. ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَدْفَعُ الْبَلَاءَ عَنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ بِرِحْلَةِ أَصْحَابِ الْحَدِيثِ، ‘মহান আল্লাহ হাদীছ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মুহাদ্দিছগণের ভ্রমণের মাধ্যমে এই উম্মতের উপর থেকে বালা-মুছীবত দূর করে দেন’।[1]

. হাসান বছরী (রহঃ) বলেনاَلْمُؤْمِنُ فِي الدُّنْيَا كَالْأَسِيرِ، يَسْعَى فِي فِكَاكِ رَقَبَتِهِ، لَا يَأْمَنُ شَيْئًا حَتَّى يَلْقَى اللهَ عَزَّ وَجَلَّ- ‘দুনিয়াতে মুমিনের অবস্থা হ’ল আসামীর মতো। আসামী যেমন তার কারামুক্তির জন্য চেষ্টা-তদবীর করে, তেমনি মুমিন ব্যক্তিও আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্ব পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হ’তে পারে না’।[2]

. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, إِن السلف كانوا يسترون عبادتهم وكان عمل الربيع بْن خثيم كله سرا، فربما دخل عَلَيْهِ الداخل وَقَدْ نشر المصحف فيغطيه بثوبه- ‘সালাফগণ তাদের আমল সমূহ গোপন রাখতেন। রাবী‘ বিন খুছাইম তো সব আমলই গোপন করতেন। এমনকি তার কুরআন পড়া অবস্থায় কেউ তার ঘরে প্রবেশ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কাপড় দিয়ে কুরআন ঢেকে ফেলতেন’।[3]

. ইয়াহইয়া বিন মু‘আয (রহঃ) বলেন,عجبت من ثَلَاث رجل يرائي بِعَمَلِهِ مخلوقا مثله وَيتْرك أَن يعمله الله، وَرجل يبخل بِمَالِه وربه يستقرضه مِنْهُ فَلَا يقْرضهُ مِنْهُ شَيْئا، وَرجل يرغب فِي صُحْبَة المخلوقين ومودتهم وَالله يَدعُوهُ إِلَى صحبته ومودته- ‘তিন শ্রেণীর মানুষকে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই (১) সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর জন্য আমল সম্পাদন করা পরিহার করে তার মতোই অপর সৃষ্টিকে দেখানোর জন্য আমল করে (২) ঐ ব্যক্তি যে তার সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয়ে কৃপণতা করে। আল্লাহ তার কাছে ঋণ চান, কিন্তু সে আল্লাহকে ঋণ দেয় না (৩) ঐ ব্যক্তি, যে সৃষ্টিকুলের সাহচর্য ও ভালবাসা লাভের জন্য উদ্গ্রীব থাকে, অথচ আল্লাহ তাঁর সান্নিধ্য ও ভালবাসার দিকে তাকে আহবান করেন’।[4]

. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,كَمْ مِنْ مُتَعَبِّدٍ يُبَالِغُ فِيْ كَثْرَةِ الصَّلاةِ وَالصَّوْمِ وَلا يُعَانِيْ صَلاحَ الْقَلْبِ، وَقَدْ يَكُوْنُ عِنْدَهُ الْكِبْرُ وَالرِّيَاءُ وَالنِّفَاقُ وَالْجَهْلُ بِالْعِلْمِ وَلا يُحِسُّ بِذَلِكَ، ‘বহু ইবাদতগুযার লোক আছে, যারা বেশী বেশী ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে, কিন্তু অন্তরের পরিশুদ্ধিতার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় না। ফলে নিজের অজান্তেই তাদের মনে অহংকার, লৌকিকতা, মুনাফিকী ও অজ্ঞতার অনুপ্রবেশ ঘটে যায়’।[5]

. ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,رَأْسُ التَّوَاضُعِ ثَلَاثٌ: أَنْ تَرْضَى بِالدُّونِ مِنْ شَرَفِ الْمَجْلِسِ، وَأَنْ تَبْدَأَ مَنْ لَقِيتَهُ بِالسَّلَامِ، وَأَنْ تَكْرَهَ الْمِدْحَةَ وَالسُّمْعَةَ وَالرِّيَاءَ بِالْبِرِّ، ‘বিনয়ের প্রধান আলামত তিনটি (১) তোমাকে ছাড়া মজলিসের রওনক বৃদ্ধিতে তুমি সন্তুষ্ট থাকবে (২) যার সাথে দেখা হোক না কেন, তুমি প্রথম তাকে সালাম দিবে এবং (৩) তোমার ভাল কাজের কারণে প্রশংসা, খ্যাতি ও লৌকিকতাকে তুমি অপসন্দ করবে’।[6]

. মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেন,مَا حَسَدْتُ أَحَدًا عَلَى شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا لِأَنَّهُ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَكَيْفَ أَحْسُدُهُ عَلَى الدنيا وهي حفيرة فِي الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَكَيْفَ أَحْسُدُهُ عَلَى أَمْرِ الدُّنْيَا وَهُوَ يَصِيرُ إلى النار، ‘পার্থিব কোন বিষয়ে আমি কাউকে হিংসা করিনি। কেননা সে যদি জান্নাতের অধিবাসী হয়, তাহ’লে দুনিয়াতে আমি কিভাবে তার প্রতি হিংসা পোষণ করতে পারি? যে কি-না মৃত্যুর পর জান্নাতে চলে যাবে। আর সে যদি জাহান্নামের অধিবাসী হয়, তাহ’লে দুনিয়াবী বিষয়ে কিভাবে আমি তাকে হিংসা করতে পারি, যেহেতু সে জাহান্নামের পথে ধাবিত হচ্ছে’।[7]

. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন,مَن استخَفَّ بالعلماء ذهبت آخرتُه، ومن استخف بالأمراء ذهبت دنياه، ومن استخفَّ بالإخوان ذهبت مروءتُه- ‘যে ব্যক্তি আলেমদের অবজ্ঞা করে, তার আখেরাত নষ্ট হয়ে যায়। যে ব্যক্তি শাসকবর্গ বা আমীর-উমারাকে হেয় প্রতিপন্ন করে, তার দুনিয়া চলে যায়। আর যে ব্যক্তি তার ভাইদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যায়’।[8]

৯. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন,مَنْ أَسَاءَ إِلَيْكَ. ثُمَّ جَاءَ يَعْتَذِرُ مِنْ إِسَاءَتِهِ، فَإِنَّ التَّوَاضُعَ يُوجِبُ عَلَيْكَ قَبُولَ مَعْذِرَتِهِ، حَقًّا كَانَتْ أَوْ بَاطِلًا. وَتَكِلُ سَرِيرَتُهُ إِلَى اللهِ تَعَالَى ‘কেউ যদি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে, তারপর ক্ষমা চাইতে আসে; তাহ’লে বিনয়ের দাবী হ’ল তার ওযর গ্রহণ করা। তার ওযর সত্য হৌক বা মিথ্যা। আর তার অন্তরের বিষয়টা আল্লাহ তা‘আলার দিকে ন্যস্ত করা’।[9]


[1]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ৫৯।

[2]. ইবনু রজব, জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম ২/৩০।

[3]. ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস, পৃ. ১২৮।

[4]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১১৯।

[5]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ ২/২০৮।

[6]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আত-তাওয়াযূ‘উ ওয়াল খুমূল, পৃ. ১৫৪।

[7]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/১৮৯।

[8]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৪৪।

[9]. মাদারিজুস সালেকীন ২/৩২১।






আরও
আরও
.