10- عَنِ الْمِقْدَامِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ: بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يَبْدَأُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْكِ، وَإِذَا خَرَجَ مِنْ عِنْدِكِ؟ قَالَتْ: كَانَ يَبْدَأُ إِذَا دَخَلَ بِالسِّوَاكِ، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ-
১০. মিক্বদাম স্বীয় পিতা শুরায়হ (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূল (ছাঃ) আপনার ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্ কাজটি করতেন এবং যখন বের হ’তেন তখন কি করতেন? তিনি বললেন, যখন আমার ঘরে প্রবেশ করতেন, তখন সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন এবং বের হওয়ার সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’।[1]
পর্যালোচনা : মুহাক্কিকগণ এর সনদকে যঈফ এবং মতনকে মুনকার বলেছেন। কারণ এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান নামে একজন মাজহূল রাবী রয়েছেন। এছাড়া এতে শারীক বিন আব্দুল্লাহ কাযী নামে একজন যঈফ রাবী রয়েছেন।[2] তাছাড়া এর বিপরীতে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنِ الْمِقْدَامِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ يَا أُمَّهْ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ عَلَيْكِ بَيْتَكِ وَبِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَخْتِمُ قَالَتْ كَانَ يَبْدَأُ بِالسِّوَاكِ وَيَخْتِمُ بِرَكْعَتَىِ الْفَجْرِ-
‘মিক্বদাম পিতা শুরায়হ (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূল (ছাঃ) তার ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্ কাজটি করতেন এবং কোন্ কাজ দ্বারা শেষ করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন এবং ফজরের দু’রাক‘আত ছালাতের মাধ্যমে সমাপ্ত করতেন’।[3] অত্র হাদীছ প্রমাণ করে না যে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় জুম‘আর পূর্বের সুন্নাত আদায় করতেন।
11- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ ثُمَّ قَالَ فِى الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ-
১১। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। তৃতীয়বারে বললেন, যে চায় (তার জন্য)’।[4]
পর্যালোচনা : অনেকে এই হাদীছ দ্বারা জুম‘আর পূর্বে সুন্নাতে রাতেবার দলীল গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ইজতিহাদ সঠিক নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) শেষে বলেছেন, لِمَنْ شَاءَ، ‘যে চায়’। যা প্রমাণ করে যে, এই ছালাত নফল ছিল। তাছাড়া কোন মুহাদ্দিছ উক্ত হাদীছকে কেন্দ্র করে সুন্নাতে রাতেবার অধ্যায় রচনা করেননি। বরং তাদের প্রত্যেকেই ফরয ছালাতের অনুগামী হিসাবে নফলের আলোচনা, আযান ও ইক্বামতের মাঝে ছালাত সিদ্ধ হওয়া, মাগরিবের আযানের পরে দু’রাক‘আত ছালাত সিদ্ধ ইত্যাদি শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন।
১২- عَنْ ثَعْلَبَةَ بْنِ أَبِي مَالِكٍ الْقُرَظِيِّ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُمْ كَانُوا فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، يُصَلُّونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، حَتَّى يَخْرُجَ عُمَرُ. فَإِذَا خَرَجَ عُمَرُ، وَجَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ، وَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُونَ قَالَ ثَعْلَبَةُ جَلَسْنَا نَتَحَدَّثُ. فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُونَ وَقَامَ عُمَرُ يَخْطُبُ، أَنْصَتْنَا، فَلَمْ يَتَكَلَّمْ مِنَّا أَحَدٌ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَخُرُوجُ الْإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلَاةَ، وَكَلَامُهُ يَقْطَعُ الْكَلَامَ-
