ভূমিকা :

বিংশ শতাব্দীতে যে সকল মুহাদ্দিছ ইলমে হাদীছের ময়দানে অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)। যাঁর অনন্য সাধারণ অবদানের ফলে সারা বিশ্বে ছহীহ হাদীছ অনুসরণের গুরুত্ব এবং হাদীছ যাচাই-বাছাইয়ের প্রতি আগ্রহ বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাতে হাদীছ থেকে সরাসরি দলীল গ্রহণের পথকে আরো সুগম করেছে। বিশেষত আধুনিক যুগে হাদীছ গবেষণায় তিনি এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ইলমে হাদীছের বহু ছাত্র এখন ইলমুত তাখরীজের ময়দানে বিচরণ করছেন এবং সেখান থেকে মণি-মুক্তা আহরণ করছেন।

ইসলামী শরী‘আতের মূল ভিত্তি হাদীছকে প্রশ্নবিদ্ধকারী জাল ও যঈফ হাদীছসমূহকে চিহ্নিত করা এবং সাথে সাথে ছহীহ হাদীছসমূহকে বাছাই করার ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী (রহঃ) যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন, তা যথার্থভাবে অনুধাবন করার জন্য তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা অতীব যরূরী। আলোচ্য প্রবন্ধে তাঁর জীবনের নানা দিক ও বিভাগ এবং তাঁর মৌলিক রচনাবলী ও তাহক্বীক্বকৃত গ্রন্থাবলীর উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হ’ল।

জন্ম ও বংশ পরিচয় :

তাঁর নাম মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন। পিতার নাম নূহ নাজাতী আল-আলবানী। জন্মস্থান আলবেনিয়া হওয়ায় তাঁর উপাধি- আলবানী। তাঁর উপনাম আবূ আব্দুর রহমান। ১৩৩২ হিজরী মোতাবেক ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে আলবেনিয়ার[1] রাজধানী উশকূদারায় এক দরিদ্র দ্বীনদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[2] বংশগতভাবে সম্ভ্রান্ত এই পরিবারটি ধর্মীয় জ্ঞানের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিল। পিতা শায়খ নূহ নাজাতী ইবনু আদম আল-আলবানী (মৃ. ১৯৫২ খৃ.) সমকালীন আরনাউত্বী[3] ওলামায়ে কেরামের মধ্যে হানাফী ফিক্বহের অন্যতম বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য আলেম ছিলেন।[4] ওছমানী খেলাফতের (১২৯৯-১৯২৩ খৃ.) রাজধানী আসতানা (বর্তমান ইস্তাম্বুল)-এর বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র থেকে তিনি জ্ঞানার্জন করেন এবং দেশের মানুষের মাঝে দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে তিনি দ্বীনী বিষয়ে মানুষের পথ নির্দেশক ও আস্থার কেন্দ্রে পরিণত হন। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর নিকটে মানুষ ফৎওয়া গ্রহণের জন্য আগমন করত।[5]

সিরিয়ায় হিজরত :

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে আলবেনিয়ায় ওছমানী খেলাফতের পতনের পর দেশটির শাসক হিসাবে আহমাদ যোগো (১৯২২-১৯৩৯ খৃ.)-এর আবির্ভাব ঘটে। তাঁর শাসনামলে আলবেনিয়া ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পথে হাটতে শুরু করে। জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কালচারের আক্রমণ শুরু হয়। তুরষ্কে ‘কামাল পাশা’ যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিলুপ্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলেন, আহমাদ যোগো ঠিক একই পন্থায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। ফলে সমাজ থেকে ইসলামী মূল্যবোধ, রীতি-পদ্ধতি বিদূরিত হ’তে থাকে। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য অশ্লীলতা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুসলিম নারীদের হিজাব পরিত্যাগ করতে এবং পুরুষদের পশ্চিমা পোষাক পরিধান করতে বাধ্য করা হয়।[6]

পরিস্থিতি বিবেচনায় ধর্ম রক্ষা ও মন্দ পরিণতি থেকে বাঁচতে বহু মানুষ হিজরতের পথ বেছে নেয়া শুরু করেন। আলবানীর পিতা নূহ নাজাতীও এ ভয়াবহ বিপদ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে মাতৃভূমি থেকে সিরিয়া হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। সিরিয়ার মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর বহু হাদীছ ও আছার বিদ্যমান থাকায় পূর্ব থেকেই তিনি দেশটির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।[7] ফলে ৯ বছর বয়সে আলবানী পরিবারের সাথে সিরিয়ায় হিজরত করেন এবং উমাইয়া মসজিদের নিকটবর্তী রাজধানী দামেশকের পুরাতন শহর আমারায় বসবাস শুরু করেন।[8]

