হাদীছের ‘যুগোপযোগী’ সংকলন করছে তুরস্ক
একুশ শতকের তুর্কী প্রজন্মের উপযোগী একটি হাদীছ সংকলন প্রকাশ করতে যাচ্ছে তুরস্ক। আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত তুর্কীরা ধর্মকে বুঝতে পারবে এবং তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে এমন দাবী তুলে এই সংকলনে কয়েকশ হাদীছ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১০০ ধর্মতাত্ত্বিক ছয় বছর ধরে কাজ করে প্রায় ১৭ হাযার হাদীছের মধ্যে তাদের বিবেচনায় সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদীছগুলো বেছে নিয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাছাই করা এই কয়েকশ’ হাদীছ সাত খন্ডের বিশ্বকোষ ধরনের একটি সঙ্কলনে স্থান পেয়েছে। সংকলনটির নাম রাখা হয়েছে ‘হাদীছের আলোকে ইসলাম’।
২০০৮ সালে এ প্রজেক্টটি প্রথম বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসময় বিবিসির এক রিপোর্টে এ প্রজেক্টকে ‘ইসলামের পূণর্ব্যাখ্যার এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এবং ধর্মের আধুনিকায়নে একটি বিতর্কিত ও মৌলিক প্রচেষ্টা’ (a revolutionary reinterpretation of Islam and a controversial and radical modernization of the religion) হিসাবে অভিহিত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ধর্ম সংক্রান্ত পরিষদ (দিয়ানাত)-এর সহ-সভাপতি ও হাদীছ প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মাদ ওজাফসার বলেন, ‘আমরা এখন বিশ শতকে বসবাস করছি না। এ কারণেই বর্তমান সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী বিশ্বাসগুলো নিয়ে নতুনভাবে কাজ করা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে’।
প্রচলিত অন্যান্য হাদীছ সংস্করণগুলো থেকে এটি আলাদা। এতে আধুনিক তুর্কীদের জীবনধারার সাথে সঙ্গতি রেখে হাদীছগুলো নির্বাচন করা হয়েছে এবং হাদীছের শেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ঐ হাদীছে কি বলা হয়েছে তা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ তুলে ধরে বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো কি অর্থ বহন করে তাও বর্ণনা করা হয়েছে।
দিয়ানাতের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগের মহাপরিচালক মুহাম্মাদ প্যাকাসী বলেন, ‘মুসলমানদের শুধু কুরআনের কোন উদ্ধৃতি বা হাদীছের একটি সংকলন খুলে রাসূল (ছাঃ) কি বলেছেন তা দেখে বলা উচিত নয়, ‘হ্যা! এই বিষয়ে তাহ’লে এই করণীয়’। আমরা যদি শুধু এরকমই করি তাহ’লে তা হবে অজ্ঞতা ও অন্ধ অনুকরণ মাত্র’।
তুরস্কের ‘আঙ্কারা ধারা’ নামে পরিচিত ধর্মতাত্ত্বিকরা এ প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যারা ঐতিহ্যগত মুসলমান পন্ডিতদের মতো নন। তারা আধুনিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত। চলমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খ্রিস্টানরা তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের ব্যাখ্যা কিভাবে করেছে তা বোঝার জন্য এদের কেউ কেউ পশ্চিমে গিয়েও পড়াশোনা করে এসেছেন।
এ সংকলনে হাদীছে উল্লেখিত বিভিন্ন শাস্তি, যেমন চুরির জন্য হাত কাটা ইত্যাদি প্রসঙ্গে সপ্তম শতকের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ঐ সময়ে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। তবে বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগুলো আর প্রযোজ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন ওজাফসার।
তিনি বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ)-এর আমলে এগুলো প্রচলিত ছিল। কারণ তখন সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এগুলোর প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে আমাদের সামাজিক পদ্ধতি সপ্তম শতকের মতো নয়। তাই আমরা বলতে পারি, এই আইন এবং শাস্তি ঐতিহাসিক’।
