পর্ব ১ । শেষ পর্ব ।

পরস্পরের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধির উপায়

বর্তমানে মানুষ স্বীয় স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। নিঃস্বার্থভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালবাসার বিষয়টি অনেকেই ভুলে গেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা দরকার। তাহ’লে সমাজ ও দেশ সুন্দর হবে। পরবর্তী প্রজন্ম একটি সৌহার্দ্র্যপূর্ণ পরিবেশ পাবে। মানুষের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

(১) ঈমান আনা ও নেক কাজ করা : ঈমানদার ব্যক্তিরা পরস্পরকে ভালবেসে থাকে। ঈমান ও নেক আমল যখন একত্রিত হয় তখন মুমিন যেমন আরেক মুমিনকে ভালবাসে আল্লাহ তা‘আলা এবং আকাশের ও যমীনের অধিবাসীগণও সেই বান্দাকে ভালবাসে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا- ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎ কর্ম সম্পাদন করে পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের অন্তরে) ভালবাসা সৃষ্টি করবেন’ (মারিয়ম ১৯/৯৬)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

إنَّ اللهَ إذا أحَبَّ عَبْدًا دَعا جِبْرِيلَ فقالَ: إنِّي أُحِبُّ فُلانًا فأحِبَّهُ، قالَ: فيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، ثُمَّ يُنادِيْ في السَّماءِ فيَقوْلُ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلانًا فأحِبُّوْهُ، فيُحِبُّهُ أهْلُ السَّماءِ، قالَ ثُمَّ يُوْضَعُ لَهُ القَبُوْلُ في الأرْضِ،

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিব্রীল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসি। অতএব তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিব্রীল (আঃ) তাকে ভালবাসেন। অতঃপর আকাশে ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভালবাস। তখন আকাশবাসীও তাকে ভালবাসেন। অতঃপর তার গ্রহণযোগ্যতা জমিনে রাখা হয়’।[1]

(২) সালাম বিনিময় করা : রাসূল (ছাঃ) মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টির জন্য বেশী বেশী সালাম বিনিময়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,أوَلاَ أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أفْشُوْا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেবো না, যা করলে তোমরা পরস্পর ভালবাসতে পারবে? (তা হ’ল) তোমরা পরস্পর সালাম বিস্তৃত করো’।[2]

(৩) হাদিয়া প্রদান করা : কোন মুসলিম ভাইকে হাদিয়া বা উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, تَهَادُّوْا تَحَابُّوْا، ‘তোমরা পরস্পরকে হাদিয়া দাও, তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে’।[3] 

(৪) সৎ ও মুত্তাকী ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা : মানুষ তার বন্ধুর চরিত্রে বিশেষিত হয়। আর ভাল, সৎ ও মুত্তাকী ব্যক্তি তার বন্ধুকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসবে। আবু সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন,لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ،‏ ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পাহেযগার লোক ব্যতীত অন্য কেউ না খায়’।[4] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ، ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে যে, সে কি ধরনের বন্ধু গ্রহণ করেছে’।[5] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) সৎসঙ্গীকে সুগন্ধ বহনকারীর সাথে তুলনা করেছেন। যার সাথে থাকলে সুগন্ধি পাওয়া যায়। আর অসৎ সঙ্গীকে কামারের হাফরের সাথে তুলনা করেছেন। যার সাথে থাকলে কাপড় জ্বালিয়ে দিবে অথবা দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে।[6]

(৫) বন্ধুর বাড়ীতে নিঃস্বার্থভাবে যাতায়াত করা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخًا لَهُ فِىْ قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ قَالَ أُرِيْدُ أَخًا لِى فِى هَذِهِ الْقَرْيَةِ. قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا قَالَ لاَ غَيْرَ أَنِّى أَحْبَبْتُهُ فِى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ فَإِنِّىْ رَسُولُ اللهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيْهِ.

