চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জেরে গত বছরের মত এবারও আফগানিস্তান জুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। অনাহারে-অর্ধাহারে প্রতিনিয়তই বাড়ছে অপুষ্টি আর শিশুমৃত্যুর হার। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, শিশুদের খাবার দিতে না পেরে তাদের কান্না থামাতে ক্ষতিকর ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখছেন অভিভাবকরা। এমনকি অনেকে খাবারের খরচ জোগাতে নিজেদের কিডনি ও সন্তানও বিক্রি করে দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। তালেবানের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর আফগানিস্তানে এটি দ্বিতীয় শীত মৌসুম। তবে চিত্রটা ঠিক আগের মতই।
দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহহাব বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা সারা রাত কাঁদতে থাকে। ক্ষুধায় সারা রাত ঘুমায় না। ঘরে কোন খাবার নেই যে ওদের খেতে দেব। তাই ফার্মেসী থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে ওদের খাওয়াই। যেন ওরা ঘুমিয়ে যায়’।
শুধু আব্দুল ওয়াহহাব নন, ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না থামাতে স্থানীয়দের অনেকেই এ পথ বেছে নিচ্ছেন বলেও জানান তারা। নিজের নাবালক মেয়েকে বিয়ে দেয়ার শর্তে বিক্রি করে দেয়ার কথাও জানান অনেকে।
কান্দাহার প্রদেশের বাসিন্দা হযরতুল্লাহ বলেন, ‘আমার মেয়েকে ১২০০ ডলারের বিনিময়ে এক ছেলের কাছে বিক্রি করেছি, ওর ১৪ বছর হ’লে ঐ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব এই শর্তে’। তিনি বলেন, ’প্রাথমিকভাবে যে অর্থ পেয়েছি এর অধিকাংশই খাবার কিনতে খরচ করেছি। অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে আমার ছোট ছেলের জন্য ওষুধ কিনেছি’।
দেশটিতে ক্ষুধার কষ্ট দূর করতে পদক্ষেপ সম্পর্কে হেরাতে তালেবানের প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হামীদুল্লাহ বলেন, এ পরিস্থিতি আফগানিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং আফগানিস্তানের সম্পদ জব্দ করার ফল। যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ উদ্ধার হ’লে সংকট কিছুটা হ’লেও মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
[আমেরিকা ও তাদের দোসররা ২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট তালেবানরা ক্ষমতায় পূর্ব পর্যন্ত ২০ বছর যাবৎ আফগানিস্তানের যে সম্পদ সমূহ লুট করেছে, এমনকি সবশেষে সন্ধিচুক্তির সময় তাদের কাছে পাওনা ১০ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে, এযাবৎ তারা সেটাও পরিশোধ করেনি। এছাড়া পাকিস্তান সহ ৫৭টি মুসলিম দেশের কেউ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি কোনরূপ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। এই ধরনের অমানবিক অবস্থায় ফেলে একটা জাতিকে যারা পর্যুদস্ত করছে, তারাই সভ্য নামের কলঙ্ক। আমরা আমেরিকা সহ বিশ্বের সকল দেশকে আফগানদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানাই (স.স.)]।