১২. ছা‘লাবা ইবনু আবি মালিক আল-কুরাযী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে জুম‘আর দিন তারা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আগমন করা পর্যন্ত ছালাত পড়তে থাকতেন। যখন ওমর (রাঃ) আগমন করতেন এবং মিম্বরে বসতেন ও মুওয়াযযিন আযান দিতেন। ছা‘লাবা (রহঃ) বলেন, আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা বলতাম, মুওয়াযযিন যখন আযান শেষ করতেন এবং ওমর (রাঃ) খুৎবা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতেন, তখন আমরা চুপ হয়ে যেতাম। তখন কেউ কোন কথা বলত না। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, (এতে বুঝা গেল) ইমামের আগমন ছালাতকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং তার কালাম (খুৎবা) কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করে দেয়’।[5]
পর্যালোচনা : উক্ত ছহীহ আছার থেকে কেউ কেউ সুন্নাতে রাতেবার দলীল নিয়েছেন। অথচ এই আছারে তাদের বিরুদ্ধে দলীল রয়েছে।يُصَلُّونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، حَتَّى يَخْرُجَ عُمَرُ، ‘ছাহাবীগণ ওমর (রাঃ)-এর আগমন পর্যন্ত ছালাত আদায় করতেন। যা প্রমাণ করে যে, তারা রাক‘আত সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই নফল ছালাত আদায় করতে থাকতেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) ৮ রাক‘আত ও ইবনু ওমর (রাঃ) ও প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা বিন রাবাহ ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন।[6] সুতরাং উক্ত আছার দ্বারা নফল ছালাত প্রমাণিত হয়। সুন্নাতে রাতেবা নয়।
13- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ، فَقَالَ لَهُ: يَا سُلَيْكُ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا ثُمَّ قَالَ: إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا-
১৩. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুম‘আর দিন সুলায়ক আল-গাত্বাফানী এসে উপস্থিত হ’ল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। সে বসে পড়লে তিনি তাকে বললেন, হে সুলায়ক! উঠে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর। অতঃপর তিনি বললেন, জুম‘আর দিন তোমাদের কেউ যখন আসে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে’।[7]
পর্যালোচনা : কেউ কেউ এই হাদীছ থেকে দু’রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। অথচ কোন মুহাদ্দিছ এই হাদীছটির জন্য সুন্নাতে রাতেবার অধ্যায় রচনা করেননি। বরং তাদের প্রত্যেকে তাহ্ইয়াতুল মসজিদ, জুম‘আর পূর্বে নফল ছালাত, ইমামের খুৎবাকালীন মুছল্লীর করণীয়, খুৎবাকালীন ইমামের ছালাত আদায়ের নির্দেশ বা খুৎবাকালীন ইমাম মুছল্লীর কথন ইত্যাদি নামে অধ্যায় রচনা করেছেন।[8]
১৪. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ صَلَاةٍ مَفْرُوضَةٍ إِلَّا وَبَيْنَ يَدَيْهَا رَكْعَتَانِ-
১৪. আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোন ফরয ছালাত নেই যার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত নেই’।[9]
পর্যালোচনা : উক্ত হাদীছ দ্বারা কেউ কেউ দু’রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবার দলীল গ্রহণ করেছেন, যার কোন ভিত্তি নেই। কারণ উক্ত হাদীছ নফল ছালাতের প্রমাণ বহন করে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে ছালাত আছে। তৃতীয়বারে বললেন, যে চায়।[10] দুই আযান বলতে আযান ও ইকামতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পরে ও ফরয ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। সেটা আছর, মাগরিব বা এশার পূর্বে হ’তে পারে।[11]
