পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব ।

২. অভিভাবকের অনুমতি :

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি অতীব যরূরী। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ হয় না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ ‘অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই’।[1] তিনি আরো বলেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ نُكِحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَلَهَا الْمَهْرُ بِمَا اسْتَحَلَّ مِنْ فَرْجِهَا فَإِنِ اشْتَجَرُوْا فَالسُّلْطَانُ وَلِىُّ مَنْ لاَ وَلِىَّ لَهُ- ‘যদি কোন নারী তার ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, তবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। এইরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ পুরুষ মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি ওলীগণ বিবাদ করেন, তবে যার ওলী নেই তার ওলী দেশের শাসক’।[2]

সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্ব পিতামাতা বা অভিভাবকের। সেই সাথে তাদেরকে সুশিক্ষা দান ও আদব-কায়েদা শিক্ষা দেওয়া পিতামাতা ও অভিভাবকের দায়িত্ব। সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হ’লে যথাযোগ্য স্থানে তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা পিতামাতা বা অভিভাবকের অন্যতম দায়িত্ব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শারঈ অভিভাবক হ’ল পিতা, দাদা, ভাই, চাচা ইত্যাদি। তবে পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ ওলী বা অভিভাবক হ’তে পারবে না। আবার কোন মহিলাও কারো ওলী হ’তে পারে না।[3] রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ وَلاَ تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ نَفْسَهَا فَإِنَّ الزَّانِيَةَ هِىَ الَّتِى تُزَوِّجُ نَفْسَهَا- ‘কোন নারী কোন নারীর বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজে বিবাহ করতে পারে না। কোন নারী নিজেই বিবাহ করলে সে ব্যভিচারী বলে গণ্য হবে’।[4]

৩. পাত্র-পাত্রীর সম্মতি :

বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে হ’ল মূল। যারা সারা জীবন একসাথে ঘর-সংসার করবে। সেকারণ বিবাহের পূর্বে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদেরকে বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوْا النِّسَاءَ كَرْهاً ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে’ (নিসা ৪/১৯)

নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا؟ قَالَ أَنْ تَسْكُتَ. ‘বিবাহিতা মেয়েকে তার পরামর্শ ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, তার অনুমতি কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি’।[5] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,وَالْبِكْرُ تُسْتَأْذَنُ فِىْ نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صُمَاتُهَا ‘যুবতী-কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে পিতাকে তার অনুমতি নিতে হবে। আর তার অনুমতি হচ্ছে চুপ থাকা’।[6]

বিবাহের প্রস্তাব শুনার পর কুমারী মেয়ে চুপ থাকলে তার সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু অকুমারী মহিলার ক্ষেত্রে সরাসরি সম্মতি নিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অকুমারী মেয়েরা নিজেদের ব্যাপারে ওলীর থেকে অধিক হকদার’।[7] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা মহিলার সম্মতিবিহীন বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেন।[8]

এছাড়াও কোন মেয়েকে অভিভাবক তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দিলে সে ইচ্ছা করলে বিবাহ বহাল রাখতে পারে, ইচ্ছা করলে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে।[9]

৪. পাত্র-পাত্রীর সমতার দিকে লক্ষ্য রাখা :

দ্বীনদারী, পরহেযগারিতা, বংশমর্যাদা ও আর্থিক দিক সহ বিভিন্ন দিকে সমতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা যরূরী। বিশেষত দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে সমতা না থাকলে পরিবারে অশান্তি বিরাজ করে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَخَيَّرُوْا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوْا إِلَيْهِمْ- ‘তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফূ) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো’।[10] তবে বিবাহে সমতা হবে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আল্লামা নাছীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,ولكن يجب أن نعلم أن الكفاءة إنما هي في الدين والخلق فقط ‘তবে জানা আবশ্যক যে, সমতা হচ্ছে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে’।[11]

৫. বিবাহের প্রস্তাব :

