পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ ।
ইবাদতের উপকারিতা :
আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত প্রতিপালন ও আল্লাহর আদেশ-নিষেধ তথা হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন করাই মানুষের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের ফলে পরকালীন জীবনে সে অশেষ প্রতিদান পাবে। সেই সাথে ইহকালীন জীবনেও ইবাদতের রয়েছে বহু উপকারিতা। নিম্নে ইবাদতের উপকারিতার কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হ’ল।-
১. ফিৎনা থেকে মুক্তি লাভ :
দুনিয়াবী ফিৎনা-ফাসাদ থেকে পরিত্রাণের জন্য রাসূল (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে অধিক ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا،
‘আধার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার পূর্বেই তোমরা সৎ আমলের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হ’লে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। অথবা বিকালে মুমিন হ’লে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে’।[1] অন্যত্র তিনি বলেন,بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سِتًّا: الدَّجَّالَ، وَالدُّخَانَ، وَدَابَّةَ الْأَرْضِ، وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا، وَأَمْرَ الْعَامَّةِ، وَخُوَيْصَّةَ أَحَدِكُمْ، ‘ছয়টি লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে নেক আমল সম্পাদনে তৎপর হও। ১. দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া, ২. ধোঁয়া উত্থিত হওয়া, ৩. দাববাতুল আরয (মৃত্তিকাগর্ভ হ’তে অদ্ভূত জন্তুর আত্মপ্রকাশ), ৪. পশ্চিমাকাশ হ’তে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. সর্বগ্রাসী ফিৎনা ও ৬. তোমাদের ব্যক্তিবিশেষের ওপর আরোপিত ফিৎনা’।[2]
২. আত্মিক প্রশান্তি লাভ :
পার্থিব জীবনে আত্মিক প্রশান্তি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মন ভাল না থাকলে কিংবা মনে শান্তি না থাকলে কোন কাজে মনোযোগ আসে না। আর ইবাদতের মাধ্যমে আন্তরিক প্রশান্তি অর্জিত হয়। আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِ أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ، ‘যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহকে স্মরণ করলে যাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে। মনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই কেবল হৃদয় প্রশান্ত হয়’ (রা‘দ ১৩/২৮)। আর ঈমান আনয়ন হচ্ছে আত্মিক ইবাদত, যার মাধ্যমে আন্তরিক প্রশান্তি লাভ হয়।
৩. শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ :
ইবাদতের মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও আর্থিক নিরাপত্তা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ، ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে শিরককে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যই রয়েছে (জাহান্নাম থেকে) নিরাপত্তা এবং তারাই হেদায়াত প্রাপ্ত’ (আন‘আম ৬/৮২)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ، ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি বিশ্বাস স্থাপন করত ও আল্লাহভীরু হ’ত, তাহ’লে আমরা তাদের উপর আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের দরুণ আমরা তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (আ‘রাফ ৭/৯৬)।
৪. শয়তানের কবল থেকে রক্ষা এবং স্বতঃস্ফূর্ততা লাভ :
ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা শয়তানের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। আর বান্দা সকালে ইবাদত করতে পারলে তার সারা দিন কাটে প্রফুল্লতার সাথে। অন্যথা তার সারাদিন কাটে অলসতায়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ.