গভীর ধর্মীয় মুল্যবোধসম্পন্ন পরিবার হিসাবে স্বীয় সন্তানদেরকে দ্বীনদার ও পরহেযগার হিসাবে গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল পিতা নূহ নাজাতীর। সন্তানদেরকে সাথে নিয়েই সর্বদা মসজিদে গমন করতেন। মাঝে মাঝে বিশেষত জুম‘আর দিনে বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদে যেতেন।[9] এভাবে একান্ত দ্বীনী পরিবেশে আলবানী বেড়ে ওঠেন।

শিক্ষাজীবন :

শিক্ষাজীবনের শুরুতে তিনি দামেশকের বাযূরিয়া এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসাতুল ইস‘আফ আল-খাইরিয়াহ-তে ভর্তি হন। প্রাথমিক শিক্ষার শেষ পর্যায়ে উক্ত মাদ্রাসাটি ২ বছর ব্যাপী (১৯২৫-১৯২৭ খৃ.) সিরিয়া-ফ্রান্স যুদ্ধের সময় আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় সারূজা বাযারে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। শিক্ষাজীবনের শুরুতে আরবী ভাষায় তাঁর কোনই দখল ছিল না। পরবর্তীতে আল্লাহ তাঁর মধ্যে আরবীর প্রতি বিশেষ ঝোঁক তৈরী করে দেন। ফলে ভাষাগত দিক দিয়ে তিনি সিরীয় সহপাঠীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।

তবে মাদ্রাসার বিধিবদ্ধ শিক্ষার ব্যাপারে শুরু থেকে পিতা নূহ নাজাতীর কোন আগ্রহ ছিল না। তাঁর ধারণামতে তখন সিরিয়ার গতানুগতিক বিধিবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা প্রদান করা হ’ত না। ফলে সেখানে ধর্মীয় গবেষণার বিভিন্ন স্তর পাড়ি দেওয়ার পরও বাস্তবে কোন আলেম তৈরী হওয়ার সুযোগ ছিল না।[10]

তাই ৪ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর আলবানী পিতার নির্দেশনা মতে মাদ্রাসা থেকে ফিরে আসেন। অতঃপর পিতা তাঁর জন্য ঘরোয়া পরিবেশে দ্বীনী ইলম অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং একটি পাঠ্যসূচী তৈরী করে দেন। যার ভিত্তিতে তিনি পিতার নিকটে কুরআন-তাজবীদ, নাহু-ছরফ এবং হানাফী ফিক্বহের তা‘লীম নিতে শুরু করেন।[11] পিতার নিকটেই তিনি তাজবীদসহ হাফছ ইবনু আছেম-এর রেওয়ায়েত অনুযায়ী কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন এবং মুখতাছারুল কুদূরীর পাঠ গ্রহণ করেন। এছাড়াও শহরের বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদের ইমাম, পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশিষ্ট বিদ্বান ছূফী শায়খ মুহাম্মাদ সাঈদ বুরহানী (১৮৯২-১৯৬৭ খৃ.)-এর নিকটে তিনি হানাফী ফিক্বহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ مراقي الفلاح شرح نور الإيضاح এবং আরবী ব্যাকরণের شذور الذهب সহ অলংকার শাস্ত্রের বেশ কিছু গ্রন্থ পাঠ করেন।[12]

ইলমে হাদীছের ময়দানে পদচারণার সূচনা :

ইলমী পরিবেশে বেড়ে ওঠা আলবানী যৌবনের শুরু থেকেই অধ্যয়নের প্রতি ছিলেন গভীর অনুরাগী। প্রথম জীবনে নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তিনি আরবী সাহিত্যের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও রূপকথার ক্ল্যাসিক রচনা যেমন আলিফ লায়লা, সালাউদ্দীন আইয়ূবী, আনতারা ইবনু শাদ্দাদসহ দুঃসাহসী মনীষীদের জীবনকথা নিয়ে রচিত বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস গভীর অনুরাগের সাথে অধ্যয়ন করতেন।[13] এর মাধ্যমে তিনি ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করেন।

অন্যদিকে পিতার সাথে ঘড়ির দোকানেও ছিল তাঁর নিয়মিত যাওয়া-আসা। প্রতিদিন সকালে পিতার সাথে এসে দোকানে বসতেন। দীর্ঘ সময় কখনো অধ্যয়নে, কখনো ঘড়ি মেরামতে কাটাতেন। কাজের অবসরে বিশেষত আছরের ছালাতের পর চলে যেতেন উমাইয়া মসজিদে। সেখানে গিয়ে বসতেন বিভিন্ন শায়খের মজলিসে।[14]