‘জনৈক ব্যক্তি তার এক (মুসলিম) ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওয়ানা হয়। পথে আল্লাহ তার জন্য অপেক্ষমান একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। যখন সে তার কাছে আসল তখন (ফেরেশতা) তাকে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, আমি এই গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য যাচ্ছি। ফেরেশতা আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি যেখানে যার কাছে যাচ্ছ, সেখানে বা তার কাছে তোমার কোন স্বার্থ বা সম্পদ আছে কি যার কারণে তুমি সেখানে যাচ্ছ? লোকটি বলল, না আমি সেখানে যাচ্ছি এজন্য যে, আমি তাঁকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি। ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার নিকট দূত হিসাবে প্রেরিত হয়েছি, এই শুভ সংবাদ নিয়ে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এরূপ ভালোবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাস’।[7]  

(৬) সুন্দর কথা বলা : সুন্দর কথা বা আচরণের মাধ্যমে অনেক সময় শত্রু ও বন্ধুতে পরিণত হয়। এজন্য আল্লাহ মানুষকে সুন্দর কথা বলার নির্দেশ দিয়ে বলেন,وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا، ‘তোমরা মানুষের সাথে উত্তম কথা বল’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)

(৭) চরিত্রবান হওয়া : সুন্দর চরিত্রের মাধ্যমে অন্যকে নিজের বন্ধু বানানো যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّمَا بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ وفي روايةٍ صَالِحَ الأَخْلاَقِ، ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য, অন্য বর্ণনায় সৎ চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[8] চরিত্রবান ব্যক্তি জানণাতের উচ্চস্থানে আসীন হবেন। ক্বিয়ামতের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটতম হবেন। রাসূল (ছাঃ)-এর চারিত্রক গুণাবলী দেখেই অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মত হিসাবে আমাদের সকলের চরিত্রবান হওয়া উচিৎ। এতে আমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।

(৮) কল্যাণ কামণা করা : সকলের জন্য কল্যাণ কামনা করা একজন মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এর ফলে পরস্পরের ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ. ‘আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বায়া‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করার’।[9] রাসূল (ছাঃ) বলেন,الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ، قُلْنَا لِمَنْ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ، ‘দ্বীন হচ্ছে নছীহত বা কল্যাণ কামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহ, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসিলম নেতাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য’।[10]

(৯) ক্ষমা করা ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করা : মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করলে এবং নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে যে কোন মানুষই বন্ধু হয়ে যাবে। এমনকি চরম শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হ’তে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ، ‘ভাল ও মন্দ কখনো সমান হ’তে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর ভাল দ্বারা, যেন তোমার ও যার মধ্যে শক্রতা রয়েছে সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যায়’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৪)। তিনি আরো বলেন, 

هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কি হ’তে পারে’ (আর-রহমান ৫৫/৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إنَّ اللهَ رَفِيْقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ، ويُعْطِيْ عَلَى الرِّفْقِ مَا لاَ يُعْطِيْ عَلَى العُنْفِ، ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতা পসন্দ করেন। তিনি নম্রতার জন্য যা দান করেন, তা রুক্ষতার জন্য দান করেন না’।[11] 

(১০) কাউকে আল্লাহর জন্য ভালবাসলে তাকে অবহিত করা : কেবল আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসলে তাকে অবহিত করতে হবে। এতে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا أَحَبَّ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَلْيُخْبِرْهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ، ‘যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালবাসে, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালোবাসে’।[12] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَحَبَّ أَحَدُكُمْ صَاحِبَهُ فَلْيَأْتِهِ فِى مَنْزِلِهِ فَلْيُخْبِرْهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ لِلَّهِ، ‘যখন তোমাদের কেউ তার সাথীকে ভালবাসে, তখন সে যেন তার বাড়ীতে আসে এবং তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে’।[13] 

(১১) উপকার করলে প্রশংসা করা : কোন মুসলিম ভাই উপকার করলে ‘তার’ শুকরিয়া আদায় করলে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوْفٌ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا فَقَدْ أَبْلَغَ فِى الثَّنَاءِ، ‘কাউকে অনুগ্রহ করা হ’লে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা উত্তম প্রতিদান দিন’ তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল’।[14]

(১২) ভাল কাজের অছিয়ত করা : মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) তার হাত ধরে বললেন, ‘হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর আমি তোমাকে অছিয়ত করছি, হে মু‘আয! তুমি প্রত্যেক ছালাতের পরে এ শব্দগুলো বলা ছাড়বে না,اللَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ، ‘হে আল্লাহ! তোমার যিকর করার, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর’।[15] 

(১৩) দো‘আ করা : কোন মুসলিম ভাই অপর ভাইয়ের জন্য এই বলে দো‘আ করবে, أَحَبَّكَ الَّذِى أَحْبَبْتَنِى لَهُ، ‘যাঁর (আল্লাহর) ওয়াস্তে তুমি আমাকে ভালবাস, তিনি তোমাকে ভালবাসুন’।[16] 