‘আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁঠ দেয়। প্রতি গিঁঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে একটি গিঁঠ খুলে যায়। পরে ওযূ করলে আরেকটি গিঁঠ খুলে যায়, অতঃপর ছালাত আদায় করলে আরেকটি গিঁঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিলচিত্তে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে’।[3] আল্লাহ বলেন,إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ، ‘নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। তবে বিপথগামীদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে’ (হিজর ১৫/৪২)।
৫. অপরিমিত রূযী লাভ :
ব্যবসা-বাণিজ্য যাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না, তাদেরকে আল্লাহ পর্যাপ্ত রিযক, সম্মান-মর্যাদা ও ছওয়াব দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ، لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ، ‘ঐ লোকগুলি হ’ল তারাই, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং ছালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন তাদের হৃদয় ও চক্ষু বিপর্যস্ত হবে। যাতে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের উত্তম পুরষ্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে চান অপরিমিত রূযী দান করেন’ (নূর ২৪/৩৭-৩৮)।
৬. উচ্চমর্যাদা লাভ :
দান-ছাদাক্বার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকটে উচ্চমর্যাদা লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন,لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللهُ الْحُسْنَى وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ، ‘তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তাদের মর্যাদা ঐসব লোকদের চাইতে অনেক উচ্চে, যারা পরবর্তীতে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ উভয় দলকে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। আর তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (হাদীদ ৫৭/১০)।
৭. কেবল আল্লাহর নির্দেশেরকাছে বান্দার মাথা নত হয় :
আল্লাহর ইবাদত বান্দাকে যাবতীয় নীচতা ও হীনতা থেকে রক্ষা করে এবং সে কেবল আল্লাহর নির্দেশের কাছে মাথা নত করে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সম্মান চায়, সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর জন্যই রয়েছে সকল সম্মান। তাঁর দিকেই অধিরোহন করে পবিত্র বাক্য। আর সৎকর্ম তাকে উচ্চ করে। পক্ষান্তরে যারা মন্দকর্মের চক্রান্ত করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হবে’ (ফাতির ৩৫/১০)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আললাহ তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন’।[4]
৮. আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ হয় :
ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا، خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا، ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস প্রস্ত্তত করা আছে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হ’তে চাইবে না’ (কাহফ ১৮/১০৭-১০৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا، ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্য দয়াময় (সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তরে) মহববত সৃষ্টি করে দিবেন’ (মারইয়াম ১৯/৯৬)। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন জিব্রীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালবেসেছি। অতএব তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিব্রীল সেটা আসমানে আওয়ায দিয়ে জানিয়ে দেন। অতঃপর যমীনবাসীর মধ্যে তার জন্য মহববত নাযিল হয়। আর এটাই হ’ল আল্লাহর বাণী,إِنَّ الَّذِينَ... الرَّحْمَنُ وُدًّا، আয়াতের পেক্ষাপট’।[5]
৯. আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের বৈশিষ্ট্য অর্জন :
মহান আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন, ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা ঐসব বিশেষণ অর্জন করতে পারে। আল্লাহ বলেন,فَبَشِّرْ عِبَادِ، الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللهُ وَأُولَئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ، ‘অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে, যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে। অতঃপর তারমধ্যে যেটা উত্তম সেটার অনুসরণ করে। তাদেরকে আল্লাহ সুপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই হ’ল জ্ঞানী’ (যুমার ৩৯/১৭-১৮)।
১০. দুনিয়াতে ক্ষমতা ও সাহায্য লাভ :
ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিম দুনিয়াতে ক্ষমতা ও আল্লাহর সাহায্য লাভে ধন্য হ’তে পারে। আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ، ‘তারা এমন লোক, যাদেরকে আমরা যদি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহ’লে তারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইচ্ছাধীন’ (হজ্জ ২২/৪১)।
তিনি আরো বলেন,وَعَدَ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا، ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন ক্ষমতা প্রদান করবেন, যেমন তিনি দান করেছিলেন পূর্ববর্তীদেরকে। আর তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতির বদলে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। (শর্ত হ’ল) তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না’ (নূর ২৪/৫৫)।
১১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ :
ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়। এমনকি আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়া যায়। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ اللهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِى وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَىَّ عَبْدِى بِشَىْءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِى يَتَقَرَّبُ إِلَىَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِى يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِى يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِى يَبْطُشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِى يَمْشِى بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِى لأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِى لأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَىْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِى عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ، يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ.
