আবহাওয়া
পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে দেশের গাছপালা ও প্রাণীকূল হুমকির মুখে।
বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে দেশের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হ’তে
চলেছে। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রাণী। এর
মধ্যে রয়েছে একশিঙা গন্ডার, বারশিঙা, প্যারাহরিণ, রাজশকুন, বাদিহাঁস,
গোলাপীশির হাঁস, ময়ূর, মিঠাপানির কুমির ইত্যাদি। তাছাড়া বর্তমানে দেশে ৩০
প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি। এর মধ্যে রয়েছে রয়েল
বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি।
পরিবেশবিদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনবসতি স্থাপনের ফলে বন-জঙ্গল উজাড়
করা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ভরাট করা, চাষাবাদে অতিরিক্ত সার ও
কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পশু-পাখি এবং অন্যান্য জলজপ্রাণীর জীবন আজ হুমকির
মুখে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তবে ২০-৩০ শতাংশ গাছপালা ও পশু-পাখির জীবন ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাসের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়ঝঞ্ঝা, খরা, বন্যা, বরফ গলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পানি সংকট দেখা দিতে পারে।
উল্লেখ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থানের বিবেচনায় বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ জনপদ। সাম্প্রতিক সময়ের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৫ জাতের উভচর প্রাণী, ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মৎস্য এবং ৫০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের নমুনা বিদ্যমান। বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ এর অধিক সম্পূরক উদ্ভিদ রয়েছে। তন্মধ্যে ২২৪ প্রজাতির কাঠ উৎপাদনকারী বৃক্ষ। ১৩০টি প্রজাতি তন্তু উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এছাড়াও বাংলাদেশে ২৬ প্রজাতির ঘাস পাওয়া যায়।
বর্তমানে মিঠা পানিতে ২৬০ প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ৩১ প্রজাতির বিদেশী মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ও কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি পাওয়া যায়। দেশে প্রাপ্ত ৪৫০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুকের মাঝে ৩০০টি উপকূল এলাকায় পাওয়া যায়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর সহায়তায় সাস্টেইনেবল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কর্মসূচীর অধীনে উন্নয়ন সমবায়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক জনপ্রতিবেদনের তথ্য মতে বিগত ১৫-২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে যে ধরনের মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে তার বহু কিছুই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তির পথে। ২০ বছর আগে যে মাছ পাওয়া যেত তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল- বেলে, পুঁটি, টেংরা, মলা, মিহি, মাগুর, চাঁদা, ধূতরা, গুজা, বাগদা চিংড়ি, বোয়াল, শোল, টেপা, ফলি, পাবদা, আইড়, কালবাউশ, চিতল, পোয়া, চ্যাং, চেঁউয়া, চেঙো, বাইন, খয়রা, বোটি ইত্যাদি।
পরিবেশ বিপর্যয় ও আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে যাওয়ার পথে ১৩ প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রাণী। এর মধ্যে ১০টি স্তন্যপায়ী, দুটি পাখি এবং একটি সরীসৃপ প্রজাতির। বাংলাদেশে প্রায় ১১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিপন্নপ্রায়। এর মধ্যে রয়েছে হাতি, উল্লুক, লজ্জাবতী বানর, চশমা-পরা হনুমান, এশীয় কালো ভল্লুক, মায়া হরিণ, সাম্বার হরিণ, মেছোবিড়াল, ভোঁদড়, খাটাশ, কাঠবিড়ালি, বাদুড়, ডলফিন, শজারু, গয়াল প্রভৃতি।
প্রকৃতি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আ ন ম আমীনুর রহমান বলেন, প্রাণীকূল জীবজগত তথা প্রকৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবনধারণের জন্যই প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। প্রাকৃতিক ভারসাম্য মানুষ তথা সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য। আর এ ভারসাম্য বজায় রাখতে সঠিক সংখ্যায় সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেঁচে থাকাটা অতন্ত যরূরী। এজন্য সকলকে অবশ্যই পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হতে হবে।