(১৪) অন্যের প্রতি দয়াশীল হওয়া : অপরের প্রতি দয়াশীল হ’লে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। এজন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে লক্ষ্য করে বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظّاً غَلِيظَ الْقَلْبِ لانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ‘অতঃপর আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের জন্য প্রতি নম্র হয়েছিলে। যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন অন্তরসম্পন্ন হ’তে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। রাসূল (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، ‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত কর’ (শু‘আরা ২৬/২১৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ  ‘মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনত কর’ (হিজর ১৫/৮৮)। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মুমিনদেরকে পরস্পরের প্রতি দয়াশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

(১৫) কোন মুমিন মারা গেলে তার জন্য দো‘আ করা ও তার জন্য মনে কোন কুটিলতা না রাখা। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ جَاءُوْا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيْمٌ، ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু’ (হাশর ৫৯/১০)

(১৬) মানুষের নিকটে হাত পাতা বন্ধ করা : সাহল বিন সা‘দ আস-সা‘দী (রাঃ) বলেন, একজন লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যে আমলটি করলে আল্লাহ আমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালবাসবে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,ازْهَدْ فِى الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللهُ وَازْهَدْ فِيْمَا فِىْ أَيْدِى النَّاسِ يُحِبُّوْكَ النّاسُ، ‘তুমি দুনিয়া বিমুখ হও তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর মানুষের কাছে যা আছে তা থেকে বিমুখ হও তাহ’লে মানুষ তোমাকে ভালবাসবে’।[17] 

(১৭) অন্যের জন্য শুভাকাঙ্খী হওয়া : কোন ব্যক্তির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনা করলে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنُ أَخُو الْمُؤْمِنِ يَكُفُّ عَلَيْهِ ضَيْعَتَهُ وَيَحُوْطُهُ مِنْ وَرَائِهِ، ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হ’তে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে’।[18] 

(১৮) অন্যকে নিরাশ না করা : কারো আপদ-বিপদে সাহস জোগালে অতি সহজেই ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসূল (ছাঃ) মু‘আয ও আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও আদেশ দেন যে ,يَسِّرَا وَلاَ تُعَسِّرَا، وَبَشِّرَا وَلاَ تُنَفِّرَا، وَتَطَاوَعَا وَلاَ تَخْتَلِفَا، ‘লোকদের প্রতি সহজ করবে, কঠোরতা করবে না, তাদেরকে সুখরব দিবে, তাড়িয়ে দিবে না। পরস্পর একমত হবে, মতভেদ করবে না’।[19] 

(১৯) সংশোধনের জন্য নছীহত করা ও কল্যাণ কামনা করা : কোন ভাইকে সংশোধনের জন্য নছীহত করলে ভাল পথ দেখালে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ، إِلَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ، ‘(সকল মানুষই ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত) তবে তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈযের উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/৩)

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বায়‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার’।[20] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَقِيْلُوْا ذَوِى الْهَيْئَاتِ عَثَرَاتِهِمْ إِلاَّ الْحُدُوْدَ، ‘তোমরা উত্তম গুণাবলীর অধিকারী লোকদের পদস্খলন (ছোটখাট ত্রুটি) এড়িয়ে যাও, হদ্দের অপরাধ ব্যতীত’।[21] 

(২০) উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে তার ক্ষতি না করা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنُ أَخُو الْمُؤْمِنِ يَكُفُّ عَلَيْهِ ضَيْعَتَهُ وَيَحُوطُهُ مِنْ وَرَائِهِ ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হ’তে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে’।[22] দুনিয়াবী স্বার্থে মানুষ একে অপরের ক্ষতি সাধন করে। ফলে মুমিনদের মধ্যে ভালবাসা কমে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِى شَهْرِكُمْ هَذَا، فِى بَلَدِكُمْ هَذَا. ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকে তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন’।[23] 

ভালবাসা নষ্ট হওয়ার কারণ

মুমিমগণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালবাসবে এটা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ। কিন্তু প্রার্থিব কিছু স্বার্থ, শয়তানের প্ররোচনা ও অন্তরের কুটিলতাসহ বিভিন্ন করণে এই ভালবাসা নষ্ট হয়। এখানে ভালবাসা নষ্ট হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করছি।

