পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব ।
পরিবারে স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য :
স্বামী পরিবারের দায়িত্বশীল। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবেন। এটা তার দায়িত্ব। তিনি এ সম্পর্কে পরকালে জিজ্ঞাসিত হবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ سَائِلٌ كُلَّ رَاعٍ عَمَّا اسْتَرْعَاهُ أَحَفِظَ ذَلِكَ أَمْ ضَيَّعَهُ حَتّى يَسأَلَ الرَّجُلَ عَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন যে, সে তা পালন করেছে, না করেনি? এমনকি পুরুষকে তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন’।[1] সেই সাথে স্বামীকে আদর্শ পরিবার গঠনের চেষ্টা করতে হবে। এজন্য তাকে কিছু কাজ আবশ্যিকভাবে করতে হবে, যাতে তার পরিবারের সদস্যরাও আদর্শ হিসাবে গড়ে ওঠে। স্বামীর করণীয়গুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ১. বিবাহ পূর্ব করণীয় ২. বিবাহ পরবর্তী করণীয়। নিম্নে স্বামীর বিবাহ পূর্ব করণীয়গুলি উল্লেখ করা হ’ল।-
১. ঈমানদার ও উত্তম স্ত্রী নির্বাচন করা :
পরিবারের কল্যাণ ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য ঈমানদার নারীকে বিবাহ করা যরূরী। মুমিনা সতি-সাধ্বী নারী স্বামীর সংসার, সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। সাথে সাথে দ্বীনী কাজে সহায়তা করে। এজন্য মুমিনা নারীকে বিবাহ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। যদি সে কুৎসিৎ কালোও হয়। আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوْا الْمُشْرِكِيْنَ حَتَّى يُؤْمِنُوْا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ-
‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। (মনে রেখ) মুমিন ক্রীতদাসী মুশরিক স্বাধীন নারীর চাইতে উত্তম। যদিও সে তোমাদের বিমোহিত করে। আর তোমরা মুশরিক পুরুষদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। (মনে রেখ) মুমিন ক্রীতদাস মুশরিক স্বাধীন পুরুষের চাইতে উত্তম। যদিও সে তোমাদের বিমোহিত করে। ওরা জাহান্নামের দিকে আহবান করে। আর আল্লাহ স্বীয় আদেশক্রমে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন। তিনি মানবজাতির জন্য স্বীয় আয়াত সমূহ ব্যাখ্যা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (বাক্বারাহ ২/২২১)।
নারীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ، ‘নারীকে বিবাহ করা হয় চারটি কারণে (১) তার সম্পদ (২) বংশ মর্যাদা (৩) সৌন্দর্য এবং (৪) তার দ্বীনদারির কারণে। এর মধ্যে তুমি দ্বীনদারীকে অগ্রাধিকার দাও। নইলে তুমি কল্যাণ বঞ্চিত হবে’।[2] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ- ‘তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধার্মিকতা সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহ’লে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে’।[3] সুতরাং দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করতে হবে।
আর
মুমিনা উত্তম স্ত্রী পাওয়ার জন্য আগ্রহী হওয়া ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করা
যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ
بِاللهِ ‘তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের আকাঙ্ক্ষা কর এবং আল্লাহর সাহায্য
প্রার্থনা কর’।[4]
উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য :
মুমিনা হওয়ার পরও নারীর মাঝে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে উত্তম স্ত্রী হিসাবে গণ্য হয়, তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
ক. সতী-সাধ্বী, অনুগত ও লজ্জাস্থান হেফাযতকারিণী :
