১. ওমর ইবনুল খাত্তবাব (রাঃ) বলেন,ويل لمن كَانَت الدُّنْيَا أمله والخطايا عمله عَظِيم بطنته قَلِيل فطنته عَالم بِأَمْر دُنْيَاهُ جَاهِل بِأَمْر آخرته، ‘দুর্ভোগ সেই ব্যক্তির জন্য, দুনিয়া যার আশা-আকাঙ্ক্ষার স্থল এবং পাপ করাই তার কাজ। সে অত্যন্ত ভোজন রসিক, স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী। সে কিন্তু পার্থিব বিষয়ে বিজ্ঞ হ’লেও আখেরাতের ব্যাপারে অজ্ঞ’।[1]
২. মুহাম্মাদ বিন ওয়াসে‘ (রহঃ) বলেন, إذا رأيت في الجنة رجلا يبكي، ألست تعجب من بكائه؟ قيل: بلى، قال: فالذي يضحك في الدنيا ولا يدري إلى ماذا يصير هو أعجب منه، ‘জানণাতে কোন ব্যক্তিকে যদি তুমি কাঁদতে দেখ, তাহ’লে কি অবাক হবে না? জবাবে বলা হ’ল, হ্যাঁ! তখন তিনি বললেন, এর চেয়েও বিস্ময়কর সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়াতে হাসে অথচ সে জানে না, তার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় হবে’ (জান্নাতে না-কি জাহান্নামে)।[2]
৩. ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,من لم يقرأ القرآن فقد هجره، ومن قرأ القرآن ولم يتدبره فقد هجره، ومن قرأ القرآن وتدبره ولم يعمل به فقد هجره، ‘যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করল না, সে কুরআনকে পরিত্যাগ করল। যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করল, কিন্তু তা অনুধাবন করল না, সে-ও কুরআনকে পরিত্যাগ করল। আর যে কুরআন তেলাওয়াত করল এবং তা অনুধাবন করল, কিন্তু সেই অনুযায়ী আমল করল না, সে ব্যক্তিও কুরআনকে পরিত্যাগ করল’। তারা সবাই আল্লাহর সেই আয়াতে শামিল হবে, যেখানে তিনি বলেছেন,وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوْا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُوْراً- ‘(সেদিন) রাসূল বলবে, হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল’ (ফুরক্বান ২৫/৩০)।[3]
৪. ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন,لَيْسَ تَقْوَى اللهِ بِصِيَامِ النَّهَارِ، وَلَا بِقِيَامِ اللَّيْلِ، وَالتَّخْلِيطِ فِيمَا بَيْنَ ذَلِكَ، وَلَكِنَّ تَقْوَى اللهِ تَرْكُ مَا حَرَّمَ اللهُ، وَأَدَاءُ مَا افْتَرَضَ اللهُ، فَمَنْ رُزِقَ بَعْدَ ذَلِكَ خَيْرًا، فَهُوَ خَيْرٌ إِلَى خَيْرٍ، ‘দিনভর ছিয়াম পালন করা এবং রাত জেগে ছালাত আদায় করার পর হালাল-হারামকে মিশিয়ে ফেলার নাম তাক্বওয়া নয়। বরং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ করা এবং যা ফরয করেছেন তা যথাযথভাবে আদায় করার নামই হ’ল তাক্বওয়া। এরপর যাকে সৎকর্ম সম্পাদনের তাওফীক দেওয়া হয়েছে, সেটা তার জন্য সোনায় সোহাগা’।[4]
৫. ওয়াহ্হাব ইবনুল ওয়ার্দ (রহঃ) বলেন,رُبَّ عَالِمٍ يُقَالُ لَهُ فَقِيهٌ، وَهُوَ عِنْدَ اللهِ مَكْتُوبٌ مِنَ الْجَاهِلِينَ، ‘এমন কতকে আলেম আছে, যাকে আলেম বলা হ’লেও আল্লাহর কাছে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত’।[5]
৬. আব্দুল্লাহ ইবনুল মু‘তায (রহঃ) বলেন,اَلْمُتَوَاضِعُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ أَكْثَرُهُمْ عِلْمًا كَمَا أَنَّ الْمَكَانَ الْمُنْخَفِضَ أَكْثَرُ البِقَاعِ مَاءً، ‘ইলম অন্বেষণে বিনয়ী ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশী জ্ঞান অর্জন করতে পারে। যেমন নিমণভূমি সর্বাধিক পানি ধরে রাখতে পারে’।[6]
৭. মালিক বিন দীনার (রহঃ) বলেন, إذا طلب الرجل العلم ليعمل به سره علمه وإذا طلب العلم لغير أن يعمل به زاده علمه فخرا، ‘মানুষ যখন আমল করার নিমিত্তে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তখন সে ইলম তাকে আনন্দিত করে। আর সে যখন আমল করা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তখন সেই জ্ঞান তার অহংকার বাড়িয়ে দেয়’।[7]
৮. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, كم ممن أشقى وَلَدَه وفلذةَ كبده في الدنيا والآخرة بإهماله وتركِ تأديبه وإعانته له على شهواته، ويزعم أنه يُكرمه وقد أهانه، وأنه يرحمه وقد ظَلَمَه وحرمه، ففَاتَهُ انتفاعُه بولده، وفوت عليه حظَّه في الدنيا والآخرة، وإذا اعتبرتَ الفسادَ في الأولاد رأيتَ عامَّتَه من قِبَل الآباء، ‘এমন কতক মানুষ আছে, যে তার কলিজার টুকরা সন্তানকে অযত্নে রেখে, আদব-কায়েদা না শিখিয়ে, প্রবৃত্তি চরিতার্থে সহায়তা করে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। সন্তানকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে মনে করে তাকে সেণহ করছে। তার প্রতি যুলুম করে এবং তাকে বঞ্চিত করে মনে করে তার প্রতি দয়া করছে। ফলে দুনিয়া ও আখেরাতে সন্তানের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার সুযোগ তার হাত ছাড়া হয়ে যায়। তুমি যদি সন্তান-সন্ততিদের মাঝে উচ্ছৃঙ্খলতা লক্ষ্য কর, তাহ’লে দেখতে পাবে এর অধিকাংশই পিতা-মাতাদের কাছ থেকেই এসেছে’।[8]
[1]. আল-আশবিলী, আল-‘আক্বিবাহ ফী যিকরিল মাওত, পৃ. ৯০।
[2]. গাযালী, এহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৩/১২৮।
[3]. আবূ যর ক্বালামূনী, ফার্ফিরূ ইলাল্লাহ, পৃ. ২৯৫; ই‘লামুল আছহাব, পৃ. ৬০৬।
[4]. ইবনু রজব, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম, ১/৪০০ পৃ.।
[5]. আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আউলিয়া ৮/১৫৭।
[6]. সাম‘আনী, আদাবুল ইমলা ওয়াল ইস্তিমলা, পৃ. ১৪৪।
[7]. আবূ হাতেম বুস্তী, রাওযাতুল ‘উক্বালা, পৃ.৩৫।
[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওলূদ, পৃ.২৪২।