অমর বাণী

১. মাসরূক্ব (মৃ. ৬২হি.) বলেন, كَفَى بِالْمَرْءِ عِلْمًا أَنْ يَخْشَى اللهَ. ‌وَكَفَى ‌بِالْمَرْءِ ‌جَهْلا أَنْ يُعْجَبَ بِعَمَلِهِ ‘মানুষের জ্ঞানী হওয়ার জন্য একটুকুই যথেষ্ট যে, সে আল্লাহকে ভয় করবে। আর মানুষের মূর্খ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে নিজের আমল নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগবে’।[1]

২. প্রখ্যাত তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব আল-কুরাযী (৪০-১০৮হি.) বলেন,‌إِذَا ‌أَرَادَ ‌اللهُ ‌بِعَبْدٍ ‌خَيْرًا ‌زَهَّدَهُ ‌فِي ‌الدُّنْيَا، وَفَقَّهَهُ فِي الدِّينِ، وَبَصَّرَهُ عُيُوبَهُ، وَمَنْ أُوتِيهِنَّ أُوتِيَ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান, তখন তাকে দুনিয়াবিমুখ করে দেন, তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দেন এবং নিজের দোষ-ত্রুটি অবলোকনের দৃষ্টিভঙ্গি দান করেন। আর যাকে এগুলো প্রদান করা হয়েছে, তাকে যেন দুনিয়া-আখেরাতের সার্বিক কল্যাণ দান করা হয়েছে’।[2]

৩. ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, إِنَّ ‌مِنْ ‌صَلَاحِ ‌تَوْبَتِكَ أَنْ تَعْرِفَ ذَنْبَكَ، وَإِنَّ مِنْ صَلَاحِ عَمَلِكَ أَنْ تَرْفُضَ عُجْبَكَ، وَإِنَّ مِنْ صَلَاحِ شُكْرِكَ أَنْ تَعْرِفَ تَقْصِيرَكَ، ‘তোমার তওবার বিশুদ্ধতা হ’ল তুমি তোমার গুনাহ সম্পর্কে অবগত থাকবে। তোমার আমলের বিশুদ্ধতা হ’ল তুমি আত্মতুষ্টি পরিত্যাগ করবে। আর তোমার শুকরিয়া আদায়ের বিশুদ্ধতা হ’ল তুমি তোমার সীমাবদ্ধতা বা কমতিগুলো জানবে’।[3]

৪. হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,كثر الخلق إذا نالوا الرئاسات تغيرت أخلاقهم ومالوا إلى الكبر وسرعة الانفعال، فمن الغلط أن تطالبه بالأخلاق التي كان

يعامل بها قبل الرئاسة، ‘এমন অনেক মানুষ আছে যখন তারা নেতৃত্ব লাভ করে, তখন তাদের চরিত্র বদলে যায়, অহংকারের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং অল্পতেই রাগ যাহির করে। নেতৃত্ব লাভের পূর্বে তাকে যে চরিত্রে দেখেছ, নেতৃত্ব লাভের পর তাকে সেই চরিত্রে পেতে চাওয়া তোমার ভুল হবে’।[4] 

৫. আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, لَأَنْ‌ ‌أَعَضَّ ‌عَلَى ‌جَمْرَةٍ حَتَّى تَبْرُدَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَقُولَ لِشَيْءٍ قَدْ قَضَاهُ اللهُ: لَيْتَهُ لَمْ يَكُنْ، ‘আমার কাছে জ্বলন্ত অঙ্গার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কামড়ে ধরে থাকা অধিকতর প্রিয় আল্লাহ্র ফায়ছালাকৃত কোন ব্যাপারে একথা বলার চেয়ে যে, হায়! যদি এটি না হ’ত’ (আবূদাঊদ, কিতাবুয যুহ্দ, পৃ. ১৩৭।)