সেই উত্তম নারী যে সতী-সাধ্বী ও অনুগত এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতেও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারিণী। আল্লাহ বলেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ ‘অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে’ (নিসা ৪/৩৪)। আয়াতে বর্ণিত গুণাবলী দু’টি ভাগে বিভক্ত। একটি হ’ল আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। অপরটি স্বামীর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট গুণ তথা সে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পুরাপুরি মেনে চলে, তাঁর ইবাদত নিয়মিত আদায় করে এবং দ্বীনের আবশ্যিক বিষয়গুলি পালনে অলসতা করে না। এসবই আল্লাহর অনুগত হওয়ার পরিচায়ক। স্বামীর সাথে সম্পৃক্ত গুণ তথা স্বামীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতে তার হক আদায় করে এবং তার সন্তানাদি ও সম্পদ হেফাযত করে। আর নিজের লজ্জাস্থান হেফাযত করে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا صلَّتِ
الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا،
وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوابِ الجَنَّةِ شَاءَتْ
‘নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করবে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করবে,
নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে তখন জান্নাতের যে
কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে’।[5]
নারীর লজ্জাস্থান হেফাযত করা তার সবচেয়ে বড়গুণ। কারণ এর দ্বারা বিপর্যয়-বিশৃংখলার পথ বন্ধ হয়। আর এর অভাবে সংসারে সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও অকল্যাণ প্রবেশ করে এবং পাপাচারের পথ উন্মুক্ত হয়। সুতরাং লজ্জাস্থানের হেফাযত নারীর কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। তাই যে নারী তার নিজের কল্যাণ কামনা করে সে যেন নিজের লজ্জাস্থান হেফাযত করে। আর আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর ইবাদতে রত থাকে এবং স্বীয় কথা-কর্মের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাছিলের চেষ্টা করে। সেই স্বামীর অনুগত থাকবে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাযত করবে ও স্বামীর হক আদায়ে সদা তৎপর থাকবে।
খ. দ্বীন ও ঈমানের কাজে সহযোগী :
মুমিন নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী হবে। নেকীর কাজে উৎসাহিত করবে এবং পাপের কাজে বাধা দিবে; এটাই হবে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি অন্যতম কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান’ (তওবা ৯/৭১)। মুমিনা নারীকে শ্রেষ্ঠ সম্পদ অভিহিত করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ لَمَّا نَزَلَتِ (الَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِي سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ) قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِى بَعْضِ أَسْفَارِهِ فَقَالَ بَعْضُ أَصْحَابِهِ أُنْزِلَ فِى الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ مَا أُنْزِلَ. لَوْ عَلِمْنَا أَىُّ الْمَالِ خَيْرٌ فَنَتَّخِذَهُ فَقَالَ أَفْضَلُهُ لِسَانٌ ذَاكِرٌ وَقَلْبٌ شَاكِرٌ وَزَوْجَةٌ مُؤْمِنَةٌ تُعِينُهُ عَلَى إِيْمَانِهِ.
ছাওবান (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহ
তা‘আলার পথে ব্যয় করে না তাদেরকে পীড়াদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও’ (তওবা ৯/৩৪),
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে সফরে ছিলাম। কোন
কোন ছাহাবী বলেন, এ আয়াতটি সোনা ও রূপার সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোন
সম্পদ উৎকৃষ্ট আমরা তা জানতে পারলে তা জমা করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন, উৎকৃষ্ট সম্পদ হ’ল (আল্লাহ তা‘আলার) যিকরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞ অন্তর ও
ঈমানদার স্ত্রী, যে স্বামীকে দ্বীনদারীর ব্যাপারে সহযোগিতা করে’।[6]
অন্যত্র
রাসূল (ছাঃ) বলেন,لِيَتَّخِذْ أَحَدُكُمْ قَلْبًا شَاكِرًا وَلِسَانًا
ذَاكِرًا وَزَوْجَةً مُؤْمِنَةً تُعِيْنُ أَحَدَكُمْ عَلَى أَمْرِ
الآخِرَةِ ‘তোমাদের প্রত্যেকেই যেন অর্জন করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকরকারী জিহবা
এবং আখেরাতের কাজে তাকে সহায়তাকারী ঈমানদার স্ত্রী’।[7]
গ. প্রেম-ভালবাসা বিনিময়কারিণী :
