ভূমিকা : মানুষ কিছু কিছু বড় পাপকে হালকা করে দেখে। এটা মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। এর মধ্যে একটি পাপ রয়েছে, যা আমাদের মাঝে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ছোট থেকে বড়, অশিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত সবাই এটি অনায়াসেই করে থাকে। তা হ’ল পুরুষের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা। সেটা প্যান্ট, পায়জামা, লুঙ্গি, জুববা বা যেকোন পোষাক হোক না কেন। এ বিষয়ে কেউ উপদেশ দিলে তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে এড়িয়ে যায়। অনেকে বলে, ‘তুমি এখনও সেকেলে রয়ে গেলে, আধুনিকতার কিছুই বুঝ না’।
প্রিয় ভাই! আমরা মসজিদে কাতারবন্দী অবস্থায় সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে ছালাত আদায় করি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। এই দৃশ্য সত্যিই অন্তরে প্রশান্তি দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই যখন দেখি, ছালাত শেষ করে মসজিদ হ’তে বের হয়ে, আবার কেউবা মসজিদের ভিতরেই প্যান্ট বা পায়জামা টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে দিচ্ছে, তখন সেই বুকভরা আনন্দটা ম্লান হয়ে আফসোসে রূপান্তরিত হয়।
প্রিয় মুসলিম ভাই! আমরা কি ছালাতে আল্লাহকে বলি না যে, আমরা শুধুমাত্র তোমারই ইবাদত করি। আমরা আরো বলি, ‘আমাদের ইহুদী-নাছারাদের পথে পরিচালিত করবেন না’ (ফাতিহা ১/৭)। যেখানে আমি ইহুদী-নাছারাদের পথ থেকে দূরে থাকতে চাইলাম, সেখানে কীভাবে আমি ছালাত শেষ হ’তে না হ’তেই ইহুদী-খৃষ্টানদের অনুসরণ শুরু করে দিলাম? আমি কি কখনও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করেছি? মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার ও নিজেদের শপথ সমূহকে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (আলে-ইমরান ৩/৭৭)।
দেখুন! যে নিয়মে পোষাক পরাকে আপনি আধুনিকতা মনে করছেন এবং নবী করীম (ছাঃ)-এর দেওয়া পদ্ধতিকে হেয় করছেন এটি জাহালাত বা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। নবী করীম (ছাঃ) যখন এর ভয়াবহতা উল্লেখ করলেন তখন আবূ যার (রাঃ) বললেন, তারা কারা? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘এরা হ’ল (ক) যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে (খ) যে ব্যক্তি পণ্যের বেশী কাটতির চেষ্টায় মিথ্যা কসম করে ও (গ) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয়’।[1]
প্রিয় ভাই! আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করার সময় একশত দয়া সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে একটি দয়া পুরো সৃষ্টিজগতের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছেন, বাকী ৯৯টি দয়া তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিচারের মাঠে তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করবেন।[2] যার একেকটা দয়ার পরিধি হচ্ছে আসমান-যমীন সমতুল্য।[3] এরপরও যদি বিচারের মাঠে আল্লাহ টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানের কারণে তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে না তাকান, তাহ’লে ঐ ব্যক্তি কত বড় হতভাগা! অথচ সামান্য এই পাপের কারণে হাশরে পাপীকে আঙ্গুল কামড়াতে কামড়াতে জাহান্নামে যেতে হবে’ (ফুরক্বান ২৫/২৭-২৮)।
এ ছোট পাপের পরিণতি কত ভয়াবহ! অথচ মানুষ এটাকে খুব হালকাভাবে দেখে। একবার টাখনুর উপরে কাপড় উঠাতে শতবার চিন্তা করতে হয় লোকেরা কি বলবে? মানুষ বলবে, শিক্ষিত হয়ে আজও সেকেলে রয়ে গেলে?