‘আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনী রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমার বান্দা যে সমস্ত ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাছিল করে থাকে, তন্মধ্যে ঐ ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় আর কোন ইবাদত নেই যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপসন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপসন্দ করি’।[6]
ইবাদতের ফলাফল :
মুমিন ব্যক্তি ইবাদতের মাধ্যমে বহু শুভ ফল লাভ করে থাকে। যা তার জন্য ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে অশেষ উপকার বয়ে আনে। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. আত্মার প্রশিক্ষণ ও রূহের খোরাক :
মানুষ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে তৈরী। দৈহিক পরিপুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য তারা পানাহার করে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মানুষ পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে। কিন্তু আত্মিক প্রশান্তি ও রূহের খোরাক এগুলিতে মেলে না। বরং আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের মাধ্যমে আত্মা প্রশান্ত হয়। আর ইবাদত ব্যতীত আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা সম্ভব নয়। সুখে-দুখে, গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। যাতে রূহের খোরাক মেলে। আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ، فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ، وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ، ‘আর আমরা ভালভাবে জানি ওরা যেসব কথা বলে তাতে তোমার হৃদয় সংকুচিত হয়। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর, যতক্ষণ না মৃত্যু তোমার নিকট উপস্থিত হয়’ (হিজর ১৫/৯৭-৯৯)।
ইবাদতের মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: قَالَ مِسْعَرٌ أُرَاهُ مِنْ خُزَاعَةَ: لَيْتَنِي صَلَّيْتُ فَاسْتَرَحْتُ، فَكَأَنَّهُمْ عَابُوا عَلَيْهِ ذَلِكَ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: يَا بِلَالُ أَقِمِ الصَّلَاةَ أَرِحْنَا بِهَا،
সালেম ইবনু আবুল জা‘দ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, মিস‘আর বলেছেন, আমার ধারণা, সে ব্যক্তি খুযা‘আ গোত্রীয়, যদি আমি ছালাত পড়াতাম তাহ’লে প্রশান্তি পেতাম। উপস্থিত লোকজন অসন্তুষ্ট হ’ল। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, হে বেলাল! ছালাত কায়েম কর। আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারব’।[7] সুতরাং ইবাদতের মাধ্যমে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।
২. সম্মান লাভ :
ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা যেমন শয়তানের কবল থেকে রক্ষা পায় তেমনি আল্লাহর নিকটে সে সম্মানিত হয়। কেননা বান্দা ইবাদতে আল্লাহর কাছেই মাথা নত করে, তাঁর নিকটে বিনীত হয়। ফলে আল্লাহর কাছে তার সম্মান বেড়ে যায়। আল্লাহ বলেন,مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعِزَّةَ فَلِلَّهِ الْعِزَّةُ جَمِيعًا إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ، ‘যে ব্যক্তি সম্মান চায়, সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর জন্যই রয়েছে সকল সম্মান। তাঁর দিকেই অধিরোহন করে পবিত্র বাক্য। আর সৎকর্ম তাকে উচ্চ করে’ (ফাতির ৩৫/১০)।
এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ،
আবূ হুরায়রাহ ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন সম্প্রদায় আল্লাহর যিকির করতে বসলে, আল্লাহর ফেরেশতাগণ নিশ্চয়ই তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের ওপর (মনের) প্রশান্তি বর্ষিত হয়। (অধিকাংশ সময়) আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের সাথে তাদেরকে স্মরণ করেন’।[8] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِى، فَإِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى نَفْسِى، وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلأٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দার প্রতি তদ্রূপ, যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তদপেক্ষা উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’হাত এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই’।[9] এসব আল্লাহর কাছে সম্মান লাভের পরিচায়ক।
৩. ইবাদতের মাধ্যমে মুমিনের পরীক্ষা :
