পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব ।
বিবাহ পরবর্তী কিছু কু-প্রথা :
১. বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর বরকে দাড় করিয়ে সালাম দেওয়ানোর প্রথা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত নয়।
২. বর ও কনের মুরুববীদের কদমবুসি করা একটি কু-প্রথা। কেবল বিয়ে নয় যে কোন সময় কদমবুসি করা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত নয়। সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে হিন্দুয়ানী প্রণামকে প্রথা হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনদের জন্য কাম্য নয়।
৩. বরকে কনের আত্মীয়-স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার নাম করে মাহরাম ও গায়ের মাহরাম সকল মহিলাদের সাথে পর্দা বিহীন সরাসরি পরিচয় করিয়ে দেয়া শরী‘আত বিরোধী কাজ।
৪. নববধূকে পুরুষ-মহিলা সকলে দেখা ও উপহার-উপঢৌকন দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়।
৫. বরের সাথে প্রাপ্ত বয়স্কা শ্যালিকাদের ও কনের ভাবীদের হাসি-তামাশা করা হারাম। তেমনি নববধূকে বরের বাড়ীতে নিয়ে আসার পর দেবরদের ঠাট্টা-তামাশা ও নানা অশালীন আচরণও হারাম।
৬. সমাজে বিবাহোত্তর ওয়ালীমা না করে বিবাহের অনেক দিন পরে এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সন্তান জন্মের পরও বউ তুলে আনার রেওয়াজ দেখা যায়। আর এ উপলক্ষে কনের পিতার বাড়ীতে আড়ম্বরপূর্ণ ভোজের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। এটা অপচয় ও বিদ‘আতী অনুষ্ঠান। শরী‘আতে এরূপ অনুষ্ঠানের কোন নযীর পাওয়া যায় না।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য :
১. পরিবারে ইসলামী অনুশাসন বজায় রাখা :
পরিবার ও পারিবারিক জীবনে ইসলামী অনুশাসন না থাকলে সদস্যদের মধ্যে প্রেম-ভালবাসা, মায়া-মমতা এগুলো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। বরং দ্বন্দ্ব-কলহ, সন্দেহ-সংশয়, অমিল-অশান্তি বাসা বেঁধে পারিবারিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। বিশেষ করে বর্তমান স্যাটেলাইটের যুগে অপসংস্কৃতির সয়লাবে আমাদের পারিবারিক জীবন হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। স্যাটেলাইটে প্রদর্শিত উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা আমাদের পারিবারিক ও সমাজ জীবনকে কলুষিত করে তুলছে। যেনা-ব্যভিচার, গুম-হত্যা, ছিনতাই-রাহাজানি, ধর্ষণ-অপহরণ ইত্যাদি এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদেও এসেছে উলঙ্গপনার ছাপ। বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড, লিভ টুগেদার সংস্কৃতি এখন আমাদের দেশেও চালু হ’তে শুরু করেছে। এগুলো বিজাতীয় কালচার। এর কারণে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। সেকারণ আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে পরিবার থেকেই সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, পরস্পরে শ্রদ্ধাবোধ, আদব-কায়েদা ইত্যাদি শিক্ষা দিতে হবে। সাত বছর বয়সে ছালাতের শিক্ষা, দশ বছর বয়সে ছালাত না পড়লে শাস্তি দেওয়া[1], কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদির প্রতি অধিক তাকীদ দিতে হবে।
পরিবারকে আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ) বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,وَلاَ تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ أَدَباً- ‘তাদের থেকে তোমার শিষ্টাচারের লাঠিকে উঠিয়ে নিও না’।[2]
২. হাসিমুখে থাকা ও উত্তম কথা বলা :
হাসিমুখে থাকা ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত।[3]
তাই গোমড়ামুখে থাকা সমীচীন নয়। আর উত্তম কথা বলাও ছাদাক্বা। এজন্য স্ত্রীর
