বীজ বোনার সময় ও পরিমাণ : এই বীজ বছরের যে কোন সময় বপন করা হয়। তবে অতীব শীতে এই বীজ বপন না করাই উত্তম। একর প্রতি-২০০-৩২৫ গ্রাম। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়। বীজ একদিন ও একরাত ভিজিয়ে লাগানো ভালো।

জমি তৈরী : দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। বার চারেক চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া হয়। আগাছা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ক্ষেত সমতল করে নিতে হবে।

মাদা তৈরী : ৫০-৮০ সে. মি. চওড়া ও গভীর-গর্ত তৈরী করতে হয়। ২-২.৫ মি: দূরে মাদা তৈরী করতে হয়। বহুয়ে শসার দূরত্ব আরও কম।

সার-ব্যবস্থাপনা : একর প্রতি গোবর ২.০ টন, খৈল ১১৩ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমপি ৪০ কেজি, ইউরিয়া ৪০ কেজি সার প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে সব সার গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে। বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের প্রথম অর্ধেক এবং প্রায় দেড় মাস পর ইউরিয়া সারের পরের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : শীত ও গরমকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া দরকার হয়। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালার বন্দোবস্ত রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে জমি পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া ৩-৪ সপ্তাহ পর, সব বীজ অঙ্কুরিত হ’লে, মাদা পিছু ৩টি গাছ রেখে, অন্য গাছগুলি তুলে ফেলা হয়।

পোকা ও রোগ দমন : গান্ধীপোকা ও বিটল পোক (এপিল্যাকনা বিটল ও রেড পামকিন বিটল): গান্ধী পোকা ও বিটল পোকা-গাছের পাতা খায় এবং ফুলের রস চুষে খেয়ে গাছ দুর্বল করে দেয়। এপিল্যাকনা বিটলের গায়ে কাটাযুক্ত হলদে রঙের গ্রাব খুব দ্রুত গাছের পাতা খায়। এসব পোকা দমনের জন্য সাড়ে ১২ লিটার পানিতে দেড় চা চামচ পরিমাণ ম্যালাথিয়ন ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে।

ফলের মাছি পোকা : এই পোকা ফল ছিদ্র করে ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে ঐ ফলের মধ্যে জন্মায় এবং ফল পঁচে যায়। এই পোকা দমনের জন্য কচি ফল কাগজ, কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ফল বড় হওয়ার পর যখন খোসা শক্ত হয়, তখন আর এই পোকা ফল ছিদ্র করতে পারে না। ক্ষেতে পোকার আক্রমণ খুব বেড়ে গেলে সাড়ে ১২ লিটার পানিতে ২ চা চামচ পরিমাণ ডিপটেরেক্স ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে।

মাছি-পোকা দমনের বিষটোপ তৈরী ও ব্যবহার : বিষটোপের জন্য ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে থিতলিয়ে ০.৫ মিলি লিটার (১২ ফোটা) নগস অথবা ডিডিভিপি ১০০ তরল এবং ১০০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে ৩টি খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে রাখতে হবে। খুঁটি তিনটির মাথায় অন্য একটি বড় আকারের মাটির পাত্র রাখতে হবে। বিষটোপ গরমের দিনে ২ দিন এবং শীতের দিনে ৪ দিন পর্যন্ত রাখার পর তা ফেলে দিয়ে নতুন করে আবার তৈরি করতে হবে। মাছি পোকার সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতি হেক্টরে ২০-৪০টি বিষটোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

পাউডারিমিলিডিউ রোগ : এই রোগে পাতার উপর সাদা পাউডার দেখা যায় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন হ্রাস পায়। এই রোগ দূর করার জন্য ২০ গ্রাম থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউপি ১০ লিটার পানির সংগে মিশিয়ে ভাল করে পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে। এই পরিমাণ ৫ শতক জমিতে দেয়া যায়। প্রতি বিঘার জন্য ১২০ গ্রাম ঔষধ দরকার হবে।

আনথাকনোজ রোগ : এই রোগে আক্রান্ত হ’লে প্রথমে পাতায় হলদে দাগ হয়, পরে দাগগুলো বাদামী বা কালো হয়ে ঐ অংশ পচে যায়। ফলের বহিরাবরণেও এই বাদামী দাগ দেখা যায় ও ফল পচে যায়। এর প্রতিকারের জন্য বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ শোধন করতে হবে। ১ কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ নামক ঔষধ দ্বারা উত্তমরূপে মিশাতে হবে। তাছাড়া ক্ষেতে রোগ দেখা দিলে ডায়থেন ৪৫ গ্রাম ১০ লিটার পানির সংগে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই রোগ দমনের জন্য ঘরে তৈরী বোর্দ মিশ্রণ আক্রান্ত গাছে ছিটানো যেতে পারে। এক শতাংশ জমির জন্য এই বোর্দ মিশ্রণ তৈরী করতে সাড়ে ১৭ লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম পাথুরে চুন ও অন্য সাড়ে ১৭ লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম তুঁতে আলাদা আলাদাভাবে মাটির পাত্রে মিশাতে হবে। পরবর্তীকালে এই দুই মিশ্রণ পুনরায় অপর এক মাটির পাত্রে ভালোভাবে মিশাতে হবে এবং আক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে। ১৫ দিন পর পর এভাবে নতুন মিশ্রণ তৈরী করে ছিটাতে হবে। ফসল তোলার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন : কাঁচা খাওয়ার জন্য শসা পাকানো হয় না। তবে রান্না করে খেতে হ’লে কিছু পাকিয়ে নেওয়া ভাল। কাজেই সবুজ থাকতেই শসা তুলে ফেলা হয়। জমিতে লক্ষ্য রেখে মাঝে মাঝেই শসা তুলে নেওয়া হয়। একবার সংগ্রহ আরম্ভ হ’লে ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফল তুলতে হয়। শসার ফলন একর-প্রতি-৪-৮ টন।

সতর্কতা : ঔষধ ছিটানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কোন ফল বাজারে বিক্রি বা খাওয়া যাবে না।

\ সংকলিত \







আরও
আরও
.