পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ ।

নাজদের অবস্থা :

ভৌগলিকভাবে জাযীরাতুল আরবের এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও নাজদের রাজনৈতিক ইতিহাস অতীতে তেমন সমৃদ্ধ ছিল না। হিজরী তৃতীয় শতকে আববাসীয় আমলে সর্বপ্রথম নাজদ একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২৫৩ হিজরীতে মুহাম্মাদ আল-উখায়যির এ রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। তখন একে ‘দাওলাতুল উখায়যিরিয়াহ’ নামে অভিহিত করা হ’ত। কিন্তু হিজরী পঞ্চম শতকের মাঝামাঝিতে নাজদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পুনরায় অবলুপ্ত হয়ে যায় এবং তা পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহের অংশবিশেষে পরিণত হয়। ওছমানীয় শাসনামলে পর্বতময় নজদ অঞ্চল রাজনৈতিকভাবে আরো গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। সেখানকার অধিবাসীরা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ক্ষমতা দখলের দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ে বিশৃংখল নাজদ অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারটি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের তেমন সম্পর্ক ছিল না।[1]

সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে পাল্লা দিয়ে সেখানকার ধর্মীয় আচার-আচরণেও নেমে এসেছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। শিরক ও বিদ‘আতের নোংরা আবর্জনায় হারিয়ে গিয়েছিল তাওহীদ ও সুন্নাতের মর্মবাণী। বিভ্রান্ত ছূফীবাদীদের আধিপত্যে আদি ইসলামের দিশা পাওয়া ছিল নিতান্ত ভাগ্যের ব্যাপার। মানুষ আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে কবর, খানক্বাহ, গাছ, পাথর, ওলী নামধারী মুর্খ পাগল-ফকীরের ইবাদতে লিপ্ত ছিল। তারা তাদের নামে পশু কুরবানী করত ও নযর-নেয়াজ পাঠাত। সমাজে গণক ঠাকুর ও জাদুকররা লাভ করেছিল বিশেষ কদর। মানুষ তাদের কথা নির্বিবাদে বিশ্বাস করত। জ্বিনের পূজায় তারা বিশেষ অর্ঘ্য নিবেদন করত এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য নানা শিরকী উপায়-উপকরণের আশ্রয় নিত। যদিও ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাতের মত মৌলিক ইবাদত তারা পুরোপুরি ছেড়ে দেয়নি, কিন্তু তাদের জীবনাচরণ একজন আল্লাহবিমুখ দুনিয়াপূজারী লম্পটের চেয়ে ভিন্নতর ছিল না।[2] তাদের অবস্থা ছিল প্রায় জাহেলী যুগের মুশরিকদের মতই। অজ্ঞতার নিকষ কালো আঁধার তাদের অন্তর থেকে হেদায়াতের নূর নিভিয়ে দিয়েছিল। পথভ্রষ্ট, আর খেয়াল-খুশীর অনুসারী লোকেরা ছিল তাদের নেতৃত্বে। তারা আল্লাহর কিতাব, রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের ধার ধারত না। পূর্বপুরুষদের বিদ‘আতী আচার-অনুষ্ঠানকেই তারা ইবাদত মনে করত এবং তাদেরকেই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী বিবেচনা করত।