ইউরিয়ার ব্যবহার হ্রাসে নবোদ্ভাবিত তরল সার

সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ধানবান্ধি মহল্লার বাসিন্দা ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএডিসি), পাবনা বীজ বিপণন অঞ্চলের উপপরিচালক কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খান তরল সার উদ্ভাবন করেছেন। ফোলিয়ার ফিডিং কৌশল নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে তিনি অসাধারণ কার্যকারিতা সম্পন্ন এই লিকুইড ফার্টিলাইজার বা তরল সার উদ্ভাবন করেছেন। এ সার ব্যবহার করে ভাল ফল পাচ্ছেন কৃষকরা। আরিফ খান এই সারের নাম রেখেছেন ‘ম্যাজিক গ্রোথ’। ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করলে জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব বলে তিনি দাবী করছেন। তিনি বলেন, সাধারণভাবে প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বা কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করতে হয়। তবে তরল সার ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করে ধান চাষে মাটিতে ১০ থেকে ১৫ কেজি এবং ম্যাজিক গ্রোথের সঙ্গে পাতায় স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগের জন্য মাত্র এক থেকে দেড় কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়।

বিভিন্ন দেশে ফসল উৎপাদনে মাটির পাশাপাশি পাতার মাধ্যমেও তরল আকারে গাছকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান সরবরাহ করা হয়। ফসল উৎপাদনের এই প্রযুক্তিকে ফোলিয়ার ফিডিং বা ফোলিয়ার ফার্টিলাইজেশন বলা হয়। সম্প্রতি আমাদের দেশেও ফোলিয়ার ফিডিং প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে তা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এসব তরল সার ফসলে মূলত পরিপূরক খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটা ব্যবহার করে চাষীরা সবজি আবাদে ভাল ফল পাচ্ছেন বলে জানা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এখন থেকে হয়তো আর বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করতে হবে না।

এ দেশে সহজে পাওয়া যায় এমন ১৩টি উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খনিজ খাদ্যোপদান যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রণ, জিঙ্ক, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, মালিবডেনাম ও ক্লোরিন সমন্বয়ে একটি তরল সার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানী আরিফ খান। এই তরল সারটি পানিতে দ্রবীভূত করে ধানগাছের পাতায় স্প্রে করতে হয়। তিনি জানান, এই তরল ম্যাজিক গ্রোথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম ইউরিয়া সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তরল সারটি ধান, গম, ভু্ট্টা, আলু, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের কুমড়া জাতীয়, সবজি, আম, কলা, পেয়ারা, লিচু, পেঁপে, বাদাম, সরিষা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, ফসল, শোভাবর্ধনকারী গাছ অর্কিড, ক্যাকটাস প্রভৃতিতে সমানভাবে কার্যকর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষা করে একই রকম ফল পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহারে ধানের বীজতলায় চারা সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং বোরো মৌসুমে তীব্র ঠান্ডা এবং কুয়াশার কারণে চারার কোল্ড ইনজুরিজনিত ক্ষতি কম হয়। চারা মূল জমিতে রোপণ করলে রোপণজনিত আঘাত কম লাগে এবং চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ শক্ত থাকে বলে সহজে হেলে পড়ে না। কুশির সংখ্যা দ্রুত বাড়ে। ধানগাছের শীষ বড় হয় এবং শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা বেশি থাকে। ধানগাছে রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.