বর অথবা কনে যে কোন এক পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে পারে। ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, যখন ওমর (রাঃ)-এর কন্যা হাফছাহ (রাঃ) খুনায়স ইবনু হুযাইফা সাহমীর মৃত্যুতে বিধবা হ’লেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একজন ছাহাবী ছিলেন এবং মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি ওছমান বিন আফফান (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং হাফছাহকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিলাম। তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। তারপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমার কাছে এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, এখন আমি যেন তাকে বিবাহ না করি। ওমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আবুবকর (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, যদি আপনি চান তাহ’লে আপনার সঙ্গে ওমরের কন্যা হাফছাহকে বিবাহ দেই। আবুবকর (রাঃ) নীরব থাকলেন, প্রতি-উত্তরে আমাকে কিছুই বললেন না। এতে আমি ওছমান (রাঃ)-এর চেয়ে অধিক অসন্তুষ্ট হ’লাম। এরপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূল (ছাঃ) হাফছাহকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন এবং আমি তাঁর সঙ্গে হাফছাহকে বিবাহ দিলাম’।[12] অন্য এক হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একজন মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে কি আপনার প্রয়োজন আছে’?[13]

বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই মহিলাকে অন্য কেউ বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে কি-না? কেউ প্রস্তাব দিয়ে থাকলে নতুন করে প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নবী করীম (ছাঃ) (ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে) একজনে দর-দাম করলে অন্যকে দরদাম করতে নিষেধ করেছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবক তার প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয় বা তাকে অনুমতি দেয়’।[14] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,وَلاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ، حَتَّى يَنْكِحَ أَوْ يَتْرُكَ. ‘কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়, যতক্ষণ না সে বিবাহ করে অথবা ছেড়ে দেয়’।[15]

৬. পাত্র-পাত্রী দর্শন :

বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী উভয়ে একে অপরকে দেখে নেওয়া উচিত। যাতে পরস্পরের মধ্যে মহববত তৈরী হয়। মুগীরা বিন শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,هَلْ نَظَرْتَ إلَيْهَا؟ قُلْتُ لاَ، قَالَ فَانْظُرْ إلَيْهَا، فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا. ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে’।[16]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনছারী একটি মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন,هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِىْ عُيُوْنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا- ‘তাকে কি দেখেছ? কেননা আনছারদের চোখে দোষ থাকে’।[17]

আমাদের সমাজে পাত্রী দর্শনের উদ্দেশ্যে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ছোট-খাট একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখে। এরপর সকলে মিলে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ছোট-বড় একটি ইন্টারভিউ নিয়ে ফেলে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাসি-ঠাট্টা করতেও ছাড়ে না। সমাজে পাত্রী দেখার এই প্রচলিত পদ্ধতি শরী‘আত সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের যেনার শামিল। অনেক সময় পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় বিষয়কে না দেখে তার রূপ-লাবণ্য, বংশ ও সম্পদ দেখেই বিবাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম পাত্রের উচিত রূপ, বংশ ও সম্পদের চেয়ে পাত্রীর দ্বীনদারীকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। পরিপূর্ণ দ্বীনদারী পাওয়া গেলে অন্য গুণ কম হ’লেও দ্বীনদার মহিলাকেই বিবাহ করা উচিত, তাহ’লে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে।

অনেক সময় পাত্রী দেখার নাম করে ছেলে-মেয়ের নির্জনে সময় কাটানো, পার্কে বসে আলাপ করা, হবু বধূকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، وَلاَ تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ‘কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে’।[18] অন্যত্র তিনি বলেন, لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ ‘যখন কোন পুরুষ-মহিলা নির্জনে একত্রিত হয়, তখন তৃতীয়জন হিসাবে সেখানে শয়তান উপস্থিত হয়’।[19]

৭. সুন্নাতী পদ্ধতিতে বিবাহ সম্পন্ন করা :

পরিবার ও পারিবারিক জীবনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। বিবাহকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শরী‘আতসিদ্ধ দাম্পত্য জীবনে জান্নাতের সুখ-শান্তির ছোয়া মেলে। তাই বিবাহ অনুষ্ঠান সুন্নাতী তরীকায় হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে অধিকাংশ বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা, বেপর্দা, অশ্লীলতা, অপচয়, যৌতুক ইত্যাদি শরী‘আত গর্হিত কর্ম দেখা যায়। এতে বিবাহ নামক ইবাদতের ছওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে ও সংশ্লিষ্ট সকলে। আর তাদের দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় ঝগড়া-বিবাদ, দ্বনদ্ব-কলহ ও অশান্তি। অথচ বিবাহের মাধ্যমে ঈমানের পূর্ণতা অর্জিত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَزَوَّجَ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الإِيْمَانِ فَلْيَتَّقِ الله في النِّصْفِ الْبَاقِي ‘যে ব্যক্তি বিবাহ করল, সে অর্ধেক ঈমান পূর্ণ করল। অতএব বাকী অর্ধেকে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’।[20]