বান্দাকে আল্লাহ ইবাদতের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেন। অর্থাৎ ইহকালীন জীবনের সৎকাজের মাধ্যমে যে বান্দা পরকালীন জীবনের জন্য পাথেয় সঞ্চয় করে, আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে, সে পরকালে সফলকাম হ’তে পারবে। পক্ষান্তরে ইহকালীন জীবনের মোহমায়ায় পড়ে পরকালকে ভুলে থাকলে উভয় জীবনে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহ বলেন,مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ، ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)। তিনি আরো বলেন,مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا، وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا، ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে, আমরা সেখানে যাকে যা ইচ্ছা করি দিয়ে দেই। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি। সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায়। আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে এবং ছওয়াব লাভে দৃঢ় বিশ্বাসী অবস্থায় তার জন্য যথার্থ প্রচেষ্টা চালায়, তাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে’ (ইসরা ১৭/১৮-১৯)।
উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ، وَالرِّفْعَةِ، وَالنَّصْرِ، وَالتَّمْكِينِ فِي الْأَرْضِ، فَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمِ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا، لَمْ يَكُنْ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ، ‘এই উম্মতকে গৌরব, উচ্চ মর্যাদা, বিজয় ও পৃথিবীতে শক্তিশালী হওয়ার সুসংবাদ দাও। অতঃপর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য আখেরাতের আমল করবে, আখেরাতে তার কোন অংশ থাকবে না’।[10]
সুতরাং ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি বলেন,الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ، ‘তিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর আমল করে? আর তিনি মহাপরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল’ (মুলক ৬৭/২)।
৪. সমাজ সংশোধনের মাধ্যম :
সমাজের ক্ষুদ্র একক হচ্ছে মানুষ। ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ সংশোধন হয়, মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। ফলে সমাজ সুন্দর হয়, সংশোধিত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ‘তুমি তোমার প্রতি নাযিলকৃত কিতাব (কুরআন) পাঠ কর এবং ছালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ছালাত যাবতীয় অশ্লীলতা ও গর্হিত কর্ম থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই হ’ল সবচেয়ে বড় বস্ত্ত। আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা করে থাক’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।
আব্দুর রহমান আস-সা‘দী বলেন, ‘ছালাত অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বাধা দানকারী হওয়ার কারণ হ’ল, বান্দা তা আদায় করে এবং তার রুকন-আরকান, শর্তাবলী পূর্ণ করে ও খুশূ-খুযূ‘ রক্ষা করে তখন তার অন্তর আলোকিত হয়, হৃদয় পবিত্র হয়, ঈমান বৃদ্ধি পায়, ভালকাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় এবং মন্দকাজ করার প্রবণতা কমে যায় বা লোপ পায়। সুতরাং এভাবে নিয়মিত ছালাত আদায় ও তা হেফাযত করায় মুছল্লীকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। আর এটাই হচ্ছে তার বড় উদ্দেশ্য ও ফলাফল’।
ইবাদত মানুষকে পাপ ও ত্রুটিমুক্ত করার মাধ্যমে আদর্শ মানুষে পরিণত করে। সমাজের সব মানুষ যখন আদর্শ মানুষ হয় তখন সমাজ সুন্দর ও সুশৃংখল সমাজে পরিণত হয়। মানুষকে পাপমুক্ত করা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّى أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَىَّ. قَالَ وَلَمْ يَسْأَلْهُ عَنْهُ. قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَصَلَّى مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا قَضَى النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الصَّلاَةَ قَامَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّى أَصَبْتُ حَدًّا، فَأَقِمْ فِىَّ كِتَابَ اللهِ. قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا. قَالَ نَعَمْ. قَالَ فَإِنَّ اللهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ. أَوْ قَالَ حَدَّكَ.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু তিনি তাকে অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন না। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন ছালাতের সময় এসে গেল। লোকটি নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছালাত আদায় করল। যখন নবী করীম (ছাঃ) ছালাত আদায় করলেন। তখন লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমাকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাস্তি দিন। তিনি বললেন, তুমি কি আমার সাথে ছালাত আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অথবা বললেন, তোমার শাস্তি (ক্ষমা করে দিয়েছেন)।[11]
