২০১৪ সাল : সিরিয়া ও ইরাকের রক্তাক্ত একটি বছর

সিরিয়া ও ইরাক ভয়াবহ রক্তাক্ত একটি বছর পার করেছে ২০১৪ সালে। সিরিয়ায় সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ বছরেই সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ ৭৬ হাযার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একই বছর ইরাকে নিহত হয়েছে ১৫ হাযারেরও বেশি মানুষ, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ‘সিরিয়ান অবজারভেটরী ফর হিউম্যান রাইটস’ নামক একটি সংস্থা জানায়, গত বছর সিরিয়ায় বহুমুখী সংঘর্ষে ৭৬ হাযার ২১ জন নিহত হয়েছে। অপরদিকে ইরাকের অবস্থা সম্পর্কে দেশটির সরকারী হিসাবে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সালে সহিংসতায় দেশটিতে ১৫ হাযারেরও বেশী সামরিক ও বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ৬ হাযার ৫২২ জন। 

এছাড়া এ সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সিরিয়ায় গত চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে এ পর্যন্ত দুই লাখ ১৫ হাযার মানুষ নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৬ হাযার কেবল বেসামরিক নাগরিক। বিগত চার বছরের সংঘাতে সিরিয়ার অর্ধেক জনগণই গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, বর্তমান যুগে পৃথিবীতে এটাই একালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়।

শাসনক্ষমতায় শী‘আ হাওছী সম্প্রদায় : গভীর সংকটে ইয়ামন 

গত ৬ ফেব্রুয়ারী ইয়েমেনের শী‘আ অধ্যুষিত উত্তর অঞ্চলে হাওছী সম্প্রদায়ের যোদ্ধারা রাজধানী ছান‘আ দখল করে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। হাওছী বিদ্রোহীরা দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে ৫ সদস্যের একটি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল এবং ৫৫১ সদস্যের জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করেছে। যারা আগামী দু’বছরের জন্য দেশ পরিচালনা করবে। ইয়ামেনের বিরোধী দলগুলো এই ঘোষণাকে অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

তবে হাওছী নেতৃত্ব গোটা দেশের আস্থাভাজন না হওয়ার কারণে তারা নামে মাত্র সরকার গঠন করেছে। ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুন্নী অধ্যুষিত চারটি প্রদেশের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এখন থেকে তারা রাজধানী ছান‘আর নিয়ন্ত্রণ মানবে না। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইয়েমেন সংকট অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আরো ঘনীভূত হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। অপরদিকে শী‘আ হাওছীরা ক্ষমতাসীন হওয়ায় কৃত্রিম উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইয়ামেনের চলমান রাজনীতির ঘটনাবলী নিয়ে ষড়যন্ত্র না করতে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে।

ইয়েমেনের জনসংখ্যা প্রায় ২কোটি ৪০ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৩৪ থেকে ৪০ শতাংশ শী‘আ যায়দী বা হাওছী সম্প্রদায়। অবশিষ্ট সবাই সুন্নী। ২০১১ সালে তিউনিসিয়া থেকে উত্থিত কথিত আরব বসন্তের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের বাতাসে ইয়ামনের জনগণও জেগে উঠে। ফলে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ক্ষমতা ছাড়েন দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে ক্ষমতাসীন কথিত স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ছালেহ। ২০১২ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐকমত্যের প্রার্থী মনসূর হাদী প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু ইতিমধ্যে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া শাসনক্ষমতা নিয়ে ৬০% সুন্নী, ৪০% শী‘আ, পূর্ব থেকে লালিত উত্তর ও দক্ষিণ ইয়ামনের বিরোধ, চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির আত্মঘাতী হামলা এবং শতধাবিভক্ত গোত্রগুলি ঐক্যবদ্ধ রাখা তার পক্ষে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ে। যার ফলাফল চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। অতঃপর আজকের হাওছী উত্থান।   






আরও
আরও
.