বিবাহ পড়ানোর শারঈ পদ্ধতি হ’ল প্রথমে একজন বিবাহের খুৎবা পাঠ করবেন।[21] এরপর মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। এসময় দু’জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন। তখন বর সরবে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বলবেন। এরূপ তিনবার বলা উত্তম।[22] শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের নিকট থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন। বর বোবা হ’লে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন হ’তে পারে।[23]

বিবাহের খুৎবা নিম্নরূপ-

إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ- يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوْتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُم مُّسْلِمُوْنَ (آل عمران، يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللهَ الَّذِيْ تَسَاءلُوْنَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْباً (النساء، يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْداً، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيْماً (الأحزاب- [24]

অতঃপর বিবাহ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কথা বলবেন।

আমাদের সমাজে কবুল বলানোর জন্য কাযী বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বরের অনুমতি নিয়ে দু’জন সাক্ষীসহ কনের নিকট চলে যান। কাযী গিয়ে বরের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে কনেকে কবুল বলতে বলেন। কবুল বলার পর কাযী ছাহেব বরের নিকট ফিরে আসেন এবং মেয়ের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে মেয়েকে গ্রহণ করার জন্য কবুল বলতে বলেন। তিন বার কবুল বলার পর বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহ পড়ানোর এই পদ্ধতি সঠিক নয়।

৮. মোহর প্রদান করা :

সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা প্রত্যেক স্বামীর উপরে ফরয। আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। তিনি আরো বলেন, فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَحَقُّ الشُّرُوْطِ أَنْ تُوْفُوْا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوْجَ- ‘(বিবাহে) সবচেয়ে বড় শর্ত যেটা তোমরা পূর্ণ করবে, সেটা হ’ল যা দ্বারা তোমরা লজ্জাস্থানকে হালাল কর’।[25] অর্থাৎ মোহর।

মোহরানা কম হওয়ার প্রতি ইসলামে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ اَلصَّدَاقِ أَيْسَرُهُ উত্তম মোহর হচ্ছে যা (পরিশোধ করা) সহজ’।[26] তিনি আরো বলেন,إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ تَيْسِيْرَ خِطْبَتِهَا وَتَيْسِيْرَ صَدَاقِهَا وَتَيْسِيْرَ رَحِمِهَا-  ‘নিশ্চয়ই উত্তম মহিলা হ’ল যাকে প্রস্তাব দেওয়া সহজ, যার মোহর আদায় করা সহজ ও যার গর্ভাশয় (সন্তান ধারণে) সহজ হয়’।[27]

মূলত মোহর অধিক নির্ধারণের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। ওমর (রাঃ) বলেন,

لاَ تُغَالُوْا صَدَاقَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِى الدُّنْيَا أَوْ تَقْوًى عِنْدَ اللهِ كَانَ أَوْلاَكُمْ وَأَحَقَّكُمْ بِهَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم مَا أَصْدَقَ امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِ وَلاَ أُصْدِقَتِ امْرَأَةٌ مِنْ بَنَاتِهِ أَكْثَرَ مِنِ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُثَقِّلُ صَدَقَةَ امْرَأَتِهِ حَتَّى يَكُونَ لَهَا عَدَاوَةٌ فِى نَفْسِهِ وَيَقُولُ قَدْ كَلِفْتُ إِلَيْكِ عَلَقَ الْقِرْبَةِ أَوْ عَرَقَ الْقِرْبَةِ.