অবসরে এই ঘোরাফেরার পথে উমাইয়া মসজিদের পশ্চিম দরজার পাশে এক মিসরীয় বৃদ্ধের বইয়ের দোকান থেকে তিনি বিভিন্ন বই ধার নিতেন। অতঃপর পাঠ শেষে ফেরত দিতেন। একদিন তিনি সেখানে প্রখ্যাত মিসরীয় বিদ্বান সৈয়দ রশীদ রেযা সম্পাদিত ‘মাজাল্লাতুল মানার’-এর কয়েকটি সংখ্যা দেখতে পেলেন। চোখ বুলাতে বুলাতে রশীদ রেযার একটি প্রবন্ধ তাঁর নযরে আসলো। যেখানে তিনি ইমাম গাযালী (রহঃ)-এর ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থটির ভাল-মন্দ দিক নিয়ে সমালোচনা পেশ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট আলোচনায় ছূফীবাদ ও যঈফ-জাল হাদীছ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। সাথে সাথে সেখানে উক্ত গ্রন্থটির ছহীহ-যঈফ বর্ণনাসমূহ বাছাই করার জন্য যায়নুদ্দীন ‘ইরাক্বী রচিত المغني عن حمل الأسفار في الأسفار في تخريج ما في الإحياء من الأخبار গ্রন্থটি অনুসরণীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রবন্ধটি পাঠ করার পর হাফেয ইরাক্বীর বইটি পড়ার জন্য তাঁর মধ্যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠলো।

অতঃপর বাযারে গিয়ে খুঁজতে খুঁজতে দারুল হালাবী থেকে বইটির ৪ খন্ডে প্রকাশিত সংস্করণটির সন্ধান পেলেন। কিন্তু তা ক্রয়ের মত আর্থিক সংগতি না থাকায় দোকানদারকে অনেক অনুরোধ করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বইটি ধার নিলেন। অতঃপর বাড়িতে ফিরে গভীর অধ্যয়নে মনোনিবেশ করলেন। দীর্ঘ অধ্যয়নের পর হাফেয ইরাক্বীর সূক্ষ্ম তাখরীজ তাঁকে এতই আকৃষ্ট করল যে, তার হুবহু কপি নিজ হাতে লিখে নেওয়ার সংকল্প করলেন। যোহরের পর পিতা যখন বিশ্রামে যেতেন, তখন তিনি অনুলিখন শুরু করতেন। এভাবে অর্ধেক লেখার পর তিনি অনুধাবন করলেন যে, বহু হাদীছের অর্থ ভালোভাবে না বুঝেই কেবল নকল করে চলেছেন। কেননা একদিকে তিনি অনারব। অন্যদিকে ইলমী ময়দানে নবাগত। সেকারণে অনেক হাদীছ অবোধ্য থেকে যাচ্ছে। তখন তিনি পিতার লাইব্রেরীতে রক্ষিত ইবনুল আছীরের ‘গারীবুল হাদীছ’ সহ বিভিন্ন গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা ও দুর্বোধ্য শব্দ বিশ্লেষণ যোগ করার জন্য প্রথম থেকে পুনরায় কিতাবটি লেখা শুরু করলেন। বিস্তারিত টীকা সংযোজন করায় মতনের চেয়ে টীকাই বেশী হয়ে গেল। এরূপ কঠোর পরিশ্রমের ফলে তাঁর সামনে এমন একটা পথ সুগম হ’ল, যা পরবর্তীতে তাখরীজ সংক্রান্ত শক্তিশালী ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেছিল।[15]

আলবানী বলেন, ‘আমার মনে হয় এ সময় গবেষণার পিছনে আমি যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছিলাম, সেটাই আমাকে তাখরীজ সংশ্লিষ্ট গবেষণায় উৎসাহিত করেছিল এবং এ পথ পাড়ি দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। কেননা তাখরীজের পাশাপাশি হাদীছের মূল মতন আত্মস্থ করার জন্য সেসময় আমাকে ভাষা, বালাগাত, গারীবুল হাদীছ সংক্রান্ত বহু গ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়েছিল’।[16] শায়খ মাজযূব বলেন, ‘শায়খ আমাকে তাঁর প্রথম লিখিত পান্ডুলিপিটি দেখিয়েছিলেন। হাতে লেখা মূল পান্ডুলিপিটি ছিল ৩ খন্ডে দু’হাযার ১২ পৃষ্ঠা ব্যাপী’।[17]

এভাবে ছোট্ট একটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ইলমে হাদীছের পথে আলবানীর পদযাত্রা শুরু হয়। আলবানী বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে প্রথমত আমি যে সালাফী মানহাজের উপর রয়েছি এবং দ্বিতীয়ত আমি যে যঈফ হাদীছ পৃথকীকরণের কাজে রয়েছি, এর কৃতিত্ব মাজাল্লাতুল মানার সম্পাদক সাইয়েদ রশীদ রেযার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। কেননা ঐ পত্রিকাটির মাধ্যমেই আমার হাদীছ গবেষণার সূচনা’।[18]

এটাই ছিল আলবানীর ইলমে হাদীছের পথে যাত্রা শুরুর কথা। এরপর কেবলই এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। জ্ঞানার্জনের প্রবল স্পৃহা তাঁকে দিনের অধিকাংশ সময় দোকানের কাজ ফেলে অধ্যয়নে ব্যাপৃত রাখত। প্রথম পর্যায়ে তিনি পিতার লাইব্রেরীতে পড়াশুনা চালিয়ে যান। কিন্তু একজন কট্টর হানাফী বিদ্বানের লাইব্রেরী হিসাবে সেখানে মূলত হানাফী মাযহাবের ফিক্বহী গ্রন্থগুলোরই সমাহার ছিল। হাদীছের কিতাব ছিল যৎসামান্যই। অন্যদিকে আলবানীর চাহিদা হাদীছের কিতাব। তাঁকে চাহিদামত বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও পিতা নূহ নাজাতীর ছিল না। তাই প্রয়োজনীয় বই-পত্র এবং প্রাচীন ও দুর্লভ পান্ডুলিপিসমূহ অধ্যয়নের জন্য তিনি দামেশকের বিখ্যাত লাইব্রেরী ‘মাকতাবা যাহেরিয়ায়’[19] যাওয়া-আসা শুরু করেন।

এরই মাঝে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে সমকালীন সিরীয় বিদ্বান প্রফেসর মুহাম্মাদ আল-মুবারকের (১৯১২-১৯৮২ খৃ.)। একবার তিনি তাঁর সাথে হালবের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিছ শায়খ রাগেব আত-তাববাখের (১৮৭৭-১৯৫১ খৃ.) নিকটে গেলে ইলমে হাদীছের ময়দানে আলবানীর তৎপরতা সম্পর্কে জেনে খুবই সন্তুষ্ট হন। অতঃপর সার্বিক বিবেচনায় আলবানীর ব্যাপারে আশ্বস্ত হন এবং তাঁকে স্বীয় গ্রন্থ الأنوار الجلية في مخةصر الأثباة الحلبية-এ সংকলিত হাদীছসমূহ বর্ণনার ইজাযত বা অনুমতি প্রদান করেন।[20] এছাড়া তিনি অপর সিরীয় আলেম মুহাম্মাদ বাহজা বাইতারের (১৮৯৪-১৯৭৬ খৃ.) দরসে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকতেন।[21]

হাদীছ গবেষণার ব্যাপারে পিতার অবস্থান :

শুরু থেকেই হাদীছের প্রতি আলবানীর ঐকান্তিক ভালোবাসা ও গভীর মনোনিবেশের ক্ষেত্রে তাঁর পিতার ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ আলবানী শারঈ বিধি-বিধান গ্রহণ করতেন হাদীছ থেকে। আর তাঁর পিতা গ্রহণ করতেন মাযহাবী গ্রন্থসমূহ থেকে। ফলে পিতার সাথে শারঈ মাসআলা-মাসায়েল ও সমাজের প্রচলিত নানা কুসংস্কারকেন্দ্রিক বিতর্ক লেগেই থাকত। কখনো কখনো এমন হ’ত যে, কোন মাসআলা নিয়ে বিতর্কের ক্ষেত্রে আলবানী কুরআন-হাদীছের দলীল এবং বিভিন্ন ‘আক্বলী যুক্তির সাহায্যে এমন অকাট্য দলীল উপস্থাপন করেছেন যে, পিতা নূহ উত্তর প্রদানের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। এরূপ ক্ষেত্রে কখনো তিনি কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই চুপ থাকতেন। কখনো সন্তানের মতামত মেনে নিয়ে স্বীয় সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করতেন।[22]

আলবানী বলেন, ‘স্বভাবতই ইলমে হাদীছের ক্ষেত্রে পিতার অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি সর্বদাই আমাকে সতর্ক করে বলতেন, علم الحديث صنعة المفاليس অর্থাৎ ইলমে হাদীছে গবেষণা নিঃস্বদের কাজ’। তবে আল্লাহ তা‘আলা সর্বদা আমাকে দৃঢ় রেখেছিলেন। একদিকে আমার ছিল সুন্নাহ তথা হাদীছের জ্ঞান। আর তাঁর ছিল ইস্তাম্বুল ও অন্যান্য স্থানের ভৌগলিক পড়াশুনা, যেখানে তিনি অধ্যয়নে বিপুল সময় ব্যয় করেছিলেন। আলোচনার সময় আমি হাদীছ থেকে দলীল পেশ করতাম, আর তিনি মাযহাব থেকে দলীল পেশ করতেন। একপর্যায়ে যখন তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, তখন আমি প্রশস্ত হৃদয় থাকতাম। কেননা আমি তো তখন যুবক, আর তিনি ছিলেন বৃদ্ধ।

