স্বদেশ
মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর
বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হয়নি
মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে ঢাকা-দিল্লী ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সমন্বিত রূপরেখা চুক্তি বা ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট সই হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি সই করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা এবং বিরোধমূলক যেসব ইস্যু রয়েছে তার সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টে। দু’দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষিসহ সার্বিক সহযোগিতার ভিত্তি কী হবে তা নির্ধারিত হবে এ চুক্তির মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়নি। এরই জের ধরে সই হয়নি ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এবং পিছিয়ে গেছে ট্রানজিটের ব্যাপারে সম্মতিপত্র চুক্তিও। ফলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফর ঘিরে দেখা প্রত্যাশার সব আলো ম্লান হয়ে যায় হতাশার কালো ছায়ায়। একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ও ৭৪-এ সই হওয়া স্থলসীমান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রটোকল ছাড়া যে ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নেপালে পণ্য পরিবহনে ভারতের ভূখন্ড ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে সহযোগিতা, সুন্দরবন সুরক্ষা, সুন্দরবনের বাঘ সুরক্ষা; মৎস্যসম্পদ খাতে সহযোগিতা, বিটিভি ও দূরদর্শনের সহযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা এবং বিজিএমইএ ও নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশনের সহযোগিতা। ভারতের বাজারে ৪৬টি বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং তিন বিঘা করিডোরের গেট ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে করিডোর গেট ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। মনমোহন সিংয়ের সফর শেষে প্রকাশিত হয়েছে ৬৫ দফার এক যৌথ বিবৃতি। যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলোর সমাধানসহ যত দ্রুত সম্ভব তিস্তার পানিবণ্টন, চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করে রেল, সড়ক ও নৌপথে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা দ্রুত করা, বন্দী বিনিময় চুক্তি এবং অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারত। গত ৬ সেপ্টেম্বর বেলা পৌনে ১২-টায় দু’দিনের সরকারী সফরে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তার সফরসঙ্গী ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথানওয়ালা, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশংকর মেননসহ পদস্থ কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকসহ মোট ১৩৭ জন। সফর শেষে ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬-টা ১০ মিনিটে তারা ঢাকা ত্যাগ করেন।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ার নেপথ্য কারণ : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসায় মনমোহনের সফরে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হয়নি। ফলে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর ম্লান হয়ে গেছে। মমতার ভাষ্য অনুযায়ী, খসড়া চুক্তি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে জানায়নি। খসড়ায় বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে, তাতে বঞ্চিত হবে পশ্চিমবঙ্গ। তাই তিনি এ চুক্তির পক্ষে নন। জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাকি মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তিস্তার পানির ৭৫ ভাগ পাবে পশ্চিমবঙ্গ। অবশিষ্ট ২৫ ভাগ পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ ৫০ ভাগ পানি পাওয়া নিয়ে আলোচনার পর ৪৮ ভাগ পানি দিতে রাজি হয় ভারত সরকার। সে মোতাবেক চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়। কিন্তু মমতা ২৫ ভাগের বেশি পানি দিতে রাজি না হওয়ায় এ চুক্তি স্থগিত হয়। এজন্য মমতা ঢাকা সফরে আসার কথা থাকলেও আসেননি। তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে রাজি করাতে ও মান ভাঙাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের দূত হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মমতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি। কূটনৈতিকদের মতে, ভারত দীর্ঘদিন ধরে আশা করছিল তাদের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ট্রানজিট চুক্তি ঘোষণা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ট্রানজিটের পরিবর্তে জানায়, আঞ্চলিক যোগাযোগ (কানেকটিভিটি) স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ ও ভারত সম্মত আছে, এমন একটি সম্মতিপত্র (লেটার অফ এক্সচেঞ্জ) স্বাক্ষর বিনিময় হবে। যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে ভারত সরকার তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই করতে বাংলাদেশের কাছে ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে পরবর্তী ১০-১৫ বছরের পানি প্রবাহের উপাত্ত চেয়েছে ভারত। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম কমিশনার-১ (গঙ্গা) যৌথ নদী কমিশনের সদস্য (জেআরসি) মীর সাজ্জাদ হোসেনকে এ ব্যাপারে চিঠি লেখেন। এর ফলে তিস্তার পানিবণ্টন বিলম্বিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এদিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা তাড়াহুড়া করতে চাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের পরেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, আগে যে ২৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশকে দেবার ব্যাপারে তার সম্মতি ছিল এখন সেটাও দেয়া সম্ভব নয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এমন খবরই দিয়েছে।