‘মহিলাদের মোহরের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তা যদি পার্থিব জীবনে সম্মান অথবা আল্লাহর কাছে তাক্বওয়ার প্রতীক হ’ত, তাহ’লে তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ব্যাপারে অধিক যোগ্য ও অগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের মোহর বারো উকিয়ার বেশি ধার্য করেননি। কখনও অধিক মোহর স্বামীর উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মনে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এমনকি সে বলতে থাকে, আমি তোমার জন্য পানির মশক বহনে বাধ্য হয়েছি অথবা তোমার জন্য ঘর্মাক্ত হয়ে পড়েছি’।[28]

যখন আলী (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি ফাতেমাকে (মোহরানা স্বরূপ) কিছু দাও। আলী (রাঃ) বললেন, আমার নিকট কিছু নেই। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার হুতামী বর্মটি কোথায়’?[29] অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, تَزَوَّجْ وَلَوْ بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيْدٍ ‘তুমি বিবাহ কর, একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হ’লেও’।[30]

কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষাদানকে মোহর নির্ধারণ করেও বিবাহ সম্পন্ন করা যায়। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি আমার নিজেকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকালেন এবং তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল নবী করীম (ছাঃ) তার সম্পর্কে কোন ফায়ছালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যদি আপনার বিবাহের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিবাহ দিয়ে দিন। রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কী? সে উত্তর দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি-না। তারপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার চলে গেল। ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি লুঙ্গির অর্ধেক মহিলাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহ’লে তার কোন কাজে আসবে না। আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। এরপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর সে উঠে দাঁড়াল ও নবী করীম (ছাঃ) তাকে যেতে দেখে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কী তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে এ মহিলাকে তোমার অধীনস্থ করে দিলাম’।[31]

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হ’ল আজকাল অনেকে বিবাহে মোহরানার মত ফরয কাজকে মর্যাদার বিষয় বা তালাক থেকে রক্ষার জন্য নারীর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন। এজন্য ছেলের সামর্থ্যের দিকে খেয়াল না করে মেয়েপক্ষ তাদের বংশমর্যাদা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারণ করেন। আবার অনেকের ধারণা যে, বিবাহে মোহর বেশী ধার্য করা থাকলে ছেলেপক্ষ মেয়েকে তালাক দিতে পারবে না কিংবা তালাক দিতে চাইলে প্রচুর টাকা দিতে হবে। এই উভয় ধারণাই ইসলাম বিরোধী। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে লোকেরা এক মুষ্টি খাদ্যের বিনিময়েও বিবাহ করতেন।[32] এছাড়া কিছু না থাকায় কেবল কুরআন শিক্ষাদানের বিনিময়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীকে বিবাহ দিয়েছে।[33] যা উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।

উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ মোহর বাকী রাখা যায়। তবে সেটা ঋণের অন্তর্ভুক্ত। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর বাকী থাকলে সন্তান অবৈধ হবে একথা ঠিক নয়। কেননা বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা শর্ত নয়। রাসূল (ছাঃ) একজন ব্যক্তিকে বললেন, অমুক মহিলার সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, অমুক ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি তাদের বিবাহ দিলেন। কিন্তু কোন মোহর নির্ধারণ করলেন না এবং মহিলাকে কিছু দিলেন না। ঐ ব্যক্তি হোদায়বিয়ার ছাহাবী ছিলেন। পরে তিনি খায়বরের গণীমতের অংশ পান। এ সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হ’লে তিনি বলেন, স্ত্রীর জন্য আমার কোন মোহর নির্ধারিত ছিল না। এক্ষণে আমি আমার খায়বরের প্রাপ্ত অংশ তাকে মোহর হিসাবে দান করলাম। যার মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম’।[34] নবী করীম (ছাঃ) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন।[35] তবে মোহরানা পরিশোধ না করে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে তা মাফ করিয়ে নেওয়ার যে রীতি সমাজে চালু আছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং হাতে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে।

৯. আড়ম্বর ও কুসংস্কার পরিত্যাগ করা :

(ক) বিবাহের তারিখ নির্ধারণ : বছরের নির্দিষ্ট কোন মাস বা দিনকে শুভ বা কল্যাণকর ধারণা করে সেই মাস বা দিনকে বিবাহের জন্য নির্ধারণ করা অথবা কোন মাস বা দিনকে অশুভ বা অকল্যাণকর ভেবে সেই মাস বা দিনে ঐ মাস ও দিনে বিবাহ-শাদী করা থেকে বিরত থাকা শরী‘আত বিরোধী। নির্দিষ্ট কোন দিনে, কারো মৃত্যু বা জন্মদিনে বিবাহ করা যাবে না মনে করা গুনাহের কাজ। আল্লাহর কাছে বছরের প্রতিটি দিনই সমান। মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন দিন নির্ধারণ করতে পারবে।

