হাঁস পালন করে কোটিপতি

পাবনা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দুলাই ইউনিয়নের চারপাশে রয়েছে গাজনার বিল। এ বিল এলাকার তিন বেকার যুবক শুধু হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। সুজানগর উপযেলার দুলাই ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামের ৩ যুবক ২০০১ সালে দুলাই উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়। হতাশা আর লজ্জায় তিন বন্ধু পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রস্ত্ততি নেয়। কিন্তু দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় তারা বিদেশ যাওয়ার সব টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। তিন বন্ধু ২০০৭ সালে ১৫ হাযার টাকা জোগাড় করে। কোন ব্যবসার পথ না পেয়ে ২০০ হাঁস কিনে লালন-পালন শুরু করে। পরিবারের লোকজনের গালমন্দ উপেক্ষা করে, কারও কথায় কান না দিয়ে হাঁসগুলো পালাক্রমে তিন বন্ধু গাজনার বিলে ছেড়ে লালন-পালন করতে থাকে। কিছুদিন পর হাঁসগুলো প্রতিদিন ১৯০টি করে ডিম দিতে থাকে। ৬ মাসের ব্যবধানে পালনের খরচ বাদে আয় করে ৮০ হাযার টাকা। এ টাকা দিয়ে তারা আরও ৮০০ হাঁস কিনে খামার সম্প্রসারণ করে। তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় আত্মবিশ্বাস। ২০০৮ সালের শেষ দিকে ১ হাযার হাঁস থেকে তাদের আয় হয় ৮ লাখ টাকা। এ থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে বিশাল হাঁস হ্যাচারি। অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকা দিয়ে আরও দুই হাযার হাঁসের বাচ্চা কেনে। বর্তমানে তাদের হ্যাচারিতে মোট ৩ হাযার হাঁস রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৮ জন বেতনভুক্ত কর্মচারী কাজ করছে। হ্যাচারি মালিকরা জানায়, কোন মহামারী রোগে আক্রান্ত না হ’লে ২০১০ সালে তারা কোটি টাকার মালিক হবে। রাজলক্ষ্মী হ্যাচারির ডিম এখন ঢাকা সহ বিভিন্ন যেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি হাঁস ৩৬৫ দিনে ৩০০টি করে ডিম দেয়। আর ৬৫ দিন বিশ্রাম নেয়। প্রতিটি ডিম খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা দরে। অর্থাৎ একেকটি হাঁস বছরে ১৮০০ টাকার ডিম দেয়। ডিম দেয়া শেষে সেই হাঁস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।

শিম চাষে বছরে আয় ১৫ কোটি টাকা

পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপযেলার ১৩টি গ্রামে প্রায় আড়াই হাযার কৃষক শিম চাষ করে তাদের ভাগ্য পাল্টে ফেলেছেন। প্রতি মৌসুমে তারা ১৫ কোটি টাকারও বেশী আয় করছেন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী শিম আবাদ হয় বলে এ এলাকা ‘শিমসাগর’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

১৯৯৬ সালে ঈশ্বরদী উপযেলার ফরিদপুর গ্রামের শাহজামাল প্রথম যশোর থেকে ইপসা ও দেশী জাতের শিমের বীজ এনে এক বিঘা জমিতে আবাদ শুরু করেন। মৌসুম শেষে তিনি খরচ বাদে লাভ করেন প্রায় ১২ হাযার টাকা। তার এই সফলতায় এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। শাহজামালের দেখাদেখি পরবর্তী বছরে আরও অনেক চাষী শিম আবাদ শুরু করেন।

উঁচু জমিতে যেখানে হলুদ, বেগুন, মরিচ আবাদ হয়, সেখানে প্রথমে শিমের চাষ শুরু হয়। এছাড়া যে জমিতে বর্ষা মৌসুমে ১ থেকে ২ ফুট পানি এবং রোপা আমন চাষ হয়- এমন জমির পাশ থেকে মাটি তুলে সারিবদ্ধভাবে ঢিবি তৈরী করে শিম চাষ করা হয়। এঁটেল মাটিতে শিম ভাল হয়। ঢিবি থেকে ঢিবির দূরত্ব তিন ফুট এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব সাড়ে ৪ থেকে ৬ ফুট। খুঁটির সারি মিলিয়ে একটি জাংলা বা মাচা তৈরী করা হয়। ফসল পরিচর্যার সুবিধার জন্য দু’সারির মাঝখানে ৩ ফুট জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। আষাঢ় মাস থেকে জমি তৈরীর কাজ শুরু হয় এবং শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের দু’মাস পর থেকে গাছে ফুল আসে। ফুল আসার ২০/২৫ দিন পর থেকে শিম তোলা শুরু হয়। উঁচু জমিতে বৈশাখের ১৫ দিন পর্যন্ত শিম সংগ্রহ করার পর সেখানে ঢেঁড়স, ধইঞ্চা, তিল, পাট চাষ করা যায়।

শিমচাষী ও কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি একর শিম চাষে সর্বমোট খরচ হয় ২৫/৩০ হাযার টাকা। গড়ে ১০ টাকা কেজি হিসাবে শিম বিক্রি হয়ে থাকে। এতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাযার টাকার শিম বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রায় ৩০/৪০ হাযার টাকা লাভ হয়। অবশ্য মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

নাটোরের বড়াইগ্রামে চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামের ড্রাগন ফল

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপযেলার নিভৃত পল্লীতে ক্যান্সার, হৃদরোগ, এসিডিটি ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করা হয়। ড্রাগন ফল ক্যাকটাস পরিবারভুক্ত। লতানো এ উদ্ভিদটিকে দেখে সবাই সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। ড্রাগন ফলের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্যে। তবে ভিয়েতনামে এ ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এছাড়া এ ফল মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ইসরাঈল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়ও চাষ করা হচ্ছে। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ড্রাগন ছাড়াও পিটায়া ও টিহায়া নামেও পরিচিত। এই ফল কাঁচা-পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। ঔষধি ও উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল খেতে খুবই সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল ও অাঁশ আছে। সারা বছর এই ফলের চারা রোপণ করা যায়। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর চাষ ভাল হয়। শীতের চার-পাঁচ মাস ছাড়া বছরের অবশিষ্ট সাত-আট মাস ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল লাল, সাদা, গোলাপি ও কালচে এই চার ধরনের হয়ে থাকে। তবে হাইলোসেরাস অনডাইটাস অর্থাৎ সাদা ফলটি বেশী পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ দু’শটি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। গাছ থেকে ফল পাওয়া যায় দুই থেকে তিন বছর পর। প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে একশ’টির মতো ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওযন হয় পাঁচশ’ থেকে আটশ’ গ্রাম। ফলটি লম্বায় ৮ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ফলের শাঁস সাদা, হলুদ, সবুজ ও লাল বর্ণের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল চাষে কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না।

 [সংকলিত]






আরও
আরও
.