স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক বজায় থাকা পরিবারে শান্তি বজায় থাকার অন্যতম শর্ত। এ সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি অতি প্রেমময়ী হওয়া যরূরী। এতে অন্য নারীর প্রতি স্বামীর মনে কখনো কোন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না এবং তার বিপথগামী হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না। আর এ ধরনের নারীর জন্যই জান্নাত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
وَنِسَاؤُكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَدُوْدُ الْعَؤُوْدُ عَلَى زَوْجِهَا، الَّتِي إِذَا غَضِبَ جَاءَتْ حَتَّى تَضَعَ يَدَهَا فِيْ يَدِهِ، ثُمَّ تَقُولُ: لاَ أَذُوْقُ غَمْضًا حَتَّى تَرْضَى-
‘তোমাদের জান্নাতী রমণীগণ হচ্ছে যারা স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান প্রসবকারিণী। স্বামী ক্রদ্ধ হ’লে সে এসে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না’।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, هذِهِ يَدِيْ فيْ يَدِكَ لاَ أَكْتَحِلُ بِغَمْضٍ حَتَّى تَرْضَى ‘এই আমার হাত আপনার হাতের মধ্যে রাখছি, আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি চোখে মুদিত করব না’।[9] অর্থাৎ আমি ঘুমাব না, আরাম-আয়েশ করব না।
ঘ. স্বামীকে মুগ্ধকারিণী :
উত্তম স্ত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল নিজের প্রতি স্বামীকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করা। সেটা কয়েকভাবে হতে পারে। নিজের আকার-আকৃতিকে কেবল স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দর করা। স্বামীর সামনে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে সর্বদা স্বামীকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করা। সেই সাথে স্বামী যে ধরনের পোশাক পসন্দ করে সেগুলো পরিধান করা কেবল স্বামীর নযর কাড়ার জন্য। আচার-ব্যবহারে সর্বদা খোশ মেজাযী ও হাসি-খুশী থাকা। কথা-বার্তার ক্ষেত্রে সর্বদা মিষ্টি হাসিতে স্বামীর মন জয় করে নেওয়া। স্বামীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা, তার অনুগত থাকা এবং তাঁর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা। এক্ষেত্রে কোন প্রকার গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা প্রকাশ না করা। ঐসব বিষয়ে হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيْعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلاَ تُخَالِفُهُ فِى نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ. ‘কোন নারী উত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, যে স্বামীকে আনন্দিত করে যখন সে (স্বামী) তার দিকে তাকায়; যখন সে নির্দেশ দেয়, তা মান্য করে। তার নিজের ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর অপসন্দনীয় কাজের বিরোধিতা করে না’।[10] অর্থাৎ নিজে স্বামীর অপসন্দনীয় কাজ করবে না এবং স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ খরচ করবে না।
অন্যত্র
রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ
الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا
أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ ‘আমি কি তোমাকে
মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হ’ল, নেককার স্ত্রী। সে
(স্বামী) তার (স্ত্রীর) দিকে তাকালে স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়, তাকে কোন
নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে
তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হেফাযত করে’।[11]
উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, নারীর সব কিছুই হবে স্বামীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে নারী স্বামীর জন্য নিজেকে মোহনীয় ও সুসজ্জিত করে না। বরং সে নিজেকে সুশোভিত করে কেবল বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য বা কোন পার্টি ও উৎসবে অংশগ্রহণ কিংবা কোন বিশেষ কারো বাড়ীতে আগমনের জন্য। পক্ষান্তরে স্বামীর কাছে যখন থাকে তখন অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন কাপড়ে থাকে, চুল থাকে এলোমেলো ও অপরিপাটি, শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এছাড়া আরো অন্যান্য খারাপ গুণ তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং স্বামী তার দিকে আকৃষ্ট হবে কিভাবে?