আপনি লোকের কথা আর আত্মীয়-স্বজনের কথা চিন্তা করছেন, অথচ জাহান্নামের শাস্তির ভয় করছেন না! হাশরের ময়দানে এরা কেউ আপনার উপকারে আসবে না। কেউ সহযোগিতা করবে না। সবাই আপনাকে দেখে পালিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ، وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ، وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ، لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ، ‘সেদিন মানুষ পালাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও বাপ থেকে এবং তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে। প্রত্যেক মানুষের সেদিন এমন অবস্থা হবে যে, সে নিজেকে নিয়েই বিভোর থাকবে’ (আবাসা ৮০/৩৪-৩৭)।
মনে রাখতে হবে যে, প্যান্ট, লুঙ্গি, পায়জামা, জামা ও পাগড়ি সবগুলোর ক্ষেত্রে একই বিধান। সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ، لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কোন পোষাক হেঁচড়িয়ে চলবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লুঙ্গি সম্পর্কে যা বলেছেন, জামা সম্পর্কেও তাই বলেছেন’।[5]
আপনি হয়ত মনে করছেন, হাদীছে অহংকারের কথা বলা হয়েছে। আমি তো অহংকার করে টাখনুর নীচে কাপড় পরছি না! আমরা স্টাইল হিসাবে এমনিতেই পরে থাকি। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হয়তো আপনার কথা ঠিক। তবে আপনার এই যুক্তি কুরআন হাদীছের সামনে অচল। কেননা অহংকার সেটা নয় যেটা আপনি ভাবছেন। বরং ইসলামের বিধি-বিধান অবজ্ঞা করা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করাই মূলতঃ অহংকার। তাছাড়াও সরাসারি হাদীছে এসেছে, ‘টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় পরা মানেই অহংকার করা’।[6]
কাজের পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) অনেক হুঁশিয়ারী বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোন এক ব্যক্তি অহংকার করে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করত। তাই তাকে যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত সে যমীনের মধ্যে ধসতে থাকবে।[7] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তখন এক ব্যক্তি বলল, কেউ তো পসন্দ করে যে তার পোষাক ভাল হোক, তার জুতা সুন্দর হোক (এটাও কি অহংকার)? তিনি বললেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সেŠন্দর্যকে পসন্দ করেন। অহংকার হ’ল হক্বকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা’।[8] এজন্য কোন মুসলিম পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা সর্বাবস্থায় হারাম।
টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম :
প্রিয় ভাই! কোন নোংরা, ময়লা বা কাদাযুক্ত পানি পার হওয়ার সময় আপনি ঠিকই প্যান্ট-পায়জামা টাখনুর উপরে উঠিয়ে নেন। দুনিয়ার পানি-কাদা থেকে বাঁচতে এ কাজ করেছেন অথচ জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এরূপ কিছুই করেন না। জেনে রাখুন, যারা টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তাদের শেষ ঠিকানা হবে জাহান্নাম। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فِي النَّارِ- يَقُولُ ثَلاَثًا، ‘কাপড় টাখনুর নীচে যে পরিমাণ ঝুলবে সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে। একথা তিনি তিনবার বলেছেন’।[9] তিনি আরো বলেছেন,ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- الْمُسْبِلُ (وَفِي رِوَايَةٍ إزَارَهُ) وَالْمَنَّانُ (وَفِي رِوَايَةٍ: اَلَّذِىْ لاَ يُعْطِىْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْهُ) وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ- ‘তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হ’ল- টাখনুর নীচে কাপড় (অন্য বর্ণনায় লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্যত্র এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোন কিছু দান করে না) ও মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী’।[10]
এখানে আপনি ভাবতে পারেন যে, ‘টাখনুর নীচের অংশ জাহান্নামে যাবে’ বাকী অংশ তো আর যাবে না, সুতরাং ‘কুচ পরওয়া নেহি’। তাহ’লে এ বিষয়টা বুঝাতে একটি উদাহরণ দেওয়া প্রয়োজন। ধরুন, আপনি বিদ্যুতের বোর্ডের সকেটের দুই ছিদ্রে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছেন, এখন কি শুধু আপনার আঙ্গুলেই শক লাগবে নাকি, পুরো শরীরে শক লাগবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে দীর্ঘ চিন্তা করতে হবে না। বিষয়টি স্পষ্ট করতে আরেকটি হাদীছ পেশ করি রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلَانِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِي الْمِرْجَلُ مَا يُرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا ‘জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে কম আযাব হবে ঐ লোকের, যাকে আগুনের ফিতাসহ একজোড়া জুতা পরানো হবে। তাতে তার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে, যেমনভাবে তামার পাত্রে পানি ফুটতে থাকে। সে ধারণা করবে, তার চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কেউ ভোগ করছে না, অথচ সে হবে সবচেয়ে কম ও সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত লোক’।[11]
ছালাতে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী থেকে আল্লাহ দায়িত্বমুক্ত : টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারীকে মহান আল্লাহ ভালোবাসেন না। ঐ ব্যক্তির ছালাতও ত্রুটিপূর্ণ। ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,مَنْ أَسْبَلَ إِزَارَهُ فِي صَلَاتِهِ خُيَلَاءَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِي حِلٍّ وَلَا حَرَامٍ، ‘যে ব্যক্তি ছালাত অবস্থায় স্বীয় কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরবে, সে হালাল অবস্থায় থাকুক অথবা হারাম অবস্থায় থাকুক তাতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না’।[12]
সুতরাং কোন ব্যক্তি ছালাত অবস্থায়ও টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরলে মহান আল্লাহর দায়িত্ব তার উপর থেকে উঠে যায়। সুতরাং সে হালাল অবস্থায় নাকি হারাম অবস্থায় আছে, সেটা আল্লাহর নিকটে বিবেচ্য বিষয় নয়। যেহেতু তার দায়িত্ব আল্লাহ নিবেন না। সুতরাং তার ছালাতও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর এ অবস্থায় মারা গেলে তাকে মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ নিবেন না। বিধায় এরূপ কাজ পরিহার করা যরূরী।
প্রিয় ভাই! আপনি ছালাতে যাওয়ার আগে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করেছিলেন, এখন যখন ছালাতে যাচ্ছেন তখন কাপড় উঠিয়ে নিলেন, এটা কেন করেন? জেনে রাখুন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতে কাপড় গুটাতে নিষেধ করেছেন।[13] সুতরাং সর্বাবস্থায় কাপড় টাখনুর উপরে রাখতে প্যান্ট-পায়জামা পরিমাণমত কেটে সেলাই করে নিতে হবে। যেন স্বাভাবিকভাবেই তা সর্বদা টাখনুর ওপরে থাকে।
পুরুষ কতটুকু কাপড় ঝুলিয়ে পরতে পারবে?