সুতরাং ছালাতের উপকারিতার অন্যতম দিক হ’ল এটা আত্মার পবিত্রতা এবং বদচরিত্র ও দোষ-ত্রুটি থেকে পরিচ্ছন্নতা। তাই রাসূল (ছাঃ) উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য ইবাদতকে প্রশিক্ষণ হিসাবে গণ্য করতেন। আর রাসূল জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কাতার সোজা করা, মুছল্লীদের একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাই ভাই হয়ে দাঁড়ানো, দু’জনের মাঝে শয়তানের জন্য ফাঁকা না রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: أَقِيمُوا الصُّفُوفَ فَإِنَّمَا تَصُفُّونَ بِصُفُوفِ الْمَلاَئِكَةِ وَحَاذُوا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِينُوا فِى أَيْدِى إِخْوَانِكُمْ وَلاَ تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ اللهُ،
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও। ফিরিশতাগণ যেরূপ কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা তদ্রূপ কাতারবদ্ধ হবে। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর। আর তোমাদের ভাইদের সাথে নরম হয়ে যাও। শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন’।[12]
ছালাতের মাঝের এই শৃঙ্খলা, হৃদ্যতা ও সম্পর্ক কেবল মসজিদ ও ছালাতের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে এমন নয় বরং ছালাত ও মসজিদের বাইরেও এর প্রভাব থাকতে হবে। মানুষের সাথে আচার-আচরণ ও সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ছালাতের মধ্যকার শৃঙ্খলা যেন বজায় থাকে সেজন্য চেষ্টা করতে হবে। এতে ব্যক্তি সংশোধনের ন্যায় সমাজ সংশোধনেও প্রভাব পড়বে।
গোপনীয় ইবাদতের ফযীলত :
ইবাদতকে রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত করার জন্য তা গোপনে সম্পন্ন করা যরূরী। গোপনে সম্পন্ন ইবাদতের মাধ্যমে যথাযথ খুশূ‘-খুযূ‘ অর্জন করা এবং ইবাদত আল্লাহর জন্য খালেছ করা সহজ হয়।
গোপনীয় ইবাদতের উপকারিতা হচ্ছে আত্মিক পরিশুদ্ধি ও তার দৃঢ়তা, অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা, প্রবৃত্তির অনুসরণ ও সন্দেহ-সংশয় থেকে দূরে থাকা, পরীক্ষা ও ফিৎনার সময় হকের উপরে অবিচল থাকা। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا ‘নিশ্চয়ই রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং বিশুদ্ধপাঠের সর্বাধিক উপযোগী’ (মুয্যাম্মিল ৭৩/৬)। এজন্য বান্দার গোপনীয় নেক আমল শয়তানের নিকটে অত্যধিক কষ্টদায়ক। তাই শয়তান বান্দাকে তার গোপন আমলকে প্রকাশ করা, ইখলাছ থেকে শিরক ও রিয়া বা লৌকিকতার দিকে এবং আত্ম-অহংকার ও প্রসিদ্ধির দিকে ধাবিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে।
অপ্রকাশ্য ইবাদতের আরেকটি দিক শাহাদাতাইন তথা ঈমানের উপরে দৃঢ় থাকা। আল্লাহ বলেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِيْنَ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَاءُ، ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা মযবূত রাখেন ইহকালীন জীবনে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যা চান তাই করেন’ (ইবরাহীম ১৪/২৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ، وَهْوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ. ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়’।[13]
গোপনীয় ইবাদত মুমিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম মাত্রই দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত গোপনে ইবাদত করার চেষ্টা করা এবং এর প্রতি আগ্রহী হওয়া যরূরী। কেননা গোপন ইবাদতে ইখলাছ তথা একনিষ্ঠতা বজায় থাকে, যা দ্বীনের মৌলিক বিষয়। এর মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং পাপ মোচন হয়। সুতরাং আল্লাহর উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠ ইবাদত করার জন্য শারীরিক কষ্ট-ক্লেশ, কায়িক পরিশ্রম ও আত্মিক প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন। যাতে সে ইবাদতে কোন রিয়া বা লৌকিকতা ও নিফাক বা কপটতা না থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ أَخوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيكُمُ الشِّركُ الأَصغَرُ، قَالُوا: وَمَا الشِّركُ الأَصغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا جَزَى النَّاسَ بِأَعمَالِهِم: اِذهَبُوا إِلى الَّذِينَ كُنتُم تُرَاؤُونَ في الدُّنيَا، فَانظُرُوا هَل تَجِدُونَ عِندَهُم جَزَاءً.
‘আমি তোমাদের জন্য যে ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশী আশঙ্কা করছি তা হ’ল ছোট শিরক। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি বললেন, রিয়া বা লোক দেখানো আমল। বান্দাদের আমলের বিনিময়ের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত লোকেদেরকে বলবেন, যাও তোমরা সেই সমস্ত লোকদের কাছে, যাদেরকে দেখিয়ে দুনিয়াতে আমল করেছিলে আর লক্ষ্য করো তাদের নিকট থেকে কোন বিনিময় বা কোন কল্যাণ পাও কি না’[14]?