[3] ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের উপর সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদ হুসাইন বিন গান্নামের (মৃ: ১৮১১ খৃঃ) বর্ণনায় দেখা যায় যে, নজদের শহরাঞ্চলের মানুষ কবরপূজা (যেমন যিরার ইবনুল আযওয়ারের কবর), গাছপূজা (যীব ও ফুহ্হাল গাছের পূজা), পাথরপূজা (বিনতে উমায়ের পাহাড়ের পূজা), পীরপূজা (তাজুল আ‘মার পূজা)- প্রভৃতিতে লিপ্ত ছিল।[4] ‘জুবাইলা’তে যায়েদ বিন খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর কবর ছিল। যেখানে লোকেরা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় প্রার্থনার জন্য যেত এবং তাদের প্রয়োজন পূরণার্থে ফরিয়াদ জানাতো। ‘দিরঈইয়া’তেও অনেক ছাহাবীর নাম সংযুক্ত কবর ছিল। যেখানে মানুষ হাজত পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে যেত। সেখানে একটি গুহা ছিল যেখানে তারা নিজেদের মনষ্কামনা পূরণের জন্য গমন করত এবং খাদ্য-দ্রব্য দান করত। তাদের ধারণা ছিল, কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালিয়ে আসা জনৈক বাদশাহর মেয়ে বিনতে উমায়ের এ গুহার নিকট আশ্রয় পেয়েছিল।[5] ইবনে বিশর বলেন, কার্যত: নাজদের প্রতিটি গোত্রে কিংবা উপত্যকায় গাছ বা কবর ইত্যাদি ছিল, যেখানে মানুষ আশীর্বাদ লাভের আশায় পড়ে থাকত। সরাসরি মূর্তিপূজায় লিপ্ত না হলেও কবরপূজাকে তারা মূর্তিপূজার মতই করে ফেলেছিল। সার্বিক পরিস্থিতির চিত্রায়ন করতে যেয়ে হুসাইন বিন গান্নাম তাই যথার্থই লিখেছেন- ‘নজদবাসীদের অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, তারা আল্লাহর চেয়ে কবরবাসীদেরকেই অধিক ভয় পেত, তাই তাদের নৈকট্য লাভের আশায় তারা ব্যতিব্যস্ত থাকত, এমনকি তাদেরকেই আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রয়োজন পূরণকারী মনে করত।’[6] আর গ্রামাঞ্চলের বেদুঈনদের অবস্থা তো ছিল অবর্ণনীয়। মরুভূমির বিজন শুষ্ক বালুকাময় প্রান্তরে অজ্ঞতার নিকষ কালো অাঁধার তাদেরকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে ধরেছিল। এমত পরিস্থিতি চলে আসছিল অব্যাহতভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে; যতদিন না নব উষার শুভবার্তা নিয়ে এই নজদেরই সন্তান মুজাদ্দিদে যামান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব তাঁর বিপ্লবী সমাজ সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আবির্ভূত হন।[7]