পুরুষরা তাদের পরিধেয় কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরতে পারবে তাও ইসলামে বলে দেওয়া হয়েছে। হুযায়ফাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমার অথবা তাঁর নিজের নলার পিছনভাগ ধরে বললেন,هَذَا مَوْضِعُ الْإِزَارِ فَإِنْ أَبَيْتَ فَأَسْفَلَ فَإِنْ أَبَيْتَ فَأَسْفَلَ فَإِنْ أَبَيْتَ فَلَا حَقَّ لِلْإِزَارِ فِي الْكَعْبَيْنِ. ‘এটা হ’ল লুঙ্গি বা পায়জামার (পরিধানের) জায়গা। তুমি না মানতে চাইলে আরেকটু নীচে নামাতে পার। তুমি না মানতে চাইলে আরেকটু নীচে নামাতে পার। যদি তাও মানতে রাযী না হও তবে জেনে রাখ, লুঙ্গি-পায়জামার পায়ের গোড়ালী স্পর্শ করার কোন অধিকার নেই’।[14]
সুতরাং পুরুষ তার পরিধেয় কাপড় টাখনুর উপর পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরতে পারবে। টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরার কোন সুযোগ নেই। তবে বেখেয়ালে কোন সময় কাপড় টাখনুর নীচে নেমে গেলে এবং সাথে সাথে উঠিয়ে নিলে কোন গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।[15]
মহিলারা কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে?
মুসলিম মহিলারা তাদের পরিধেয় বস্ত্র কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে সে বিষয়েও সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোন বিষয়ে ইসলামে অস্পষ্টতা রাখা হয়নি। উম্মে সালামাহ রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ‘মেয়েরা স্বীয় কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, تُرْخِي شِبْرًا ‘(নলা থেকে) এক বিঘত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবে’। আমি বললাম, এতে তো তার পা উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। তিনি বললেন, فَذِرَاعًا لَا تَزِيدُ عَلَيْهِ ‘তাহ’লে সে একহাত পরিমাণ নীচে ঝুলিয়ে রাখবে। তথা তারা পদতালু বরাবর ঝুলিয়ে পরবে তার চেয়ে বেশী নয়’।[16]
প্রশ্ন হ’তে পারে যে, তাহ’লে তো পোষাকের নীচের অংশে নাপাকী লেগে যাবে। এরও সমাধান আছে। ‘এক মহিলা জিজ্ঞেস করল, আমাদের মাসজিদে যাওয়ার রাস্তাটি আবর্জনাপূর্ণ। সুতরাং বৃষ্টি হ’লে আমরা কি করবো? তিনি বললেন, এর পরের রাস্তাটা কি এর চাইতে ভালো নয়? তখন মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে এটা ওটার পরিপূরক (এ রাস্তার ময়লা ঐ ভালো রাস্তা দূর করে দিবে)’।[17]
উপরের হাদীছ থেকে বুঝা গেল যে, মুসলিম মহিলাদের কাপড় পদতালু পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরতে হবে। কেননা চলাফেরা করার সময় যেন তাদের পায়ের সৌন্দর্য প্রকাশিত না হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মুসলিম মহিলাগণ ঠিক সেভাবেই কাপড় পরিধান করতেন। তাদের কাপড় মাটি হেঁচড়িয়ে চলতো। যার দরুন অনেক সময় রাস্তার আবর্জনা লেগে যেত। যা হাদীছে স্পষ্ট হয়েছে। সাথে সাথে এটা প্রমাণিত হ’ল যে, তাদের কাপড় টাখনুর নীচ পর্যন্ত ঝুলে থাকতো। বিধায় মুসলিম মহিলাদের উচিত পদতালু পর্যন্ত কাপড়ে আবৃত হয়ে চলাফেরা করা।
সুধী পাঠক! বর্তমানে অধিকাংশ পুরুষ টাখনুর নীচে কাপড় তথা প্যান্ট-পায়জামা বা লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরার পাশাপাশি জুববাও টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরে। এটা আরো পরিতাপের বিষয়। আমরা তাদের জুববার দীর্ঘতা দেখে ধারণা করি, জুববা বা আলখেল্লা হয়ত টাখনুর নিচে পরা যায়। তবে মূলকথা হল, এ সবই অপরাধের দিক দিয়ে সমান।