ঙ. বিপদাপদে সান্ত্বনা দানকারিণী :
মানুষ
বিভিন্ন বিপদাপদ ও অসুখ-বিসুখে অনেক সময় মুষড়ে পড়ে। এসময় তাকে সান্ত্বনা
দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আদর্শ ও গুণবতী স্ত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল বিপদে
স্বামীকে সান্ত্বনা দেওয়া ও ধৈর্য ধারণে সাহায্য করা। রাসূল (ছাঃ) আরো
বলেন,خَيْرُ نِسائِكُمُ الوَلُوْدُ الوَدُوْدُ الْمُوَاسِيَةُ
الْمُوَاتِيَةُ إذَا اتَّقَيْنَ الله ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে উত্তম হ’ল
যারা প্রেমময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারিণী, সান্ত্বনাদানকারিণী ও (স্বামীর)
বাধ্যগত ও অনুগতা যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে’।[12] এক্ষেত্রে প্রথম অহী
নাযিলের প্রাক্কালে উম্মুল মুমিনীন খাদীজা (রাঃ) কর্তৃক রাসূল (ছাঃ)-কে
প্রদত্ত সান্ত্বনাবাণী বিশেষভাবে স্মরণীয় ও অনুকরণীয়।[13] অনুরূপভাবে উম্মে
সুলাইম (রাঃ) কর্তৃক তার স্বামীকে প্রদত্ত সান্ত্বনার ঘটনাটি স্মর্তব্য।
ঘটনাটি হ’ল এরূপ- তাদের একটি ছেলে মারা গেল। উম্মু সুলাইম পরিবারের
সদস্যদের বললেন, আমি না বলা পর্যন্ত তাকে সন্তান মৃত্যুর কথা কেউ বলবে না।
আবু ত্বালহা আসলে তার সামনে রাতের খাবার পেশ করলেন। তিনি পানাহার করলেন।
এরপর সুসজ্জিত হয়ে নিজেকে স্বামীর কাছে পেশ করলেন। স্বামী আবু ত্বালহা
পরিতৃপ্ত হ’লে তাকে এ বলে সান্ত্বতনা দেন যে, কোন সম্প্রদায় যদি কোন
দম্পতির নিকট একটি আমানত রাখে, অতঃপর তারা তাদের আমানত ফেরৎ নিয়ে নেয়,
তাহ’লে আপনি সেটা কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? তাদের নিষেধ করার কোন অধিকার আপনার
আছে কি? আবু ত্বালহা উত্তর দিলেন, না। উম্মে সুলাইম বললেন, আপনার ছেলেকে
সেই আমানত গণ্য করুন। তাকে হারানো পুণ্য বিবেচনা করুন। এ ঘটনা অবহিত হয়ে
রাসূল (ছাঃ) বলেন,بَارَكَ اللهُ لَكُمَا فِيْ غَابِرِ لَيْلَتِكُمَا.
‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের গত রাতের মিলনে বরকত দান করুন’। এরপর উম্মে
সুলাইমের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।[14]
চ. স্বামীর চাহিদা পূরণকারিণী :
গুণবতী
স্ত্রী সদা স্বামীর সেবা-যত্ন ও তার সার্বিক চাহিদা পূরণে নিয়োজিত থাকবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهُ لِحَاجَتِهِ
فَلْتَأْتِهِ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّورِ ‘কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ
প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন তার নিকট আসে যদিও সে চুলার উপর
রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে’।[15] অন্য বর্ণনায় আছে,إِذَا دَعَا
الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَلْتُجِبْ وَإنْ كَانَتْ عَلَى
ظَهْرِ قَتَبٍ ‘যখন স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকে
সে যেন তার ডাকে সাড়া দেয় যদিও সে উটের গদির উপরে থাকে’।[16]
ছ. স্বামীর অধিকার পূরণে অগ্রগামী :
উত্তম
নারী হচ্ছে যে স্বামীর অধিকার আদায়ে কমতি করে না বরং তার খেদমতে সাধ্যমত
চেষ্টা করে। উম্মুল হুছাইন বিন মিহছান তার ফুফু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে গমন করেন। তার প্রয়োজন শেষ হ’লে
রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ)
বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? তিনি বললেন, আমি অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত তার
সেবা করি। রাসূল (ছাঃ) বললেন,انْظُرِىْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّهُ
