর অধিকার’ অনুচ্ছেদ; আবূদাঊদ হা/৫১৫২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৮, ‘ইহুদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ।
[12]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত, হা/৪৯৬৯।
[13]. বুখারী হা/৬০০০; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০০।
[14]. আহমাদ, তাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭; সিলসিলা ছহীহা হা/২৬৬৮।
[15]. মুসলিম, মিশকাত হা/২।