বাংলাদেশের পণ্যের ব্যাপারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা : বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশের সুবিধার বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছে না ভারতের বস্ত্রপণ্য প্রস্ত্ততকারকেরা। তাদের পক্ষ থেকে এ চুক্তির বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ছিটমহলবাসীর প্রতিক্রিয়া : ভারতের সাথে কৃত চুক্তি অনুযায়ী তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলার কথা থাকলেও অন্য ছিটমহলগুলো কবে নাগাদ বিনিময় হবে তার সুনির্দিষ্ট সময় চুক্তিতে উল্লেখ না থাকায় ছিটমহলবাসীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং অনশন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। অন্যদিকে তিন বিঘা করিডোরের অধিবাসীরা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছে।
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ২০০ অভাবী লোকের কিডনি বিক্রি; নেপথ্যে দারিদ্র্যমুক্তি ও এনজিওর ঋণ
দেশে কিডনি বিক্রির এক ভয়ংকর সংবাদ পাওয়া গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের যেলা জয়পুরহাটের কালাইয়ের ১৮ গ্রামের দুই শতাধিক দরিদ্র মানুষ নিজেদের কিডনি বিক্রি করেছেন বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এমনকি কালাই উপযেলার কয়েকটি গ্রামে স্ত্রীর কিডনি বিক্রির জন্যও কেউ কেউ একাধিক বিয়ে পর্যন্ত করেছেন। ২০০৬ সাল থেকে অদ্যাবধি গত পাঁচ বছরে এই বিপুল কিডনি বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। কিডনি বিক্রিকারী অধিকাংশ নারী-পুরুষই দালালচক্রের দেখানো বড় অংকের নগদ টাকার প্রলোভন আর বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) ঋণের চাপ থেকে মুক্তি পেতে কিডনি বিক্রি করেছেন। জয়পুরহাট যেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির ১৫ সেপ্টেম্বর জমা দেয়া প্রতিবেদনেও এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধকে কিডনি বিক্রির অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি নিলেও ভুক্তভোগীদের কেউই ঠিকমতো টাকা পাননি। সিংহভাগ টাকাই হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ দালালচক্র।
গত ২৯ আগষ্ট ঐ দালালচক্রের তিন সদস্য গোলাম মোস্তফা, আব্দুস সাত্তার ও করীম ওরফে ফোরকানকে এবং পরবর্তীতে চক্রের প্রধান তারেক আযীম ওরফে বাবুল চৌধুরী (৪৭), সাইফুল ইসলাম দাঊদ, নাফিয মাহমূদ (৩১), মাহমূদুর রহমান সুজন ওরফে মাহমূদ (৩২) প্রমুখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উল্লিখিত তারেক ঢাকায় থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। আর স্থানীয়ভাবে সব দেখাশোনা করত উপযেলার বহুতি গ্রামের আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন। এসব দালালরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকার লোভ দেখিয়ে অভাবী মানুষদের কিডনি বিক্রিতে রাজি করাত। কিডনি কেনাবেচা চক্রের প্রধান তারেকের দেয়া তথ্য মতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজীব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড, বারডেম ও কিডনি ফাউন্ডেশনে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এসব হাসপাতালের অনেকেই কিডনি চক্রের সাথে জড়িত আছে। তার মতে, প্রতিটি কিডনি বিক্রিতে দালালদের ২৫ থেকে ৫০ হাযার টাকা দেয়া হয়। আর কিডনি ব্যবসায়ী পায় ১ লাখ ৭০ হাযার থেকে চার লাখ টাকা। অথচ যার শরীর থেকে কিডনি নেয়া হল তাকে দেয়া হয় নামমাত্র মূল্য। অনেক সময় ১৫/২০ হাযার টাকা দিয়েও তাদের বিদায় করা হয়।
বিদেশে কিডনি পাচার : গত ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে ধৃত ‘এশিয়া কলম্বিয়া’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাফিয মাহমূদ রাজধানীর পান্থপথের এই প্রতিষ্ঠানে বসে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি কেনাবেচা করত। কিডনি ক্রেতা ও বিক্রেতার পাসপোর্ট, ভিসাসহ সব ব্যবস্থা করে দিত এই নাফিয।
জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠনে হাইকোর্টের নির্দেশ : কিডনি-বাণিজ্য তদন্তে জাতীয় কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যসচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের পর ১৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে অবৈধভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনে জড়িত চিকিৎসকদের সনদ বাতিলের ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রশাসন কিডনি বিক্রি করে দেওয়া প্রতারিত অভাবীদের এনজিওদের ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্ত এবং পুনর্বাসন করবে বলে জয়পুরহাট যেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক সভায় জানিয়েছেন। তাছাড়া প্রতারিতদের আইনী সহায়তা দেবে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
ভূমিকম্পে প্রকম্পিত হল বাংলাদেশ
রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যা ছয়টা ৪০ মিনিটে তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। এর কিছুক্ষণ পর আরেকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। তবে শেষটির প্রভাব রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের সিকিম ও নেপাল সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকায়। ভূগর্ভের ২০ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীর ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। প্রায় ১০০ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পটি সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও সহ দেশের উত্তরাঞ্চলে। রাজধানীর আবহাওয়া বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৯৫ কিলোমিটার ও সিকিম থেকে ৬৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ভূমিকম্পে লালমণিরহাটের পাটগ্রামে জ্ঞান হারিয়ে আবদার হোসেন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
টিপাইমুখের পর এবার সারী নদীর উজানে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাচ্ছে ভারত; সিলেটে পড়বে বিরূপ প্রভাব
ভারতের মণিপুর রাজ্যে বরাক উপত্যকায় টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ কাজ চালানোর পাশাপাশি এবার মেঘালয় রাজ্যের মাইন্ডু নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে আরেকটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাইন্ডু নদীতে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুরের সারী নদীর উজানে মেঘালয় রাজ্যে মাইন্ডু নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে সিলেট অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও কৃষিকাজে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। জানা গেছে, ভারতের মাইন্ডু নদী মেঘালয় পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল এলাকা দিয়ে সারী নাম ধারণ করে বাংলাদেশে ঢুকেছে। নদীটি সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপযেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে এসে সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে। দালানকোঠা বা বিভিন্ন অবকাঠামোর কাঁচামাল হিসাবে সারী নদীর বালুর বিশেষ সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, এ বাঁধের কারণে সারী নদী মরে যাবে। এ নদীর জলজ সম্পদ নষ্টের পাশাপাশি সারী বালুমহালও ধ্বংস হয়ে যাবে।
জীবন দিয়ে এনজিওর কিস্তির ঋণ পরিশোধ করল শিউলী
সংসারে একটু স্বচ্ছলতার জন্য ‘আশা’ ও ‘আত্মবিশ্বাস’ নামক দু’টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন গৃহবধূ শিউলী। কিন্তু স্বামীর কোন কাজ না থাকা, বাড়িতে কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য এনজিওকর্মীদের বারবার ধরনা, অকথ্য গালাগালি-লজ্জা থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে ট্রেনের নীচে নিজের জীবন দিয়ে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করেছেন শিউলী। গত ৮ সেপ্টেম্বর হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপযেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। জানা গেছে, উপযেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের লাল্টু মন্ডলের স্ত্রী শিউলী। লাল্টু স্থানীয় পান হাটে কাজ করেন। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে লাল্টু-শিউলী দম্পতি ‘আশা’ এনজিও থেকে ২০ হাযার ও ‘আত্মবিশ্বাস’ থেকে ১০ হাযার টাকা ঋণ নেন। প্রথমে তারা ঠিকমতো কিস্তিও পরিশোধ করছিল, কিন্তু হঠাৎ লাল্টুর কাজ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে এই দম্পতি। ঘটনার দিন এনজিও কর্মকর্তারা কিস্তির টাকার জন্য শিউলীদের বাড়িতে গিয়ে গালাগালি করতে থাকে। তখন শিউলী কিস্তি আদায়কারীকে বাড়িতে বসিয়ে রেখে টাকার জন্য বাইরে বের হন। সকাল ১০-টার দিকে আলমডাঙ্গা উপযেলার মুন্সীগঞ্জ স্টেশনের অদূরে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন শিউলী।
বিদেশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয়জনে একজন দরিদ্র
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয়জনে প্রায় একজন লোক দরিদ্র। গত বছর (২০১০) দেশটিতে নতুন করে ২১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে এসেছে। মার্কিন আদমশুমারী ব্যুরো গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনটি ২০১০ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় চার কোটি ৬২ লাখে। যা মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক এক শতাংশ। ২০০৯ সালে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আদমশুমারী ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিক আমেরিকানদের মধ্যে দরিদ্রতা সবচেয়ে বেশি। এ হার যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অঙ্গরাজ্যের দিক থেকে মিসিসিপিতে সবচেয়ে বেশি ২২ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে। আর সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ বাস করে নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে।
মার্কিন প্রতিবেদন
ভারতে হিন্দু সন্ত্রাসবাদ ভয়াবহ আকারে ছড়াচ্ছে
