পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । শেষ পর্ব ।

দ্বিতীয় হাদীছ :

শু‘আইব (রহঃ) তাঁর এ দাবীর প্রমাণে ‘আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) হাদীছের মতনের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করতেন না’ দ্বিতীয় এ হাদীছটি পেশ করেছেন। যার শব্দগুলি নিম্নরূপ- إِنَّ اللهَ خَلَقَ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ ‘আল্লাহ তা‘আলা যমীনকে শনিবারে সৃষ্টি করেছেন’।[1]

এ হাদীছটি কুরআনুল কারীমের সাথে সাংঘর্ষিক। উপরন্তু এ সনদটি ইসমাঈল বিন উমাইয়ার কারণে ত্রুটিযুক্ত (معلول)। এজন্য যে, ইসমাঈল একে ইবরাহীম বিন আবী ইয়াহ্ইয়ার সূত্রেও বর্ণনা করেন। আর ইবরাহীম হ’লেন পরিত্যক্ত রাবী (বর্ণনাকারী)। ইসমাঈল এই সূত্রটি বাদ দিয়েছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, ‘কতিপয় মুহাদ্দিছের বক্তব্য হ’ল, এটি জাল হাদীছ নয়। বরং এর কা‘ব আহবার হ’তে মওকূফ হওয়া الأصح ‘অধিকতর বিশুদ্ধ’। কিন্তু শায়খ আলবানী (রহঃ) ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর মত খন্ডন করে বলেছেন যে, ‘এই কতিপয় কারা’? আর এ হাদীছটি কুরআনে কারীমের বিরোধী নয়। কিন্তু বিরোধী না হওয়ার কোন দলীল উল্লেখ করেননি’।[2]

এখানেও প্রথমে এটা দেখুন যে, শুধু আল্লামা আলবানী (রহঃ)-ই একে ছহীহ বলেননি। শায়খ শু‘আইবও স্বীকার করেছেন যে, ইমাম মুসলিম (রহঃ) একে স্বীয় ‘আছ-ছহীহ’[3] গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

এই বর্ণনা ইমাম ইবনু মাঈন (রহঃ) ‘আত-তারীখ’ (৩/৫২, ক্রমিক ২০৯) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেছেন,ويكفي في صحة الحديث أن ابن معين رواه ولم يعله بشيء ‘এর বিশুদ্ধতার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, ইমাম ইবনু মাঈন এটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কোন ত্রুটি উল্লেখ করেননি’।[4]

মূলত শায়খ আলবানী (রহঃ) এ হাদীছের তাছহীহ-এর ক্ষেত্রে ইমাম ইবনু  মাঈন ও ইমাম মুসলিম (রহঃ)-এর উপর নির্ভর করেছেন। আল্লামা শাওকানী (রহঃ)ও একে ছহীহ বলেছেন।[5] আল্লামা আহমাদ শাকের (রহঃ)ও মুসনাদে আহমাদের টীকায় (৬/১৪৬) এর সনদকে ছহীহ বলেছেন। বরং শায়খ শু‘আইব (রহঃ) মুসনাদে আহমাদের তাহক্বীক্বে (১৪/৮৪) বলেছেন যে, আবুবকর ইবনুল আম্বারী ও ইবনুল জাওযী প্রমুখ একে ছহীহ বলেছেন।