(১) দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়া : আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা নষ্ট হওয়ার প্রথম ও প্রধান কারণ হ’ল পরস্পর ভালবাসার মধ্যে দুনিয়াবী চাওয়া-পাওয়া থাকা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللهُ وَازْهَدْ فِيْمَا فِيْ أَيْدِي النَّاسِ يُحِبُّوْكَ، ‘তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও, তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের নিকট যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহ’লে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে’।[24] আল্লাহর জন্য ভালবাসার মধ্যে দুনিয়াবী চাওয়া-পাওয়া ও স্বার্থ চলে আসলে সে ভালবাসা বেশী দিন টিকে না। বরং দুনিয়ার স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ভালবাসাও শেষ হয়ে যায়।

(২) ছিদ্রান্বেষণ, গীবত, অহেতুক ধারণা করা : কোন মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা, তার দোষ খুঁজে বের করা, তার পিছনে লেগে থাকা ভালবাসা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيْمٌ،

‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করবে? তোমরা তো তা অপসন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)। আল্লাহর জন্য ভালবাসা হয় পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে, কিন্তু সে ভালবাসার মধ্যে অন্যের দোষ-ত্রুটি খোঁজাখুঁজি করলে, গীবত অথবা অহেতুক ধারণা করলে সে ভালবাসা দিন দিন কমে যায়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. ‘তোমরা ধারণা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না, বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও’।[25] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيْمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِيْنَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِىْ بَيْتِهِ،‏ ‘হে সেসব লোক, যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে, কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমারা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায় আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন’।[26]

(৩) গোপন কথা প্রকাশ করা : মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা একটি বড় ব্যাপার। আর এতে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পায়, অপর দিকে মুসলিম ভাইয়ে দোষ-ত্রুটি  প্রকাশ করলে ভালবাসা নষ্ট হয়। কয়েকজন একত্র থাকলে একজনকে আলাদা করে অন্য কোন কথা বললে বা পরামর্শ করলে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা কমে যায়। এজন্য কুরআনে এরূপ কাজকে শয়তানের কুমন্ত্রণা বলা হয়েছে। (মুজাদালা ৫৮/১০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى رَجُلاَنِ دُوْنَ الآخَرِ، حَتَّى تَخْتَلِطُوْا بِالنَّاسِ، أَجْلَ أَنْ يُحْزِنَهُ، ‘কোথাও তোমরা তিনজন থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে-কানে কথা বলবে না। এত তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে তবে তা করতে দোষ নেই’।[27] 

(৪) হিংসা : ভালবাসা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হ’ল হিংসা করা। পারস্পরিক দয়া-মহববতের মধ্যেই ভালবাসা গড়ে উঠে। হিংসা সেই ভালবাসাকে ধ্বংস করে দেয়। যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمُ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ ‘তোমাদের আগেকার উম্মতদের রোগ তোমাদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। তা হ’ল পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা’।[28] 

(৫) কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করলে : প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রয়েছে। আর সবাই চায় তার এই গোপনীয়তা গোপন থাকুক। কিন্তু কোন মুসলিম যদি অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয়তা প্রকাশ করে বা গোপন বিষয়ে কাউকে আঘাত করে তাহ’লে পরস্পরের ভালবাসা হ্রাস পাবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হ’ল অনর্থক আচরণ পরিত্যাগ করা’।[29] 

(৬) নিজেকে প্রকাশ করার জন্য বেশী ব্যস্ত থাকা : ভালবাসা নষ্ট হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হ’ল অন্যকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা ও নিজেকে অন্যের উপরে প্রাধান্য দেওয়া। 

(৭) ভালবাসায় অতিরঞ্জণ না করা : কোন বিষয়েই অতিরিক্ত ভাল নয়। ভালবাসার ক্ষেত্রেও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা একান্ত যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَحْبِبْ حَبِيبَكَ هَوْنًا مَا عَسَى أَنْ يَكُونَ بَغِيضَكَ  يَوْمًا  مَا وَأَبْغِضْ  بَغِيضَكَ  هَوْنًا مَا عَسَى  أَنْ يَكُونَ حَبِيبَكَ‌ يَوْمًا مَا-  ‘তোমার বন্ধুর সাথে

ভালবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সাথেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে’।[30] 