جَنَّتُكِ وَنَارُكِ ‘লক্ষ্য কর, তার থেকে তুমি কোথায়? কেননা সে তোমার
জান্নাত ও জাহান্নাম’।[17]
জ. খরচের ক্ষেত্রে স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া :
জীবন যাত্রার মান সবার সমান নয়। অর্থনৈতিক অবস্থার উপরে মানুষের জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে। সুতরাং স্বামীকে ভরণ-পোষণের ব্যাপারে কষ্টে নিপতিত করা আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য নয়। বরং তার আয় বুঝে ব্যয় করার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রী কখনোই বিলাসী, অপব্যয়ী ও সম্পদ বিনষ্টকারিনী হবে না। বরং মিতব্যয়ী হওয়া তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে’ (ফুরক্বান ২৫/৬৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,كَانَتِ امْرَأَةٌ مِنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ قَصِيرَةٌ تَمْشِى مَعَ امْرَأَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ فَاتَّخَذَتْ رِجْلَيْنِ مِنْ خَشَبٍ وَخَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ مُغْلَقٍ مُطْبَقٍ ثُمَّ حَشَتْهُ مِسْكًا وَهُوَ أَطْيَبُ الطِّيبِ فَمَرَّتْ بَيْنَ الْمَرْأَتَيْنِ فَلَمْ يَعْرِفُوهَا فَقَالَتْ بِيَدِهَا هَكَذَا ‘বানী ইসরাঈলের এক খাটো মহিলা দীর্ঘকায় দু’জন মহিলার সাথে চলাফেরা করত। অতঃপর কাঠের দু’টি পা তৈরী করে নিল এবং সোনা দিয়ে একটি বড় আংটি প্রস্ত্তত করে তাতে মিশক ভরে দিল। তা হ’ল সুগন্ধিগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম। পরে সে এই মহিলাদ্বয়ের মধ্যে চলতে লাগল এবং লোকেরা তাকে চিনতে পারল না। তখন সে তার হাত দিয়ে এভাবে ঝাড়া দিল’।[18] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
إنَّ أَوَّلَ مَا هَلَكَ بَنَوُ إسْرائيلَ أنَّ امرَأةَ الفْقِير كَانَتْ تُكَلّفُهُ مِنَ الثّيابِ أوْ الصّيَغِ أوْ قَالَ : مِن الصّيغَةِ مَا تُكَلّفُ امْرَأةَ الغني، فَذَكَرَ امرأةً مِنْ بني إسْرَائِيلَ كانتَ قَصِيرةً واتّخذّتْ رِجْلين مِنْ خشب، وَخَاتَماَ لَهُ غَلْقٌ وَطَبَقٌ، وَحَشَتْهُ مسْكاً، وَخَرجَتْ بَيْنَ امْرَأتيْن طوَيلتَيْن، أوْ جسيمَتْيْن، فَبَعَثُوْا إنساناً يَتْبَعُهمَ، فَعَرَفَ الطوِيلتَينِ، وَلَمْ يَعْرِفْ صَاحبةَ الرِّجْلين مِنْ خَشَبٍ
‘বানী ইসরাঈলের
প্রথমে যে ধ্বংস হয় সে ছিল এক দরিদ্র মহিলা। সে পোষাকে বা অলংকারে বাড়াবাড়ি
করত। অথবা তিনি বলেন, অলংকারে। যেরূপ ধনীর স্ত্রী বাড়াবাড়ি করে। অতঃপর
তিনি উল্লেখ করেন যে, বানী ইসরাঈলের এক খাটো মহিলা কাঠের দু’টি পা তৈরী করে
নিল এবং সোনা দিয়ে একটি বড় আংটি প্রস্ত্তত করে তাতে মিশক ভরে দিল। আর সে
দীর্ঘকায় বা মোটা দুই মহিলার সাথে বের হ’ল। লোকের তাদের পিছু নেওয়ার জন্য
এক ব্যক্তিকে পাঠাল। সে দীর্ঘদেহী মহিলাদ্বয়কে চিনতে পারল কিন্তু কাঠের পা
ওয়ালাকে চিনতে পারল না’।[19]
ঝ. নে‘মতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা :
আল্লাহ
প্রদত্ত নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য। তদ্রূপ স্বামীর
মাধ্যমে আল্লাহ তাকে যে নে‘মত দান করেছেন তারও শুকরিয়া আদায় করে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,لاَ يَشْكُرُ اللهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ ‘যে ব্যক্তি
মানুষের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না’।[20]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,أُرِيْتُ النَّارَ فَإِذَا أَكْثَرُ أَهْلِهَا
النِّسَاءُ يَكْفُرْنَ. قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللهِ قَالَ يَكْفُرْنَ