৬. তাবেঈ বকর বিন আব্দুল্লাহ আল-মুযানী (মৃ. ১০৬ হি.) বলেছেন, يَا ابْنَ آدَمَ إِنْ أَرَدْتَ أن تَعْلَمَ قَدْرَ مَا أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْكَ فَغَمِّضْ عَيْنَيْكَ، ‘হে আদম সন্তান! তুমি যদি তোমার ওপর আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের পরিমাণ জানতে চাও, তবে তোমার দু’চোখ বন্ধ কর (এবং চিন্তা কর, তাহ’লে তুমি দেখতে পাবে- তোমার দৃষ্টি তোমার জন্য কত বড় নে‘মত এবং আল্লাহ তোমাকে কত রকম নে‘মতে ভরপুর রেখেছেন)’।[5]

৭. সার্রী আস-সাক্বাতী (১৬০-২৫৩ হি.) বলেন, لأن ‌تصلي ‌ركعتين ‌في ‌خلوة ‌تخلصهما خير لك من أن تكتب سبعين حديثاً أو سبعمائة بعلو، ‘নির্জনে ইখলাছের সাথে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা উচ্চতর সনদে সত্তর কিংবা সাতশ’টি হাদীছ লেখার চেয়েও উত্তম’।[6]

৮. ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন, حَيَاةُ الْقَلْبِ بِدَوَامِ الذِّكْرِ، وَالْإِنَابَةِ إِلَى اللهِ، وَتَرْكِ الذُّنُوبِ، ‘সার্বক্ষণিক যিক্র-আযকারে ব্যস্ত থাকা, আল্লাহমুখী হওয়া এবং পাপ বর্জনের মাধ্যমে অন্তর জীবিত থাকে’।[7]

 

৯. ইমাম গাযালী (৪৫০-৫০৫ হি.) বলেন, ‌إذا ‌أبغض ‌الله ‌عبدا أعطاه ثلاثا ومنعه ثلاثا أعطاه صحبة الصالحين ومنعه القبول منهم وأعطاه الأعمال الصالحة ومنعه الإخلاص فيها وأعطاه الحكمة ومنعه الصدق فيها ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার ওপর রাগান্বিত হন, তাকে তিনটি বস্ত্ত দান করেন এবং তিনটি বস্ত্ত থেকে বঞ্চিত করেন : (১) তাকে নেককার মানুষের সাহচর্য দান করেন; কিন্তু আমল কবুল করা থেকে বঞ্চিত করেন, (২) আমল করার তাওফীক্ব দেন; কিন্তু তাতে ইখলাছ বজায় রাখা থেকে তাকে বঞ্চিত করেন এবং (৩) তাকে হেকমত দান করেন; কিন্তু তাতে সততা বজায় রাখা থেকে বিরত রাখেন’।[8]

১০. ওমর বিন আব্দুল আযীয (৬১-১০১হি.) বলেন, ‌مَا ‌أُحِبُّ ‌أَنْ ‌يَهُونَ ‌عَلَيَّ سَكَرَاتُ الْمَوْتِ إِنَّهُ آخِرُ مَا يُكَفَّرُ بِهِ عَنِ الْمُسلم، ‘আমার জন্য মৃত্যুর যন্ত্রণা হালকা হওয়া আমার পসন্দনীয় নয়। কেননা মুসলিম ব্যক্তির গুনাহ মিটিয়ে দেওয়ার সর্বশেষ মাধ্যম হ’ল মৃত্যুযন্ত্রণা’।[9]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও শিক্ষক,
আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. ইবনু সা‘দ, আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৬/১৪২।

[2]. অকী‘ ইবনুল জার্রাহ (১২৯-১৯৭হি.), কিতাবুয যুহ্দ, পৃ. ২১৭।

[3]. আবুল লায়েছ সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃ. ৪৫৮।

[4]. আব্দুল মালিক কাসিম, মিফতাহু দা‘ওয়াতির রাসূল, পৃ. ৩০।

[5]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৬/২৬৭।

[6]. গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৪/২৭৮।

[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ৩/২৪৮।

[8]. ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৪/৩৭৮।

[9]. শামসুদ্দীন মানবিজী, তাসলিয়াতু আহলিল মাছায়েব, পৃ. ২৮।






আরও
আরও
.