তবে জীবন সায়াহ্নে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আমার কাছাকাছি মত প্রকাশ করতেন। যেমন সেসময় তিনি অনেক বিতর্কের পরে বলতেন, أنا لا أنكر أنك عدت إلي ببعض الفوائد العلمية التي لم أكن على بينة منها قبل ذلك، ‘আমি অস্বীকার করছি না যে, তুমি আমার সামনে এমন কিছু জ্ঞান নিয়ে এসেছ, যেগুলো পূর্বে আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না’।[23]

তিনি বলেন, ‘এভাবে অধিকাংশ সময় আমরা জ্ঞানগর্ভ বিতর্কের মাঝে অতিবাহিত করতাম। আর ইলমুল হাদীছ নিয়ে আমার অবিরত গবেষণার কারণে সেসময় ওলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তিসমূহ আমার নিকটে সুস্পষ্টভাবে দেখা দিতে শুরু করে’।[24]

শিক্ষকের সাথে বিরোধ :

পিতা নূহ নাজাতীসহ আলবানীর শিক্ষকগণ উমাইয়া মসজিদে ছালাত আদায় করাকে বিশেষ ফযীলতপূর্ণ মনে করতেন। মূলত তাঁরা হানাফী আলেমদের লিখিত হাশিয়া ইবনু আবিদীনসহ বেশ কিছু প্রামাণ্য গ্রন্থে এর ফযীলত বর্ণনায় লিখিত কিছু বক্তব্য ও আছার[25] দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। যেখানে বর্ণনাগুলোর সূত্র হিসাবে ‘তারীখু দিমাশক’ উল্লেখ ছিল। আলবানী বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর নির্মিত একটি মসজিদ সম্পর্কে এরূপ আছার বর্ণিত হওয়ার বিষয়টি আমি অনুধাবন করতে পারতাম না। আর স্বভাবতই ফযীলত বর্ণনায় এসব বাড়াবাড়ি মেনে নেওয়ার জন্য আমি কখনোই প্রস্ত্তত ছিলাম না’।

বছরখানেক পর তিনি ‘মাকতাবা যাহেরিয়া’য় ইবনু আসাকির (রহঃ) রচিত ‘তারীখু মাদীনাতি দিমাশক’-এর ১৭ খন্ডের মূল হস্তলিখিত সুবিশাল গ্রন্থটি অধ্যয়নের সুযোগ পান। গবেষণার একপর্যায়ে তিনি কাঙ্খিত বর্ণনাটি খুঁজে পান। কিন্তু দেখেন কোন সনদ ছাড়াই এটি সংকলিত হয়েছে। অতঃপর সেখানে তিনি উক্ত মসজিদে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)-এর কবর থাকার বিষয়টিও পেলেন। এভাবে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, কবর থাকার কারণে উমাইয়া মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে না।

অতঃপর তিনি হাদীছ ও ফিক্বহ গ্রন্থসমূহের সাহায্য নিয়ে ৩-৪ পৃষ্ঠার মধ্যে কবরের উপর নির্মিত মসজিদে ছালাত আদায়ের বিরুদ্ধে একটি পুস্তিকা লিখে স্বীয় শিক্ষক শায়খ বুরহানীর নিকটে পেশ করলেন। সময়টি ছিল রামাযান মাস। স্মিত হেসে শায়খ বুরহানী ঈদের পর এর জবাব দিবেন বলে জানালেন। কিন্তু ঈদের পরে তিনি বললেন, ‘তুমি এখানে যা কিছু জমা করেছ, তা মূল্যহীন। কারণ যেসব গ্রন্থ থেকে তুমি দলীল গ্রহণ করেছ, সেগুলো আমাদের নিকটে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নয়। আমাদের নিকটে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হ’ল ‘মারাক্বিউল ফালাহ’, ‘হাশিয়া ইবনু আবিদীন’ ইত্যাদি। আলবানী বললেন, ‘আমি তো ইবনু মালিক হানাফীর ‘মাবারিকুল আযহার শারহু মাশারিকিল আনওয়ার’, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফীর ‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে দলীল পেশ করেছি’। তিনি বললেন, ‘এগুলোর কোন মূল্য নেই আমাদের নিকটে। ...আর যেসব হাদীছ তুমি পেশ করেছ সেগুলো গুরুত্বহীন। কেননা দ্বীনী বিষয়ে আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র হ’ল ফিক্বহের কিতাবসমূহ, হাদীছের কিতাব নয়।’

আলবানী বলেন, ‘তাঁর এ জবাব আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। আমি বুঝতে পারি যে, আমি যা লিখেছি, শায়খ তা অনুধাবন করতে পারেননি। যদিও আমার আলোচনা ছিল ‘উমদাতুল ক্বারী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ, মাশারিকুল আনওয়ার ও হাশিয়াতুত তাহতাবী থেকে। যেগুলো বিদ্বানগণের নিকটে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র...’।

