. মুহাম্মাদ ইবনু আবী ‘আমীরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَوْ أَنَّ عَبْدًا خَرَّ عَلَى وَجْهِهِ مِنْ يَوْمِ وُلِدَ، إِلَى أَنْ يَمُوتَ هَرَمًا فِي طَاعَةِ اللهِ، لَحَقَّرَهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَلَوَدَّ أَنَّهُ رُدَّ إِلَى الدُّنْيَا كَيْمَا يَزْدَادَ مِنَ الْأَجْرِ وَالثَّوَابِ. ‘যদি কোন বান্দা ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন থেকে অতিবৃদ্ধ বয়সে মৃত্যু অবধি একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদতে সিজদায় পড়ে থাকে, তবুও কিয়ামতের দিন সে এটাকে নগণ্য মনে করবে। তখন সে কামনা করবে, যদি তাকে দুনিয়ায় পুনরায় ফেরৎ পাঠানো হ’ত, তাহলে আরো বেশী প্রতিদান ও ছওয়াব লাভ করা যেত’।[1]

২. আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,إِنَّ لِلْحَسَنَةِ نُورًا فِي الْقَلْبِ، وَزَيْنًا فِي الْوَجْهِ، وَقُوَّةً فِي الْبَدَنِ، وَسَعَةً فِي الرِّزْقِ، وَمَحَبَّةً فِي قُلُوبِ النَّاسِ- وَإِنَّ لِلسَّيِّئَةِ ظُلْمَةً فِي الْقَلْبِ، وشَيْنًا فِي الْوَجْهِ، وَوَهْنًا فِي الْبَدَنِ، ونَقْصًا فِي الرِّزْقِ، وَبُغْضَةً فِي قُلُوبِ الخَلْقِ ‘নিশ্চয় নেক আমলের প্রভাব হ’ল- অন্তরের আলো, চেহারার উজ্জ্বলতা, শারীরিক শক্তিমত্তা, রিযিকের প্রশস্তি এবং আমলকারীর প্রতি মানুষের আন্তরিক ভালবাসা। আর গুনাহের কুপ্রভাব হ’ল- হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া, চেহারার মলীনতা, শরীরের দুর্বলতা, রিযিকের ঘাটতি এবং সৃষ্টিকুলের অন্তরে ঘৃণার উদ্রেক’।[2]

৩.  যুন্নূন মিছরীকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল,متى أُحِبُّ ربي؟ ‘কখন আমি বুঝতে পারব যে, আমি আমার রবকে ভালবাসি?’ তখন তিনি বললেন,إِذَا كَانَ مَا يُبْغِضُهُ عِنْدَكَ أَمَرَّ مِنَ الصَّبْرِ ‘যে কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, এমন কাজ তোমার কাছে যদি ধৈর্য ধারণের চেয়ে কষ্টকর মনে হয়, (তখনই তুমি বুঝতে পারবে যে, তুমি আল্লাহকে ভালবাস)’।[3]

৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,كُنْ مَعَ الْوَالِدَيْنِ كَالْعَبْدِ الْمُذْنِبِ الذَّلِيْلِ الضَّعِيْفِ، لِلسَّيِّدِ الْفَظِّ الْغَلِيْظِ ‘পিতা-মাতার প্রতি তুমি ঐ রকম নম্রতা প্রদর্শন করো, দুর্বল অসহায় অপরাধী ক্রীতদাস কোন অপরাধ করে কঠোর-নির্দয় মনিবের প্রতি যেমন বিনয় প্রকাশ করে’।[4]

৫. একবার ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, مَنْ نَسْأَلُ بَعْدَكَ؟ ‘আপনার পরে আমরা কার কাছে মাসআলা জানতে চাইব?’ তিনি বললেন, ‘আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-ওয়ার্রাককে জিজ্ঞাসা করবে’। তখন লোকেরা বলল, إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ اتِّسَاعٌ فِي الْعِلْمِ ‘তার তো জ্ঞানের গভীরতা নেই’। তখন ইমাম আহমাদ (রহঃ) বললেন,إِنَّهُ رَجُلٌ صَالِحٌ مِثْلُهُ يُوَفَّقُ لِإِصَابَةِ الْحَقِّ ‘তিনি একজন সৎ মানুষ। এমন ব্যক্তিকে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার তাওফীক দেওয়া হয়’।[5]