ভারতে হিন্দু সন্ত্রাসবাদ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর ১লা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে হিন্দুবাদী বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন দেশটির অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। উক্ত প্রতিবেদনে প্রতিবেদকেরা ভারতের সাম্প্রতিক বোমা হামলার সঙ্গে হিন্দুবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসএস, শিবসেনা, বিজেপি ও সাবেক সেনা অফিসারদের যোগসূত্র খুঁজে পান। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ে দু’টি বোমা হামলায় সাতজন নিহত হয়। এলাকাটিতে হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। বছর শেষে ঐ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পুলিশ হিন্দু সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সাতজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ও বিজেপির একজন নারীকর্মী ছিল। প্রসঙ্গত, ২০১০-এর শেষের দিকে হিন্দু চরমপন্থী স্বামী অসীমানন্দ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এর আগে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ঢালাওভাবে ইসলামপন্থীদের দায়ী করা হত।
চীনে বছরে ৩ লাখ লোকের আত্মহত্যা; প্রতি দুই মিনিটে একজন
‘চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দুই মিনিটে দেশটিতে একজন লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আর বছরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ২০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশ বেঁচে গেলেও বছরে তিন লাখ লোক আত্মহত্যাজনিত কারণে মারা যায়। চীনে বছরে যত লোক মারা যায়, আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু তার ৩ দশমিক ৬ ভাগ। আর আত্মহত্যার কারণটি মানুষ মারা যাওয়ার পাঁচ নম্বর কারণ। ফলে দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাকারী দেশ। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫ ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গ্রামাঞ্চলে। আর পুরুষের চেয়ে মহিলাদের আত্মহত্যার প্রবণতা ২৫ ভাগ বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার দশ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে : এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোরীয় উপদ্বীপের শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় দশ বছরে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। হিসাব মতে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে দেশটিতে ৪০ জনেরও বেশি লোক আত্মহত্যা করেছে। এক দশক আগের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি এবং ১৯৮৯ সালের তুলনায় তা পাঁচগুণ। বিশ্বের বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম।
অর্থনৈতিক সংকটে ব্রিটিশ রাজকীয় বাহিনীর এক হাযার সদস্য ছাঁটাই হচ্ছে
ব্রিটেনে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রাথমিকভাবে দেশটির রাজকীয় বিমান বাহিনীর এক হাযার সদস্যকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এ সময় একইসংখ্যক সেনা সদস্যকেও ছাঁটাই করা হবে। এছাড়া ২০১৫ সালের মধ্যে বিমান, সেনা ও নৌবাহিনীর ১১ হাযার সদস্য ছাঁটাই হবে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে। এ কারণে কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি নিতে বাধ্য হয়েছে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার। এরই আওতায় দেশটিতে কয়েক লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি প্রায় তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।
ঝাড়খন্ডে দ্বিতীয় ভাষার স্বীকৃতি পেল বাংলা
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্য সরকার বাংলাকে সেখানকার দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। বাংলার সঙ্গে আরো ১১টি ভাষা এ মর্যাদা পেয়েছে। ভারতের কোন রাজ্যে এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ১২টি ভাষাকে দ্বিতীয় ‘রাজ্যভাষা’ করা হ’ল। ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর বিহার থেকে আলাদা করে ঝাড়খন্ডকে নতুন রাজ্য ঘোষণার পর থেকেই বাংলাকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষা করার দাবী ওঠে। ৪ সেপ্টেম্বর ঝাড়খন্ড বিধানসভায় বিল পাশের মাধ্যমে স্থানীয় বাঙ্গালীদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হ’ল।
কঠোর আইন বলবৎ
প্যারিসের রাস্তায় জুম‘আর ছালাত আদায়ে বাধা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তায় জুম‘আর ছালাত আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন বলবৎ করেছে সে দেশের সরকার। এর ফলে শুক্রবার হাযার হাযার মুছল্লী জুম‘আর ছালাত আদায় করতে পারেননি। মসজিদের ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বহু মানুষ রাস্তায় জুম‘আর ছালাত আদায় করে থাকেন। নতুন এ আইন কার্যকর করার পর ফরাসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাস্তায় ছালাত আদায় করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটা ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ব্যবস্থার উপর সরাসরি আঘাত। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির নেতৃত্বাধীন উগ্র ডানপন্থী দল ক্ষমতায় আসার পর ফ্রান্সে জুম‘আর ছালাত ও বোরক্বার মতো বিষয়কে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করা হয়েছে। চলতি বছরই ফরাসী সরকার সেদেশে মুখমন্ডল ঢাকা বোরক্বা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আরো উল্লেখ্য যে, ফ্রান্স হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। দেশটিতে মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ মুসলমান এবং এ সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।