১৫. কেউ কেউ ইমাম বুখারীরباب الصَّلاَةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ وَقَبْلَهَا، ‘জুম‘আর পরে ও পূর্বে ছালাতের অধ্যায়’ এই শিরোনামে অধ্যায় রচনা দ্বারা জুম‘আর পূর্বের সুন্নাত ছালাতের দলীল গ্রহণ করে থাকেন। যার সাথে সুন্নাতে রাতেবার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তিনি যে হাদীছ নিয়ে এসেছেন সেখানে জুম‘আর পরের দু’রাক‘আত সুন্নাতের কথা এসেছে,وَكَانَ لاَ يُصَلِّى بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ، ‘আর তিনি জুম‘আর পরে বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন না’।[12] তিনি এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, জুম‘আর পরে সুন্নাত ছালাত থাকলেও পূর্বে কোন সুন্নাত ছালাত নেই। যেমন তিনি ঈদের পূর্বে সুন্নাত ছালাত নেই জেনেও অধ্যায় রচনা করেছেন যে, باب الصَّلاَةِ قَبْلَ الْعِيدِ وَبَعْدَهَا ‘ঈদের পূর্বে ও পরে ছালাত সংক্রান্ত অধ্যায়’।[13] সুতরাং উক্ত অধ্যায় রচনা দ্বারা সুন্নাতে রাতেবা সাব্যস্ত হয় না।
কেবল ইমাম বুখারীই নয় বরং প্রায় সকল মুহাদ্দিছ তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে উক্ত মর্মে অধ্যায় রচনা করেছেন। যেমন আবুবকর ইবনু খুযায়মাহ (রহঃ) উল্লেখ করেন,بَابُ إِبَاحَةِ مَا أَرَادَ الْمُصَلِّي مِنَ الصَّلَاةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ مِنْ غَيْرِ حَظْرٍ أَنْ يُصَلِّيَ مَا شَاءَ، ‘জুম‘আর পূর্বে মুছল্লীর বাধাহীনভাবে যত রাক‘আত ইচ্ছা ছালাত আদায় বৈধ হওয়া সংক্রান্ত’ অধ্যায়। এখানে তাঁর উদ্দেশ্য হল রাকাআতের সংখ্যা। আর জুমআর পূর্ববর্তী ছালাতসমূহ যে ফরয নয়, বরং নফল- সে ব্যাপারে তিনি দলীল হিসাবে উপস্থাপন করেছেন আবূ সাঈদ খুদরী এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনা, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, وَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ (তিনি তাঁর সাধ্যমত পড়েছেন), আরো উল্লেখ করেছেন আবূ আইঊব (রাঃ)-এর বর্ণনা, যেখানে বলা হয়েছেمَا قُدِّرَ لَه (তিনি তাঁর সাধ্যমত পড়েছেন)।[14]
১৬. যোহর ছালাতের উপর ক্বিয়াস : কেউ কেউ জুম‘আর ছালাতকে যোহর ছালাতের উপর ক্বিয়াস করে জুম‘আর পূর্বে সুন্নাত কায়েম করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এটা ‘আল-ক্বিয়াসু মা‘আল ফারিক’ হয়ে গেছে। কারণ জুম‘আ সপ্তাহের এক বিশেষ দিন আর ইবাদতের এ দিনের বিধান স্বতন্ত্র। তাছাড়া জুম‘আর জন্য ওয়াক্ত শর্ত, খুৎবা শর্ত এবং এর ক্বাযা আদায় করা যায় না, এর জন্য মুছল্লীর সংখ্যা ও জায়গা শর্ত। কিন্তু যোহর ছালাতের জন্য এগুলো শর্ত নয়। সুতরাং দু’টির বিধানই আলাদা।
অন্যদিকে যোহর নাম থাকার পরেও সফরে থাকার কারণে যোহরের পূর্বের বা পরের সুন্নাত পড়া লাগে না। কারণ যেখানে ফরয চার রাক‘আতকে দু’রাক‘আত করে দেওয়া হ’ল এমতাবস্থায় সুন্নাত পড়া যায় কি করে? তাহ’লে তো ফরয চার রাক‘আত পড়াই শ্রেয়।[15] সুতরাং জুম‘আকে যোহরের সাথে ক্বিয়াস করে দলীল ছাড়া কী করে সুন্নাতে রাতেবা প্রতিষ্ঠা করা যায়?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, জুম‘আর পূর্বে ছালাত আছে। তবে সেটা সুন্নাতে রাতেবা নয় বরং সাধারণ নফল ছালাত। মুছল্লী তার সাধ্যমত সময় সপেক্ষে দুই, চার, ছয়, আট বা ততোধিক রাক‘আত আদায় করতে পারবে।
খুৎবাকালীন তাহইয়াতুল মসজিদ মাকরূহ হওয়ার পক্ষে উপস্থাপিত দলীলের পর্যালোচনা :
1- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَعَلَ يَتَخَطَّى النَّاسَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اجْلِسْ، فَقَدْ آذَيْتَ وَآنَيْتَ-
১। আব্দুল্লাহ বিন বুশর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক জুম‘আর দিনে এক ব্যক্তি লোকদের কাতার ভেদ করে (মসজিদের ভিতর) আসল। সে সময় নবী করীম (ছাঃ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, বসে যাও, তুমি বেশ কষ্ট দিয়েছ এবং দেরী করেও এসেছ’।[16]