সাথে সর্বদা উত্তম কথা বলা উচিত। এতে পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَلاَ تَحْقِرَنَّ شَيْئًا مِنَ الْمَعْرُوْفِ وَأَنْ
تُكَلِّمَ أَخَاكَ وَأَنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُكَ إِنَّ ذَلِكَ
مِنَ الْمَعْرُوْفِ- ‘ভালো কাজে অবজ্ঞা প্রদর্শন করো না। তোমার ভাইয়ের সাথে
হাসিমুখে কথা বলা নিঃসন্দেহে ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত।[4] অন্যত্র তিনি বলেন,وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ ‘উত্তম কথা ছাদাক্বা’।[5]
৩. উত্তম ব্যবহার করা :
উত্তম ব্যবহার দিয়ে অন্যকে জয় করা যায়, তার হৃদয়ে আসন করে নেওয়া যায়। এমনকি শত্রুকেও বশে আনা যায়। আল্লাহ বলেন,وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ- ‘আর ভাল ও মন্দ সমান হ’তে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৪)। তাই স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। কেননা সে তার সকল স্বজন ছেড়ে কেবল স্বামীর কাছে আসে। আল্লাহ বলেন,وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئاً وَيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْراً كَثِيْراً- ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তোমরা তাদের অপসন্দ কর, (তবে হ’তে পারে) তোমরা এমন বস্ত্তকে অপসন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভুত কল্যাণ রেখেছেন’ (নিসা ৪/১৯)।
উক্ত
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,طيِّبُوْا أَقْوَالَكُمْ لَهُنَّ،
وحَسّنُوْا أَفْعَالَكُمْ وَهَيْئَاتِكُمْ بِحَسَبِ قُدْرَتِكُمْ، كَمَا
تُحِبُّ ذَلِكَ مِنْهَا، ‘তোমরা তাদের সাথে সুন্দর কথা বল। তাদের জন্য
সাধ্যমত তোমাদের আচার ও আকৃতিকে সুন্দর কর, যেমন তোমরা তাদের থেকে পসন্দ
কর’।[6]
স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ ও ভাল
ধারণা পোষণের জন্য রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদেরকে উপদেশ দিতেন। তিনি বলেন,لاَ
يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا
آخَرَ. ‘কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিনা নারীকে শত্রু না ভাবে। কারণ নারীর
কোন আচরণ অপসন্দ হ’লে কোন আচরণ পসন্দ হবেই’।[7] তিনি আরো বলেন,هِيَ لَكَ عَلَى أَنْ تُحْسِنَ صُحْبَتَهَا ‘সে তোমার নিকটে তোমার উত্তম সাহচর্য পাওয়ার অধিকারী’।[8]
৪. স্ত্রীর সাথে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা :
অবসরে স্ত্রীর সাথে একান্তে বসে কিছু গল্প-গুজব করা, তার মনের কথা জানা-বুঝা, তার কোন চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য যরূরী। আয়েশা (রাঃ) বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا صَلَّى {سُنَّةَ الْفَجْرِ} فَإِنْ كُنْتُ مُسْتَيْقِظَةً حَدَّثَنِىْ وَإِلاَّ اضْطَجَعَ حَتَّى يُؤْذَنَ بِالصَّلاَةِ. ‘নবী করীম (ছাঃ) যখন (ফজরের সুন্নাত) ছালাত আদায় করতেন, তখন আমি জাগ্রত হ’লে তিনি আমার সাথে কথা বলতেন। অন্যথা তিনি শয্যাগ্রহণ করতেন এবং ফজরের ছালাতের জন্য মুওয়াযযিন না ডাকা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন’।[9] অন্যত্র তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَضَى صَلاَتَهُ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ نَظَرَ فَإِنْ كُنْتُ مُسْتَيْقِظَةً حَدَّثَنِى وَإِنْ كُنْتُ نَائِمَةً أَيْقَظَنِى وَصَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْمُؤَذِّنُ فَيُؤْذِنَهُ بِصَلاَةِ الصُّبْحِ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ثُمَّ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ.
