ঢেঁড়স একটি জনপ্রিয় সবজি। এতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং পর্যাপ্ত আয়োডিন ও বিভিন্ন খনিজ
পদার্থ রয়েছে। ফলে ঢেঁড়স চাষ করলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক
উপকারিতাও রয়েছে। নিম্নে ঢেঁড়স চাষের পদ্ধতি উল্লেখ করা হ’ল-
মাটি : দো-অাঁশ ও বেলে দো-অাঁশ মাটি ঢেঁড়স চাষের জন্য ভাল। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেল মাটিতেও চাষ করা যায়।
জাত : শাউনি, পারবনি কানি, বারি ঢেঁড়শ, পুশা সাওয়ানি, পেন্টা গ্রীন, কাবুলি ডোয়ার্ফ, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন চাষ উপযোগী জাত।
চাষের সময় : ঢেঁড়স সারা বছর চাষ করা যায়। তবে গ্রীষ্মকাল চাষের উপযুক্ত সময়। ফাল্গুন-চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
বীজ বপণ : প্রতি শতকে ২০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৪-৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপণের আগে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরী করতে হয়। মাটি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেন্টিমিটার। বীজ সারিতে ৪৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ২-৩টি করে বীজ বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার কমানো-বাড়ানো যায়। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ চারা রেখে বাকী চারা গর্ত থেকে উঠিয়ে ফেলতে হয়।
সার প্রয়োগ : প্রতি শতকে গোবর ৭৫ কেজি, সরিষার খৈল ১.৭৫ কেজি, ইউরিয়া ২৩০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২৩০ গ্রাম। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকী সব সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়স বীজ বপণ করতে হয়। ইউরিয়া সার সমান দু’কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর।
পরিচর্যা : মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। মাটির প্রকারভেদ অনুযায়ী ১০-১২ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। প্রতি কিস্তিতে সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
রোগ-পোকা দমন :
পাতা মোড়ানো পোকা : এ পোঁকা পাতা মুড়ে তার ভিতরে বাস করে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে নষ্ট করে। প্রতি হেক্টরে ১ লিটার ফলিথিয়ন ৫০ ইসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যেতে পারে।
ডগা, কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোঁকা : এ পোঁকার কীড়া গাছের কচি কান্ড ছিদ্র করে ঢুকে পড়ে এবং ঐসব অংশ খেয়ে গাছের সমূহ ক্ষতি করে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১ লিটার সুমিথিয়ন ৫০ ইসি অথবা ফলিথিয়ন ৫০ ইসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।
জেডিস বা শ্যামা পোঁকা : এ পোঁকা ঢেঁড়স উৎপাদনে বিশেষ ক্ষতি সাধন করে থাকে। সুমিথিয়ন, ফলিথিয়ন, ভ্যাপোনা, পলিমোর অথবা জোলন ২ মি.লি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করে জেডিস দমন করা যায়।
রোগ বালাই : ঢেঁড়সের মোজাইক রোগ ছাড়া আর কোন মারাত্মক রোগ নেই বললেই চলে। মোজাইক ভাইরাস রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং তাতে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়। এ রোগের কোন ঔষধ নেই। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য রগর বা রক্সিয়ন (২ মি.লি./১ লিটার পানিতে মিশিয়ে) প্রয়োগ করে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করা ভাল। যেমন- বারি ঢেঁড়স-১, ওকে-০২৮৫ ভাইরাস প্রতিরোধক জাত।
সবজির জন্য ফসল সংগ্রহ : চারা গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর ঢেঁড়স গাছ ফুল দিতে শুরু করে। ফুল বের হওয়ার ৩ দিন (গ্রীষ্মকাল) এবং ৫ দিন (শীতকাল) পর ঢেঁড়স ৬-১০ সে.মি. লম্বা হয়। এ সময় ঢেঁড়সের ফল নরম থাকে এবং আঙ্গুল দ্বারা সহজেই ভাঙ্গা যায়। সবজি হিসাবে ঢেঁড়সের গুণাগুণ ঠিক রাখতে হ’লে ধারালো ছুরির সাহায্যে গাছ থেকে ঢেঁড়স কাটা উচিত। সবজির জন্য ৬০-৮০ দিন সময় লাগে।
বীজের জন্য ফসল সংগ্রহ : বীজ বোনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে।
ফলন : সবজি হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় প্রতি হেক্টর ৮-১০ টন (বারি ঢেঁড়স-১ এ ১৪-১৬ টন) এবং বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি।
উপকারিতা : ঢেঁড়স নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এটি মানুষের হজমশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে।