অমর বাণী

১. মালেক বিন দীনার (রহঃ) বলেন,‌كفى ‌بالمرء ‌خيانة ‌أن ‌يكون ‌أميناً ‌للخونة، وكفى بالمرء شراً أن لا يكون صالحاً ويقع بالصالحين، ‘কোন ব্যক্তির খেয়ানতকারী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে খেয়ানতকারীর রক্ষক হবে। আর কোন মানুষের নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে নিজে নেককার হবে না; কিন্তু নেককার লোকদের সমালোচনা করবে’।[1]

২. আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, ‌نِيَّة ‌الْمُؤمن ‌خير ‌من ‌عمله ‌وَإِن ‌الله عز وَجل ليعطي العَبْد على نِيَّته مَا لَا يُعْطِيهِ على عمله وَذَلِكَ إِن النِّيَّة لَا رِيَاء فِيهَا وَالْعَمَل يخالطه الرِّيَاء، ‘মুমিনের আমলের তুলনায় তার নিয়তের গুরুত্ব বেশী। মহান আল্লাহ বান্দাকে তার নিয়তের কারণে যত দান করেন, স্রেফ আমলের কারণে ততটুকু প্রদান করেন না। কারণ হ’ল, (খালেছ) নিয়তের মাঝে রিয়া বা লৌকিকতা থাকে না; কিন্তু আমলের সাথে রিয়া মিশ্রিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে’।[2]

৩. আমের বিন আব্দে ক্বায়েস (রহঃ) বলেন,‌الكلمة ‌إذا ‌خرجت ‌من ‌القلب وقعت في القلب، وإذا خرجت من اللسان لم تجاوز الآذان، ‘যে কথা অন্তর থেকে বের হয়, সেটা অন্তরে দাগ কাটে। আর যে কথা স্রেফ মুখ দিয়ে বের হয়, সেটা কানের পর্দাও অতিক্রম করে না’।[3]

৪. আবদাহ ইবনে আবী লুবাবাহ (রহঃ) বলেন,أَقْرَبُ ‌النَّاسِ ‌إِلَى ‌الرِّيَاءِ آمَنُهُم مِنْهُ، ‘রিয়া বা লৌকিকতার সবচেয়ে নিকটবর্তী ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে রিয়া থেকে নিরাপদ মনে করে’।[4]

৫. বিশর আল-হাফী (রহঃ) বলেন, ‌قَدْ ‌يَكُوْنُ ‌الرَّجُلُ ‌مُرَائِياً ‌بَعْدَ ‌مَوْتِه يُحِبُّ أَنْ يَكْثُرَ الخَلْقُ فِي جِنَازَتِهِ، ‘কিছু মানুষ মৃত্যুর পরেও রিয়াকারী বলে গণ্য হ’তে পারে। সে চায়- মৃত্যুর পর তার জানাযায় অনেক মানুষ হোক (আর অন্যরা সেটা দেখে তার উচ্চ প্রশংসা করুক)।[5]

৬. ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন,‌مَا ‌مِنْ ‌أَحَدٍ ‌أَحَبَّ ‌الرِّئَاسَةَ إِلَّا حَسَدَ وَبَغَى وَتَتَبَّعَ عُيُوبَ النَّاسِ وَكَرِهَ أَنْ يُذْكَرَ أَحَدٌ بِخَيْرٍ، ‘যে নেতৃত্ব কামনা করবে, সে অবশ্যই হিংসা করবে, বাড়াবাড়ি করবে, মানুষের দোষ খুঁজে বেড়াবে এবং

কারো ভালো কাজের সুনাম হওয়াকে অপসন্দ করবে’।[6]

৭. ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন,‌من ‌طلب ‌العلم ‌خالصا لينتفع به عباد الله وينفع نفسه كان الخمول أحب إليه من التطاول، فذلك الذي يزداد في نفسه ذلا، وفي العبادة اجتهادا، ومن الله خوفا، وإليه اشتياقا، وفي الناس تواضعا، ‘যে ব্যক্তি নিজে উপকৃত হওয়ার জন্য এবং অন্যদেরকে উপকৃত করার জন্য একনিষ্ঠভাবে ইলম শিখে, মানুষের কাছে সুপরিচিত হওয়ার চেয়ে অপরিচিত থাকাই তার কাছে অধিক প্রিয়তর হবে। এই একনিষ্ঠ ইলমের জন্য সে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে করে, ইবাদত-বন্দেগীতে পরিশ্রমী হয়, আল্লাহকে আরও বেশী ভয় পায়, তাঁর প্রতি আরও বেশী আগ্রহী হয় এবং মানুষের মাঝে সে হয় সবচেয়ে বিনয়ী’।[7]

৮. সাহল ইবনে আবূ আসাদ (রহঃ) বলেন, مَثَلُ الَّذِي يُرِيدُ أَنْ تَجْتَمِعَ لَهُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ كَمَثَلِ عَبْدٍ لَهُ رَبَّانِ لَا يَدْرِي أَيَّهُمَا يُرْضِي، ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ তার জন্য একত্রিত হোক, তার উপমা সেই কৃতদাসের ন্যায়, যার দু’জন মনিব আছে। কিন্তু সে জানে না কোন মনিবকে সে সন্তুষ্ট করবে’।[8]

৯. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,كثير من الناس يصبر على مكابدة قيام الليل في الحر والبرد وعلى مشقة الصيام ولا يصبر عن نظرة محرمة، ‘এমন অনেক মানুষ আছে, যারা শীত-গ্রীষ্মে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ের পরিশ্রমে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, ছিয়ামের কষ্টে ছবর করতে পারে; কিন্তু তারা হারাম দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করতে পারে না’।[9]

১০. ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, من احب الا يَنْقَطِع عمله بعد مَوته ‌فلينشر ‌الْعلم بالتدوين والتعليم، ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, মৃত্যুর পরেও তার আমলের ধারা অব্যাহত থাকুক, সে যেন লেখালেখি এবং দরস-তাদরীসের মাধ্যমে ইলমের প্রচার-প্রসার ঘটায়’।[10]

১১. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,كُلُّ نَقْصٍ وَبَلَاءٍ وَشَرٍّ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، فَسَبَبُهُ الذُّنُوبُ، وَمُخَالَفَةُ أَوَامِرِ الرَّبِّ، فَلَيْسَ فِي الْعَالَمِ شَرٌّ قَطُّ إِلَّا الذُّنُوبَ وَمُوجِبَاتِهَا، ‘পাপাচার এবং রবের নির্দেশনা লঙ্ঘনের কারণেই দুনিয়া ও আখেরাতে নেমে আসে নে‘মতের ঘাটতি, বিপদাপদ এবং যাবতীয় অনিষ্ট। সমগ্র বিশে^ পাপ ও পাপের উপকরণের চেয়ে মন্দ কোন কিছু নেই’।[11]

এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/১৬৭।

[2]. দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/২৮৬।

[3]. জাহিয, আল-বায়ান ওয়াত তাবয়ীন, ১/৮৮।

[4]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৫/২৩০।

[5]. ঐ ১০/৪৭৩।

[6]. ইবনু আব্দিল বার্র, জামি‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী, ১/৫৭১।

[7]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, ৩/২৮২।

[8]. হান্নাদ ইবনে সারিই, আয-যুহদ, ২/৩৫৩।

[9]. ইবনুল ক্বাইয়িম, উদ্দাতুছ ছাবিরীন, পৃ. ১৯।

[10]. ইবনুল জাওযী, আত-তাযকিরাহ ফিল ওয়ায, পৃঃ ৫৫।

[11]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন, ১/৪২৪।






আরও
আরও
.