‘রাসূল (ছাঃ) যখন
শেষ রাতে ছালাত শেষ করতেন, তখন লক্ষ্য করতেন। আমি জেগে থাকলে আমার সাথে কথা
বলতেন। আর ঘুমিয়ে থাকলে আমাকে জাগাতেন এবং দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে শুয়ে
পড়তেন। অবশেষে মুওয়াযযিন এসে যখন ফজরের ছালাতের জন্য তাঁকে ডাকতেন, তখন
তিনি উঠে হালকা করে দু’রাক‘আত ছালাত পড়ে ফরয ছালাতের জন্য বের হয়ে যেতেন’।[10]
৫. স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত ও সুবাসিত হওয়া :
স্বামীদের
করণীয় হচ্ছে নিজেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা। কেননা অপরিচ্ছন্ন
থাকা ও অপরিষ্কার পোশাক পরিধান করা স্ত্রীরা পসন্দ করে না। ইবনু আববাস
(রাঃ) বলেন,إني أحب أن أتزيَّن لامرأتي، كما أحب أن تتزيَّن لي؛ ‘আমি আমার
স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত হ’তে ঐরূপ পসন্দ করি যেভাবে আমার জন্য তার সুসজ্জিত
হওয়া পসন্দ করি’।[11]
৬. বাড়ীতে প্রবেশ করে স্ত্রীকে সালাম দেওয়া :
সালাম
বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক মহববত বৃদ্ধি পায়। সেজন্য বাড়ী থেকে বের হ’তে ও
বাড়ীতে প্রবেশকালে বাড়ীর অধিবাসী বিশেষত স্ত্রীকে সালাম দিতে হবে। আনাস
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,يَا بُنَىَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى
أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُوْنُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ،
‘হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের নিকটে যাও, তখন সালাম দিও। তাতে
তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে’।[12] তিনি আরো বলেন,ثَلاثَةٌ
كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ إِنْ عَاشَ رُزِقَ وَكُفِيَ وَإِنْ مَاتَ
أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ مَنْ دَخَلَ بَيْتَهُ فَسَلَّمَ فَهُوَ
ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى
اللهِ وَمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْل الله فَهُوَ ضَامِن على الله. ‘তিন
ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহ’লে রিযক প্রাপ্ত হয়
এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহ’লে জান্নাতে প্রবেশ করে। যে
ব্যক্তি বাড়ীতে প্রবেশ করে বাড়ীর লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিম্মায়।
যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি
আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায়’।[13]
৭. স্ত্রীর পরিবারকে সম্মান করা :
স্ত্রীর পরিবারের লোকজনকে সম্মান করা স্বামীর জন্য যরূরী কর্তব্য। কেননা এতে তার মধ্যে স্বামীর প্রতি মহববত-ভালবাসা, সম্প্রীতি-সদ্ভাব বৃদ্ধি পায়। ফলে সে স্বামীর পরিবারের যাবতীয় কাজ যেমন সুচারুরূপে ও আন্তরিকতার সাথে করে থাকে, তেমনি তাদের মাঝে মনোমালিন্য ও ভুল বোঝাবুঝির পথ বন্ধ হ’তে সহায়তা করে।
৮. স্ত্রী অসুস্থ হ’লে তার সেবা-শুশ্রূষা করা :
স্ত্রী
অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হ’লে সাধ্যমত তার সেবা-শুশ্রূষা করা স্বামীর
কর্তব্য। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওছমান (রাঃ) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন।
কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবী
করীম (ছাঃ) তাঁকে বললেন,إِنَّ لَكَ أَجْرَ رَجُلٍ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا
وَسَهْمَهُ. ‘বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব ও (গনীমতের) অংশ তুমি
পাবে’।[14]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)
তাঁর কোন এক স্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চান, ডান হাত তাঁর শরীরে
বুলিয়ে দেন এবং বলেন,اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ
وَأَنْتَ الشَّافِى، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ
سَقَمًا ‘হে আল্লাহ! মানুষের রব, রোগ দূর করে দাও, তাকে আরোগ্য দান কর।
তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতীত কোন আরোগ্য নেই। যা রোগকে ধোঁকা
দেয় না’।[15]
মানুষ অসুস্থ হ’লে সে আপনজনের সান্নিধ্য ও সাহচর্য কামনা করে। তাই স্ত্রীর অসুস্থতায় সাধ্যমত তার পাশে থাকা, তার সেবা করা এবং তার জন্য দো‘আ করা স্বামীর জন্য করণীয়।