(খ) যৌতুক আদান-প্রদান : অসচ্ছলতার দোহাই দিয়ে কিংবা স্বাবলম্বী হওয়ার নাম করে মেয়ের পিতা বা অভিভাবকের নিকট থেকে যৌতুক গ্রহণ করা হারাম। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ، ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৮; নিসা ৪/২৯)

কারো সক্ষমতা না থাকলে সক্ষম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যরূরী। আল্লাহ বলেন,وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لاَ يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتَّى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ ‘যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে’ (নূর ২৪/৩৩)

আর কেউ নিজের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা বজায় রাখার জন্য বিবাহ করার নিয়ত করলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَوْنُهُمُ الْمُكَاتَبُ الَّذِىْ يُرِيْدُ الأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِى يُرِيْدُ الْعَفَافَ وَالْمُجَاهِدُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ ‘আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। চুক্তিবদ্ধ গোলাম, যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে; বিবাহে আগ্রহী লোক, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায় এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী’।[36]

অতএব যে কোন কারণেই হোক না কেন যৌতুক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। অনুরূপভাবে যৌতুক প্রদান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে কেননা এতে পাপের কাজে সহযোগিতা করা হয়, যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।[37]

(গ) থুবড়া ও ক্ষীর খাওয়ানো : বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বর ও কনেকে বিবাহের দু’তিন দিন পূর্বে নিজ নিজ বাড়ীতে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে রাতের প্রথমাংশে মাহরাম, গায়রে মাহরাম পুরুষ-নারী, যুবক-যুবতী সকলে মিষ্টি, ফল-মূল ও পিঠা-পায়েস ইত্যাদি মুখে তুলে খাওয়ায়। সেই সাথে নব যুবতীরা গান গেয়ে টাকা-পয়সা আদায় করে। এসব প্রথা শরী‘আত সম্মত নয়। বরং এর মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পায়। আর পর্দাহীনভাবে চলাফেরা ও হাসি-ঠাট্টা থেকে যুবক-যুবতীরা যেনার দিকে ধাবিত হয়।

(ঘ) এঙ্গেজমেন্ট বা আংটি পরানো : আজকাল মুসলমানদের অধিকাংশ বিবাহে আংটি পরানোর রীতি চালু আছে। আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) একে কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ বলে উল্লেখ করেছেন।[38]

(ঙ) গায়ে হলুদ : গায়ে হলুদের নামে আমাদের সমাজে বিবাহের দু’একদিন পূর্বে বরকে কনের পক্ষের যুবতী নারীরা এবং বরের ভাবী, চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোনেরা মিলে হলুদ মাখায়। অনুরূপভাবে কনেকে বরের পক্ষের লোকেরা ও তার চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাইসহ অন্যান্য গায়ের মাহরাম পুরুষরা যেভাবে হলুদ মাখায় তা ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এছাড়া এই হলুদ মাখানোর জন্য উভয় বাড়ীতে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করা হয়। এসব শরী‘আত সম্মত নয়। তবে বর নিজে বা কোন পুরুষ ও মাহরাম মহিলা যদি হলুদ মাখিয়ে দেয় তাতে কোন দোষ নেই। অনুরূপভাবে কনে নিজে বা মহিলারা কিংবা কোন মাহরাম ব্যক্তি কনেকে শালীনভাবে হলুদ মাখিয়ে দিতে পারে। আনাস (রাঃ) বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ قَالَ مَا هَذَا. قَالَ إِنِّى تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ، أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ. ‘নবী করীম (ছাঃ) আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে বললেন, এটা কিসের রঙ? তিনি বললেন, আমি একটি মেয়েকে খেজুরের আuঁট পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার এ বিয়েতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হ’লেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর’।[39]