(৮) ঝগড়া : যে কোন ঝগড়াই মানুষের ভালবাসাকে বিনষ্ট করে। এজন্য ইসলামে ঝগড়াকে এড়িয়ে চলার পরমর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَلَا تُجَادِلُوْا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْا آمَنَّا بِالَّذِيْ أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَأُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَهُنَا وَإِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُوْنَ- ‘আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে এদের ব্যতীত, যারা যুলুম করেছে। আর তোমরা বল, অমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার উপর এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী’ (আনকাবূত ২৯/৪৬)। আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

انَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ،

‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করল আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের যিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যিম্মাদার’।[31]


[1]বুখারী হা/৭৪৮৫; মুসলিম হা/২৬৩৭; মিশকাত হা/৫০০৫।

[2]মুসলিম হা/৫৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০৮১।

[3]আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪।

[4]আবূদাঊদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫; মিশকাত হা/৫০১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৪১।

[5]আবূদাঊদ হা/৪৮৩৩; তিরমিযী হা/২৩৭৮; মিশকাত হা/৫০১৯; ছহীহাহ হা/৯২৭।

[6]বুখারী হা/২১০১; মুসলিম হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৫০১০।

[7]মুসলিম হা/২৫৬৭; মিশকাত হা/৫০০৭।

[8]আদাবুল মুফরাদ হা/৪২২১; মিশকাত হা/৫০৯৬; ছহীহাহ হা/৪৫।

[9]. বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬; মিশকাত হা/৪৯৬৭।

[10]. মুসলিম হা/৫৬; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৪; মিশকাত হা/৪৯৬৭।

[11]মুসলিম হা/২৫৯৩; আবূদাঊদ হা/৮৪০৭; মিশকাত হা/৫০৬৮।

[12]. আবূদাঊদ হা/৫১২৪; মিশকাত হা/৫০১৬; ছহীহাহ হা/৪১৮।

[13]. ছহীহাহ হা/৭৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮১।

[14]. তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৬৮।

[15]. আবূদাঊদ হা/১৫২২; নাসাঈ হা/১৩০৩; মিশকাত হা/৯৪৯।

[16]. আবূদাঊদ হা/১৫২৫; মিশকাত হা/৫০১৭; ছহীহাহ হা/৪১৫।

[17]মুসলিম হা/১৫৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৪১০২; ছহীহাহ হা/৯৪৪।

[18]. আবূদাঊদ হা/৪৯১৮; মিশকাত হা/৪৯৮৫; ছহীহাহ হা/৯২৬।

[19]. বুখারী হা/৩০৩৮, ৪৩৪৪; মুসলিম হা/১৭৩৩; মিশকাত হা/৩৭২৪।

[20]. বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬; মিশকাত হা/৪৯৬৭।

[21]. আবূদাঊদ হা/৪৩৭৫; ছহীহাহ হা/৬৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১১৮৫।

[22]. আবূদাঊদ হা/৪৯১৮; মিশকাত হা/৪৯৮৫; ছহীহাহ হা/৯২৬।

[23]. বুখারী হা/৬৭, ১৭৩৯; মুসলিম হা/১৬৭৯; মিশকাত হা/২৬৭০।

[24]মুসলিম হা/১৫৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৪১০২; ছহীহাহ হা/৯৪৪।

[25]. বুখারী হা/৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩; মিশকাত হা/৫০২৮।

[26]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩৩৯-৪০।

[27]. বুখারী হা/৬২৯০; মুসলিম হা/২১৮৪; মিশকাত হা/৪৯৬৫।

[28]তিরমিযী হা/২৫১০; মিশকাত হা/৫০৩৯; ছহীহাহ হা/৬৮০।

[29]মুসলিম হা/১৫৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬; মিশকাত হা/৪৮৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯১১।

[30]. তিরমিযী হা/১৯৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৮।

[31]. আবূদাঊদ হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৪৬৪।





ঈদুল আযহা : গুরুত্ব ও তাৎপর্য - ড. মুহাম্মাদ আজিবার রহমান
তওবা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
আরব প্রিন্সদের উঁচু ভবন বানানোর প্রতিযোগিতা - রবার্ট ফিস্ক
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৭ম কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাসায়েলে কুরবানী - আত-তাহরীক ডেস্ক
ভূমিকম্পের টাইম বোমার ওপর ঢাকা : এখনই সচেতন হ’তে হবে - কামরুল হাসান দর্পণ
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আযান ও ইক্বামত : বিভ্রান্তি নিরসন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
যেসব ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আরও
আরও
.