৯. স্ত্রীকে সহযোগিতা করা :
স্ত্রীকে
পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা স্বামীর জন্য একান্ত করণীয়। বিশেষত সে অসুস্থ
হ’লে বা তার পক্ষে কোন কাজ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লে তাকে সাধ্যমত সহযোগিতা করা
যরূরী। আয়েশা (রাঃ) বলেন,كَانَ يَكُوْنُ فِىْ مِهْنَةِ أَهْلِهِ تَعْنِى
خِدْمَةَ أَهْلِهِ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ
‘তিনি পরিবারের কাজ করতেন, যখন ছালাতের সময় হ’ত তখন তিনি ছালাতের জন্য বের
হয়ে যেতেন’।[16]
আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন,كَانَ
بَشَراً مِنَ الْبَشَرِ يَفْلِى ثَوْبَهُ وَيَحْلُبُ شَاتَهُ وَيَخْدُمُ
نَفْسَهُ ‘তিনি মানুষের মধ্যেকার একজন মানুষ ছিলেন। তিনি স্বীয় কাপড় সেলাই
করতেন, বকরী দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজে করতেন’।[17] অন্যত্র আয়েশা
(রাঃ) বলেন,كَانَ يَخِيْطُ ثَوْبَهُ وَيَخْصِفُ نَعْلَهُ وَيَعْمَلُ مَا
يَعْمَلُ الرِّجَالُ فِىْ بُيُوْتِهِمْ. ‘তিনি নিজের কাপড় সেলাই করতেন,
স্বীয় জুতা ঠিক করতেন এবং এবং অন্যান্য পুরুষের ন্যায় বাড়ীর কাজ করতেন’।[18]
১০. স্ত্রীর ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেওয়া ও তার থেকে প্রাপ্ত কষ্টে ধৈর্য ধারণ করা :
স্ত্রীদের
সাথে ভাল আচরণ করা প্রত্যেক স্বামীর জন্য করণীয়। তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি
ক্ষমা করে দেওয়া এবং তারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করা কর্তব্য। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,لاََ يَفْرَكُ مُؤْمِنٌ مُوْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا
رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ. ‘কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিনা নারীকে শত্রু না
ভাবে। কারণ নারীর কোন আচরণ অপসন্দ হ’লে কোন আচরণ পসন্দ হবেই’।[19] তিনি আরো
বলেন,إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلْعٍ وَإِنَّكَ إِنْ تُرِدْ
إِقَامَةَ الضِّلْعِ تَكْسِرْهَا فَدَارِهَا تَعِشْ بِهَا- ‘নিশ্চয়ই
মহিলাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড্ডি থেকে। যদি তুমি তাকে সোজা করতে
চাও তাহ’লে তাকে ভেঙ্গে ফেলবে। সুতরাং তার সাথে উত্তম আচরণ কর ও তার সাথে
বসবাস কর’।[20]
অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ كَانَ
يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَإِذَا شَهِدَ أَمْرًا
فَلْيَتَكَلَّمْ بِخَيْرٍ أَوْ لِيَسْكُتْ وَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ
فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَىْءٍ فِى
الضِّلَعِ أَعْلاَهُ إِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ
لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ اسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا- ‘যে ব্যক্তি
আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যখন কোন বিষয় প্রত্যক্ষ করবে তখন
যেন উত্তম কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে। আর নারীদের প্রতি সদুপদেশ প্রদান কর।
কেননা পাঁজরের একটি হাড় দিয়ে নারী সৃজিত হয়েছে এবং পাঁজরের সর্বাধিক বাঁকা
হ’ল তার উপরের অংশ। তুমি তাকে সোজা করতে গেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে
স্বীয় অবস্থায় রাখলে তা সদা বাঁকা থেকে যাবে। সুতরাং নারীদের প্রতি সদুপদেশ
দান কর’।[21]
১১. স্ত্রীর প্রতি উত্তম ধারণা রাখা :
অনেকে
স্ত্রীকে অযথা সন্দেহ করে থাকে। ফলে তাদের মাঝে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-বিবাদের
সৃষ্টি হয়। তাই সন্দেহ করা ঠিক নয়। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোন কোন অনুমান
পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ،
فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ ‘তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক।
কেননা ধারণা করা অধিক মিথ্যা কথা’।[22]
