কোন কঠিন কাজকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যখন কেউ উঠে-পড়ে লাগে, গ্রামের লোকজন তাঁকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে। সেই কাজটিতে যখন সফলতা আসে তখন সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। এ ধরনের একটি কাজে সফলতা পেয়েছেন নওগাঁর আত্রাই উপযেলার প্রত্যন্ত এলাকা জগদাস গ্রামের উদ্যমী যুবক কবীর হোসাইন প্রামাণিক। তিনি পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এলাকাজুড়ে। ইতিমধ্যে সারাদেশের দুই শতাধিক বেকার যুবককে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব যুবকের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশী পুকুরে মুক্তা চাষ করছেন।

উদ্যমী কবীরের এই কর্মকান্ডকে এলাকাবাসী প্রথমে পাগলামী হিসাবে আখ্যায়িত করলেও সাগরের মুক্তা পুকুরে চাষ করে সফলতা আসায় গ্রামের নামও পাল্টে গেছে। এখন জগদাস গ্রাম ‘মুক্তার গ্রাম’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

ইউটিউবে মুক্তা চাষের একটা সাফল্যময় গল্প দেখে সর্বপ্রথম উৎসাহিত হন কবীর। তারপর এর উপর তিনদিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারপর গ্রামে ফিরে মাত্র ৪০ শতকের একটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেন। তাঁর এ পুকুরে গিয়ে দেখা যায় পুকুরের পানিতে তিন ফুট পর পর ভাসছে ফাঁকা প­াস্টিকের বোতল। সেখানে পানির এক ফুট নিচে রয়েছে একটি করে প­াস্টিকের ডালা। সেসব ডালার প্রতিটিতে রয়েছে ২০টি করে ঝিনুক। এভাবে তিনি ঐ পুকুরে প্রায় ২০ হাযার ঝিনুক বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করছেন। ঐ ঝিনুকের মধ্যে প্রতিটিতে কমপক্ষে দু’টি করে বিভিন্ন ডিজাইনের নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দশ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব ঝিনুক থেকেই উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের মুক্তা।

কবীর হোসাইন বলেন, প্রথমে আমি ৮ হাযার ঝিনুকের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রায় ১৫ হাযার নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করি। প্রথম বছরেই পুকুরে মুক্তা চাষ করে সব ধরনের খরচ বাদে আমার আয় হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। বর্তমানে আমি তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছের পাশাপাশি মুক্তা চাষ করছি।

এসব পুকুরে বর্তমানে ৪০ হাযার ঝিনুকে মুক্তা চাষ হচ্ছে।' পুকুর লিজ, ঝিনুক সংগ্রহ, পরিচর্যা, নিউক্লিয়াস ক্রয় ও সংস্থাপন ইত্যাদি বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই এক বছরে ঐ ঝিনুক থেকে উৎপাদিত মুক্তা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি পাঁচশ ঝিনুক

সংগ্রহ করে বিক্রি করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘মুক্তা দুই ধরনের রয়েছে; একটি প্রাকৃতিক মুক্তা ও একটি ডিজাইন মুক্তা। এই ডিজাইন মুক্তাই বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরে চাষ হচ্ছে। এসব মুক্তার বাজার রয়েছে ভারতের কলকাতায় এবং বাংলাদেশে আড়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে’।

তাঁর এই মুক্তা চাষ প্রকল্পে গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বর্তমানে তাঁর প্রজেক্টে ৮ থেকে ৯ জন বেকার যুবক কর্মরত। শুধু তাই নয়, তার সফলতা দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা অন্তত দুইশ বেকার যুবককে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিনই তাঁর কাছে লোকজন আসছেন কিভাবে পুকুরে মুক্তা চাষ হয় জানতে। ইতিমধ্যে গ্রামটি মুক্তা চাষের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে।







আরও
আরও
.