৬. সার্রী আস-সাক্বাত্বী (রহঃ) বলেন,إنْ اغْتَمَمْتَ بِمَا يَنْقُصُ مِنْ مَالِكَ فَابْكِ عَلى مَا يَنْقُصُ مِنْ عُمُرِكَ ‘সম্পদ হ্রাস পাওয়ার কারণে যদি তোমার দুঃশ্চিন্তা হয়, তাহলে আয়ু কমে যাওয়ার কারণে তোমার ক্রন্দন করা উচিত’।[6]

৭. ইয়াহইয়া ইবনু মু‘আয (রহঃ) বলেন,اَلطَّاعَةُ خَزَانَةٌ مِنْ خَزَائِنِ اللهِ إِلاَّ أَنَّ مِفْتَاحَهَا الدُّعَاءُ وَأَسْنَانَهُ لُقَمُ الْحَلاَلِ ‘ইবাদত আল্লাহর এমন এক সঞ্চিত ভান্ডার, যার চাবিকাঠি হল দো‘আ। আর সেই চাবির দাঁত হচ্ছে হালাল খাদ্য গ্রহণ’।[7]

৮. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,اَلْحَرَامُ مِنَ القُوْتِ نَارٌ تُذِيْبُ شَحْمَةَ الفِكْرِ، وَتُذْهِبُ لَذَّةَ حَلاَوَةِ الذِّكْرِ، وَتُحَرِّقُ ثِيَابَ إِخْلاَصِ النِّيَّاتِ، وَمِنَ الْحَرَامِ يَتَوَلَّدُ عَمَى الْبَصِيْرَةِ وَظَلاَمِ السَّرِيْرَةِ ‘হারাম খাদ্য এমন এক আগুন, যা চিন্তা শক্তিকে বিনষ্ট করে দেয়, যিকিরের স্বাদ দূরীভূত করে দেয় এবং নিয়তের পরিশুদ্ধিতার পোষাক জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। আর হারাম খাদ্য গ্রহণের ফলে চোখ ও অন্তরজুড়ে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে’।[8]

৯. যায়েদ বিন আসলাম (রহঃ) বলেন,مَنِ اتَّقَى اللهَ حَبَّهُ النَّاسُ وَإِنْ كَرِهُوا ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, মানুষ তাকে গোপনে ভালবাসে, যদিও প্রকাশ্যে তাকে অপসন্দ করে’।[9]

১০. হযরত আলী (রাঃ) বলেন, 

إِذا كُنتَ في نِعمَةٍ فَارْعَها * فَإِنَّ الـمَعاصي تُزِيلُ النِّعَم.

وَحافِظْ عَلَيهَا بِتَقوى الْإِلَهِ * فَإِنَّ الإِلَهَ سَريعُ النِّقَمِ.

‘যখন তুমি আল্লাহর নে‘মতের মধ্যে থাক, তখন এর সবিশেষ যত্ন করো। কারণ গুনাহ নে‘মতকে দূর করে দেয়। আর তুমি আল্লাহভীতির মাধ্যমে সেই নে‘মতকে সংরক্ষণ কর। কেননা আল্লাহ দ্রুত প্রতিশোধ গ্রহণকারী’।[10]

[সংকলন]


[1]. আহমাদ হা/১৭৬৫০, সনদ ছহীহ।

[2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, রাওযাতুল মুহিববীন, পৃ. ৪৪১।

[3]. জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম ১/২২১।

[4]. তাফসীর হাদাইকুর রূহ ওয়ার রায়হান ১৬/৭১।

[5]. জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ১/২৫১।

[6]. ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৪৯৭।

[7]. ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ২/৯১।

[8]. বাহরুদ দুমূ‘, পৃ. ১৪৬।

[9]. হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/২২২।

[10]. দীওয়ানে আলী (রাঃ), পৃ. ১৪৮।





আরও
আরও
.