স্ত্রীদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা মুমিনদের জন্য অবশ্য করণীয়। যেমন আল্লাহ বলেন,لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوْهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا- ‘যখন তোমরা এরূপ অপবাদ শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও নারীগণ কেন তাদের নিজেদের মানুষদের সম্পর্কে উত্তম ধারণা পোষণ করলে না’? (নূর ২৪/১২)।
১২. স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা :
স্বামীর
উপরে কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর সকল চাহিদা পূরণ করা। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ
حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا- ‘তোমার উপর তোমার শরীরের হক
আছে; তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে এবং তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে’।[23]
আবুদ দারদার হাদীছে আছে,إِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَلِرَبِّكَ
عَلَيْكَ حَقًّا وَلِضَيْفِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لأَهْلِكَ عَلَيْكَ
حَقًّا فَأَعْطِ كُلَّ ذِىْ حَقٍّ حَقَّهُ- ‘তোমার উপর তোমার দেহের হক আছে
এবং তোমার রবের হক আছে, মেহমানের হক আছে এবং তোমার পরিবারের হক আছে। অতএব
প্রত্যেক হাকদারকে তার হক প্রদান কর’।[24]
১৩. স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা ও তাকে গুরুত্ব দেওয়া :
স্বামী-স্ত্রী
দু’জনের মাধ্যমে একটি সুখী-সুন্দর পরিবার গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে কারো অবদান
কম নয়। কাউকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ স্বামী বাইরের কাজ করে আর
স্ত্রী বাড়ীর ভিতরের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাই পরিবারের যে কোন কাজে তার
সাথে পরামর্শ করা ও সঠিক হ’লে সে পরামর্শ মূল্যায়ন করা উচিত। আল্লাহ বলেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ‘আর যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অহী নাযিলের পরে খাদীজা (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করেন[25] এবং হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর পরামর্শ গ্রহণ করেন।[26]
১৪. স্ত্রীকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেওয়া :
স্বামীর অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে স্বীয় স্ত্রীকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেওয়া। যার মাধ্যমে তাদের উভয়ের ইহকালীন ও পরকালীন জীবন সুন্দর ও কল্যাণময় হবে। রাসূল (ছাঃ) মালেক বিন হুয়াইরিছ ও তার সাথীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ارْجِعُوْا إِلَى أَهْلِيْكُمْ فَأَقِيْمُوْا فِيْهِمْ وَعَلِّمُوْهُمْ وَمُرُوْهُمْ- ‘তোমরা তোমাদের পরিবারের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদেরকে (দ্বীন) শিক্ষা দাও এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও’।[27] সুতরাং স্ত্রীকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়, ইসলাম ও ঈমানের রুকনসমূহ, ইবাদতের বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতি ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া যরূরী। নিজে শিক্ষা দিতে না পারলে যেখানে এসব শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া বা যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
১৫. স্ত্রীকে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া :
স্ত্রীকে
তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ
দেওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে সাথে নিয়ে যাওয়া বা মাহরাম
ব্যক্তিকে সাথে দিয়ে পাঠাতে হবে। ইফকের ঘটনাকালে আয়েশা (রাঃ) অসুস্থ হ’লে
তিনি পিতার বাড়ীতে গমনের জন্য রাসূলের কাছে অনুমতি চান। রাসূল (ছাঃ) তাকে
অনুমতি দিলে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান।[28]
১৬. স্ত্রীকে দ্বীনের ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া :
প্রত্যেক
স্বামীর জন্য কর্তব্য হ’ল স্বীয় স্ত্রীকে দ্বীনী কাজের নির্দেশ দেওয়া।
যাতে তারা তা যথাসাধ্য পালন করে। আল্লাহ বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ
بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ
দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক’ (ত্ব-হা ২০/১৩২)। রাসূল (ছাঃ)