পর্যালোচনা : উক্ত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীকে তাহ্ইয়াতুল মসজিদ আদায় করার নির্দেশ দেনননি। এর পিছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত : হয়ত উক্ত ছাহাবী মসজিদের বারান্দায় বা পার্শ্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে ইমামের কাছাকাছি বসার জন্য সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন। আর তখনই রাসূল (ছাঃ) রেগে গিয়ে তাকে বসার আদেশ করেন। দ্বিতীয়ত : তাহ্ইয়াতুল মসজিদ ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বুঝানোর জন্যই রাসূল (ছাঃ) তাকে বসার আদেশ করেন।[17]তৃতীয়ত : এটি তাহ্ইয়াতুল মসজিদ শরী‘আত সম্মত হওয়ার পূর্বের ঘটনা ছিল।
উল্লেখ্য যে, তাহ্ইয়াতুল মসজিদের দু’রাক‘আত সুন্নাত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোন ছাহাবী মসজিদে প্রবেশ করে তা আদায় না করলে রাসূল (ছাঃ) তাকে জবাবদিহী করতে বাধ্য করেছেন। যেমন ছহীহ মুসলিমে এসেছে, কাতাদা (রাঃ) বলেন,دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيِ النَّاسِ، قَالَ: فَجَلَسْتُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مَنَعَكَ أَنْ تَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ تَجْلِسَ؟ قَالَ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ رَأَيْتُكَ جَالِسًا وَالنَّاسُ جُلُوسٌ، قَالَ: فَإِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِ- ‘একদিন আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লোকজনের মধ্যে বসে আছেন। সুতরাং আমিও গিয়ে সেখানে বসে পড়লাম। এ দেখে রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, বসার আগে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে তোমাকে কীসে বাধা দিল? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি দেখলাম আপনি বসে আছেন এবং আরো অনেক লোক বসে আছে (তাই আমিও বসে পড়লাম)। তিনি বললেন, তোমরা কেউ কোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসবে না’।[18]
2- عن ابنَ عمر يقول: سمعتُ النبيَّ صلى الله عليه وسلم يقول: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ المَسْجِدَ والإِمَامُ عَلى المِنْبَرِ، فَلاَ صَلاَةَ ولاَ كَلاَمَ، حَتَّى يَفْرُغَ الإِمَامُ-
২। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম মিম্বারের উপরে, তখন ইমামের খুৎবা শেষ না করা পর্যন্ত আর কোন ছালাত পড়া যাবে না এবং কোন কথাও বলা যাবে না’।[19]
পর্যালোচনা : হাদীছটি বাতিল। এ হাদীছের সনদে আইঊব ইবনু নাহীক নামক এক বর্ণনাকারী আছে। তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম বলেন, সে দুর্বল। আবু যুর‘আ বলেন, আইঊব ইবনু নাহীক হ’তে আমি হাদীছ বর্ণনা করব না এবং তার হাদীছ আমাদের নিকট পড়াও হয় না। অতঃপর তিনি বলেন, সে একজন মুনকারুল হাদীছ। হায়ছামী (রহঃ) বলেন, সে মাতরূক, তাকে মুহাদ্দিছগণের এক জামা‘আত দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।[20] আর এ কারণেই হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, হাদীছটি দুর্বল।[21] শায়খ আলবানী হাদীছটি বাতিল আখ্যায়িত করে বলেন, তার সনদে দুর্বলতা থাকা ছাড়াও এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا، ‘তোমাদের কেউ যখন জুম‘আর দিনে (মসজিদে) আসবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন, তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়’।[22]
হাদীছটি অত্যন্ত স্পষ্ট, যা তাকীদ দিচ্ছে খুৎবা চলাকালে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার। রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের বিরোধিতা করে কিছু অজ্ঞ ইমাম/খত্বীব খুৎবা চলাকালে মসজিদে প্রবেশ করে যে ব্যক্তি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে চায় তাকে নিষেধ করেন।