ইবাদত বান্দা ও তার রবের সাথে গোপন সম্পর্ক :
ইসলামী শরী‘আত স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে তথা বান্দা ও তার রবের সাথে গোপন সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি উৎসাহিত করে। গোপনে ইবাদত করা এবং নির্জনে নফল ইবাদত সম্পন্ন করার ব্যাপারে শরী‘আতে বিভিন্ন দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে।
যেমন গোপনে দান প্রকাশ্য দান অপেক্ষা উত্তম, দিনের নফল ছালাত অপেক্ষা রাত্রিকালীন নফল ছালাত উত্তম। কেননা এতে আল্লাহর যথোপযুক্ত তাযীম হয়, তাঁর নিকটে যে নে‘মত সমূহ রয়েছে তার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, লৌকিকতার ক্লেদ ও মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়। যেমন গোপন দান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ، ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান কর, তবে তোমাদের জন্য তা আরও উত্তম। (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দিবেন। আর তোমরা (গোপনে) যা কিছু কর, আল্লাহ তা খবর রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭১)। ইবনু কাছীর বলেন, ফরয হৌক নফল হৌক যেকোন ছাদাক্বা গোপনে দান করা উত্তম হওয়ার ব্যাপারে অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে। কেননা তাতে রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো বা লোককে শুনানোর কিছু থাকে না। তবে অন্যেরা অনুসরণ করুক, এরূপ কোন কল্যাণ ইচ্ছা থাকলে সেক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করা উত্তম হবে।[15]
অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) নফল ছালাত বাড়ীতে আদায় করার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ العَبْدِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ الآخِرِ، فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ اللهَ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ، ‘আল্লাহ তা‘আলা শেষ রাতে স্বীয় বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। অতএব যারা এ সময় আল্লাহর যিকর করে (ছালাত আদায় করে ও দো‘আ করে), তুমি পারলে তাদের দলভুক্ত হও’।[16]
তবে গোপন ইবাদত দ্বারা মানুষ থেকে দূরে থাকা এবং সকল ইবাদত গোপন করা উদ্দেশ্য নয়। যেসব ইবাদত প্রকাশ্যে ও জনসমক্ষে ব্যতীত আদায় করা সম্ভব নয়, সেগুলো প্রকাশ্যে আদায় করাতে কোন দোষ নেই। কারণ আল্লাহ গোপন-প্রকাশ্য সব খবর রাখেন। আর প্রকাশ্যে ইবাদত করার ব্যাপারেও অনেক দলীল ইসলামী শরী‘আতে রয়েছে। যেমন মানুষের প্রতি দয়া করা, জামা‘আতে ছালাত আদায় করা, নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করা এবং ভালকাজের দিকে নির্দেশনা প্রদান করা ইত্যাদি কাজের জন্য বান্দা ছওয়াব বা প্রতিদান লাভ করবে।
[ক্রমশঃ]
[1]. মুসলিম হা/১১৮; মিশকাত হা/৫৩৮৩।
[2]. মুসলিম হা/১২৮-(২৯৪৭); ইবনু মাজাহ হা/৪০৫৬; ছহীহাহ হা/৭৫৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১২৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৫৪।
[3]. বুখারী হা/১১৪২; মুসলিম হা/৭৭৬; মিশকাত হা/১২১৯।
[4]. মুসলিম হা/২৫৮৮; মিশকাত হা/১৮৮৯।
[5]. বুখারী হা/৬০৪০; মুসলিম হা/৩১৬১; তিরমিযী হা/৩১৬১।
[6]. বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬২।
[7]. আহমাদ হা/২৩১৩৭; আবুদাঊদ হা/৪৯৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৯২; মিশকাত হা/১২৫৩।
[8]. মুসলিম হা/২৭০০; আবূ দাঊদ হা/১৪৫৫; তিরমিযী হা/৩৩৭৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৯১; ছহীহাহ হা/৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৪১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫০৯।
[9]. বুখারী হা/৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৭; মুসলিম হা/১৬৭৫।
[10]. আহমাদ হা/২১২৫৮; হাকেম হা/৭৮৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮২৫।
[11]. বুখারী হা/৬৮২৩; মুসলিম হা/২৭৬৪; মিশকাত হা/৫৬৭।
[12]. আহমাদ হা/৫৭২৪; আবু দাউদ হা/৬৬৬; ছহীহাহ হা/৭৪৩।
[13]. বুখারী হা/৪২০২, ৪২০৩, ৪২০৭; মুসলিম হা/১১২।
[14]. শু‘আবুল ঈমান হা/৬৮৩১; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩২; তবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/৪১৩৯।
[15]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১/৭০১, সূরা বাক্বারাহ ২৭১ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[16]. তিরমিযী হা/৩৫৭৯; মিশকাত হা/১২২৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১১৭৩।