উপযোগী মাটি : মাঝারি নিচু থেকে উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি সহজেই ধরে রাখা যায় অথবা জমে থাকে এমন জমি পানি কচু চাষের জন্য উপযোগী। পলি দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পানি কচু চাষের জন্য উত্তম।

জাত : লতিরাজ (উফশী) ও জয়পুরহাটের স্থানীয় জাত পানি কচুর উত্তম জাত।

রোপণের সময় : আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর)। নাবী ফসলের জন্য মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য-বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে লাগানো যায়। দক্ষিণাঞ্চলে বৎসরের যে কোন সময় লাগোনো যায়।

রোপণের দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪৫ সেমি.।

কচু রোপণের নিয়ম : কচু চাষের বেলায় বীজের হার প্রতি হেক্টর ৩৭-৩৮ হাজার লতা। পূর্ণ বয়স্ক কচুর গোঁড়া থেকে ছোট ছোট চারা উৎপন্ন হয়। এসব চারার মধ্যে সতেজ চারা পানি কচু চাষের জন্য ‘বীজ চারা’ হিসাবে ব্যবহার করতে হয়। পানি কচুর চারা কম বয়সের হ’তে হবে, ৪-৬টি পাতাসহ সহেজ সাকার বীজ চারা হিসাবে ব্যবহার করতে হবে, চারা রোপণের সময় উপরের ২/১টি পাতা বাদ দিয়ে বাকি সব পাতা ও পুরানো শিকড় কেটে ফেলতে হবে। চারা তোলার পর রোপণে দেরী হ’লে চারা ভিজামাটি ও ছায়ামুক্ত স্থানে রাখতে হবে। মাটি থকথকে কাঁদাময় করে তৈরির পর নির্ধারিত দূরত্বে ৫-৬ সেমি. গভীরে চারা রোপণ করতে হবে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : গোবর ১৫-২০ কেজি, ইউরিয়া ১৪০-১৬০ কেজি, টিএসপি ১২০-১৩০ কেজি, এমপি ১৬০-১৯০ কেজি। গোবর, টিএসপি, এমওপি সার চারা রোপণের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার ২/৩ কিস্তিতে দিতে হবে। তবে ১ম কিস্তি রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যেই প্রয়োগ করতে হবে।

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা : পানি কচুর গোঁড়ায় সব সময় পানি জমিয়ে রাখতে হবে এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। চারা বাড়তির জন্য মাঝে মাঝে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। আবার নির্দিষ্ট মাত্রায় পানি দিতে হবে। দেওয়া পানি সরানো যদি ৩/৪ বার করা যায়, তবে পানি কচুর ফাল্গুটি সঠিকভাবে লম্বা ও মোটা হয়।

গোঁড়ার চারা সরানো : কান্ডের গোঁড়ায় যে সকল চারা হবে সেগুলি তুলে ফেলতে হবে। চারা হিসাবে ব্যবহারের জন্য মাটির নিচের অংশ থেকে যেসব চারা আসবে তা থেকে ২/৩টি রেখে বাকি চারা কেটে দিতে হবে।

পোকা দমন : ছোট ও কালচে লেদাপোকা পাতা খেয়ে ফেলে। এসব পোকা প্রথমত হাত দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। সংখ্যা বেশি হ’লে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

রোগবালাই : কচুর পাতায় মড়ক রোগ হ’লে পাতার উপরে বেগুনী বা বাদামী রঙের গোলাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এসব দাগ আকারে বেড়ে একত্রিত হয়ে পাতা ঝলসে যায়। পরে তা কচু ও কন্দে আক্রমণ করে। বেশি আক্রান্ত হ’লে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিন বা ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

ফলন সংগ্রহ : চারা রোপণের ৪৫-৭৫ দিনের মধ্যেই কচুর লতি তোলা হয়। ১০-১৫ দিন পরপর লতি তোলা যায়। চারা রোপণের ৪০-১৮০ দিনের মধ্যে পানি কচু সংগ্রহ করা যায়। গাছের উপরের কয়েকটি পাতা রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলে কান্ডটি পরিষ্কার করে বাজারজাত করতে হবে।

ফলন : বিঘাপ্রতি লতি ১.৫-২ টন এবং পাতাকচু ৩-৫ টন।

মুখী কচু

মুখী কচু একটি সুস্বাদু সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষ হয়। মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়াকচু, কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মুখীর ছড়া বীজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টি গুণ : মুখী কচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এবং লৌহ থাকে।

জাত : আমাদের দেশে কচু জাতের মধ্যে বিলাসী একটি উচ্চফলনশীল জাত। বিলাসী জাতের গাছ সবুজ, খাড়া, মাঝারি লম্বা, এর মুখী খুব মসৃণ, ডিম্বাকৃতির হয়। সিদ্ধ করলে মুখী সমানভাবে সিদ্ধ হয় ও গলে যায়।

মাটি : বিলাসী জাতের মুখী কচু চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি উত্তম।

রোপণের সময় : মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন। মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ।

চারা তৈরি : মুখীর ছড়া বীজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। রোপণের জন্য মুখীর ছড়া প্রতি শতকে ২ কেজি পরিমাণ দরকার হয়।

রোপণ পদ্ধতি : উর্বর মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেঃ মিঃ গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সেঃ মিঃ। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেঃ মিঃ এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেঃ মিঃ রাখতে হয়।

বীজ বপণের গভীরতা : বীজ বপণের গভীরত হ’তে হবে ৮ থেকে ১০ সেঃ মিঃ।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : গোবর ৫০ কেজি, ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমপি ৭০০ গ্রাম। গোবর, টিএসপি এবং এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০-৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা : সার উপরি প্রয়োগের পর গাছের গোঁড়ার মাটি টেনে দিতে হবে। জমি আগাছা মুক্ত করা, খরার সময় প্রয়োজনে সেচ এবং অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষের সময় মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ : মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। রোপণের পর থেকে ৬-৭ মাস সময় লাগে।

\ সংকলিত \







আরও
আরও
.