১. আবুল লায়েছ সামারকান্দী (রহঃ) বলেন, نُورُ الْقَلْبِ مِنْ أَرْبَعَةِ أَشْيَاءَ: بَطْنٌ جَائِعٌ، وَصَاحِبٌ صَالِحٌ، وَحِفْظُ الذَّنْبِ الْقَدِيْمِ، وَقِصَرُ الْأَمَلِ ‘চারটি কাজের মাধ্যমে অন্তর্জগত আলোকিত হয়- (১) ক্ষুধার্ত পেট [অর্থাৎ আহার করার সময় কিছু অংশ খালি রাখা এবং হালাল খাদ্য হ’লেও উদরপূর্তি করে না খাওয়া] (২) সৎ সঙ্গী (৩) অতীতের গুনাহের পুনরাবৃত্তি না করা (৪) পার্থিব আশা-আকাঙ্খা হ্রাস করা’।[1]

২. সুফিয়ান বিন ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেন, مَا أَرَى طُولَ عُمْرِيْ هَذَا إِلَّا مِنْ كَثْرَةِ دُعَاءِ أَصْحَابِ الْحَدِيثِ ‘আমি আমার এই দীর্ঘ জীবনে আহলেহাদীছদের চেয়ে অন্য কারো দো‘আ এত বেশী কবুল হ’তে দেখিনি’।[2]

৩. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,أما من شكر بلسانه ولم يشكر بجميع أعضائه فمثله كمثل رجل له كساء فأخذ بطرفه ولم يلبسه فما ينفعه ذلك من الحر والبرد والثلج والمطر- ‘যে ব্যক্তি কেবল মুখের কথায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, অথচ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করে না, সে ঐ ব্যক্তির মতো যার একটি পোষাক আছে, সে কেবল এটাকে স্পর্শ করে কিন্তু পরিধান করে না, ফলে পোষাকটি তাকে গরম, প্রচন্ড শীত, তুষারপাত কিংবা বৃষ্টি থেকে কখনই সুরক্ষা দেয় না’।[3]

৩. ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, طُوبَى لِمَنْ إِذَا مَاتَ مَاتَتْ مَعَهُ ذُنُوبُهُ، وَالْوَيْلُ الطَّوِيْلُ لِمَنْ يَمُوْتُ وَتَبْقَى ذُنُوبُهُ مِائَةَ سَنَةٍ أَوْ أَكْثَرَ يُعَذَّبُ بِهَا فِي قَبْرِهِ وَيُسْأَلُ عَنْهَا إِلَى آخِرِ انْقِرَاضِهَا- ‘ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যার মৃত্যুর সাথে সাথে তার গুনাহগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর আফসোস ও ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য, যে মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ তার পাপ সমূহ শত বছর বা তার চেয়ে বেশী সময় পর্যন্ত অবশিষ্ট রয়ে গেছে। এ কারণে তাকে কবরে আযাব দেওয়া হবে এবং যতদিন তার এই গুনাহ বিলুপ্ত না হবে, ততদিন তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’।[4] হাবীব আবূ মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ سَعَادَةِ الْمَرْءِ إِذَا مَاتَ مَاتَتْ مَعَهُ ذُنُوبُهُ، ‘নিশ্চয়ই মানুষের অন্যতম সৌভাগ্যবান হ’ল সেই ব্যক্তি, যার

মৃত্যুর সাথে সাথে তার পাপগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়’।[5]

৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আওন (রহঃ) বলেন,لَا تَثِقْ بِكَثْرَةِ الْعَمَلِ، فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ أَيُقْبَلُ مِنْكَ أَمْ لَا، وَلَا تَأْمَنْ ذُنُوبَكَ، فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ كُفِّرَتْ عَنْكَ أَمْ لَا، إِنَّ عَمَلَكَ مَغِيبٌ عَنْكَ كُلَّهُ- ‘তুমি তোমার আমলের আধিক্য দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থেকো না। কেননা তুমি তো জান না যে, তোমার সেই আমলগুলো কবুল করা হয়েছে কিনা। আর তোমার গুনাহ থেকেও নিজেকে নিরাপদ মনে করো না। কেননা তুমি তো জান না যে, সেগুলি মাফ করা হয়েছে কি-না। (সুতরাং তুমি জেনে রাখ) তোমার আমলের নেকী তোমার নিকট থেকে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য রয়েছে’।[6]

৫. সুফিয়ান বিন ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেন,أَجْسَرُ النَّاسِ عَلَى الْفُتْيَا أَقَلُّهُمْ عِلْمًا بِاخْتِلَافِ الْعُلَمَاءِ، ‘ফৎওয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত লোক সবচেয়ে বেশী ধৃষ্টতা দেখায়, যারা আলেমদের মতভেদ সম্পর্কে সবচেয়ে কম জ্ঞান রাখে’।[7]

৬. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন,أَثْبَتُ النَّاسِ عَلَى الصِّرَاطِ أَصْحَابُ الْحَدِيثِ، ‘মানুষের মাঝে আহলেহাদীছরাই ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর অধিক প্রতিষ্ঠিত’।[8]

৭. আওন বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ فِي الْقَلْبِ كَكِفَّتَيِ الْمِيزَانِ بِقَدْرِ مَا تَرْجَحُ إِحْدَاهُمَا تَخِفُّ الْأُخْرَى- ‘অন্তরে দুনিয়া ও আখেরাতের তুলনাটা যেন দাড়িপাল্লার মত। এক পাশের পাল্লা যতটা ভারী হয়, অপর পাল্লাটি ঠিক ততটাই হালকা হয়ে যায়’।[9]

৮. কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন,جميع من سب النبي صلى الله عليه وسلم أو عابه أو ألحق به نقصا في نفسه أو نسبه أو دينه أو خصلة من خصاله أو عرض به أو شبهه بشيء على طريق السب له والإزراء عليه أو البغض منه والعيب له فهو ساب- ‘যে ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-কে গালি দিবে, তাঁর দোষ ধরবে, তাঁর নাম, বংশ, দ্বীন অথবা তাঁর কোন বৈশিষ্ট্যের সাথে ত্রুটি সম্পৃক্ত করবে, আকারে-ইঙ্গিতে তাঁর নিন্দা করবে অথবা গালি-গালায, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যকরণ, বিদ্বেষ পোষণ ও দোষ ধরার মত করে তাকে কোন কিছুর সাথে তুলনা করবে, সেই ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে কটূক্তিকারী হিসাবে গণ্য হবে’।[10]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[1]. তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ২২৫।

[2]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ৫১।

[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ‘উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ. ১৩৪।

[4]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ২/৭৪।

[5]. আবূ নু‘আইম ইস্পাহানী, হিলয়াতুল আউলিয়া ৬/১৫৩।

[6]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ২/৫২২।

[7]. ইবনু আব্দিল বার্র, জামেউ‘ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী ২/৮১৭।

[8]. শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ৫৮।

[9]. জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ২/৮৯০।

[10]. ইবনু তায়মিয়াহ, আছ-ছারিমুল মাসলূল, পৃ.৫২৫।






আরও
আরও
.