যারা রাসূলের হাদীছের বিরোধিতা করেন, তারা নিম্নোক্ত আয়াত দু’টিতে বর্ণিত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারেন। যেমন- (১) আল্লাহ বলেন,أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَى عَبْدًا إِذَا صَلَّى، ‘তুমি কি দেখেছ ঐ ব্যক্তিকে যে নিষেধ করে, এক বান্দাকে যখন সে ছালাত আদায় করে?’ (‘আলাক ৯৬/৯-১০)। (২) আল্লাহ বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، ‘যারা আল্লাহ্র হুকুমের বিরোধিতা করে তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদেরকে কোন বিপদ গ্রাস করবে বা তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল হবে’ (নূর ২৪/৬৩)।
মানসূখ বলে ছলচাতুরি : কতিপয় বিদ্বান ছহীহ হাদীছগুলো উপস্থাপন করার পরে অযৌক্তিকভাবে এই বিধানটিকে মানসূখ বলেন, যা মুহাদ্দিছগণের নীতি বিরোধী। আর যদি মানসূখ হয়েই যেত তাহ’লে উমাইয়া খলীফা মারওয়ানের আমলে প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) মারওয়ান মিম্বারে থাকাবস্থায় এই দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন না। যেমন আব্দুল্লাহ বিন আবী সারহ বলেন,أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ، دَخَلَ يَوْمَ الجُمُعَةِ وَمَرْوَانُ يَخْطُبُ، فَقَامَ يُصَلِّي، فَجَاءَ الحَرَسُ لِيُجْلِسُوهُ، فَأَبَى حَتَّى صَلَّى، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَتَيْنَاهُ، فَقُلْنَا: رَحِمَكَ اللهُ، إِنْ كَادُوا لَيَقَعُوا بِكَ، فَقَالَ: مَا كُنْتُ لِأَتْرُكَهُمَا بَعْدَ شَيْءٍ رَأَيْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ رَجُلًا جَاءَ يَوْمَ الجُمُعَةِ فِي هَيْئَةٍ بَذَّةٍ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَأَمَرَهُ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ- ‘একদা ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মসজিদ প্রবেশ করলেন। তখন মারওয়ান বিন হাকাম খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি ছালাত পড়তে শুরু করলে প্রহরীরা তাঁকে বসতে আদেশ করল। কিন্তু তিনি তাদের কথা না শুনেই ছালাত শেষ করলেন। ছালাত শেষে লোকেরা তাকে বলল, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। এক্ষণি ওরা যে আপনাকে অপমান করত। উত্তরে তিনি বললেন, আমি সে ছালাত ছাড়ব কেন, যে ছালাত পড়তে নবী করীম (ছাঃ)-কে আদেশ করতে দেখেছি। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, জুম‘আর দিন এক ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে উস্কখুস্ক অবস্থায় মসজিদে আসল। নবী করীম (ছাঃ) তখন জুম‘আর খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলে সে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করল। আর নবী করীম (ছাঃ) খুৎবা দিতে থাকলেন।[23]
এছাড়া পরবর্তীতে প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বছরীও এই আমল করতেন। যেমন ইবনু আঊন বলেন,كَانَ الْحَسَنُ يَجِيءُ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ- ‘হাসান বছরী (রহঃ) খুৎবা চলাকালে মসজিদে আসলেও দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[24]
বড় আশ্চর্যের বিষয় ইমাম ত্বাহাবীর মত মুহাদ্দিছ সুলায়ক গাতাফানীর হাদীছ এবং আবু সাঈদ খুদরীর আছার জানার পরেও বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন বর্ণনা নিয়ে এসে ছহীহ হাদীছগুলোকে মানসূখ বলে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাতকে মাকরূহ বলেছেন।[25] উল্লেখ্য যে, তাহ্ইয়াতুল মসজিদের দু’রাক‘আত ছালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আদায় করা অনেক ছওয়াবের কাজ। কিন্তু কেউ আদায় না করে বসে গেলে সে গুনাহগার হবে না। যেমন মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ ও আব্দুর রাযযাকে কতিপয় তাবেঈর আমল বর্ণিত হয়েছে।[26] কিন্তু কেউ আদায় করলে তাকে বাধা দেওয়া বা মাকরূহ ও মানসূখ বলা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের নামান্তর।