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও তাঁর সমাজ সংস্কার কার্যক্রম :

নাম, বংশধারা ও জন্ম : তাঁর নাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সুলায়মান আত-তামীমী। তিনি নাজদের বিখ্যাত তামীম গোত্রের মুশাররফ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[8] বর্তমান সঊদী আরবের রাজধানী শহর রিয়ায থেকে প্রায় ৭০ কি:মি: দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত উয়ায়না নগরীতে ১১১৫ হিঃ/১৭০৩ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতা আব্দুল ওয়াহ্হাব, চাচা ইবরাহীম, দাদা সুলায়মান, চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান প্রত্যেকেই ছিলেন নজদের নেতৃস্থানীয় আলেমে দ্বীন কিংবা বিচারপতি। তাঁর বংশধারা বর্তমানে ‘আলে শায়েখ’ নামে পরিচিত এবং সঊদী আরবের সাবেক ও বর্তমান গ্রান্ড মুফতী এবং বর্তমান বিচারমন্ত্রী এই বংশোদ্ভূত। 

শিক্ষালাভ ও দেশভ্রমণ : শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন প্রখর ধীশক্তির অধিকারী। দশ বছর হ’তে না হ’তেই তিনি সমগ্র কুরআন হিফয করে ফেলেন।[9] পিতার কাছেই তাঁর দ্বীনী ইলম অর্জনের হাতেখড়ি হয়। দাদা ও পিতাসহ আত্মীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন হওয়ায় তাঁদের সাহচর্যে শৈশব থেকেই তিনি জ্ঞানচর্চার পরিবেশে বেড়ে উঠেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাদীছ ও আক্বায়েদ সংক্রান্ত গ্রন্থসমূহের দিকে তাঁর ঝোঁক সৃষ্টি হয়। এই আগ্রহ থেকেই তিনি ইবনে তায়মিয়াহ ও তদীয় ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়িমের লিখিত গ্রন্থসমূহ গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করা শুরু করেন। এমনকি তাদের অনেক গ্রন্থ তিনি নিজ হাতে প্রতিলিপি করেছিলেন।[10]