(চ) বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য বাজানো : বর্তমানে আমাদের সমাজের বিবাহ অনুষ্ঠানে বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী বিভিন্ন অশ্লীল গান-বাজনার আয়োজন করা হয়। আবার কোথাও কোথাও বাদ্যের তালে তালে নাচের আয়োজন থাকে। বিবাহের কয়েক দিন পূর্ব থেকেই এই নাচ-গানের আসর চলে, যা শেষ হয় বিবাহের কয়েকদিন পর। অথচ ইসলামে এই অশ্লীল গান ও বাদ্য-বাজনাকে হারাম করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’।[40] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَىَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ ‘আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া ও তবলা’।[41] উল্লেখ্য, বিবাহের ঘোষণার জন্য দফ বা একমুখা ঢোল বাজানো বৈধ।[42]

(ছ) মহিলা বরযাত্রী : মহিলাদের জন্য সাজসজ্জা করে বেপর্দা অবস্থায় বের হওয়া সিদ্ধ নয়। কিন্তু বর্তমানে বিবাহের সময় মহিলারা সাজগোজ করে পাতলা কাপড় পরিধান করে পর্দাহীনভাবে বরের সাথে কনের বাড়ীতে যায়। অনুরূপভাবে কনের পক্ষের মহিলারাও বরের বাড়ীতে যায়। যাদের পরণে থাকে বিভিন্ন মিহি, পাতলা পোষাকের বাহার, অঙ্গে শোভা পায় বাহারী অলংকার আর গায়ে মাখা থাকে কড়া পারফিউম। কেউবা অর্ধনগ্ন পোষাক পরে বের হয়। যাত্রাপথে গায়ের মাহরাম পুরুষের সাথে গাড়িতে একসাথে বসে, ঢলাঢলি, হাসি-তামাশা করতে করতে যাতায়াত করে। এভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে, পর্দাহীনভাবে ও গায়ের মাহরাম পুরুষের সাথে নারীদের কোথাও যাওয়া বৈধ নয়। মহিলাদেরকে যদি একান্তই যেতে হয় তাহ’লে পর্দা মেনে শালীনভাবে যেতে হবে।

(জ) সাজসজ্জা করা : বর্তমানে বিবাহ অনুষ্ঠানে পাত্র-পাত্রীকে বিভিন্নভাবে সাজানোর প্রথা চালু আছে। বিউটি পারলারে নিয়ে গিয়ে কনেকে সাজানো হয়। বিভিন্ন স্টাইল করে চুল কেটে, মেকাপ দিয়ে মুখমন্ডলসহ সর্বাঙ্গ সাজানো হয়। যাতে খরচ হয় হাযার হাযার টাকা। আর এই সাজ নষ্টের আশংকায় অনেকে ছালাত পরিত্যাগ করে। এসব সাজসজ্জা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। তবে স্বাভাবিক সাজসজ্জা দূষণীয় নয়। আবার বিবাহে বরকে স্বর্ণের আংটি, চেইন উপহার দেওয়া হয়। অথচ পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম।[43] এতদ্ব্যতীত নেইল পালিশ ব্যবহার, কপালে টিপ দেওয়া, নখ বড় রাখা ইত্যাদি সবই বিধর্মীদের আচরণ। এগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’।[44] এতদ্ব্যতীত আজকাল মহিলারা তাদের চোখের ভুরু উঠায়, মাথায় কৃত্রিম চুল লাগায় ও দাঁত সরু করে, যা শরী‘আত সম্মত নয়।

(ঝ) অপচয় ও অপব্যয় করা : অপচয়-অপব্যয় ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ বিবাহে অপচয় হ’তে দেখা যায়। যেমন বিবাহের দাওয়াতের জন্য দামী কার্ড ছাপানো, শুধু বিবাহে ব্যবহারের জন্য বাহারী মূল্যবান পোষাক ক্রয় করা, পটকা-আতশবাজি ফুটানো, বর-কনের বাড়ীতে বিবাহের আগে-পরে আলোকসজ্জা করা, রঙ ছিটাছিটি, অপরিমিত খাদ্য-খাবারের ব্যবস্থা করা, যার অধিকাংশই নষ্ট হয় ইত্যাদি। অনেকে ঋণ করেও এসব করে থাকে। ইসলামে এসব অপচয় হারাম। আল্লাহ বলেন,وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ- ‘আর তোমরা খাও ও পান কর, অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পসন্দ করেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। পবিত্র কুরআনে অপচয়কারী শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرا-ً ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৭)