উপসংহার : ইবাদত কবুলের জন্য যেমন নিয়তের বিশুদ্ধতা প্রয়োজন, তেমনি তা শারঈ পদ্ধতিতে আদায় হওয়া আবশ্যক। জুম‘আর দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। শ্রেষ্ঠত্বের পিছনে কারণ হ’ল, এই দিনে বিভিন্ন ইবাদতের সমাহার ঘটেছে। নফল ছালাত, কুরআন তেলাওয়াত, সকাল সকাল মসজিদে গমন, যিকির-আযকার, দো‘আ ইত্যাদি। এসব ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে নফল ছালাত আদায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর এজন্য রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিনে ছালাতের পূর্বে সাধারণ সুন্নাত শরী‘আতসিদ্ধ করেননি। বরং উম্মতের জন্য সাধ্যানুযায়ী বহু রাক‘আত নফল ছালাতের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি জুম‘আর ওয়াজিব খুৎবা চলাকালীনও দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেককে সুন্নাহ ভিত্তিক ইবাদতে অভ্যস্ত হ’তে হবে। সাথে সাথে বয়ানের নামে তৃতীয় খুৎবার প্রচলন এবং বয়ান শেষে যোহরের ন্যায় চার রাক‘আত সুন্নাত আদায়ের বিদ‘আতী পন্থা পরিহার করতে হবে। আল্লাহ আমাদের হককে হক হিসাবে এবং বাতিলকে বাতিল হিসাবে বুঝার তাওফীক দান করুন- আমীন!
[1]. ইবনু হিববান হা/২৫১৪।
[2]. যঈফাহ হা/৬২৩৫; ইবনু হিববান হা/২৫১৪।
[3]. আহমাদ হা/২৫৫২৬, সনদ ছহীহ।
[4]. বুখারী হা/৬২৭; মিশকাত হা/৬৬২।
[5]. মুয়াত্ত্বা মালেক হা/০৭,৪৩৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৫৬৮৪; মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৬৩৯৬; সুনানুছ ছুগরা হা/৬২৮; মুসনাদুশ শাফেঈ হা/৪২৫।
[6]. নাসাঈ হা/১৭৯৭; মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/১৪১, ৫৫২১; আবু শামাহ, আল-বা‘য়েছ ৯৭ পৃ.।
[7]. মুসলিম হা/৮৭৫; মিশকাত হা/১৪১১।
[8]. বুখারী ৪/৫৬; মুসলিম ২/৫৯৬; আবুদাউদ ১/২৯০; তিরমিযী ২/৩৮৪; নাসাঈ ৩/১০৩; ইবনু মাজাহ ১/৩৫২; ইবনু খুযায়মাহ ৩/১৫০; ইবনু হিববান ৬/২৪৭।
[9]. ছহীহু ইবনু হিববান হা/২৪৫৫; ছহীহাহ হা/২৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৩০।
[10]. বুখারী হা/৬২৭; মিশকাত হা/৬৬২।
[11]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/২৮২।
[12]. বুখারী হা/৯৩৭।
[13]. ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮৫৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৩০।
[14]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৩/১৬৮।
[15]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২৪/৯০।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/১১১৫; আবুদাউদ হা/১১১৮; ছহীহুত তারগীব হা/৭১৪।
[17]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৪২৮।
[18]. মুসলিম হা/৭১৪; ইরওয়া হা/৪৬৭।
[19]. তাবারানী কাবীর হা/১৩৭০৮।
[20]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩১২০-এর আলোচনা।
[21]. ফাতহুল বারী ২/৩২৭।
[22]. মুসলিম হা/৮৭৫; মিশকাত হা/১৪১১।
[23]. তিরমিযী হা/৫১১; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৯৯, ১৮৩০; বুখারী, আল কেরাতু খালফাল ইমাম হা/১০৩।
[24]. মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫১৬৪-৬৫; মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫৫১৫।
[25]. শারহু মা‘আনিল আছার হা/২১৪৯-২১৫৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[26]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫১৬৭-৫১৭৬; মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫৫১৭-৫৫২০।