নড়াইল যেলার লোহাগাড়া উপযেলার পুটিবিলা গৌড়স্থান এলাকার যমীরুদ্দীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি বড় পরিবারের ব্যয় নির্বাহ ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বছর চারেক আগে পোল্ট্রি ফার্মের কাজে নামেন। প্রথম দুই দফা লাভ করলেও পরবর্তীতে এই ব্যবসায় বেশ কয়েক দফায় ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ঋণী হয়ে যান। পরবর্তীতে আরো ধারদেনা করে গরু মোটাতাজাকরণের কাজে নামেন। কিন্তু সেখানেও লাভের মুখ দেখেননি। তবু হাল ছাড়েনি যমীর। পরে পিতার দখলীয় সরকারী পরিত্যক্ত খাসজমিতে পেঁপে চাষের উদ্যোগ নেয়। তাতেই তার সফলতা আসে। গত দেড় বছর আগে প্রথম ১ হাযার পেঁপে গাছ লাগিয়ে লাভ করতে না পারলেও ক্ষতি হয়নি। হাল ছাড়েনি যমীর। পরবর্তী বছর একই জায়গায় সম্পূর্ণ নিজের অভিজ্ঞতায় আবার ২ হাযার পেঁপে গাছ লাগায়। বাম্পার ফলন ঘটে। আগের ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে গত বছর সে লাভের মুখ দেখে। ঐ বছরের লাভ ও মূলধনসহ বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে একই এলাকায় ৭ একরের বনজঙ্গলে ভরা পরিত্যক্ত জমি পরিষ্কার করে গত বছর সেখানে ৫ হাযার পেঁপে চারা লাগায়। নিজে নার্সারি করে তা চাষ করে। গত দেড় মাস হ’তে এই বাগান থেকে পেঁপে বিক্রি শুরু করে। প্রতিসপ্তাহে ৩ টন করে পেঁপে বিক্রি করছে। যার মূল্য ১ লক্ষ টাকা। আগামী ১ মাস পর প্রতি সপ্তাহে ৫ টন করে পেঁপে বিক্রি করতে পারবে বলে যমীর আশা প্রকাশ করছেন এবং পরবর্তীতে তার পরিমাণ আরও বাড়তে থাকবে বলে তার ধারণা। তার পেঁপে বিক্রির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ৩ মাসে মূলধন পেয়ে যাবে বলে তার বিশ্বাস। তবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বন্য হাতির দল এসে কয়েকশ’ পেঁপে গাছের চারা নষ্ট করে দিয়েছে বলে সে জানায়। অথচ স্থানীয় বনবিভাগ থেকে বার বার সহায়তা চেয়েও সে কোন সহায়তা পায়নি বলে জানায়। এদিকে তার পেঁপে চারার মাঝে মাঝে জমিগুলোতে বিভিন্ন জাতের ১১ শত আমগাছ ও ৭ শত লিচু গাছ লাগিয়েছে। যেগুলোতে আগামী বছর ফলন আসতে পারে। এছাড়াও এ বছর নতুন করে বড় আকারের একটি ছাগলের খামার করার জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছে বলেও সে জানিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল আলম বলেন, যমীরুদ্দীন তার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামীতে সে সারা দেশের ছাত্রদের কাছে মডেল হয়ে থাকবে। সম্প্রতি তার বাগান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় যমীরুদ্দীন বাগানে অন্যান্য শ্রমিকের সাথে কাজ করছে। মনে হচ্ছিল সেও দিনমজুর। কাজের ফাঁকে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে সারাদিন মানুষের সাথে বাগানে কাজ করে আর রাতে পড়াশুনা করে। এ পর্যন্ত কোন পরীক্ষায় সে ফেল করেনি বলে জানিয়েছে। পুটিবিলা পহরচান্দার এই নির্জন পাহাড়ী এলাকায় তার বাগানের মাঝে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে রাতে সে একাই থাকে। সাথে বই-পুস্তকও রয়েছে। লোহাগাড়া উপযেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্মের প্রতি তার আগ্রহ ও প্রচেষ্টাই তার সফলতার মূলধন।