(ঞ) আড়ম্বর পরিহার করা : বর্তমানে বিবাহ উপলক্ষে বর-কনে উভয় পক্ষ প্রতিযোগিতামূলকভাবে বিভিন্ন খরচ করে থাকে। স্ব স্ব মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে তারা এসব অনর্থক খরচ করে। উভয়পক্ষ নিজেদের বংশ গৌরব ও আভিজাত্য রক্ষা করতে গিয়ে বিবাহ অনুষ্ঠানকে আড়ম্বরপূর্ণ করে তোলে। এটা এক দিকে লৌকিকতা ও অপরদিকে তাক্বওয়া পরিপন্থী। বিবাহ যে একটি ইবাদত, আড়ম্বর ও অন্যান্য অনর্থক কর্মকান্ডের কারণে এই মূল বিষয়টি গৌন হয়ে যায়। তাই এসব পরিহার করে মুসলমানদের বিবাহ অনুষ্ঠান শরী‘আত সম্মত পন্থায় সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথা এসব বিবাহে আল্লাহর রহমত ও বরকত থাকে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ النِّكَاحِ أَيْسَرُهُ ‘উত্তম বিবাহ হচ্ছে যা সহজে সম্পন্ন হয়’।[45]

(ট) ফটো সেশন ও ভিডিও রেকর্ডিং : আজকাল আমাদের সমাজে বর্তমানে অধিকাংশ বিবাহ অনুষ্ঠানে স্থির ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে বর-কনে ও অন্যান্য অতিথিদের ছবি ধারণ করা হয়, পরবর্তীতে এসব অন্যকে দেখানোর জন্য কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। তাদের কাছে এসব স্মৃতি ও ইতিহাসের সাক্ষী। ছবি উঠানোর জন্য ক্যামেরাম্যানের সর্বত্র অবাধ যাতায়াতের সুযোগ থাকে। তার জন্য সাত খুন মাফ। আবার ছবি তোলার জন্য নারী-পুরুষ একত্রে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়। নানা ভঙ্গিমায় নারীরা ছবি তোলে। অপরদিকে ভিডিও করা হয় গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছু। এসব অনর্থক ও বিধর্মীদের অনুকরণ বৈ কিছুই নয়।

(ঠ) অমুসলিমদের প্রথার অনুসরণ : বিবাহের অনুষ্ঠানে বাঁশের কুলায় চন্দন, মেহেদি, হলুদ, কিছু ধান-দূর্বা ঘাস, কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির চাটি নিয়ে মাটির চাটিতে তৈল দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। তারপর বর-কনের কপালে তিনবার হলুদ মাখায়। এমনকি মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন জ্বালানো, বর-কনের মুখে আগুনের ধোঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-দুলিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। কোন কোন এলাকায় বর-কনেকে গোসল করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় মাথার উপরে বড় চাদরের চারকোণা চারজন ধরে নিয়ে যায়। বিবাহ করতে যাওয়ার সময় বরকে পিঁড়িতে বসিয়ে বা সিল-পাটায় দাঁড় করিয়ে দুধ-ভাত খাওয়ানো হয়। সম্মানের নামে বর-কনে মুরববীদের কদমবুসি করে। এছাড়া বিবাহের পর বর দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম করে। এসব প্রথা ইসলামে নেই।

(ঠ) বিবাহের বয়স নির্ধারণ : আমাদের দেশে পুরুষ-নারীর বিবাহের জন্য বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বয়সের পূর্বে কেউ বিবাহ করতে পারবে না, করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ আইন শরী‘আত বিরোধী। ইসলাম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সক্ষম ও সামর্থ্যবান নারী-পুরুষকে তাদের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা বজায় রাখার জন্য বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে।[46] এছাড়া নবী করীম (ছাঃ) যখন আয়েশা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর এবং তার সাথে যখন বাসর যাপন করেন তখন তার বয়স হয়েছিল ৯ বছর। আর তিনি ৯ বছর নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে জীবন কাটান।[47]

 [চলবে]


[1]. আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩০, হাদীছ ছহীহ।  

[2]. আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩১।

[3]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শরহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৭৩ পৃঃ।