স্থানীয় আলেমদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন শেষে তিনি বহির্বিশ্ব পরিভ্রমণে বের হন। প্রথমেই তিনি মক্কা মু‘আযযামা গমন করেন এবং দ্বিতীয়বারের মত হজ্জ আদায় করেন। সেখানকার আলেমদের সাহচর্যে কিছুদিন থাকার পর তিনি মদীনা গমন করেন। সেখানে বিখ্যাত দু’জন আলেম আব্দুল্লাহ বিন ইবরাহীম বিন সায়ফ আন-নাজদী এবং আল্লামা হায়াত সিন্ধীর সাহচর্যে থেকে দীর্ঘদিন জ্ঞানার্জনে ব্যাপৃত থাকেন। তাঁদের কাছে তিনি তাওহীদ, শিরক, সুন্নাত ও বিদ‘আত ইত্যাদি ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পান এবং শিরক ও বিদ‘আতী আমল-আক্বীদার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা লাভ করেন।[11] রাসূল (ছাঃ)-এর কবরকে ঘিরে তখন শিরক-বিদ‘আতের আড্ডাখানা গড়ে উঠেছিল। বাক্বী কবরস্থানসহ বিভিন্ন কবরস্থানে ছিল পথভ্রষ্ট মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এসব দুরবস্থার সাক্ষী হয়ে তিনি নাজদে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে তিনি ইরাকের বছরা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং সেখানে প্রখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ আল-মাজমুঈসহ কতিপয় বিদ্বানের নিকট হাদীছ, ফিক্বহ ও আরবী ভাষা শিক্ষা করেন। বছরাতেও তখন শিরক-বিদ‘আতের রমরমা অবস্থা। শী‘আদের ইমাম ও ওলী পূজার আড়ম্বর ও তাদের দেখাদেখি সুন্নীদের মাঝেও শিরক-বিদ‘আতের নানামুখী প্রচলন দেখে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। অবশেষে স্বীয় ওস্তাদের উৎসাহ পেয়ে তিনি এই পথভোলা মানুষগুলিকে তাওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তন ও শিরক পরিহারের জন্য প্রকাশ্যে দাওয়াত প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন।[12] তৎকালীন প্রেক্ষাপটে তাঁর এই দাওয়াত ছিল বছরাবাসীদের নিকট অভিনব ও অপ্রত্যাশিত। শায়খ নিজেই বলেন, ‘বছরার মুশরিক লোকেরা আমার কাছে নানা সন্দেহের ঝাঁপি খুলে বসতো আর প্রশ্ন করতো। আমি যখন তাদেরকে বলতাম, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করা বৈধ নয়, তখন তারা এমনভাবে হতভম্ব হয়ে পড়ত যে, তাদের মুখে রা ফুটত না।’[13] ফলে খুব শীঘ্রই তিনি বছরাবাসীদের কোপানলে পড়ে যান এবং সেখান থেকে তাঁকে নিগৃহীত ও কপর্দকশূন্য অবস্থায় বিতাড়িত হ’তে হয়।[14] প্রায় ৪ বছর তিনি বছরায় ছিলেন। ড. আব্দুল্লাহ ইবনুল উছায়মীন বলেন, বছরায় অবস্থানকালে তিনটি বিষয়ে তিনি উপকৃত হন- ১. ফিক্বহ, হাদীছ ও আরবী ভাষায় দক্ষতা লাভ। ২.শী‘আদের বিভ্রান্ত আক্বীদা-আমল খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ। ৩. তুমুল বিরোধের মুখে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সন্দেহের জওয়াব প্রদানের উপায় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ।[15] বছরা থেকে নাজদে প্রত্যাবর্তনের পথে যুবায়ের পল্লী হয়ে তিনি আল-আহসায় গমন করেন এবং সেখানে শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল লতীফের নিকট কিছুকাল অধ্যয়ন করেন। অবশেষে ১৭৩৯ খৃষ্টাব্দের দিকে স্বীয় বাসভূমি নাজদে ফিরে আসেন।[16] আরবের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ সফরের ফলে ইসলামী বিশ্বের দুরবস্থা সম্পর্কে তিনি বিস্তর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। যা তাঁকে অন্তর্জ্বালায় জর্জরিত করে তুলেছিল এবং একটি বৃহত্তর সমাজ সংস্কার আন্দোলন পরিচালনার বীজ তাঁর অন্তরে বপন করে দিয়েছিল।

দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে পদার্পণ : শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি শিরক ও বিদ‘আতের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে উঠেন এবং পরিপার্শ্বের অজ্ঞ মানুষদের জঘন্যভাবে শিরক-বিদ‘আতে জড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁদেরকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। সমকালীন অন্যান্য আলেমদের মত তিনি জনরোষের ভয়ে স্বীয় ইলমের সাথে প্রতারণা করেন নি; বরং ইলমকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন পবিত্র আমানত হিসাবে, যা তাঁর ব্যক্তিত্বকে স্বচ্ছ, সুদৃঢ় ও আপোষহীন করেছিল।[17] তাঁর বিদগ্ধ শিক্ষকবৃন্দ ছিলেন তাঁর জন্য অনুপ্রেরণা। সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে পিতৃগৃহ ‘হুরাইমিলা’য়[18] প্রত্যাবর্তনের পর তিনি স্বীয় আবাসস্থল থেকেই তাঁর কাংখিত আন্দোলন শুরু করেন।

হুরাইমিলা : ১৭২৬-১৭৩৯ খৃঃ (১১৩৯-১১৫৩ হিঃ) পর্যন্ত আনুমানিক প্রায় ১৫ বছর তিনি এই হুরাইমিলাতেই কাটান। এ সময়টি তাঁর জন্য ছিল বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্ত্ততির সময়।[19] প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ শহরের অধিবাসীদের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত প্রচার এবং তাদেরকে যাবতীয় শিরকী কর্মকান্ড পরিহার করে এক আল্লাহর ইবাদতের আহবান জানানোর মাধ্যমে তিনি সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু করলেন। মানুষকে ডাক দিলেন কিতাব ও সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ এবং সালাফে ছালেহীনের মানহাজের দিকে প্রত্যাবর্তনের দিকে। স্বভাবতঃই তাঁর দাওয়াত জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল এবং অধিকাংশই তা প্রত্যাখ্যান করল। শুরু হল তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের অভিঘাত। এমনকি স্বয়ং তাঁর পিতা ও ভাই সুলায়মানের[20] সাথেও তাঁর মতবিরোধ দেখা দিল।[21] কিন্তু তিনি বিচলিত না হয়ে এক আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রেখে স্বীয় দাওয়াত ও সমাজ সংস্কার কার্যক্রমে অটল থাকলেন। ১৭২৯ খৃষ্টাব্দে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তিনি দাওয়াতী কাজ পুরোদমে শুরু করলেন।[22] হাদীছ, ফিক্বহ ও তাফসীর বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের সুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে উয়ায়না, দিরঈইয়াহ, রিয়ায, মানফূহা প্রভৃতি স্থান থেকে বহু শিক্ষার্থী তাঁর কাছে জমায়েত হতে থাকে এবং তাঁর অনুরাগী ভক্তে পরিণত হয়।[23] তিনি তাঁর ছাত্রদের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে দাওয়াতী বার্তাসম্বলিত পত্র প্রেরণ করা শুরু করলেন। সেসব চিঠির ভাষা ছিল খুব হৃদয়গ্রাহী ও যুক্তিপূর্ণ। যেমন তাঁর প্রথম পত্রটি যা আরেযবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রেরণ করেছিলেন, তার একটি অংশ ছিল এরূপ- হে আরেযবাসী! আমি তাওহীদের বিষয়টি তোমাদেরকে ক্বিবলার মাসআলা দিয়ে বুঝাতে চাই। নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর উম্মত ছালাত আদায় করে, নাছারারাও ছালাত আদায় করে। তাদের প্রত্যেকেরই ক্বিবলা রয়েছে। উম্মতে মুহাম্মাদীর ক্বিবলা হ’ল বায়তুল্লাহ শরীফ, আর নাছারাদের ক্বিবলা হ’ল সূর্যোদয়স্থল। যদিও আমরা প্রত্যেকেই ছালাত আদায় করছি, কিন্তু আমাদের ক্বিবলা ভিন্ন। এখন যদি উম্মতে মুহাম্মাদীর কোন ব্যক্তি এ কথা স্বীকার করে নেয়, অথচ বায়তুল্লাহমুখী ছালাত আদায়কারীর পরিবর্তে সূর্য অভিমুখে ছালাত আদায়কারী খৃষ্টানকে ভালবাসে, সে কি মুসলমান থাকতে পারে? সমস্যাটা এখানেই। নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ তাওহীদ প্রচারের জন্য প্রেরণ করেছেন, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করার জন্য নয়, চাই তিনি নবী হৌন আর যেই হৌন। পক্ষান্তরে নাছারাগণ আল্লাহর সাথে শরীক করে এবং তাদের রাসূল ঈসা (আঃ) ও তাদের সাধু-সন্তদের নিকট প্রার্থনা করে, আর বলে যে, তারা হ’লেন আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা‘আতকারী। অতএব তাওহীদের স্বীকৃতি যখন সকল ‘অনুগামী’র মুখেই, তখন তোমরা মুসলিম হিসাবে তাওহীদকে ক্বিবলা করে নাও আর শিরককে সূর্যকে ক্বিবলা করার মত মনে কর; যদিও বাস্তবে তা ক্বিবলার চেয়ে অনেক বড়। তোমাদের আত্মমর্যাদাকে জাগ্রত করার জন্য আমি উপদেশস্বরূপ বলতে চাই, সাবধান! তোমাদের নবীর দ্বীনের পরিবর্তে নাছারাদের দ্বীনকে ভালবেসে আল্লাহর নিকট তোমাদের প্রাপ্য অংশকে হাতছাড়া করো না। ঐ ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা, যে ব্যক্তি তাওহীদকে রাসূলের দ্বীন হিসাবে জানা সত্ত্বেও তাওহীদ ও তাওহীদবাদীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে? তাকে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন মনে কর? সত্যিই নছীহত কেবল তার জন্যই যে আখেরাতকে ভয় করে। আর যে লোক অন্তঃসারশূন্য তাকে বোঝানোর পথ তো আমাদের জানা নেই।[24]

