আফ্রিকাসহ পৃথিবীর প্রায় ৫০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ক্যাসাভা। বাংলাদেশেও ক্যাসাভা বিকল্প প্রধান খাদ্য হ’তে পারে। এতে দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আসবে। সেই সাথে চাপ কমবে চাল ও গমের উপরে। ক্যাসাভা সম্পর্কে বলা যায় যে, গমের আটা দ্বারা যত প্রকার খাবার তথা রুটি, বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরী হয়, তার সবই ক্যাসাভার আটা দ্বারা হয়ে থাকে। এক কথায় গমের আটা দ্বারা যা যা তৈরী হয় ক্যাসাভার আটা দ্বারা তার সব কিছুই তৈরী করা যায়। উপরন্তু ক্যাসাভার আলু থেকে উৎপাদন করা যায় গ্লুকোজ, লজেন্স তৈরির কাঁচা মাল, পেস্ট, প্রসাধনী, ভিনেগার, সিরাপ তৈরির গ্যার্নিউল ইত্যাদি। ক্যাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা উৎপাদনকারী ফসল। এ কারণে আফ্রিকায় খাদ্য হিসাবেও বেশ জনপ্রিয়।

ক্যাসাভা বহুবর্ষজীবী গুল্ম শ্রেণীর গাছ। কান্ড গিট যুক্ত, আগা ছড়ানো, পাতা যৌগিক, গড়ন শিমুল পাতার মতো, করতলাকৃতি, লালচে রঙের দীর্ঘ বৃন্তের মাথায় লম্বাটে ছয় থেকে সাতটি পাতা থাকে। ক্যাসাভা গাছের শিকড় জাত এক ধরনের আলু। জন্মে মাটির নিচে। নানাভাবে ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ আলু খাওয়া যায়।

স্থানভেদে ক্যাসাভার বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- Yoca, Mogo, Manioc, Mandioca ইত্যাদি। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাসাভার চাষ শুরু হয় সাম্প্রতিক কালে। জানা যায়, ক্যাসাভার আগমন ঘটেছে মূলত খ্রিস্টান মিশনারীর মাধ্যমে ১৯৪০ সালের দিকে। কিন্তু বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও মধুপুরের আদিবাসীদের কেউ কেউ মনে করেন দেশীয় জাতের ক্যাসাভা অনেক পূর্ব থেকেই আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে আবাদ হ’ত।

আমাদের দেশে গাছটি শিমুল আলু হিসাবে বেশ পরিচিত। ক্যাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা উৎপাদনকারী ফসল এবং আফ্রিকা সহ প্রায় ৫০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। এটি আফ্রিকায় বেশ জনপ্রিয় খাদ্য। বর্তমানে সারা পৃথিবীর উষ্ণ ও কম উষ্ণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ক্যাসাভার চাষ হচ্ছে। ক্যাসাভা উৎপাদনে প্রথমস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া। এর পরেই রয়েছে আইভরিকোষ্ট।

আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে এর চাষ হ’লেও বর্তমানে ময়মনসিংহের গারো পাহাড়, হালুয়াঘাট, ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের সখিপুর মধুপুর, ঘাটাইল এবং নেত্রকোনা ও কুমিল্লার লালমাই পাহাড় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসিরা স্থানীয়ভাবে ক্যাসাভা চাষ করে।

সাম্প্রতিককালে ঘাটাইল, মধুপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, মানিকছড়ি, করের হাট এবং কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে ক্যাসাভার চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি এসব অঞ্চলে ফিলিপাইন হাইব্রীট জাতের ক্যাসাভা চাষ শুরু হয়েছে।

অনাবাদি পতিত অনুর্বর জমিগুলো সাধারণত এ আলু চাষের জন্য নির্বাচন করা হয়। এ আলু চাষে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় না। আমাদের দেশে ক্যাসাভা গাছের গিটযুক্ত কান্ডগুলো ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি করে টুকরা টুকরা করে সারিবদ্ধভাবে জমিতে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে রোপণ করা হয়। আলু তোলা হয় অক্টোবর হ’তে নভেম্বর মাসের মধ্যে। গাছ লাগানোর ৭ মাস পর আলু খাওয়ার উপযোগী হয়। এ আলু উৎপাদনে কোন খরচ নেই বললেই চলে। সার ও কীটনাশক লাগে না। গাছ ছোট অবস্থায় দু’এক বার নিড়ানি দিলেই চলে। এ আলুর পাতা বিষাক্ত বলে কোন প্রাণী এ গাছের পাতা খায় না।

দেশীয় জাতের ক্যাসাভার মূল বা শিকড় আগুনে পুড়িয়ে মিষ্টি আলুর মতো খাওয়া যায়। আলু সিদ্ধ করে বিভিন্ন তরকারির সাথেও রান্না করে খাওয়া যায়। তবে সব জাতের ক্যাসাভা খাওয়ার উপযেগী নয়। ক্যাসাভা আলু থেকে তৈরি আটা ১০ থেকে ৩০ ভাগ আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, কেক, বিস্কুট, স্যুপ ও রসগোল্লা তৈরি করা সম্ভব। ক্যাসাভা থেকে উৎপাদন হয়, গ্লুকোজ, লজেন্স তৈরির কাঁচামাল, পেস্ট, প্রসাধনী, ভিনেগার, সিরাপ তৈরির গ্যার্নিউল ইত্যাদি।

দেশের অনুর্বর পতিত জমিতে ক্যাসাভা চাষ করলে আমাদের খাদ্যের বাড়তি চাহিদা অনেকটা মেটানো সম্ভব হবে। তাছাড়া এ শস্যের বাণিজ্যিক মূল্যও নেহাত কম নয়।

মোদ্দাকথা গমের আটা থেকে যত প্রকার খাবার তৈরী হয় তার সবই হয়ে থাকে ক্যাসাভার আটা থেকে। আর ১ কেজি গমের আটার দাম ৩২/৩৬ টাকা। অথচ ক্যাসাভা আটার দাম পড়বে কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা। কাজেই বাণিজ্যিকভাবে ক্যাসাভা চাষ বেশ লাভজনক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দেশের অবহেলিত উত্তর জনপদের হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অবদান রাখতে পারে ক্যাসাভা চাষ।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.