[4]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত হা/৩১৩৭, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৬; হাদীছ ছহীহ।

[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬ ‘বিবাহতে অভিভাবক ও মেয়ের অনুমতি’ অনুচ্ছেদ।

[6]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭।  

[7]. মুসলিম হা/১৪২১, তিরমিযী, নাসাঈ, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৫।

[8]. বুখারী হা/৫১৩৮, মিশকাত হা/৩১২৮।

[9]. বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসঈ, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৮।

[10]. ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; ছহীহাহ হা/১০৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯২৮।

[11]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭-এর আলোচনা দ্র.।

[12]. বুখারী হা/৫১২২।

[13]. বুখারী হা/৫১২০।  

[14]. বুখারী হা/৫১৪২, মুসলিম হা/১৪১২,বুলূগুল মারাম হা/৯৭৮।

[15]. বুখারী হা/৫১৪৪, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১৪৪।  

[16]. তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১০৭।

[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৯৮।

[18]. বুখারী হা/৩০০৬।

[19]. তিরমিযী হা/১১৭১, ২১৬৫; ছহীহাহ হা/৪৩০; মিশকাত হা/৩১১৮।

[20]. মিশকাত হা/৩০৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৪৮; ছহীহাহ হা/৬২৫।

[21]. সাইয়েদ সাবেক, ফিকহুস সুন্নাহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ২য় প্রকাশ ১৯৯৮খ্রিঃ), ২/১৫৩।

[22]. বুখারী হা/৯৫, মিশকাত হা/২০৮।

[23]. শারহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৪৪ পৃঃ।

[24]. আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৩১৪৯।

[25]. বুখারী হা/৫১৫১; মুসলিম হা/১৪১৮; মিশকাত হা/৩১৪৩।  

[26]. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭৯।

[27]. মুসনাদে আহমাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/২২৩৫; ইরওয়া ৬/৩৫০ পৃঃ।

[28]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৮৭; মিশকাত হা/৩২০৪; ছহীহাহ হা/১৮৩৪।

[29]. আবু দাউদ হা/২১২৫, নাসাঈ হা/৩৩৭৫, বুলূগুল মারাম হা/১০২৯।

[30]. বুখারী হা/৫১৫০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

[31]. বুখারী হা/৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, মুসলিম হা/১৪২৫, বুলূগুল মারাম হা/৯৭৯।

[32]. ছহীহ আবুদাউদ হা/১৮৫৫।

[33]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২, ‘মোহর’ অনুচ্ছেদ।

[34]. আবূদাঊদ হা/২১১৭।

[35]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২।

[36]নাসাঈ হা/৩১৬৬; তিরমিযী হা/১৬৫৫; মিশকাত হা/৩০৮৯, সনদ হাসান।

[37]. মায়েদাহ ৫/২।

[38]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ৩৮।

[39]. বুখারী ৫০৭২, মুসলিম হা/১৪২৭, মিশকাত হা/৩২১০।

[40]. বুখারী হা/৫৫৯০, মিশকাত হা/৫৩৪৩।

[41]. আবু দাউদ হা/৩৬৯৬, মিশকাত হা/৪৫০৩, হাদীছ ছহীহ।

[42]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলাহ নং-৩৭।

[43]. নাসাঈ হা/৪০৫৭; আবু দাঊদ হা/৪০৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৯৫, সনদ ছহীহ।

[44]. আহমাদ, আবুদাউদ হা/৪০৩১, মিশকাত হা/৪৩৪৭।

[45]. আবু দাউদ হা/২১১৭; ছহীহাহ হা/১৮৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩০০।

[46]. বুখারী/৫০৬৫, মুসলিম/১৪০০, মিশকাত/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়, বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।

[47]. বুখারী হা/৫১৫৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়। 





তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ (চতুর্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
নফল ছিয়াম সমূহ - -আত-তাহরীক ডেস্ক
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
শায়খ আলবানীর তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মন্তব্য (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ই‘তিকাফ : গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরিখে যেলাসমূহের মাঝে সময়ের পার্থক্যের কারণ - তাহসীন আল-মাহী
দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভেঙ্গে দিচ্ছে ভারত - আহমদ সালাহউদ্দীন
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কর্তব্য (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.