এ সময়ই তিনি তাঁর বিখ্যাত পুস্তিকা كتاب التوحيد الذي هو حق الله علي العبيد রচনা করেন।[25] যেখানে তিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বলিষ্ঠ উদ্ধৃতি প্রদানের মাধ্যমে সহজবোধ্য ভাষায় তাওহীদের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। হুরাইমিলাতে আরো কিছু কাল অবস্থানের পর কোন এক প্রেক্ষাপটে স্থানীয় শাসনকর্তাদের নিকট অত্র অঞ্চলে বসবাসরত দাস গোষ্ঠীভুক্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন। এতে তারা শায়খের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয় এবং তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ফলে আত্মরক্ষার জন্য অথবা দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত পরিবেশের সন্ধানে[26] তিনি হুরাইমিলা থেকে স্বীয় জন্মভূমি উয়ায়না’য় যাত্রার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সম্ভবতঃ ১১৫৩[27] কিংবা ১১৫৫ হিজরীতে তিনি উয়ায়নায় পৌঁছেন।[28]

উয়ায়না : উয়ায়না পৌঁছার পর সেখানকার শাসক ওছমান বিন মুহাম্মাদ বিন মু‘আম্মারের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁকে তিনি স্বীয় দাওয়াতের উদ্দেশ্য ও সমাজ-সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়বস্ত্ত ব্যাখ্যা করেন। আমীর তাঁর এই দাওয়াতী কর্মসূচীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগত জানান এবং তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। ফলে তিনি স্বাধীনভাবে স্বীয় দাওয়াতী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলেন। অল্প দিনের মধ্যেই অত্র রাজ্যে যায়েদ বিন খাত্ত্বাব (রাঃ), যিরার ইবনুল আযওয়ার প্রমুখের কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিরকী আস্তানাসমূহ ধ্বংস[29], বৃক্ষপূজায় ব্যবহৃত বৃক্ষ কর্তন[30], ইসলামী হুদূদ কার্যকর[31] ও মসজিদে জামা‘আত সহকারে ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা[32] করায় চতুর্দিকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং উয়ায়নার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি ঘটে। এভাবে উয়ায়নাকে কেন্দ্র করে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ গড়ে উঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়।[33] একে একে এ রাজ্য থেকে শিরকের যাবতীয় আস্তানা ধ্বংস করা হয়। দ্বীনের এই নতুন রূপ ধীরে ধীরে মানুষের কাছে সুস্পষ্ট ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে লাগল।[34] এমনকি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের মানুষ শান্তির প্রত্যাশায় এখানে হিজরত করে আসা শুরু করল। কিন্তু এ দৃশ্য দেখে বিচলিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল বিদ‘আতপন্থী আলেম ও পথভ্রষ্ট লোকেরা। ঈর্ষান্বিত, দুনিয়াপূজারী আলেম নামধারী এসকল ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও গুজব ছড়িয়ে তাঁর কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করতে লাগল। শায়খ আন্তরিকতার সাথে তাদের সব সমালোচনার যুক্তিসংগত জওয়াব প্রদান করলেন। কিন্তু তারা নিবৃত্ত না হয়ে ভিন্ন কৌশল ধরল এবং পার্শ্ববর্তী আহসা রাজ্যের শাসক ও বনী খালেদ গোত্রের প্রধান সুলায়মান আলে আহমাদের নিকট শায়খের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করল। আমীর সুলায়মান শায়খের এই তৎপরতাকে নিজের জন্য হুমকি মনে করলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উয়ায়নার আমীর ওছমানের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওছমান বিন মুহাম্মাদ শায়খকে উয়ায়না থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হন।[35]

[চলবে]

আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব

এম.ফিল গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ড. মুনীর আল-আজলানী, তারীখুল আরাবিয়াহ আস-সঊদিইয়াহ (বৈরূত : দারুল কিতাব আল আরাবী, তাবি) পৃ: ১/২৮-৩৬; ড. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সালমান, প্রাগুক্ত, ১২১ পৃঃ।

[2]. শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দিল্লাহ বিন বায, আল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহ্হাব : দাওয়াতুহু ও সীরাতুহু (রিয়ায : ইদারাতুল বুহূছ আল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা ওয়াদ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ, ২য় প্রকাশ : ১৪১১ হিঃ), ২৩ পৃঃ।

[3]. হুসাইন বিন গান্নাম, রাওযাতুল আফকার ওয়াল আফহাম, তাহক্বীক: ড. নাছেরুদ্দীন আল আসাদ (বৈরূত : দারুশ শুরূক্ব, ৪র্থ প্রকাশ : ১৯৯৪ খৃঃ) ১৩ পৃঃ।

[4]. হুসাইন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ১৫-১৭ পৃঃ।

[5]. নূরুল ইসলাম, প্রবন্ধ : বিপ্লবী সমাজ সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নাজদী (রঃ), মাসিক আত-তাহরীক, ৬ষ্ঠ বর্ষ ৮ম সংখ্যা, মে ২০০৩ (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ২৩ পৃঃ।

[6]. হুসাইন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ১৪ পৃঃ। এই অবস্থা কেবল নজদে নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বেই বিরাজ করছিল। স্বয়ং মক্কায় বিভিন্ন ছাহাবীদের কবরকে কেন্দ্র করে যেমন মাযার গড়ে উঠেছিল, তেমনি খোদ রাসূল (ছাঃ)-এর কবরকেও মানুষ তীর্থস্থান বানিয়ে নিয়েছিল। এমনকি অনেকে হজ্জের চেয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করত (ইবনে গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৫৭)।

[7]. ড. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সালমান, প্রাগুক্ত, ১২১ পৃঃ।

[8]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮১ পৃঃ।

[9]. তদেব।

[10]. ড. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সালমান, প্রাগুক্ত, ১২৩ পৃঃ। লন্ডনের বৃটিশ মিউজিয়ামে তাঁর প্রতিলিপিকৃত কিছু গ্রন্থ অদ্যাবধি সংরক্ষিত রয়েছে (উইকিপেডিয়া)।

