৯৮ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায় গত কয়েকবছর যাবৎ পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। দেশটিতে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মসজিদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ মহিলাকে বোরকা আবৃত অবস্থায় চলা ফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। অ্যালকোহলিক পানীয় বিক্রির দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধীরে কিন্তু সক্রিয়ভাবে ইসলামী শরী‘আতের অনুসরণ বাড়ছে আলজেরিয়ায়। প্রচলিত রাজনীতিকে উপেক্ষা করে চলার কারণে মধ্যপন্থী সালাফীদের আলজেরীয় কর্তৃপক্ষ বেশ উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ফলে সালাফী দাওয়াতের প্রচার, প্রসার, প্রতিপত্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে সেখানে এবং আলজেরীয়দের সালাফী আক্বীদার প্রতি আকৃষ্ট হ’তে দেখা যাচ্ছে। শায়খ আব্দুল মালিক রামাযানী, আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আলী ফারকূস মাদানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় সেখানে সালাফী আন্দোলনের উত্তরোত্তর প্রসার ঘটছে। এক্ষেত্রে তাঁদের নিয়মিত মুখপত্র ‘মাজাল্লাতুল ইছলাহ’ পত্রিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সালাফীদের উৎসাহে সেখানে ১৩০ বছরের ফরাসী শাসনের চিহ্ন লোপ পেতে চলেছে। ফরাসীদের শাসনের চিহ্ন বেশির ভাগই ছিল রাজধানী আলজিয়ার্সে, যেখানে বাড়ির আঙ্গিনায়, বারে ও রেস্তোরাঁয় মদ্যপান চলত আর মহিলারা অনৈসলামী পোশাক পরিধান করত। কিন্তু গত এক দশকে এসব শহর থেকেও মদ বিক্রির দোকানগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মহিলাদের মধ্যে বোরকার প্রচলন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া আলজেরিয়াব্যাপী মসজিদ বিস্তার লাভ করছে। এর কিছু সংখ্যকের ব্যয় নির্বাহ করছে সরকার। বাকিগুলো ব্যক্তিগত দানে তৈরী হচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে গত ১৭ বছর যাবৎ ক্ষমতাসীন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল আযীয বুতেফ্লিকা বর্তমানে আলজিয়ার্সে শত কোটি ডলার ব্যয়ে মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ নির্মাণ করছেন।
আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক সাঈদ আহমেদ বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, আলজেরীয় সমাজ তার পরিচিতির উৎসের কাছে ফিরে আসছে। উদারপন্থী ইসলামিস্ট পার্টি ‘মুভমেন্ট ফর এ পিসফুল সোসাইটি’র সাথে ঘনিষ্ঠ সাঈদ আহমাদ মহিলাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইসলামী পোশাক পরাকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন।
পক্ষান্তরে আধুনিকতাবাদী সমালোচকরা উদ্বিগ্ন যে, সালাফীরা বর্তমানে শক্তি অর্জন করলেও কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে কমই উদ্বেগ প্রকাশ করে। এভাবে সালাফীবাদ ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতির গভীরে প্রবেশ করতে থাকলে তা আধুনিক আলজেরিয়ার সম্ভাবনাকে বিলুপ্ত করবে।
১৯৯৩ সালে দেশ ত্যাগ করা সাংবাদিক মেজিয়ান উরাদ সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে বলেন, আগের সেই ফেলে যাওয়া দেশকে আমি চিনতে পারছি না। গত তিন মাসেরও বেশী সময় আমি দেশে ফিরেছি। কিন্তু নগ্ন পায়ের কোন নারীকে দেখতে পাইনি।
[ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশেও একদিন আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর মধ্যপন্থী শান্তিবাদী আন্দোলন বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানুষের অন্তর জয় করবে এবং অধিকাংশ জনগণ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী হবে (স.স.)]