এজন্য আল্লামা আলবানী একে ছহীহ বলার ক্ষেত্রে একক নন। নিঃসন্দেহে ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী, ইমাম ইবনু হিববান ‘আছ-ছহীহ’ (হা/৬১২৮, ৮/১১) গ্রন্থে এবং ইমাম ইবনু  খুযায়মাও ‘আছ-ছহীহ’ (৩/১১৭) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এতদ্ব্যতীত ইমাম বুখারী, ইমাম বায়হাক্বী, হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বান একে ‘ত্রুটিযুক্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। তবে চিন্তার বিষয় এই যে, ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) প্রমুখ বলেছেন যে, মূলত ইসমাঈল বিন উমাইয়া এই বর্ণনাটি ইবরাহীম বিন আবী ইয়াহ্ইয়া থেকে গ্রহণ করেছেন। আর ইবরাহীম হ’লেন ‘মাতরূক’ তথা পরিত্যক্ত রাবী। অথচ ইসমাঈল বিন উমাইয়া ‘বিশ্বস্ত-নির্ভরযোগ্য’ এবং তিনি মুদাল্লিস রাবীও নন। সম্ভবত এ কারণে ইমাম বুখারী (রহঃ) তার পরিবর্তে একে এজন্য ত্রুটিযুক্ত বলেছেন যে, কতিপয় রাবী একে ‘আবূ হুরায়রা (রাঃ) কা‘ব হ’তে’ (সনদে) বর্ণনা করেছেন এবং একেই তিনি অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। তাঁর বাক্যগুলি হ’ল-وقَالَ بعضهم عن ابى هريرة عَنْ كعب وهو أصح[6] কিন্তু শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেছেন যে, হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণনাকারী ‘কতিপয়’ কোন্ রাবী? যখন উম্মে সালামার দাস আব্দুল্লাহ বিন রাফে‘ (রহঃ) যিনি ছিক্বাহ রাবী- একে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে মারফূ‘ রূপে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আব্দুর রহমান মু‘আল্লিমী (রহঃ)-এর অত্যন্ত চমৎকার জবাব দিয়েছেন যে, কা‘ব আহবার হ’তে তো বর্ণিত আছে যে, সৃষ্টির সূচনার দিন হ’ল রবিবার। যেমনটি তারীখে ইবনু জারীর (১/২২) এবং আদ-দুর্রুল মানছূর (৩/১৯) গ্রন্থে ইবনু  আবী শায়বাহ (৯/৫৮৫) হ’তে বর্ণিত আছে। সুতরাং যখন কা‘ব আহবার থেকে যমীন-আসমানের সৃষ্টির সূচনা রবিবার বর্ণিত আছে, তখন আলোচ্য বর্ণনাতে তাঁর প্রতি সম্বন্ধিত প্রথম সৃষ্টির সূচনা হিসাবে শনিবারের কথা কিভাবে সঠিক হ’তে পারে?[7]

বাকী থাকল এ বিষয়টি যে, এ হাদীছটি কুরআন মাজীদের ঐ সকল আয়াতের বিরোধী যেখানে যমীন ও আসমানকে ছয়দিনে সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ আছে (আ‘রাফ ৭/৫৪; হূদ ১১/৭; ফুরক্বান ২৫/৫৯; সাজদাহ ৩২/৪)। পক্ষান্তরে এ হাদীছে শুধু যমীনকে সৃষ্টি করার জন্য সাতদিনের উল্লেখ আছে। আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেছেন, ‘এটা কোন বৈপরীত্য নয়। কেননা সম্ভাবনা আছে যে, ছয় দিন ঐ সাত দিন ব্যতীত, হাদীছে যেগুলির উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ হাদীছে ভূপৃষ্ঠে জনবসতির উল্লেখ আছে। যেন তা থাকার-বসবাসের উপযোগী হ’তে পারে। আর এর সমর্থন এর দ্বারা হয় যে, কুরআন মাজীদে আছে, ‘আল্লাহর কাছে কোন কোন দিন এক হাযার ও পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান’। সুতরাং কুরআন মাজীদে যে ছয়দিনের কথা উল্লেখ আছে, তার দ্বারা ঐ দিনগুলিই উদ্দেশ্য। আর হাদীছে যে সাতদিনের কথা উল্লেখ আছে তার দ্বারা আমাদের সাতদিন উদ্দেশ্য। এভাবে (ব্যাখ্যা করলে) কুরআন মাজীদের আয়াতের সাথে মতানৈক্য আর অবশিষ্ট থাকে না’।

শায়খ আলবানীর উক্ত স্পষ্ট আলোচনার পরও আফসোস হ’ল, শায়খ শু‘আইব বলেন, ‘তিনি কুরআন মাজীদের বিপরীত হওয়ার কোন দলীল উল্লেখ করেননি’।[8]