স্বীয় স্ত্রীদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে তথা ইবাদতের নির্দেশ দিতেন। উম্মু
সালামা (রাঃ) বলেন, এক রাত্রে রাসূল (ছাঃ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় জাগ্রত
হয়ে বললেন,سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْخَزَائِنِ
وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الْفِتَنِ، مَنْ يُوْقِظُ صَوَاحِبَ الْحُجُرَاتِ،
يُرِيدُ أَزْوَاجَهُ لِكَىْ يُصَلِّيْنَ، رُبَّ كَاسِيَةٍ فِى الدُّنْيَا،
عَارِيَةٍ فِى الآخِرَةِ- ‘সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ কতইনা ধনভান্ডার অবতীর্ণ
করেছেন এবং কতইনা ফিৎনা নাযিল হয়েছে! কে আছে যে হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে
দেবে? যেন তারা ছালাত আদায় করে। এই বলে তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য
করেছিলেন। তিনি আরো বললেন, দুনিয়ার বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে উলঙ্গ
থাকবে’।[29]
১৭. বাড়ীতে ব্যতীত অন্যত্র স্ত্রীকে ছেড়ে না রাখা :
অনেকে স্ত্রীকে বিভিন্ন কারণে অন্যত্র রাখে। কেউবা স্ত্রীর উপরে রাগ করে তাকে তার পিতার বাড়ীতে ফেলে রাখে। এটা উচিত নয়। বরং তাকে শিক্ষার জন্য বিছানা পৃথক করে রাখার প্রয়োজন হ’লে সেটা নিজ বাড়ীতেই হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَلاَ تَهْجُرْ إِلاَّ فِى الْبَيْتِ ‘আর তাকে বাড়ীতে ছাড়া অন্যত্র ত্যাগ করবে না’।[30] অর্থাৎ পৃথক রাখতে হ’লে ঘরের মধ্যেই রাখবে।
১৮. স্ত্রীদের মাঝে ন্যায়বিচার করা :
কারো
একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সকলের সাথে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে আচরণ করা
স্বামীর জন্য অতীব যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ
اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍ عَنْ يَمِيْنِ الرَّحْمَنِ عَزَّ
وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِيْنٌ الَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِىْ
حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيْهِمْ وَمَا وَلُوْا- ‘আল্লাহর নিকট যারা ন্যায়পরায়ণ
তারা দয়াময়ের ডান পার্শ্বে জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয়
হস্তই ডান। (ঐ ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে এবং তার
কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ’।[31] তিনি আরো
বলেন,إِذَا كَانَ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ
بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ سَاقِطٌ ‘যে ব্যক্তির
নিকট দু’জন স্ত্রী আছে সে যদি তাদের মধ্যে সমতা না রাখে তবে ক্বিয়ামতের দিন
সে লোক তার দেহের এক পার্শ্ব ভাঙ্গা অবস্থায় উপস্থিত হবে’।[32] রাসূল
(ছাঃ) আরো বলেন,مَنْ كَانَ لَهُ امْرَأَتَانِ يَمِيْلُ لإِحْدَاهُمَا عَلَى
الأُخْرَى جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَدُ شِقَّيْهِ مَائِلٌ- ‘যার
দু’জন স্ত্রী আছে, আর সে তাদের একজনের চেয়ে অপরজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে,
সে ক্বিয়ামতের দিন তার (দেহের) এক পার্শ্ব পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে’।[33]
১৯. উপদেশ দেওয়া :
বিভিন্ন
সময়ে স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া স্বামীর অন্যতম কর্তব্য। বিশেষত তার কোন
ভুল-ত্রুটি হ’লে তা সংশোধনের উপদেশ দেওয়া যরূরী। বিদায় হজ্জের দিন রাসূল
(ছাঃ) বলেন,اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عِنْدَكُمْ
عَوَانٍ. لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئًا غَيْرَ ذَلِكَ إِلاَّ أَنْ
يَأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ- ‘স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের
নছীহত গ্রহণ কর। কেননা তারা তোমাদের কাছে বন্দী। উত্তম আচরণ ছাড়া তাদের উপর
তোমাদের কোন অধিকার নেই। তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়’।[34]
২০. মারধর না করা :
স্ত্রীদের
বিনা কারণে বা তুচ্ছ কোন ঘটনায় মারধর করা উচিত নয়। বরং তার ত্রুটি বুঝিয়ে
দিয়ে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। আর মারধর করা রাসূলের আদর্শ নয়। নবী
