বাংলাদেশের বহু এলাকা
পানিবদ্ধপ্রবণ। যেখানে সাধারণত কোন ধরনের ফসল ফলানো যায় না। ৭ থেকে ৮ মাস
পর্যন্ত নিমজ্জিত থাকে এসব জমি। তাই এ সময় এখানকার মানুষ বেকার হয়ে পড়ে।
এমন এলাকার জন্য সবচেয়ে ভাল হ’ল ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ।
আষাঢ় মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, দুলালীলতা, টোপাপানা ইত্যাদি জলজ লতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ধাপ বা বেড তথা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়।
বেডের আকার : একেকটি ভাসমান ধাপ বেড কান্দি ১৫০ থেকে ১৮০ ফুট লম্বা ও ৫ থেকে ৬ ফুট প্রশস্ত এবং ২ থেকে ৩ ফুট পুরু বা উঁচু বীজতলা ধাপ তৈরি করে তার উপর কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, দুলালীলতা, টেপাপানা, কুটিপানা, কলমিলতা, জলজলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া ও ক্ষুদ্রাকৃতির বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ পচিয়ে বীজতলার উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়।
কৌশল ও যত্ন : ধাপ তৈরির পর ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে ব্যবহার করা হয় সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়। একটি ধাপের মেয়াদকাল কম বেশী সাধারণত ৩ মাস। ধাপে অঙ্কুরিত চারা পরিপক্ব চারায় পরিণত হয় মাত্র ২০ থেকে ২২ দিনে। যে কারণে পুনরায় ব্যবহার করার জন্য ধাপগুলোর সামান্য পরিবর্তন করতে হয়। এরপর ৫ থেকে ৬ দিন পরপর ভাসমান ধাপের নীচ থেকে টেনে এনে নরম কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা টেনে এনে দৌলার গোড়ায় বিছিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। একটি অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় রোপণ করার ২০ থেকে ২২ দিনের মাথায় পূর্ণবয়স্ক চারায় রূপান্তরিত হয়। ১ সপ্তাহের মধ্যে কৃষক বা চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান এসব চারা। জৈবসারে উৎপাদিত এসব চারার উৎপাদন খরচ পড়ে ১ থেকে দেড় টাকা। ১ হাযার চারা আড়াই থেকে ৩ হাযার টাকায় বিক্রি হয়।
যেভাবে চাষ হয় : নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে সবজি উৎপাদনের এটি একটি বিশেষ কৌশল। পানিতে ভাসমান এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এতে রোগবালাই কম হয়। ফলে কিটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া ঝড় ও জলোচছবাসে এ পদ্ধতির চাষাবাদে তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
আয়-ব্যয় : সাধারণভাবে ৫০ থেকে ৬০ মিটারের একটি ধাপ তৈরি করতে খরচ হয় সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৫ হাযার টাকা। একজন কৃষক একটি বেড থেকে প্রথম ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে আয় করেন ২ থেকে ৩ হাযার টাকা। পুনরায় ধাপ প্রস্ত্তত না করে প্রথমবার ব্যবহৃত ধাপ আবার অন্য কৃষকের কাছে বিক্রিও করে দেয়া যায় বা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায়। প্রথমবার ব্যবহৃত ধাপ বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ হাযার টাকায়। সবমিলিয়ে ধাপ পদ্ধতি হ’তে বছরে প্রতি একর জমি থেকে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করা যায়। ১০০ ফুট লম্বা একটি ধাপ তৈরি এবং চারা উৎপাদনে ৫ মাসে ব্যয় হয় ১৫ হাযার টাকা। ধাপ থেকে চারা বিক্রি করা হয় ২৫ হাযার টাকা।