‘আলেমদের এত বেশী সংখ্যক হাদীছ ব্যবহারেরও পক্ষে নই আমরা’ বলেন আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক সাবান আলী দুজগুন।
তুরস্কের এই হাদীছ সংকলন আরব বিশ্বেও যথেষ্ট কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে মিসরের প্রধান মুফতীর উপদেষ্টা ইব্রাহীম নিযাম বলেন, ‘তুর্কী মডেলটিতে মিসরের বুদ্ধিজীবীরা খুব আগ্রহী। এটি শুধু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে নয়, মধ্যপন্থী ধর্মীয় ভাবধারার কারণেও’। তুরস্ককে ওহাবী-সালাফী ধর্মতত্ত্বের বিরুদ্ধ মতবাদের উৎস হিসাবে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আসন্ন রামাযানে সংকলনটি প্রকাশ পাবে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যেখানে মদ্যপান ও মেয়েদের পাশ্চাত্য রীতির পোষাক পরিধানের পূর্ণ অনুমতি রয়েছে। দেশটির মসজিদগুলিতে নারী ধর্মপ্রচারক যেমন আছেন, তেমনি বড় বড় শহরগুলোতে নারী ডেপুটি মুফতীও আছেন। তবে দেশটির শাসনভার মুসলিম ব্রাদারহুড ও জামা‘আতে ইসলামীর ন্যায় একই ভাবধারার ইসলামী দল জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলমেন্ট পার্টি (একেপি)-এর হাতে।
[ইসলামকে সেক্যুলার বানানোর এই অপচেষ্টা ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ছিল এযুগেও থাকবে। সাথে সাথে এইসব কপট বিশ্বাসীদের মুকাবিলার জন্য পূর্বের ন্যায় এযুগেও আহলেহাদীছ বিদ্বানগণ জীবন বাজি রেখে লড়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ বাতিলপন্থীরা পর্যুদস্ত হবেই (স.স.)]
বৃটেনে মসজিদে হামলা করতে এসে মুগ্ধ হয়ে ফিরে গেল ইসলাম বিদ্বেষীরা
বৃটেনে মসজিদে হামলা করতে আসা একদল ইসলাম বিদ্বেষীকে চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করলেন মুছল্লীরা। ফলে হামলার পরিবর্তে মুসলমানদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ফিরে গেল তারা। সম্প্রতি বৃটেনের ইয়র্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনে বিপথগামী দুই মুসলিম যুবকের ছুরিকাঘাতে এক বৃটিশ সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃটেন জুড়ে যখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন মুসলমানদের এমন ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়।
গত ২৬ মে রোববার ইংলিশ ডিফেন্স লীগের (ইডিএল) সদস্যরা ইয়র্কের বুল লেন মসজিদ এলাকায় ইসলাম বিদ্বেষী বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে ইডিএল সদস্যদের মসজিদের সামনে সমবেত হওয়ার আহবান জানায়। এতে স্থানীয় মুছল্লীরা উদ্বিগ্ন হয়ে মসজিদ প্রাঙ্গনে জড়ো হন। ইডিএল সদস্যদের একটি অংশ হামলার উদ্দেশে মসজিদের দিকে এগিয়ে গেলে মুছল্লীরা চা-বিস্কুট নিয়ে এগিয়ে যান। ইডিএল সদস্যরা হামলার পরিবর্তে চা-বিস্কুট গ্রহণ করে। পরে মুছল্লীরা ইডিএল সদস্যদের একসাথে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণের আহবান জানান। ইডিএল সদস্যরা প্রায় আধঘণ্টা মুছল্লীদের সাথে কথাবার্তা বলে খুশি মনে ফিরে যায়।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মসজিদ এলাকার স্থানীয় চার্চের পাদ্রী ফাদার টিম জন্স বলেন, আমি জানতাম মুসলমানরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং তাদের মানসিক সাহস খুবই প্রবল। মসজিদের বাইরে যে ঘটনা ঘটলো তা থেকে পৃথিবীর মানুষের অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।
স্থানীয় হুল রোড ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নীল বার্নেস বলেন, এটি ছিল ইয়র্কবাসীর জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। তিনি বলেন, ইডিএল সদস্যদের ক্ষোভ ও ঘৃণা মুসলমানরা যেভাবে শান্তি ও ভালোবাসার উষ্ণতায় মোকাবেলা করলেন, তা আমি কোন দিন ভুলতে পারব না।