মনে রাখতে হবে, পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত মূল সতর। যা ঢেকে রাখা ফরয। কিন্তু আজকাল পুরুষেরা নাভি উন্মুক্ত করে টাখনু ঢাকা শুরু করেছে। আর মেয়েদের টাখনুর নীচ পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা আবশ্যক। অথচ অনেকে পায়ের নলা পর্যন্ত কাপড় পরিধান করছে। নারী-পুরুষ উভয়েই ইসলামের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত রয়েছে। এরা অভিশপ্ত।[18]
পরিশেষে একটি হাদীছ উল্লেখ করে আলোচনা শেষ করছি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ زَمَانَ صَبْرٍ، للمُتَمَسِّكِ فِيهِ أَجْرُ خَمْسِيْنَ شَهِيدًا، ‘তোমাদের পরে এমন একটা কঠিন সময় আসছে, যখন কোন সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তি তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন শহীদের সমান নেকী পাবে’।[19] বর্তমান যুগের প্রত্যেক সুন্নাতী আমলের পাবন্দ ব্যক্তির জন্য এই সুসংবাদ। অতএব কোন বিধানকে খুঁটিনাটি বলে অবজ্ঞা করা যাবে না। বরং সেগুলো পালনে যেমন নানাবিধ উপকার রয়েছে, তেমনি অঢেল নেকীও রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের গুনাহ হ’তে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন-আমীন!!
আব্দুল মালেক বিন ইদরীস
খত্বীব, বিশ্বনাথপুর জামে মসজিদ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
[1]. মুসলিম হা/১০৬; আবূদাঊদ হা/৪০৮৭; তিরমিযী হা/১২১১; নাসাঈ হা/৪৪৫৮; ইবনু মাজাহ হা/২২০৮; মিশকাত হা/২৭৯৫।
[2]. বুখারী হা/৬০০০; মুসলিম হা/২৭৫২; মিশকাত হা/২৩৬৫।
[3]. মুসলিম হা/২৭৫৩, ইফা. ৬৭২৪।
[4]. আবূদাঊদ হা/৪০৯৪; নাসাঈ হা/৫৩৩৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৭৬; ছহীহ তারগীব হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৪৩৩২, সনদ ছহীহ।
[5]. আবূদাঊদ হা/৪০৯৫; ছহীহুত তারগীব হা/২০৩০, সনদ ছহীহ।
[6]. আবূ দাঊদ হা/৪০৮৪; আহমাদ হা/২০৬৫৫; ছহীহাহ হা/১১০৯; মিশকাত হা/১৯১৮, সনদ ছহীহ।
[7]. বুখারী হা/৫৭৯০; মুসলিম হা/২০৮৮; নাসাঈ হা/৫৩২৬; মিশকাত হা/৪৩১৩।
[8]. মুসলিম হা/১৪৭; আবূ দাঊদ হা/৪০৯২; মিশকাত হা/৫১০৮।
[9]. আবূ দাঊদ হা/৪০৯৩; ইবনে মাজাহ হা/৩৫৭৩; মিশকাত হা/৪৩৩১, সনদ ছহীহ; রাবী : আবূ হুরায়রা (রাঃ)।
[10]. মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫।
[11]. বুখারী হা/৬৫৬১; মুসলিম হা/৩৬১-৬২; তিরমিযী হা/২৬০৪; মিশকাত হা/৫৬৬৭, রাবী : নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ)।
[12]. আবূ দাঊদ হা/৬৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০১২, সনদ ছহীহ।
[13]. বুখারী হা/৮০৯-১০; আবূদাঊদ হা/৮৮৯-৯০; ইবনু মাজাহ হা/৮৮৩-৮৪।
[14]. তিরমিযী হা/১৭৮৩; নাসাঈ হা/৫৩২৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৭২, সনদ ছহীহ।
[15]. বুখারী হা/৬০৬২; আবূদাঊদ হা/৪০৮৫; মিশকাত হা/৪৩৬৯।
[16]. আবূদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪, সনদ ছহীহ।
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৮৩-৮৪; মিশকাত হা/৫০৪, ৫১২।
[18]. বুখারী হা/৫৮৮৬; ইবনু মাজাহ হা/১৯০৪; মিশকাত হা/৪৪২৮।
[19]. মু‘জামুল কাবীর হা/১০৩৯৪; ছহীহাহ হা/৪৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৩৪।