[11]. সালমান বিন আব্দির রহমান আল-হুকায়েল, হায়াতুশ শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব ও হাকীকাতু দা‘ওয়াতিহি (রিয়ায : ১৯৯৯খৃঃ), ২৯ পৃঃ; মাসঊদ আলম নাদভী, প্রাগুক্ত, ৪৩ পৃঃ।

[12]. আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩১ পৃঃ।

[13]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ২৬ পৃঃ; আল হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩১পৃঃ।

[14]. আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩২ পৃঃ।

[15]. Jamaal Al-Din M. Zarabozo, The life, teachings and influence of Muhammad ibn Abdul-Wahhab (Riyadh : The Ministry of Islamic Affairs, Endowments, Dawah and Guidance, KSA, 2005) P. 25.

[16]. প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রাচ্যবিদ পন্ডিতদের লেখনীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, তিনি বাগদাদ (যেখানে নাকি তিনি একজন ধনী রমণীকে বিবাহ করেন, যিনি অল্প কিছুদিন পরই তাঁর জন্য বহু ধন-সম্পদ রেখে মারা যান), কুর্দিস্থান, হামাযান, ইস্ফাহান, রায়, কুম, আলেপ্পো, দামেশক, জেরুজালেম এবং মিসর প্রভৃতি অঞ্চলও ভ্রমণ করেছিলেন এবং সেসব জায়গায় এ্যারিস্টোটলীয় দর্শন, ছূফীবাদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি তুর্কী ও ফার্সী ভাষাতে দক্ষতা অর্জন করেন। ইরানের কুমে যেয়ে তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী হন। আর বিভিন্ন সময় তিনি নিজের পরিচয় গোপনের জন্য স্বীয় নাম (বছরায় আব্দুল্লাহ, বাগদাদে আহমাদ ইত্যাদি) পরিবর্তন করেছিলেন ইত্যাদি। এ সকল তথ্য সর্বৈব মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন, যা সমালোচকদের রটানো গুজব মাত্র (Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.26-27; আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩৪ পৃঃ)।

[17]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ২৮ পৃঃ।

[18]. ‘উয়ায়নাহ’র আমীর মুহাম্মাদ ইবনে মু‘আম্মারের সাথে মতপার্থক্যের কারণে তার পিতা উয়ায়নাহ ত্যাগ করে হুরাইমিলায় হিজরত করেন (হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮৩ পৃঃ)।

[19]. আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩৭ পৃঃ।

[20]. পরবর্তীতে তাঁর এই ভ্রাতা ১৭৫১ খৃষ্টাব্দে হুরাইমিলার বিচারক থাকাকালীন অবস্থায় মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এমনকি দিরঈইয়াবাসীদেরকেও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য উষ্কানী দিয়েছিলেন এবং মুসলিমদের কাফের বলা ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে একটি বই রচনা করেছিলেন। পরে আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ বিন সঊদ হুরাইমিরার এই বিদ্রোহ দমন করেন। এসময় সুলায়মান অন্যত্র পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন (Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.45)

[21]. ওছমান বিন আব্দিল্লাহ বিন বিশর, উনওয়ানুল মাজদ ফী তারীখে নাজদ, তাহক্বীক : আব্দুর রহমান বিন আব্দুল লতীফ বিন আব্দিল্লাহ আলে শায়েখ (রিয়ায : দারাতুল মালিক আব্দিল আযীয, ৪র্থ প্রকাশ : ১৯৮২), ১/৩৭ পৃঃ ; আহমদ বিন হাজার আলে বুত্বামী, প্রাগুক্ত, ২৬ পৃঃ, মাসঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, ৪৫ পৃঃ।

[22]. আহমদ বিন হাজার আলে বুত্বামী, প্রাগুক্ত, ২৬ পৃঃ, মাসঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, ৪৫ পৃঃ।

[23]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮৪ পৃঃ।

[24]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৩১৬ পৃঃ; আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩৮ পৃঃ।

[25]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮৪ পৃঃ।

[26]. ড. ছালেহ বিন আব্দিল্লাহ বিন আব্দির রহমান আল আবূদ, আক্বীদাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহ্হাব আস সালাফিয়াহ ও আছরুহা ফিল আলামিল ইসলামী (মদীনা : মাকতাবাতুল গুরাবা আল আছারিয়াহ, ১৯৯৬) ১৪২ পৃঃ।