الْعَشِيرَ، وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ، لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ
الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ
خَيْرًا قَطُّ ‘আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখলাম), তার অধিবাসীদের
অধিকাংশই নারী। (কারণ) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর
সঙ্গে কুফরী করে? তিনি বললেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হয় এবং তার
অনুগ্রহকে অস্বীকার করে। তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করো,
অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, আমি কখনও তোমার নিকট
হ’তে ভালো ব্যবহার পাইনি’।[21]
আসমা বিনতু
ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) মসজিদের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তখন একদল মহিলা তথায় বসা ছিলেন। তিনি হাতের ইশারায় তাদেরকে সালাম দেয়ার পর
বলেন, إِيَّاكُنَّ وَكُفْرَ الْمُنَعَّمِيْنَ. فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ
وَمَا كُفْرُ الْمُنَعَّمِيْنَ؟ قَالَ لَعَلَّ إِحْدَاكُنَّ تَطُولُ
أَيْمَتُهَا مِنْ أَبَوَيْهَا ثُمَّ يَرْزُقُهَا مِنْهُ وَوَلَداً
فَتَغْضَبَ الْغَضْبَةَ فَتَكْفُرُ فَتَقُوْلُ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْراً
قَطُّ. ‘তোমরা নে‘মতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা থেকে সাবধান হও। রাবী বলেন, আমি
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নে‘মতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা কি? তিনি বললেন, হয়তো
তোমাদের কোন নারী পিতা-মাতার নিকট দীর্ঘদিন থাকে। অর্থাৎ দেরীতে বিবাহ হয়।
অতঃপর আল্লাহ তাকে স্বামী ও তার সন্তান দান করেন। অতঃপর সে অত্যন্ত
রাগান্বিত হয় এবং নে‘মত অস্বীকার করে বলে, আমি কখনো তার থেকে কোন ভালো
ব্যবহার পাইনি’।[22] পরকালে এ ধরনের নারীর পরিণতি হবে ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلَى امْرَأَةٍ لاَ تَشْكَرُ لِزَوْجِهَا وَهِيَ
لاَ تَسْتَغْنِيْ عَنْهُ ‘আল্লাহ ঐ মহিলার দিকে তাকাবেন না যে তার স্বামীর
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না এবং স্বামীকে ছাড়া তার চলে না’।[23]
ঞ. স্বামীকে সম্মান করা ও তাকে কষ্ট না দেওয়া :
স্বামীকে
যথাযথ সম্মান করা ও তাকে কষ্ট না দেওয়া উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,لَوْ كُنْتُ أُمِرَ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لاَمَرْتُ
الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا. ‘আমি যদি কোন ব্যক্তিকে কারো জন্য
সিজদা করতে আদেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকেই তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য আদেশ
করতাম’।[24] কিন্তু অনেক মহিলা বিভিন্নভাবে স্বামীকে কষ্ট দেয়। যা উচিত নয়।
এর জন্য জান্নাতের হূররা তার জন্য বদদো‘আ করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ
تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ
مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ لاَ تُؤْذِيْهِ قَاتَلَكِ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ
عِنْدَكِ دَخِيْلٌ يُوْشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا. ‘যখন কোন নারী তার
স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হূরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী
হবে সে বলে, (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস
করুন। তিনি তোমার কাছে আগন্তুক। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের
কাছে চলে আসবেন’।[25]
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি
করেছেন। মানুষের কাছে আল্লাহর হক হ’ল মানুষ কেবল তাঁর ইবাদত করবে ও তাঁর
বিধান মেনে চলবে। নারীর জন্য বিশেষ নির্দেশ হ’ল সে আল্লাহর হকের পাশাপাশি
স্বামীর হকও আদায় করবে। স্বামীর হক আদায় করলেই আল্লাহর হক আদায় হয়। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ
حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا
نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ. ‘যার হাতে মুহাম্মাদের
প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক্ব আদায় করতে
পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক্ব আদায় না করবে। যদি স্বামী
উটের গদির উপর থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবুও
স্ত্রীকে সম্মতি প্রকাশ করতে হবে’।[26]
ট. বাড়ীতে অবস্থান করা :
মহিলাদের
কাজ হ’ল বাড়ীতে। তাই বাড়ীর অভ্যন্তরে থাকাই তার জন্য আবশ্যক। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ
الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى- ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন জাহেলী
যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)। আর বাড়ীর
বাইরে গেলে শয়তান তাকে বেপর্দা করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে। রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন,الْمَرأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ إِسْتَشْرَفَهَا
الشَّيْطَانُ. ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান
তাকে (সৌন্দর্য প্রকাশে) উদ্বুদ্ধ করে’।[27]
ঠ. স্বামীর গোপনীয় বিষয় ও উভয়ের মধ্যবর্তী বিশেষ কাজ প্রকাশ না করা :
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত কার্যাবলী গোপনীয় বিষয়। তা প্রকাশ করা নির্লজ্জতা। আর একাজের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِى إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا- ‘কিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সর্বনিকৃষ্ট হবে ঐ ব্যক্তি যে স্ত্রীর সাথে যৌন সম্ভোগ করে তার গোপনীয়তা প্রকাশ করে’।[28] অন্যত্র তিনি বলেন,
لَعَلَّ رَجُلاً يَقُولُ مَا يَفْعَلُ بِأَهْلِهِ وَلَعَلَّ امْرَأَةً تُخْبِرُ بِمَا فَعَلَتْ مَعَ زَوْجِهَا. فَأَرَمَّ الْقَوْمُ فَقُلْتُ إِى وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُنَّ لَيَقُلْنَ وَإِنَّهُمْ لَيَفْعَلُونَ. قَالَ فَلاَ تَفْعَلُوْا فَإِنَّمَا مِثْلُ ذَلِكَ مِثْلُ الشَّيْطَانِ لَقِىَ شَيْطَانَةً فِى طَرِيقٍ فَغَشِيَهَا وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ.
‘হয়তো
পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে কৃত কর্মকান্ড প্রকাশ করে এবং স্ত্রীও স্বামীর সাথে
সংঘটিত কর্ম প্রকাশ করে দেয়। লোকেরা নীরব-নিশ্চুপ থাকল। আমি বললাম,
আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল, নিশ্চয়ই নারী-পুরুষরা এসব করে। তিনি বললেন,
তোমরা এরূপ কর না। কেননা এরূপ কর্ম হচ্ছে শয়তানের কর্মকান্ডের ন্যায়। যে
শয়তান পুরুষ নারীকে রাস্তায় দেখে জড়িয়ে ধরে আর মানুষ তা দেখতে থাকে’।[29]
ড. সন্তানের প্রতি স্নেহশীলা :
সন্তানের
প্রতি যত্নশীল ও স্নেহময়ী নারীকে মহানবী (ছাঃ) উত্তম নারী হিসাবে অভিহিত
করেছেন। তিনি বলেন,نِسَاءُ قُرَيْشٍ خَيْرُ نِسَاءٍ رَكِبْنَ الإِبِلَ،
أَحْنَاهُ عَلَى طِفْلٍ، وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِى ذَاتِ يَدِهِ.
