বাংলাদেশে বাণিজ্যিক
ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২
(লাল) খুব ভালো। এছাড়াও হলুদ ও লালচে ড্রাগন ফল চাষাবাদ করা যেতে পারে।
দেশের সব হর্টিকালচার সেন্টার ও বড় ধরনের নার্সারীতে ড্রাগন ফলের চারা
পাওয়া যাবে। বীজ দিয়ে চারা তৈরী করা গেলেও কাটিং করে শাখা কলমের মাধ্যমে
চারা তৈরী করা উত্তম।
জমি নির্বাচন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা
সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারী উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। সমতল ভূমিতে বর্গাকার এবং পাহাড়ী ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের কাটিং রোপণ করতে হবে। ড্রাগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হ’ল মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য অক্টোবর।
চারা রোপণের আগে ১.৫ মিটার/১.৫ মিটার/১ মিটার আকারের গর্ত করে তা রোদে খোলা রাখতে হবে। গর্ত তৈরীর ২০-২৫ দিন পর প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ৫০ সেমি দূরত্বে চারটি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে তিন মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য চারটি চারার মাঝে একটি সিমেন্টের চার মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হ’লে খড়ের বা নারিকেলের রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে, যাতে কান্ড বের হ’লে খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে। প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মোটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কেননা ঝুলন্তভাবে ফল বেশী ধরে।
সার প্রয়োগ : গাছের বয়স ১-৩ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৪০-৫০ কেজি, ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম একসঙ্গে মিশ্রণ করে দিতে হবে। গাছের বয়স ৩-৬ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৫০-৬০ কেজি, ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, এমওপি ৩০০ গ্রাম দিতে হবে। গাছের বয়স ৬-৯ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৬০-৭০ কেজি, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ৩৫০ গ্রাম দিতে হবে। গাছের বয়স ১০ বছরের ঊর্ধ্বে হ’লে মাদা প্রতি গোবর সার ৭০-৮০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা : ড্রাগন ফল খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। এছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার অর্থাৎ ফুল ফোটা অবস্থায় একবার, ফল মটর দানা অবস্থায় একবার এবং ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা : ফলে রোগ বালাই খুব একটা চোখে পড়ে না। গোঁড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পঁচে যায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হ’লে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভালো। আর ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কান্ড ও গোঁড়া পচা রোগ হ’তে পারে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া পোকা মাকড় দমন করতে হবে।
ফল সংগ্রহ : ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপণের পর এক থেকে দেড় বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
পুষ্টিকর ফল ড্রাগন চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন লালমণিরহাটের আবু তালেব
লালমণিরহাটে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আমেরিকার জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল ড্রাগন। যেলার আদিতমারী উপযেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মুযযাম্মেল হকের ছেলে আবু তালেব ড্রাগন বাগানটি করেছেন। গতবছর নিজেদের ৬৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ শতাধিক পিলারে ২০ হাযার চারা রোপণ করে তৈরি করেন ড্রাগন বাগান। নাটোর যেলা থেকে ড্রাগন ফলের চারা ক্রয় করেন তারা। দেড় বছর বয়সে ফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা ১০-১১ মাসেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। বিদেশী এ ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ভিড় জমায় আবু তালেবের ড্রাগন বাগানে।
আবু তালেবের ভাই আব্দুল্লাহ জানান, গাছ উঠে গেলে গাছের আগা ভেঙে দিতে হয়। তবে অনেকগুলো শাখা প্রশাখা তৈরী হবে। প্রতিটি শাখা-প্রশাখার ডাটায় ফুল ও ফল আসবে। আস্তে আস্তে শাখা-প্রশাখায় ঢেকে নেবে পুরো এলাকা। এভাবে একবার চারা রোপণ করে আজীবন পাওয়া যায় ড্রাগন ফল। তাদের বাগানের বয়স মাত্র ১০-১১ মাস। এতেই ফল এসেছে। একটি গাছে অসংখ্য ফল আসে। প্রতি চারটি ড্রাগনের ওযন হবে এক কেজি।
আবু তালেবের বড় ভাই আবুল হাশেম তাদের এ বাগান তৈরীতে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। তবে প্রথমে খরচ হ’লেও পরবর্তীতে শুধুই পরিচর্যা। পরিচর্যা করলে সারা জীবন ড্রাগন ফল পাওয়া যাবে এ বাগান থেকে। প্রথম দিকে বাগান ফাঁকা থাকে। তাই ড্রাগনের সাথী ফসলের চাষ করা যায়। তারা সাথী ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতের সব্জি চাষ করেন। বর্তমানে ড্রাগনের সাথী ফসল হিসাবে রয়েছে কাঁচা মরিচ। সবজি চাষাবাদের আয়েই পরিবারের খরচ যোগানো যায়। ড্রাগন ফল হবে মুনাফা। যা সারা জীবন আয় করা যাবে। এলাকায় প্রথম হিসাবে দূর-দূরান্ত থেকে ড্রাগন ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন মানুষজন ভিড় করে। যারা আসে তাদের সবাইকে বাগান করার উৎসাহ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলালুদ্দীন বলেন, শখের বশে করা ড্রাগন বাগানটি এখন ঐ পরিবারের একটি আয়ের মাধ্যম হ’তে চলেছে। এখন অনেক আগ্রহী কৃষক ড্রাগন চাষ করার কৌশল জানতে ঐ বাগানে আসেন।
আদিতমারী উপযেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বলেন, ড্রাগন খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। শখের বসে হ’লেও আবু তালেবের ড্রাগন বাগানটি বাণিজ্যিক। সৌখিন কৃষকরা নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে বাড়ির পাশে দু’চারটি করে ড্রাগন গাছ লাগাতে পারেন। সেই লক্ষ্যে কৃষিবিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ যেলায় ব্যাপকভাবে ড্রাগন চাষ হবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
\ সংকলিত \