এভাবেই আলবানীর সংস্কার প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আর উক্ত পুস্তিকাটিই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম লেখনী, যা পরবর্তীতে বর্ধিত আকারে تحذير الساجد من اتخاذ القبور مساجد নামে প্রকাশিত হয়।[26] এছাড়া তাঁর তাখরীজকৃত প্রথম গ্রন্থটি ছিল الروض النضير في ترتيب وتخريج معجم الطبراني الصغير। তবে এখনো তা পান্ডুলিপি আকারেই রয়েছে।

পিতার সাথে মতবিরোধ :

হানাফী মাযহাবের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে পিতা নূহ নাজাতী নিজ সন্তানসহ ছাত্রদের স্বীয় মাযহাবের উপর দৃঢ় রাখতে ছিলেন সদা তৎপর। কিন্তু আলবানী শুরু থেকেই ছিলেন ভিন্ন মানসিকতার। বিশেষত কুরআন ও হাদীছের উপর বিস্তর অধ্যয়ন ও যেকোন বিধানের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের মানসিকতার কারণে তাঁর নিকটে সমাজে প্রচলিত নানা বিভ্রান্তি, শিরক ও বিদ‘আতী কার্যক্রম স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খুঁজে পান কুরআন-হাদীছের সাথে প্রচলিত মাযহাবসমূহের বহু মাসআলা-মাসায়েলের যোজন যোজন ব্যবধান।

সেসময় বিভিন্ন মসজিদে হানাফী এবং শাফেঈ মাযহাবের অনুসারীদের দু’টি করে জামা‘আত হ’ত। প্রথমে হানাফী জামা‘আত শেষ হওয়ার পর শাফেঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হ’ত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সিরিয়ায় তাজুদ্দীন নামে একজন শাফেঈ শাসক ক্ষমতাসীন হন এবং তিনি হানাফীদের পূর্বে শাফেঈদের ছালাত আদায়ের নির্দেশ জারী করেন। এমতাবস্থায় আলবানী দ্বিতীয় জামা‘আতে ছালাত আদায়ের কোন দলীল না পেয়ে শাফেঈদের সাথে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা শুরু করেন।

কিন্তু একবার হানাফী জামা‘আতের ইমাম শায়খ বুরহানী হজ্জ বা ওমরার সফরে গমনের কারণে আলবানীর পিতাকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে যান। অবস্থা এমন হ’ল যে, একদিকে আলবানী প্রথম জামা‘আতে ছালাত আদায় করছেন, অন্যদিকে তাঁর পিতা নূহ নাজাতী দ্বিতীয় জামা‘আতে ইমামতি করছেন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে গেল, যেদিন তিনি ব্যক্তিগত সফর উপলক্ষে আলবানীকে দ্বিতীয় জামা‘আতে ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। স্পষ্টভাষী আলবানী স্বীয় পিতাকে বললেন, ‘এ বিষয়ে আপনি তো আমার মতামত জানেন যে, আমি প্রথম জামা‘আতে ছালাত আদায় করি। এমতাবস্থায় স্ববিরোধী কাজ করা আমার জন্য খুবই কঠিন’। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ তীব্রতর হ’ল। অতঃপর একদিন পিতা তাকে গৃহকোণে ডেকে বললেন, তাহ’লে এটাই কি সত্য যে, তুমি তোমার মাযহাব পরিত্যাগ করেছ? তুমি কি আর হানাফী মাযহাবে ফিরে আসবে না? আলবানী বলেন, এসব বলতে বলতে তিনি আমার আরো নিকটবর্তী হ’লেন। অন্যদিকে তাঁর কণ্ঠও ঊঁচু হ’তে লাগল। একপর্যায়ে বললেন, হয় তোমাকে আমার সাথে একমত হ’তে হবে, অন্যথা পৃথক থাকবে। আলবানী পিতার নিকট থেকে তিনদিন সময় চেয়ে নিলেন। অতঃপর পিতা প্রদত্ত ২৫ সিরীয় লিরা হাতে নিয়ে পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল বিশ বছর।[27]

মাযহাবী বিরোধ ছাড়াও আরো কিছু কারণে পিতার সাথে আলবানীর মতবিরোধ সৃষ্টি হ’ত। তা ছিল কিছু কুসংস্কারের ব্যাপারে তাঁর অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন। যেমন তাঁর কন্যা তথা আলবানীর বোনের ব্যাপারে অনেক বিবাহ প্রস্তাব আসত। কিন্তু ছোটখাট কারণ দেখিয়ে তিনি সেসব প্রত্যাখ্যান করতেন। হয়ত কোন পাত্র সৎ, কিন্তু তার ভাই পুলিশ হওয়ার কারণে ইংরেজদের মত হ্যাট পরে। কেউ অতি ধার্মিক কিন্তু তার কোন আত্মীয়ের বাসায় রেডিও আছে। এমনকি দামেশকে তাঁর এক পরিচিত ও আলেম বন্ধু তাঁর মেয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব দিলে তিনি বললেন, ‘তুমি আমার নিকটে উপযুক্ত পাত্র, কিন্তু হায়! যদি তুমি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী না হয়ে হানাফী মাযহাবের হ’তে!’

পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নেওয়ার ব্যাপারে আরেকটি কাহিনী প্রসিদ্ধ আছে। তা হ’ল, পিতা নূহ নাজাতীর ধারণা ছিল যে, দাঁত ফিলিং করলে বা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত ভরাট করে নিলে বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব হয় না। ফলে তার ছালাতও কবুলযোগ্য হয় না। তাঁর নিকট শিক্ষা গ্রহণকারী বহু আলবেনীয় মুহাজিরও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। একবার আলবানী দাঁত ফিলিং করেন। অতঃপর খবরটি পিতার নিকটে পৌঁছে গেলে তিনি শর্ত দেন যে, হয় দাঁত তুলে ফেলতে হবে অন্যথা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। আলবানী দ্বিতীয়টিই গ্রহণ করেন...।[28]

পিতৃগৃহ থেকে বিদায়ের পর হতোদ্যম না হয়ে তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে গবেষণায় লিপ্ত থাকেন। তবে এজন্য তাঁকে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি। কারণ ইতিমধ্যে সিরিয়ায় তাঁর মত একই চিন্তাধারার একদল সাথী পেয়েছিলেন। বাযারে যাদের একজনের দোকান ছিল। তার সাথে একই স্থানে তিনি নিজের জন্য একটি দোকান ভাড়া নেন এবং পিতা প্রদত্ত বেশ কিছু পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে ঘড়ি মেরামতের কাজ শুরু করেন। ঘড়ি মেরামতের ক্ষেত্রে তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং উত্তম পরামর্শদাতা ছিলেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়।[29]

(চলবে)

[1]. ইউরোপের মুসলিম (৫৬.৭%) অধ্যুষিত এই দেশটি ১৫শ শতকে ওছমানীয় খেলাফলের অধীনে আসে।

[2]. মুহাম্মাদ বাইয়ূমী, আলবানী : হায়াতুহু, দা‘ওয়াতুহু ওয়া জুহূদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ (মিসর : দারুল গাদ্দিল জাদীদ, ১ম প্রকাশ, ২০০৬ খ্রি.), পৃ. ৭। বইটি মূলত আলবানী প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারের লেখ্যরূপ। যেটা ১৯৮৬/১৪০৭ হিজরীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছাত্র আবূ ইসহাক্ব আল-হুওয়াইনী জর্দান সফরকালে পাঁচটি ক্যাসেটে রেকর্ড গ্রহণ করেন। হুওয়াইনীর জোর আবেদনের পরও সবসময় তিনি অস্বীকৃতি জানাতেন এবং বলতেন যে, তার জীবন পরিক্রমা সম্পর্কে বলার মত কিছু নেই। কিন্তু একপর্যায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি রাযী হন এবং সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। অতঃপর মুহাম্মাদ বাইয়ূমী তা লেখ্য রূপে প্রয়োজনীয় টীকাসহ প্রকাশ করেন। দ্র. পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৫-৬।

[3]. ‘আরনাঊত্বী’ শব্দটি দ্বারা আলবেনিয়া ও সাবেক যুগোসলাভিয়া তথা বসনিয়া, কসোভো, সার্বিয়া ইত্যাদি অঞ্চল থেকে সিরিয়ায় হিজরত কারীদের বুঝানো হ’ত। যেমন ‘আরবী’ দ্বারা মিসরী, সঊদী, সিরীয় তথা সকল আরবদের বুঝানো হয়। (দ্র. আত্বীয়া ইবনু ছিদক্বী, ছাফহাতুন বায়যাউ মিন হায়াতিল ইমাম মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (কায়রো : আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ২য় প্রকাশ, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ২১।

[4]. আলবানী : হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহু, পৃ. ১১।

[5]. ইবরাহীম মুহাম্মাদ আল-আলী, নাছিরুদ্দীন আলবানী : মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ (দিমাশক : দারুল কলম, ১ম প্রকাশ, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ১১-১২।

[6]. জিহাদ তুরবানী, মিআতুম মিন ‘উযামাই উম্মাতিল ইসলামি গাইয়ারূ মাজরাত তারীখ (মিসর : দারুত তাক্বওয়া, ১ম প্রকাশ, ২০১০ খ্রি.), পৃ. ৩৩৩।

[7]. সিরিয়ার মর্যাদা সম্পর্কে হাফেয আবুল হাসান রাবাঈ (মৃ. ৪৪৪ হি.) রচিত فضائل الشام ودمشق নামে একটি বই রয়েছে, যেখানে দামেশক ও শামের ফযীলত বর্ণনায় বিভিন্ন হাদীছ, আছার ও ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহ জমা করা হয়েছে। পরবর্তীতে আলবানী (রহঃ)-এর সাথে বিস্তারিত তাহক্বীক্ব সংযুক্ত করেন।