‘কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু
সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীলা হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব
যত্নবান হয়ে থাকে।[30]
ঢ. লজ্জাশীলা :
লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।[31] সুতরাং উত্তম নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লজ্জাশীলা হওয়া। পক্ষান্তরে যার লজ্জা নেই সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।[32]
এতদ্ব্যতীত মনে-প্রাণে স্বামীর উপদেশ শ্রবণ করা ও মান্য করা, স্বামীর সাথে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করা ও উচ্চ শব্দে কথা না বলা, বরং কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখা, বাকবিতন্ডা না করা, স্বামীর পিতামাতা ও ভাই-বোনদের প্রতি ইহসান করা ইত্যাদি উত্তম ও গুণবতী নারীদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত।
[চলবে]
[1]. নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হা/৯১৭৪; ছহীহাহ হা/১৬৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৭৪।
[2]. বুখারী হা/৫০৯০; ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[3]. তিরমিযী হা/১০৮৪; ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৭; ইরওয়া হা/১৮৬৮, ছহীহাহ হা/১০২২, সনদ হাসান।
[4]. মুসলিম হা/২৬৬৪; ইবনু মাজাহ হা/৭৯;মিশকাত হা/৫২৯৮।
[5]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/৪১৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৩১, ২৪১১; মিশকাত হা/৩২৫৪, সনদ ছহীহ।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৬; ছহীহাহ হা/২১৭৬।
[7]. তিরমিযী হা/৩০৯৪; মিশকাত হা/২২৭৭, সনদ ছহীহ।
[8]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৬০৪; ছহীহাহ হা/২৮৭।
[9]. ছহীহাহ হা/৩৩৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৪১।
[10]. নাসাই হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৩২২৭; ছহীহাহ হা/১৮৩৮।
[11]. আবুদাউদ হা/১৬৬৪; মিশকাত হা/১৭৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৪৩।
[12]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৩০; ছহীহাহ হা/১৮৪৯।
[13]. বুখারী হা/৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১।
[14]. বুখারী হা/৫৪৭০; মুসলিম হা/২১৪৪ (১০৭), ‘আবু ত্বালহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[15]. তিরমিযী হা/১১৬০; মিশকাত হা/৩২৫৭; ছহীহাহ হা/১২০২।
[16]. মুসনাদুল বায্যার, ছহীহাহ হা/১২০৩।
[17]. মুসনাদ আহমাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/১৫০৯; ছহীহাহ হা/২৬১২।
[18]. মুসলিম হা/২২৫২।
[19]. আহমাদ, ছহীহাহ হা/৫৯১।
[20]. আবুদাউদ হা/৪৮১১; তিরমিযী হা/১৯৫৪; মিশকাত হা/৩০২৫; ছহীহাহ হা/৪১৭।
[21]. বুখারী হা/২৯; মুসলিম হা/৯০।
[22]. আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ হা/১০৪৮; ছহীহাহ হা/৮২৩।
[23]. হাকেম, ছহীহাহ হা/২৮৯;ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৪৪।
[24]. আবুদাউদ হা/২১৪০; তিরমিযী হা/১১৫৯; মিশকাত হা/৩২৫৫, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[25]. তিরমিযী হা/১১৭৪; ইবনু মাজাহ হা/২০১৪; মিশকাত হা/৩২৫৮।
[26]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; আদাবুয যিফাফ ২৮৪ পৃঃ, হাদীছ ছহীহ।
[27]. তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১০৯।
[28]. মুসলিম হা/১৪৩৭; মিশকাত হা/৩১৯০।
[29]. আহমাদ, ইরওয়া ৭/৭৪; আদাবুয যিফাফ, পৃঃ ৭১, সনদ হাসান।
[30]. বুখারী হা/৩৪৩৪, ৫০৮২, ৫৩৬৫; মুসলিম ৪৪/৪৯ হা/২৫২৭; মিশকাত হা/৩০৮৪।
[31]. বুখারী হা/২৪, ৬১১৮; মুসলিম হা/৩৬; মিশকাত হা/৫০৭০।
[32]. বুখারী হা/৩৪৮৪, ৬১২০; মিশকাত হা/৫০৭২।