করীম (ছাঃ) কখনো তাঁর স্ত্রীগণকে প্রহার করেননি। আয়েশা (রাঃ) বলেন,مَا
ضَرَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلاَ
امْرَأَةً وَلاَ خَادِمًا- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে কোন কিছুকে প্রহার
করেননি। না তাঁর কোন স্ত্রীকে, না কোন খাদেমকে’।[35] তিনি স্ত্রীদের সাথে
ভাল ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছেন এবং তাদেরকে অস্বাভাবাবিক প্রহার করতে নিষেধ
করেছেন। তিনি বলেন,يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ يَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ
الْعَبْدِ، فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ ‘তোমাদের মধ্যে
এমন লোক আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারপিট করে। অতঃপর সম্ভবত ঐ দিন
শেষেই সে আবার তার শয্যাসঙ্গী হয়’।[36] অন্যত্র তিনি বলেন,لاَ يَجْلِدُ
أَحَدُكُمْ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ ثُمَّ يُجَامِعُهَا فِي آخِرِ
الْيَوْمِ- ‘তোমাদের কেউ যেন নিজের স্ত্রীকে দাসী-বাঁদীর ন্যায় না পিটায়।
অতঃপর দিন শেষে তার সাথে শয্যা গ্রহণ করে’।[37] তিনি আরো বলেন, ‘যারা এভাবে স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি নয়’।[38]
[চলবে]
[1]. আবু দাউদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৬৮, সনদ ছহীহ।
[2]. আহমাদ, মিশকাত হা/৬১; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৭০; ইওরয়া হা/২০২৬, সনদ ছহীহ।
[3]. তিরমিযী হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১৯১০, সনদ ছহীহ।
[4]. আবু দাউদ হা/৪০৮৪; মিশকাত হা/১৯১৮, সনদ ছহীহ।
[5]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।
[6]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ২/২৪২পৃঃ।
[7]. মুসলিম হা/১৪৬৯; মিশকাত হা/৩২৪০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[8]. তাবারানী, ছহীহাহ হা/১৬৬।
[9]. বুখারী হা/১১৬১।
[10]. আবু দাউদ হা/১২৬২; মিশকাত হা/১১৮৯, সনদ ছহীহ।
[11]. তাফসীর কুরতুবী, ৫/৯৭।
[12]. তিরমিযী হা/২৬৯৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬০৮; তারাজু‘আত হা/২৫৯; ইরওয়া হা/২০৪১, সনদ হাসান।
[13]. ছহীহ ইবুন হিববান, হা/৪৯৯; আবু দাউদ হা/২৪৯৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২১, সনদ ছহীহ।
[14]. বুখারী হা/৩১৩০, ৩৬৯৮।
[15]. বুখারী হা/৫৭৪৩; মুসিলম হা/২১৯১।
[16]. বুখারী হা/৬৭৬।
[17]. আদাবুল মুফরাদ হা/৫৪১; তিরমিযী হা/৩৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৯৯৬।
[18]. আহমাদ হা/২৪৩৮২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৯৩৭।
[19]. মুসলিম হা/১৪৬৯; মিশকাত হা/৩২৪০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[20]. আহমাদ হা/২০১০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৪৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯২৬।
[21]. মুসলিম হা/১৪৬৮।
[22]. বুখারী হা/৫১৪৩, ৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩; মিশকাত হা/৫০২৮।
[23]. বুখারী হা/১৯৭৫, ৫১৯৯; মিশকাত হা/২০৫৪।
[24]. বুখারী হা/৬১৩৯; তিরমিযী হা/২৪১৩।
[25]. বুখারী হা/৪৯৫৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়, ‘অহি-র সূচনা’ অনুচ্ছেদ।
[26]. বুখারী হা/২৭৩২।
[27]. বুখারী হা/৬৩১; মুসলিম হা/৬৭৪।
[28]. বুখারী হা/২৬৬১, ৪১৪১; মুসরিম হা/২৭৭০; আহমাদ হা/২৫৬৬৪।
[29]. বুখারী হা/৭০৬৯।
[30]. আবু দাউদ হা/২১৪২; মিশকাত হা/৩২৫৯, সনদ হাসান ছহীহ।
[31]. মুসলিম হা/১৮২৭; নাসাঈ হা/৫৩৭৯; মিশকাত হা/৩৬৯০।
[32]. তিরমিযী হা/১১৪১; ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৯; মিশকাত হা/৩২৩৬ সনদ ছহীহ।
[33]. নাসাঈ হা/৩৯৪২; ইরওয়া হা/২০১৭, সনদ ছহীহ।
[34]. তিরমিযী হা/১১৬৩, ৩০৮৭; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮০।
[35]. মুসলিম হা/২৩২৮; ইবনু মাজাহ হা/১৯৮৪।
[36]. বুখারী হা/৪৯৪২; মুসলিম হা/২৮৫৫; তিরমিযী হা/৩৩৪৩; মিশকাত হা/২৬৭৬।
[37]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪২ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[38]. আবু দাউদ, হা/২১৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৬০; মিশকাত হা/৩২৬১, সনদ ছহীহ।