[8]. ড. নাযযার আবাযাহ, তারীখু ওলামাই দিমাশক ফিল কারনিল খামিস ‘আশার আল-হিজরী, ২য় খন্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১ম প্রকাশ, ২০০৭ খ্রি.), পৃ. ৬৫৩।

[9]. মুহাম্মাদ মাজযূব, ওলামা ওয়া মুফাক্কিরূন ‘আরাফতুহুম, (রিয়াদ : দারুশ শাওয়াফ, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৯২ খ্রি.), পৃ. ১/২৮৯।

[10]. আলবানী বলেন, ‘আমার ধারণা মতে এবং বাস্তব দর্শনে আমি বলতে পারি যে, যদি ঐ বিধিবদ্ধ শিক্ষাপদ্ধতিই আমি অনুসরণ করতাম, তবে এখন যে অবস্থানে রয়েছি, হয়ত সেখানে আমি আসতে পারতাম না’। দ্র. ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ২২।

[11]. ড. আব্দুল আযীয আস-সাদহান, আল-আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াক্বিফ ওয়া ‘ইবার (রিয়াদ : দারুত তাওহীদ, ১ম প্রকাশ, ২০০৮ খ্রি.), পৃ. ১৪।

[12]. Abu Nasir Ibrahim Abdur Rauf & Abu Maryam Muslim Ameen, The biography of Great Muhaddith Sheikh Muhammad Nasiruddin Al-Albani (Riyadh : Darussalam, 1st Edition, 2007), P. 26.

[13]. আব্দুর রহমান ইবনু মুহাম্মাদ, জুহূদুশ শায়খ আলবানী ফিল হাদীছ রিওয়ায়াতান ওয়া দিরায়াতান (রিয়াদ : মাকতাবাতুর রুশদ, ১ম প্রকাশ, ২০০৬ খ্রি.), পৃ. ৩৬।

[14]. আলবানী : হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহু, পৃ. ১১-১২।

[15]. আলবানী : হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহু, পৃ. ১২-১৩।

[16]. মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আশ-শায়বানী, হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু ওয়া ছানাউল ওলামা ‘আলাইহি (কায়রো : মাকতাবা সাদাবী, ১ম প্রকাশ, ১৯৮৭ খ্রি.), পৃ. ৪৭।

[17]. ওলামা ওয়া মুফাক্কিরূন ‘আরাফতুহুম, ১/২৯২।

[18]. নাছিরুদ্দীন আলবানী : মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ, পৃ. ১৪।

[19]. ১২৯৬ হিজরীতে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরীটি সিরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক লাইব্রেরী। কেবল বিপুল গ্রন্থরাজি সংরক্ষণের জন্য নয়, বরং এটি প্রাচীন ও বিরল পান্ডুলিপিসমূহ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। এখানকার সবচেয়ে পুরাতন পান্ডুলিপিটি হিজরী ৩য় শতকের। এর হস্তলিখিত গ্রন্থ ও রিসালাসমূহের কোনটি লেখকের স্বহস্তে, কোনটি এর পাঠকের অথবা অন্য কোন নকলকারীর লিখিত। দ্র. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৫১।

[20]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৪৬-৫২।

[21]. আলবানীর আরেকজন শিক্ষক সম্পর্কে জানা যায়, যিনি হ’লেন শায়খ বাদরুদ্দীন আল-হুসাইনী। তার বেশ কিছু দারসে তিনি উপস্থিত ছিলেন। দ্র. আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াক্বিফ ওয়া ‘ইবার, পৃ. ১৪।

[22]. ওলামা ওয়া মুফাক্কিরূন ‘আরাফতুহুম, ১/২৯১।

[23]. ঐ, পৃ. ১/২৮৯।

[24]. আলবানী : হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহু, পৃ. ১৪।

[25]. উক্ত আছারটি হ’ল- সুফিয়ান ছাওরী (রহ.) হ’তে বর্ণিত, উমাইয়া মসজিদে ছালাত আদায় সত্তর হাযার ছালাত আদায়ের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ।

[26]. আলবানী : হায়াতুহু, দা‘ওয়াতুহু ওয়া জুহূদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ, পৃ. ১৫-১৭; নাছিরুদ্দীন আলবানী : মুহাদ্দিছুল ‘আছর, পৃ. ১২।

[27]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আহদাছুন মুছীরাহ মিন হায়াতিশ শায়খ আলবানী (আলেকজান্দ্রিয়া : দারুল ঈমান, ১ম প্রকাশ, ২০০০ খ্রি.), পৃ. ১৩।

[28]. ওলামা ওয়া মুফাক্কিরূন ‘আরাফতুহুম, ১/২৯০।

[29]. আলবানী : হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহু, পৃ. ১৯।






ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৯ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (১০ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল কাসেম সায়েফ বেনারসী (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
ড. মুক্তাদা হাসান আযহারী - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.