মর্মগতভাবে যে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে আল্লামা মু‘আল্লিমী (রহঃ)ও তার জবাব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি একথাও বলেছেন যে, হাদীছে সপ্তম দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ আছে। অথচ কুরআন মাজীদ ও হাদীছে ছয়দিনের মধ্যে কোন্ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে তার কোন উল্লেখ নেই। যেমন ছহীহ মুসলিমের হাদীছে একটি অতিরিক্ত কথা রয়েছে, যা অন্যান্য উৎসে (গ্রন্থে) নেই। পরিশেষে শায়খ মু‘আল্লিমী (রহঃ) বলেছেন,فتدبر الآيات والحديث على ضوء هذا البيان يتضح لك إن شاء الله أن  دعوى مخالفة هذا الحديث لظاهر القرآن قد اندفعت ولله الحمد- ‘এই বর্ণনার আলোকে কুরআন মাজীদের আয়াতসমূহ ও হাদীছ গভীরভাবে চিন্তা করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার নিকটে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কুরআনের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা এ হাদীছটির বিরোধিতার দাবী দূর হয়ে গেছে। ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।[9]

আল্লামা মুহাম্মাদ আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীও এই মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘কুরআনে আযীয যমীন ও আসমান সৃষ্টির মেয়াদ ছয়দিন আখ্যা দিয়েছে। আর ছিহাহ-এর কতিপয় বর্ণনাতে আছে যে, মহাপবিত্র আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে জুম‘আর দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যদি পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা সপ্তাহের প্রথম দিন (শনিবার) থেকে ধরা হয় তবে পুরো সপ্তাহ-তেই সৃষ্টির বিষয়টি চলে আসে। আর তা‘তীলের (আরশের উপর আসীন হওয়ার) জন্য কোন দিন বাকী থাকে না। সুতরাং এমন কোন অবস্থা বুঝে আসে না যে, হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির দিন জুম‘আর দিনকে মেনে নিয়ে সাত দিনকে অবশিষ্ট রাখা যেতে পারে এবং ইসতিওয়া-এর জন্য একটি অতিরিক্ত দিনকে বের করা যেতে পারে। এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার কারণ শুধু এটাই যে, এই মুহাদ্দিছ ও মুহাহিক্কক্বগণ হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির হাদীছে যে জুম‘আর দিনের কথা উল্লেখ আছে সেটাকে স্বীয় ধারণার বশবর্তী হয়ে এ প্রসঙ্গে প্রযোজ্য মনে করেছেন যেসময় যমীন-আসমান সৃষ্টি হয়েছে। অথচ আসল ঘটনা এই যে, আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি যদিও জুম‘আর দিনেই হয়েছে, কিন্তু এই জুম‘আ সেই জুম‘আ ছিল না যা সাত দিনের উল্লেখের পর আসে। বরং এক দীর্ঘ সময়ের পর কোন এক জুম‘আয় আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। আর যমীন-আসমানের সৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট যে জুম‘আর দিন এসেছিল তা মূলত আরশের উপর আসীন হওয়া ও ঈদে ইলাহীর দিন’।[10]

প্রায় একই কথা তিনি ‘ফায়যুল বারী’ (২/৩২৪) গ্রন্থে বলেছেন। আর এটাই সেই বক্তব্য যা আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেছেন যে, কুরআন মাজীদে উল্লেখিত সাত দিন ঐ দিনগুলি নয়, যেগুলির উল্লেখ হাদীছে আছে। আর এভাবে অত্র হাদীছটি কুরআন মাজীদের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

অনুরূপভাবে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেছেন যে, ‘হাদীছে  يَوْمُ السَّبْتِ‘শনিবার’ দ্বারা সপ্তাহের দিনের শেষাংশ অর্থাৎ রবিবারের মাগরিবের নিকটবর্তী সময় উদ্দেশ্য। আর এর উপরেই সপ্তাহের দিন শব্দটি প্রয়োগ হয়েছে। এভাবে কুরআন মাজীদের আয়াতের সাথে এই হাদীছটির কোন বিরোধ থাকে না’।[11]

মোল্লা আলী ক্বারী তো হাফেয ইবনু কাছীরের বরাতে এই অভিযোগটি বর্ণনা করেছেন যে, এই বর্ণনাটি মূলত কা‘ব আহবার থেকে বর্ণিত। রাবী ভুলক্রমে একে মারফূ‘ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কুরআন মাজীদের সাথে এর বৈপরীত্যের জবাব দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে,فَلَا يُنَافِي قَوْلَهُ تَعَالَى  ‘এটা আল্লাহ তা‘আলার কথার বিরোধী নয়’।

সৃষ্টির সূচনা কোন্ দিন?