[27]. আব্দুল্লাহ ইবনে বায, প্রাগুক্ত, ১৯-২০ পৃঃ; আল-হুকায়েল, প্রাগুক্ত, ৩৭ পৃঃ।

[28]. আব্দুল্লাহ আল উছায়মীন, আশ শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহ্হাব হায়াতুহু ওয়া ফিকরুহু (রিয়াদ : দারুল উলুম, তাবি) ৪২ পৃঃ।

[29]. উয়ায়নার আমীর ওছমানসহ প্রায় ৬০০ লোক নিয়ে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব যায়েদ বিন খাত্তাব (রাঃ)-এর মাযার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং নিজ হাতে কুঠার নিয়ে ভাঙ্গার কাজ শুরু করেন। এত বড় ‘অপরাধ’ করার পরও যখন শায়খের উপর যখন কোনরূপ এলাহী গযব নাযিল হ’ল না তখন মূর্খ বেদুইন জনগোষ্ঠী বুঝতে পারল আসলেই এসব কবরবাসীর কাউকে উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই (Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.32)

[30]. শায়খের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা শিরকী কাজে ব্যবহৃত সকল গাছ কেটে ফেললেন। কেবল ‘শাজারাতুয যি’ব’ নামক একটি বিরাট গাছ বাদে। কেননা এই গাছের পূজারী সংখ্যা ছিল অনেক। তাই শায়খ নিজেই গাছটি কাটার জন্য গেলেন এবং ‘ওয়া কুল জা-আল হাক্ব... ইসরা ৮১’ আয়াতটি পড়তে পড়তে তা কেটে ফেললেন। মানুষ পরদিন সকালে গাছটি দেখতে না পেয়ে শায়খের কাছে গেল এবং তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় পেল (আল-হুকায়েল, ৪৬ পৃঃ)।

[31]. একজন যেনাকার মহিলা শায়খের কাছে এসে নিজেকে যেনার অপরাধে অপরাধী বলে বর্ণনা করে এবং নিজের উপর শাস্তি আরোপের জন্য পীড়াপীড়ি করে। শায়খ তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হলেন যে, আসলেই সে অপরাধী কী না? অবশেষে শায়খ নিজ হাতে মহিলাটির উদ্দেশ্যে প্রথম পাথরটি নিক্ষেপ করলেন এবং তার মৃত্যুর পর জানাযা আদায় করলেন। সবকিছুই ঘটল ঠিক রাসূল (ছাঃ)-এর যুগের সেই মহিলাটির মত সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী (ইবনে গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮৫ পৃঃ, ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/৩৯ পৃঃ)। এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, সে সময় শায়খের দাওয়াত জনমনে কী অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছিল।

[32]. মুসলমানরা সে সময় জামা‘আতে ছালাত আদায়ে খুব গাফেল ছিল। মসজিদসমূহে মুছল্লীর সংখ্যা এতই কম ছিল যে, শায়খ আমীরকে পরামর্শ দিয়ে বিশেষ বাহিনী গঠন করেন, যাদের তৎপরতায় অল্পদিনের মধ্যেই মসজিদগুলো মুছল্লীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় (আল-হুকায়েল, ৫১ পৃঃ)।

[33]. Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.31

[34]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৭৮ পৃঃ।

[35]. হুসায়েন বিন গান্নাম, প্রাগুক্ত, ৮৬ পৃঃ। তবে আমীর ওছমান শায়খকে হত্যা করার জন্য পিছনে লোক পাঠিয়েছিলেন-মর্মে যে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন ইতিহাসে, তা মিথ্যা (ইবনে বিশর, ১/৪১ পৃঃ, আল-হুকায়েল, ৫৪ পৃঃ)






বিষয়সমূহ: সংগঠন
দাফনোত্তর দলবদ্ধ মুনাজাতের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
এক নযরে হজ্জ - আত-তাহরীক ডেস্ক
দাঈদের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমাজে তার প্রভাব - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৫ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
ওশর : দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাসায়েলে কুরবানী - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.