প্রায় দেড় দশক আগের কথা। বগুড়ার তরুণ তাওহীদ পারভেয পড়াশোনা করতে যান নিউজিল্যান্ডের রাজধানী অকল্যান্ডে। পড়ার বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসা। পড়ার ফাঁকে তার শখ ছিল বিভিন্ন দুগ্ধ খামারে ঘুরে বেড়ানো। বিশাল বিশাল বিদেশী গাভী দেখে বিস্মিত হ’তেন। এগুলো কিভাবে লালন-পালন করা হয়, খামারীদের কাছ থেকে সে গল্প শুনতেন।

দুগ্ধ খামার করার ঝোঁকটা তখন থেকেই। দেশে ফিরে ২০১১ সালে সাতটি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার দিয়ে বসেন। শুরুতে পরিবারের লোকজন বিষয়টাকে ভালোভাবে নেননি। কিন্তু নিজের স্বপ্নে অটল পারভেয। সহপাঠীরা যখন ভালো চাকরির স্বপ্ন দেখেন, তিনি তখন চাকরি দেওয়ার, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতেন।

সেই ভাবনা থেকেই গড়ে তুলেছেন বগুড়া ভান্ডার ডেইরী অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। প্রায় ১২ বিঘা জায়গাজুড়ে বিশাল খামার। এর বাইরে ৩৫ বিঘা জমিতে ধান ও বিদেশী জাতের ঘাস চাষ করছেন। খামারে আছে ৮০টি বিদেশী উন্নত জাতের গাভী। এগুলোর মধ্যে ২০টি গাভী থেকে এখন প্রতিদিন ২০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। খামারে আছে আরও ৬০টি গর্ভবতী গাভী। এছাড়া আছে আরো শতাধিক বিদেশী জাতের এঁড়ে গরু।

দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য গরুর খামার দিয়ে তাওহীদ পারভেয এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর খামার ও খামারসংলগ্ন পাটকল, আটার কল, হিমাগার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় দেড় হাযার শ্রমিকের। করোনা মহামারির সময় গোটা দেশে কাজের জন্য যখন হাহাকার, অনেকে চাকরী হারাচ্ছে, পুঁজি খোয়াচ্ছেন তখন তার খামারে দিব্যি কাজ করছে হাযারো মানুষ।

৩৬ বছর বয়সী তাওহীদ থাকেন পিতা-মাতার সাথে। গরুর খামারের পাশাপাশি পৈত্রিক ব্যবসা পাটকল ও আটার কল দেখভাল করেন। তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ব্যবসাবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের জন্য নিউজিল্যান্ডে যাই। সেখানে অকল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজে পড়াশোনা করি।

দেশে ফিরে প্রথমে পুকুরে মাছ চাষ এবং ফলদ বাগান করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে কুরবানী ঈদে পিতার সঙ্গে হাটে গিয়ে একটা নাদুসনুদুস গরু কিনলাম। রান্নার পর মুখে দিয়ে বোকা বনে গেলাম। খালি চর্বি, স্বাদ নেই। বুঝলাম, বেশি লাভের আশায় অল্প সময়ে অসৎ উপায়ে মোটাতাজা করা হয় গরুটিকে। তারপরই খামার করার সিদ্ধান্ত।

খামারে বর্তমানে ১০ জন শ্রমিক ও একজন পশু চিকিৎসক থাকলেও তিনি নিজে দিনরাত সময় দেন। খামারের দুধ পাইকারী বিক্রি হয় না, এলাকায় ৫০ টাকা লিটার দরে খামার থেকে দুধ বিক্রি করা হয়।

তাওহীদ পারভেয নিজেই খামারের জন্য উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন হাট ঘুরে বিদেশী জাতের শৌখিন গরু কিনে আনেন।  কুরবানী ঈদের পর খামারে গরুর সংখ্যা ১ হাযার এবং দুগ্ধ খামারে ৫০০ গাভী যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তার খামারে ভুসি, ঘাস ও খইল ছাড়া অন্য কোন ভিটামিন খাওয়ানো হয় না। এতে খামারের গরুর শরীরে চর্বি কম, গোশত বেশি থাকে। ফলে খামারের গোশতের স্বাদ বেশি।

খামার নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন তাওহীদ। খামারের গরু থেকে গোশত প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি এবং ডেইরী ফার্ম থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা আছে তাঁর।






আরও
আরও
.