এখানে এই বিষয়টি স্বয়ং আলোচনার দাবী রাখে যে, সৃষ্টির সূচনা শনিবার নাকি রবিবার? হযরত ইবনু আববাস, ইবনু মাস‘ঊদ, আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) প্রমুখ বলেছেন যে, (সৃষ্টির সূচনার দিন হ’ল) রবিবার। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) একেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। পক্ষান্তরে মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব (রহঃ) বলেছেন, ইহূদীরা রবিবার ও নাছারাগণ সোমবারকে (সপ্তাহের প্রথম) দিন বলে। কিন্তু আমরা মুসলমানরা-যেমনটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর থেকে পেয়েছি-সৃষ্টির সূচনা শনিবারের দিনকে বলি। হাফেয ইবনু  কাছীর (রহঃ) বলেছেন যে, এ উক্তি যা ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) মুসলমানদের থেকে বর্ণনা করেছেন, এটাকেই শাফেঈ ফক্বীহগণের একটি জামা‘আত ও অন্যান্য আলেমগণ অগ্রাধিকার দিয়েছেন।[12]

আল্লামা মু‘আল্লিমী (রহঃ) বলেছেন, ‘রবিবার সৃষ্টির সূচনার দিন মর্মে বর্ণিত মারফূ‘ হাদীছগুলি যঈফ। আর আব্দুল্লাহ বিন আববাস বা কা‘ব (রাঃ) প্রমুখের আছারগুলি ইসরাঈলী বর্ণনা হ’তে গৃহীত নয়’।[13]

আল্লামা সুহায়লী (রহঃ) ‘আর-রওযুল উনুফ’ গ্রন্থে মদীনা ত্বাইয়েবায় জুম‘আর ছালাতের সূচনা সম্পর্কিত আলোচনায় উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বের উম্মতগুলিকে জুম‘আর দিন থেকে বঞ্চিত রেখেছিলেন। ছহীহ মুসলিমে আছে যে, সপ্তাহের প্রথম (শনিবারের) দিনে আল্লাহ তা‘আলা মাটি সৃষ্টি করেছেন। যেখানে বর্ণিত আছে যে, মাখলূক্বের সূচনা শনিবারের দিনে হয়েছে। আর এভাবে সপ্তাহের ষষ্ঠ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। অনুরূপভাবে ইবনু  ইসহাক্ব বলেছেন যেমনটি ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।[14]

এরপর জুম‘আর দিনের ফাযায়েল ও এতদসম্পর্কিত আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন,

وَالْعَجَبُ مِنْ الطّبَرِيّ عَلَى تَبَحّرِهِ فِي الْعِلْمِ كَيْفَ خَالَفَ مُقْتَضَى هَذَا الْحَدِيثِ وَأَعْنَفَ فِي الرّدّ عَلَى ابْنِ إسْحَاقَ وَغَيْرِهِ وَمَالَ إلَى قَوْلِ الْيَهُودِ فِي أَنّ الْأَحَدَ هُوَ الْأَوّلُ وَيَوْمُ الْجُمُعَةِ سَادِسٌ لَا وِتْرٌ وَإِنّمَا الْوِتْرُ فِي قَوْلِهِمْ يَوْمُ السّبْتِ مَعَ مَا ثَبَتَ مِنْ قَوْلِهِ عَلَيْهِ السّلَامُ "أَضَلّتْهُ الْيَهُودُ وَالنّصَارَى، وَهَدَاكُمْ اللهُ إلَيْهِ" وَمَا احْتَجّ بِهِ الطّبَرِيّ مِنْ حَدِيثٍ آخَرَ فَلَيْسَ فِي الصّحّةِ كَاَلّذِي قَدّمْنَاهُ وَقَدْ يُمْكِنُ فِيهِ التّأْوِيلُ أَيْضًا-

