ডাল পুঁতে পোকা নিধন

পিরোজপুরের মঠকড়িয়া উপযেলার কৃষকরা ধানক্ষেতের পোকা-মাকড় নিধনে কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। চলতি আমন মৌসুমে পোকা-মাকড় নিধনে পাখি বসার জন্য ধানক্ষেতে ছোট ছোট ডাল পুঁতে রাখা বা পার্সিং পদ্ধতির প্রতি কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। মাজরা, পামরি ও লেদাসহ কয়েকটি পোকা ধানের রোয়ার ক্ষতি করে থাকে। এ সকল পোকার অবাধ প্রজনন ক্ষেত্র হলো ধানের রোয়া। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী দৈহিক আকারে ছোট পাখিরা পোকা-মাকড় ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করে থাকে। ধানক্ষেতে ছোট পাখিরা বসার স্থান পেলে রোয়ার পোকা-মাকড় ভক্ষণ করে পোকার বংশ ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে ধানের ফলন ভাল হয়, কৃষকের কীটনাশকের অর্থ সাশ্রয় হয় এবং পরিবেশও দূষণমুক্ত থাকে। গত ৭/৮ বছর থেকে ধান ক্ষেতে পাখি বসার ডাল পুঁতে রেখে কৃষকরা ভাল ফল পাচ্ছে। পার্সিং পদ্ধতিতে কৃষকের শতকরা ৭০ ভাগ কীটনাশকের অর্থ সাশ্রয় হয়। কৃষকরা এ পার্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় চলতি আমন মৌসুমে উপযেলায় ব্যাপক পোকার আক্রমণ প্রবণ প্রায় ১ হাযার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা পাবে বলে জানা যায়। পার্সিং পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। ফলে কীটনাশকের বিক্রি কমে যাওয়ায় উপযেলার প্রায় ২শ’ কীটনাশকের দোকানের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী দোকান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

সফল চাষী

১. পান চাষ করে স্বাবলম্বী : (ক) চাঁদপুর যেলার মতলব উত্তর উপযেলার গজরা ইউনিয়নের গজরা টরকী এ্যায়াজকান্দি গ্রামের অমৃতলাল বর্মন ও গনেশ চন্দ্র সরকার পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা শ্যালক দুলাভাই মিলে বাড়ির পাশে ৬০ শতক জমিতে পানের চারা রোপণ করেন। কিছুদিন পর চারা গজালে বাঁশ ও হুগলি দিয়ে পাশের গাছের মগডাল পর্যন্ত চারাকে লতিয়ে উঠার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে পানের লতাটি ছড়িয়ে পড়ে গাছের ডালে ডালে। পান গাছের পরিচর্যায় ব্যবহৃত হয় খৈল ও প্রাকৃতিক জৈব সার। পান পাতা সহজে পচে না। ফলে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। ২০টি পানে ১ ছলি, ০৪ ছলিতে এক কান্তা এবং ২০ কান্তায় ১ কুড়ি। ১ কুড়িতে ১৬শ’টি পান। ভরা মৌসুমে ১ কুড়ি পান ৯শ’ থেকে হাযার টাকা এবং শীতকালে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

অমৃতলাল ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাযার টাকা আয় করেন। আর গনেশ পান চাষের আয় দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার পরিচালনা করে বাড়ীতে একতলা বিল্ডিং ও একটি দু’চালা ঘর সহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

(খ) লক্ষ্মীপুর যেলার রায়পুর উপযেলার পানচাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ উপযেলার বাজারে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পান ক্রয়-বিক্রয় হয়। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পান চলে যায় দেশের বিভিন্ন শহরে। রায়পুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপযেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে ১৬২০ বরজে পান চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় প্রায় ৮ হাযার পোন (৮০ পিস)। উৎপাদন খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে ভাল মানের প্রতি বিড়া (৭২ পিস) পান বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। এ হিসাবে রায়পুরে ৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার পান উৎপাদন হয়। তবে বেসরকারী হিসাবে পানের উৎপাদন হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার। উপযেলার উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে পানের আবাদ বেশী হয়। ‘পানপল্লী’ খ্যাত ক্যাম্পের হাট এলাকার চাষীদের সূত্রে জানা যায়, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পানের উৎপাদন ভাল হয় এবং সাইজও বড় হয়। অতি শীত, ঘন কুয়াশা ও ক্ষেতে পানি জমে থাকলে পানের বরজ নষ্ট হয়। একটি বরজ ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে মাঝে মাঝে সংস্কার করতে হয়।

২. শশা চাষ করে সফলতা : গোপালগঞ্জ যেলাধীন মুকসুদপুর উপযেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইলিয়াস শেখ প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে শশার চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। ১৯৮৭ সালে সে নিজ গ্রাম বামনডাঙ্গায় গ্রামবাসীর নিকট থেকে কিছু জমি লীজ নিয়ে হাইব্রীড শশা, বেগুন, সীম ইত্যাদির চাষ করে। যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে কিছু কিছু সঞ্চয় করে। মা, স্ত্রী ও তিন পুত্রকে নিয়ে সুখেই কাটছে তার সংসার।

গত বছর সে পার্শ্ববর্তী মহারাজপুর গ্রামে সাড়ে চার বিঘা জমি লীজ নিয়ে শীম, শশা ও বেগুন চাষ করে। স্থানীয় শুভাকাংখীদের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা ধার নিয়ে চাষ শুরু করে। প্রথম বছর সে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করতে পারেনি। এ বছর সে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে বলে জানায়। শশার উৎপাদন সাধারণত ৮০ দিন হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ৬০ দিনে সে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাযার টাকার ফসল বিক্রি করেছে। আগামী ২০ দিনে আরো প্রায় ১ লাখ টাকার ফসল তুলতে পারবে বলে সে জানায়।

৩. পেঁপে চাষে সাফল্য : পেঁপে একটি উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য। পেঁপে যকৃৎ ও পরিপাক তন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পেঁপে চাষ করে চট্টগ্রামের পটিয়ার অনেক লোক সাফল্য অর্জন করেছে। পটিয়া কৃষি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ উপযেলার ১৪-১৫ জন ব্যক্তি শৌখিন চাষ হিসাবে এ পেঁপে চাষ করেছে। প্রত্যেকে ২০০ থেকে ৪০০ চারা রোপণের মাধ্যমে এক একটি বাগান সৃষ্টি করেছে। পেঁপে চাষে তেমন পরিশ্রম নেই। গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত মাঝে মাঝে একটু আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। পটিয়া কৃষি উদ্যান কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করে ১ লাখ টাকা আয় করা যায়।

১৫ লাখ হেক্টর জমির ধানে আর্সেনিক

দেশের প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমির ধানে ক্ষতিকারক মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) এক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেলার মাটি ও পানি থেকে ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক ধানে প্রবেশ করছে। প্রতি কেজি চালে দশমিক ১ পিপিএম মাত্রার আর্সেনিক থাকলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক না উল্লেখ করে ইরির গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওই ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ধানে দশমিক ২ থেকে দশমিক ৪ পিপিএম মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

‘দরিদ্র মানুষকে আর্সেনিকের ঝুঁকিমুক্ত করা’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, কলে ধান ভাঙ্গানো ও সিদ্ধ করে রান্নার ফলে চাল থেকে আর্সেনিকের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমে যায়। তবে সে ক্ষেত্রে রান্না করার পর ভাতের মাড় না খেয়ে ফেলে দিতে হবে। বসা ভাত (মাড় না ফেলে শুকিয়ে ফেলা ভাত) রান্না করলে তাতে আর্সেনিক রয়ে যায়।






আরও
আরও
.