‘ইমাম ত্বাবারী (রহঃ)-এর ব্যাপারে বিস্ময়ের বিষয় হ’ল, ইলমের গভীরতা থাকার পরও তিনি কিভাবে এ হাদীছের দাবীর বিরোধিতা করেছেন! আর ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমুখের খন্ডনে তাড়াহুড়া করেছেন এবং ইহূদীদের উক্তি গ্রহণ করেছেন যে, সৃষ্টির সূচনা রবিবারে হয়েছে। আর জুম‘আ হ’ল সপ্তম দিন, (সপ্তাহের বাইরের) বিতর তথা একক কোন

দিন নয়। আর তাদের বক্তব্য অনুযায়ী বিতর হ’ল শনিবারের দিন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, ইহূদী ও নাছারাদের থেকে জুম‘আর দিনকে গোপন করা হয়েছিল। আর তার নির্দিষ্টকরণে আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন। আর অন্য যে হাদীছ দ্বারা ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) দলীল গ্রহণ করেছেন। বিশুদ্ধতায় তার ঐ মর্যাদা নেই যে মর্যাদা এ হাদীছটির রয়েছে, যা আমরা প্রথমে উল্লেখ করেছি। আর এতে ব্যাখ্যারও সুযোগ রয়েছে’।[15]

মূলত ছহীহ মুসলিমের হাদীছের দাবী হ’ল, জুম‘আ সপ্তম দিন বা বিতর। জুম‘আর ফযীলতের জন্য এটাই উপযোগী। কারণ হাদীছে এটাও আছে যে, আল্লাহ বেজোড় এবং তিনি বেজোড়কে পসন্দ করেন।[16]

আমাদের এ আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লামা আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছটির তাছহীহ-এর ব্যাপারে একা নন। আর না তিনি এর ব্যাখ্যায় একা। বরং ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) ও ফক্বীহদের একটি জামা‘আত শনিবারের দিনকেই সৃষ্টির প্রথম দিন বলেছেন। আর আল্লামা সুহায়লী (রহঃ) তাঁদেরকে অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। এজন্য শুধু আল্লামা আলবানী (রহঃ)-ই কেন সমালোচনার পাত্র হ’লেন তা তিনিই বলতে পারবেন। কবিতা :

نہ  تنها  من  دريس  ميخانہ مستم

‘বেহুঁশদের এই গৃহে আমি একা নই’।

(চলবে)


[1]. মুসলিম হা/২৭৮৯।

[2]. মাসিক বাইয়েনাত, পৃঃ ৩২।

[3]. ছহীহ মুসলিম হা/৭০৫৪, (রিয়াদ : দারুস সালাম), পৃঃ ১২১৬; ঐ নূর মুহাম্মাদ করাচী ২/৩৭১, ‘মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য’ অধ্যায়, ‘সৃষ্টির সূচনা ও আদমকে সৃষ্টি’ অনুচ্ছেদ।   

[4]. ছহীহাহ হা/১৮৩৩।

[5]. ফাৎহুল ক্বাদীর ১/৪৮।

[6]. আত-তারীখুল কাবীর ১/৪১৩।

[7]. আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ, পৃঃ ১৮৯।

[8]. হাশিয়া মিশকাত ৩/১৫৯৮।

[9]. আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ, পৃঃ ১৯০, ১৯১।

[10]. মালফূযাতে মুহাদ্দিছ কাশ্মীরী, পৃঃ ৩৫৪, ৩৫৫।

[11]. মিরক্বাত ১১/৩৯।

[12]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/২৮।

[13]. আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ পৃঃ ১৯১।

[14]. আর-রওযুল উনুফ ২/১৯৭।

[15]. আর-রওযুল উনুফ ২/১৯৮।

[16]. মুসলিম হা/২৬৭৭।



সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে তাবলীগী ইজতেমার ভূমিকা - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
হজ্জের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার বৈষম্য - ড. মুহাম্মাদ কামরুয্যামান
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
সুন্নাত উপেক্ষার পরিণাম - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
আল্লামা আলবানী সম্পর্কে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্বের সমালোচনার জবাব (শেষ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
জুম‘আর পূর্বে সুন্নাতে রাতেবা : একটি পর্যালোচনা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পাঁচ দফা মূলনীতি : একটি বিশ্লেষণ (প্রথম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
নেতৃত্বের মোহ - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় - আসাদ বিন আব্দুল আযীয
আরও
আরও
.